আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ কি খুব জরুরী? - জনতার আওয়াজ
  • আজ রাত ১০:৪০, শনিবার, ২২শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি
  • jonotarawaz24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ কি খুব জরুরী?

নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ: সোমবার, মার্চ ১০, ২০২৫ ৩:১৫ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: মঙ্গলবার, মার্চ ১১, ২০২৫ ১২:৫২ পূর্বাহ্ণ

 

সামাজিক বিজ্ঞানের দুটি শাখায় একটি তাত্ত্বিক বিতর্ক আছে। আর তা হলো অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপর রাজনৈতিক উন্নয়ন নির্ভর করে। অপরদিকে রাজনীতি বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে রাজনৈতিক উন্নয়নের উপর অর্থনৈতিক উন্নয়ন নির্ভর করে । বিষয়টির বাস্তব প্রতিফলন ঘটেছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। বিগত ১৫ বছরের দুঃশাসন বাংলাদেশকে রাজনৈতিক প্রাতিষ্ঠানিকরনের কবর রচিত করে যে কসমেটিকস অর্থনৈতিক উন্নয়নের গল্প শোনানো হয়েছিল, সেই উন্নয়নে রাজনৈতিক নেতৃত্বের পিরামিডকে ভেঙে দিয়েছে। সুতরাং এটা প্রমাণিত বিগত তিনটি ভুয়া নির্বাচনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার কাঠামো ভেঙে একক রাজনৈতিক কাঠামোতে পরিণত হয়েছিল। ফলশ্রুতিতে রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরাজনৈতিকরনের ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন অচলাবস্থায় পরিণত হয়েছে এবং রাজনীতির ক্ষেত্রে জনগণের অনীহা (Political Apathy) উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এবার আসা যাক মূল আলোচনায়।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর জন্ম হয়েছে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে, যার প্রতিষ্ঠাকালীন সময় ১৯৪৯ সালে । পরবর্তীতে ১৯৫৬ সালে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ নামকরণ করা হয়েছিল। সেই বছরই শেখ মুজিবর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের নামকরণ করেছিলেন বাংলাদেশ! নামকরণের পটভূমিতে ছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন । এভাবে ১৯৪৯-১৯৭০ সাল পর্যন্ত শেখ মুজিবর রহমানই বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের কর্ণধার ছিলেন। অর্থাৎ বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের ভিত্তি ছিল তার রাজনৈতিক নেতৃত্বের দূরদর্শিতা। কিন্তু সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে তার রাজনৈতিক ইচ্ছা সেই পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো! কারণ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভূমিধস বিজয়ের পরে শেখ মুজিবর রহমান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে ধর কষাকষি করেছিলেন। হয়তবা তার স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন ছিল তার মনেরও মন্দিরে! সেই পরিস্থিতিতেই শেখ মুজিবর রহমান গ্রেফতার হন এবং সামরিক বাহিনীর সাহসী অফিসার হিসেবে মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। সুতরাং স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের পরিস্থিতি তিনি তৈরি করেছিলেন বটে কিন্তু তার বাস্তবায়নে ছিল এদেশের সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ, এবং গর্বিত সামরিক বাহিনী।

সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় অর্জিত হয়। তৎপরবর্তিতে শেখ মুজিবকেই রাজনৈতিক নেতা হিসেবে অলংকৃত করা হয়েছিল। কারণ বাংলাদেশে ঐসময়ে আর কোনো রাজনৈতিক দল নেই বা ছিল না। কিন্তু দেশ স্বাধীনের দুবছরের মধ্যেই ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কার্যত সবকটিতেই জয়লাভ করেছিল এবং বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে মাত্র দুটি আসন পেয়েছিল । উপরের এই পটভূমি আলোচনায় রয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের ভূমিকায় বিশ্বাস করে না। তাদের সরকারের দরকার সর্বময় ক্ষমতা আর উন্নয়ন! সেই সর্বময় ক্ষমতাই বাধ্য করেছে শেখ মুজিবকে তার নিজের দল আওয়ামী লীগ সহ সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করতে এবং একদলীয় শাসনব্যবস্থা হিসেবে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করতে। সুতরাং আওয়ামী লীগ তার রাজনীতির ৪ বছরের মধ্যেই ফ্যাসিস্ট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে এবং ৫ বছরের মধ্যে তার পরিণতি ভোগ করেছে। পরবর্তীতে রাজনৈতিক ব্যবস্থার শূন্যতার এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতির সীমাবদ্ধতার মধ্যেই জন্ম হয়েছে বহুদলীয় রাজনৈতিক আদর্শের প্রয়োজনীয়তা এবং একটি জাতীয়তাবাদী শক্তির উত্থান।

শেখ মুজিবর রহমান যেমন সর্বময় ক্ষমতার রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন তেমনি তার তনয়া শেখ হাসিনাও ঠিক তারই আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি বিভিন্ন ভাষণে বলেছিলেন তার চাই সর্বময় ক্ষমতা আর উন্নয়ন! রাজনৈতিক ক্ষমতার বৈধতার প্রশ্নে তিনি ছিলেন কর্তৃত্ববাদী ও জবাবদিহিতার উর্ধ্বে। তাই বিগত তিনটি ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির নির্বাসন নিশ্চিত করেছিলেন। তিনি আরো বলেছেন এ দেশ তার বাবা স্বাধীন করেছেন! সুতরাং এদেশের রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারীও সেই হিসেবে তিনি! অর্থাৎ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় কর্তৃত্ববাদী ক্ষমতার জন্য তিনি নিজেকে অদ্বিতীয় আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। এ ব্যাপারে শাসন ব্যবস্থার কর্তৃত্ববাদী ক্ষমতার নেতিবাচক প্রভাবের বিরুদ্ধে লর্ড এক্টনের বিখ্যাত রাজনৈতিক দর্শন রয়েছে। তিনি বলেন, “Power tends to corrupt and absolute power corrupts absolutely.” অর্থাৎ ক্ষমতা মানুষকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে, অত্যধিক ক্ষমতা মানুষকে অত্যধিক দুর্নীতিগ্রস্ত করে। সুতরাং উপরিউক্ত আলোচনায় এটা প্রমাণিত আওয়ামী লীগ একটি কর্তৃত্ববাদী রাজনৈতিক দল। যার প্রমাণ শেখ মুজিব থেকে শেখ হাসিনার শাসন।

এবার আসা যাক ২০০৯-২০২৪ সালের আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক শাসনামলে রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের কার্যকলাপের একটি ময়নাতদন্ত। অর্থাৎ শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন যে সমস্ত অপকর্মের ইতিহাস তৈরি করেছে, সেই অপকর্মের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের বৈধতা সংকট আছে কিনা সেটা বিবেচনায় নিতে হবে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত রাজনৈতিক দলের যে সমস্ত বিধি নিষেধ রয়েছে বা যে সমস্ত সুশাসন মেনে চলার বাধ্যবাধকতা রয়েছে তার ওপর আলোকপাত করা যাক। এ বিষয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টারী এসেম্বলির ইরাদা বা Resolution no. 1308 (2002), “Restriction on political parties in the council of Europe member States “. শিরোনামে, Office for Democratic Institutions and Human Rights (ODIHR) এবং ভেনিস কমিশন, Guidelines on Political Party Regulation (২০২০), শিরোনামে কতকগুলো দিক নির্দেশনা রয়েছে, যে গুলো মান্য করার বাধ্যবাধকতা বিশ্বের যেকোনো রাজনৈতিক দলকে মেনে চলতে হবে। উপরিউক্ত নির্দেশনার সম্মিলিত বৈশিষ্ট্যগুলো সংক্ষেপে আলোচনা করা প্রয়োজন।

১. রাজনৈতিক মূল্যবোধের অবমূল্যায়ন (Undermining of Political values) রাজনৈতিক দলের জন্য গুরুতর লংঘন হিসেবে বিবেচিত হয়। এক্ষেত্রে যেসব বিষয়গুলো বিবেচনায় আনা হয় তা হল, কর্তৃত্ববাদী শাসন উৎসাহিত করা, স্বচ্ছ নির্বাচন অস্বীকার করা এবং আইনের শাসনকে অবজ্ঞা বা অস্বীকার বা অবমাননা করা। এ প্রক্রিয়ায় ২০২১ সালে তুরস্কের কুর্দিস্তানপন্থী পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি নিষিদ্ধের জন্য আইন সভায় প্রস্তাব আনা হয়েছিল। এমনকি ১৯৫২ সালে জার্মানীর সাংবিধানিক আদালত এই সব অভিযোগের ভিত্তিতে সোসালিস্ট রাইখ পার্টি (Socialist Reich Party) নিষিদ্ধ করেছিল।

২. ঘৃণামূলক বক্তব্য প্রচার বা সহিংসতার উসকানি (Promotion of hate speech or violence) এর বিরুদ্ধে জার্মান সংবিধানের মৌলিক আইন হিসেবে স্বীকৃত। এ প্রেক্ষাপটে ১৯৫৬ সালে কমিউনিস্ট পার্টি অব জার্মানী নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

৩. কোন রাজনৈতিক দল যদি সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে পরিচিত কিংবা কার্যকলাপে জড়িত থাকে তাহলে সেই রাজনৈতিক দলকে আইনগতভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার অধিকার রয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় সম্প্রতি সিরিয়ায় দি আরব সোসালিস্ট বাথ পার্টি (১৯৪৭-২০২৪) প্রথমে ডিসেম্বর ২০২৪ ডি ফ্যাক্টো ক্ষমতা বলে এবং পরবর্তীতে জানুয়ারি ২০২৫ ডি জুরি বা আইনগতভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

৪. দুর্নীতিগ্রস্ত ও অপরাধমূলক কার্যকলাপের সাথে জড়িত (Engagement in corruption and criminal activities ) বা যোগসূত্র থাকার কারণে রাজনৈতিক দলকে জবাবদিহি করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ ১৯৯০ সালে ইতালিয়ান সোসালিস্ট পার্টি আইনগত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিল। যদিও পরবর্তীতে তা নিষিদ্ধ করা হয়নি কিন্তু তাদের জনমত জরিপে অনেক পিছিয়ে পড়েছিল এবং রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষমতা ক্রমাগত হ্রাস পেয়েছিল।

৫. সার্বভৌম ক্ষমতার বিরোধী সংযোগ বা জাতীয় ঐক্যের প্রতি হুমকি (Secessionist trends or threading national unity) রাজনৈতিক দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জাতীয় ঐক্য ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ও পবিত্র দায়িত্ব। এমতাবস্থায়, স্পেনে ২০১৪-২০১৫ সালের দিকে ক্যাটালান ইন্ডিপেন্ডেন্ট মুভমেন্ট বার্সেলোনাকে স্পেন থেকে পৃথকীকরণের আন্দোলনের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এবং আন্দোলনে জড়িতথাকার অভিযোগে নেতাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছিল। তাছাড়া চীনের হংকংয়ের একই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীনতাপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোকে দমন করা হয় এবং জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবার কারণে ২০২০ সালে জাতীয় নিরাপত্তা আইন কার্যকর করা হয়।

৬. রাজনৈতিক মেরুকরণ (Political Polarization) রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য রাজনৈতিক ব্যবস্থার (Political System) অভ্যন্তরে আত্মঘাতী আন্দোলনের (Underground movement) সূচনা করতে পারে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক আদর্শের বাইরে অন্য কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শের মতামতকে সমর্থন করে না। বরং ভিন্নমতের দমনকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে বিবেচনা করে। যার কারণে দেখা যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানিতে নাৎসি পার্টি নিষিদ্ধ করা হয়।

৭. তাছাড়া মত প্রকাশের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক বহুত্ববাদ (Political Pluralism) এবং মানবাধিকার রক্ষা করা রাজনৈতিক দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত। বর্তমান গণতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থায় যে কোন রাজনৈতিক দল, সংগঠন, কিংবা গোষ্ঠী এ বিষয়গুলো গুরুতর (gross misconduct) লংঘন করলে কোনো না কোনোভাবে জবাবদিহিতার আওতায় আসতে হয়। রাজনৈতিক দলের জন্য এ বিষয়গুলোর প্রতি দায়বদ্ধ থাকা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

সুতরাং রাজনৈতিক দলের নিষিদ্ধ প্রক্রিয়া একটি জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ইস্যু যা সুনির্দিষ্ট কারণ দ্বারা উত্তীর্ণ হতে হবে।

বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এবং ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্বচ্ছতার ও জবাবদিহিতার জন্য বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের যে সমস্ত কার্যকলাপের ময়নাতদন্ত প্রয়োজন তা হলঃ

১. নির্বাচনী ব্যবস্থায় দুর্নীতি ও ভুয়া নির্বাচন ও গনতন্ত্রের বিকৃত শাসন ব্যবস্থা।

২. সারাদেশে গুম, খুন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত।

৩. পিলখানার বিডিআর হত্যাকাণ্ডের তদন্ত।

৪. সাগর-রনি, ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, দেলোয়ার হোসেন সাঈদীসহ রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রয়োজন

৫. শাপলা চত্বরের হেফাজত কর্মীদের গ্রেপ্তার ও গনহত্যার তদন্ত প্রয়োজন।

৬. রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতি এবং মানিলন্ডারিং

৭. জুলাই-আগষ্ট হত্যাকান্ড

৮. রাষ্ট্রীয় চুক্তির ক্ষেত্রে বিশেষ করে ভারতের সাথে অস্বার্থগত চুক্তির তদন্ত করতে হবে। কেননা এখানে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব জড়িত। যা রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামীলীগের দায় নিতে হবে।

সুতরাং আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক শাসনামলে সংঘটিত এসমস্ত অপরাধের জন্য সত্যতা যাচাই (Facts Check) করা খুবই জরুরি। কেননা এই রাজনৈতিক দলটি মানবতার ও মানবধিকারের এমন কোনো অপরাধ নাই যে তারা করেনি! সম্প্রতি জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে তা একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রামাণিক দলিল হিসেবে স্বীকৃত। এবিষয়ে আরো বেশি তদন্ত হওয়া দরকার এবং চলমান প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে। তাছাড়া গত ১৫ বছরের আওয়ামী দুঃশাসনের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি রাখে। আর এসব তদন্ত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসা যাবে। যেহেতু জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো যেকোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। তাই এবিষয়ে জাতিসংঘের এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার তদন্তে সাপেক্ষে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারলে বিতর্ক এড়ানো সম্ভব। তাছাড়া সকল রাজনৈতিক দলের সাথে এবিষয়ে আলোচনা ও ঐকমত্য সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। এই বিষয়ে বর্তমান সরকারের তদন্তের উদ্যোগ একটি দূরদর্শী পদক্ষেপ।

এমতাবস্থায়, পূর্ণাঙ্গ তদন্তপূর্বক অবস্থায় আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মসূচির বৈধতার প্রশ্নে বর্তমান সরকারকে ডি ফ্যাক্টো ক্ষমতার সিদ্ধান্ত হিসেবে আওয়ামী লীগকে জাতির কাছে ক্ষমা এবং সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সব সংসদ সদস্যকে রাজনীতিতে অযোগ্য ঘোষণা করে ডিক্রি জারি করতে হবে। পরবর্তীতে বিচারিক আদালতের রায় ও তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে পরবর্তী বা আইনগত চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা যাবে।

উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে সেগুলোর সাথে, যেসমস্ত অভিযোগের জন্য রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা যায় তার সাদৃশ্যতা ও গভীরতা বিবেচনায় নিয়ে বিচার করতে হবে। তার আগে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বৈধতার প্রশ্নে নতুন নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে। সুতরাং আওয়ামীলীগের রাজনীতির নিষিদ্ধের আগে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর বিচারের উদ্যোগ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। তবে এক্ষেত্রে সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষার্থে গণহারে অভিযুক্ত না করে যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে তাদেরকেই আইনের আওতায় আনতে হবে।

পরিশেষে বলা যায়, আওয়ামীলীগের রাজনীতির ক্ষেত্রে নতুন নেতৃত্বের উৎসাহ প্রয়োজন ও পুরাতন অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে হবে। এবিষয়ে প্রয়োজন সকল রাজনৈতিক দলের সম্মিলিত উদ্যোগ। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে আওয়ামী লীগকে পরবর্তী নির্বাচনে জনগণের গণভোটের রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

মোঃ শাহজাহান মিয়া

সাবেক, ভাইস প্রেসিডেন্ট, চিটাগং ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি (সিইউডিএস) এবং রিসার্চ ফেলো, ফ্রন্টলাইন পলিসি এন্ড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (এফপিআরআই), লন্ডন, যুক্তরাজ্য।

ইমেইলঃ shahjahanau.bd@gmail.com
বার্তা প্রেরক,
ইয়াসমিন আক্তার
বিশেষ প্রতিনিধি
জনতার আওয়াজ,লন্ডন

Print Friendly, PDF & Email
 
 
জনতার আওয়াজ/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ