আওয়ামী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের ক্যাশিয়ার সায়মনের হাতে আলাদীনের চেরাগ - জনতার আওয়াজ
  • আজ রাত ৪:৩২, বুধবার, ২৬শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি
  • jonotarawaz24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

আওয়ামী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের ক্যাশিয়ার সায়মনের হাতে আলাদীনের চেরাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ: মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৪ ৯:২২ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৪ ৯:২২ অপরাহ্ণ

 

এক দশকে শতকোটি টাকার মালিক

এম আর কামাল, নিজস্ব প্রতিবেদক, নারায়ণগঞ্জ
আওয়ামী সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ক্যাশিয়ার সৈয়দ আহসান উদ্দিন আহমেদ সায়মন মাত্র এক দশকে শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। সেই সুবাধে পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহাম্মদের সাথে ছিল তার ঘনিষ্ট সম্পর্ক। পুলিশের নিয়োগ বাণিজ্য থেকে শুরু করে, রাশিয়া থেকে গম ক্রয়, বিমান কেনাতেও ছিল তার হাত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে গত এক দশকে কয়েকশত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক বনে গেছেন। গুলশান, উত্তরাতে আলিশান ফ্ল্যাট কেনার পাশাপাশি পাঁচ তারকা মানের দুটি হোটেলের শেয়ারও আছে তার। নিজ এলাকা ফতুল্লাতে গড়ে তুলেছেন আলিশান তিনটি ভবন। রয়েছে কয়েক বিঘা জমিও। তাছাড়া দুবাইতে ব্যবসা স¤প্রসারণ করেছেন, যা দেখাশোনা করছেন সায়মনের আপন বড় ভাই সৈয়দ আশরাফ উদ্দিন আহমেদ মাসুম। সৈয়দ আহসান উদ্দিন আহমেদ সায়মনের বড় ভাই সৈয়দ আশরাফ উদ্দিন আহমেদ মাসুমের নামে-বেনামে দেশ ও দেশের বাহিরে রয়েছে অঢেল সম্পদ।
সূত্রমতে, মাত্র এক দশক আগে ঢাকায় একটি মোটর সাইকেলের শো রুমে চাকুরি নেন সৈয়দ আহসান উদ্দিন আহমেদ সায়মন। মাত্র ২০ হাজার টাকা বেতনে শুরু চাকুরি জীবন। সেই সময় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পিএস মনিরের সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠে চতুর সায়মনের। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সম্পর্ক স্থায়ী করে ফেলেন সায়মন। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মন্ত্রীর আস্থাভাজন হওয়ায় নির্বিঘেœ মন্ত্রণালয়ে আসা যাওয়া করতেন। পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তাদের বদলী বাণিজ্যের হাতেখড়ি তখনি শুরু। রাশিয়া থেকে গম ক্রয়ের কমিশন, বিমান কেনার কমশিনসহ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান ও বেনজীরের হয়ে বিভিন্ন সেক্টরের কমিশনের অর্থ এই চতুর সৈয়দ আহসান উদ্দিন আহমেদ সায়মন সংগ্রহ করে নিজ হেফাজতে রেখে তার শ্যালক আসিফের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করতো বলে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। তাছাড়া কক্সবাজারে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামানের ৫ তারকা হোটেলের মালিকানা সায়মনের নামেই রয়েছে বলেও জানা গেছে।
জানা যায়, ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশান ও উত্তরাতে ফ্ল্যাট কেনার পাশাপাশি রেনেসা নামের একটি অভিজাত হোটেলের পার্টনারশিপও আছে তার। গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলে আতœগোপনে চলে যান সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল। আর দূর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সাবেক আইজিপি দেশ ছেড়েছেন আরো আগেই। এই দুই প্রভাবশালীর সম্পদ রক্ষায় এখন নয়া মিশনে নেমেছেন সায়মন।
স্থানীয়রা জানান, এক যুগ আগে ফতুল্লার বটতলা এলাকায় বাবার সিমেন্টের দোকানের ব্যবসা দেখাশোনা করতেন সায়মন। কিন্তু ঢাকায় যাওয়ার পর তার পরিবর্তন হতে শুরু করে। এলাকায় দামি গাড়ি হাঁকিয়ে চলাফেরা করেন। তার গাড়ী সংগ্রহের তালিকায় রয়েছে কোটি টাকা মূল্যের মার্সিডিজ, রেঞ্জরোভারের মতো একাধিক দামী গাড়ী। তথ্যমতে সৈয়দ আহসান উদ্দিন আহমেদ সায়মনের নির্দিষ্ট দৃশ্যমান কোন ব্যবসা বা শিল্প প্রতিষ্ঠান নেই। অথচ গুলশান ও বনানীতে রয়েছে তার দুটি অফিস। তাই সহসায় স্থানীয় বাসীর মনে প্রশ্ন- কি এমন আলাদিনের চেরাগ পেয়েছে যে, রাতারাতি বনে যান কোটি কোটি টাকার মালিক। তার সংগ্রহে একাধিক গাড়ী থাকলেও সর্বশেষ ক্রয়কৃত বিএমডবিøউ (ঢাকা মেট্টো-ঘ-২১-৮৪৭৯) মডেলের গাড়ীটি বিআরটিসিতে মালিকানা যাচাই করিলে সৈয়দ আহসান উদ্দিন আহমেদ সায়মনের নামে রয়েছে।
অপরএকটি স‚ত্র জানায়, আসাদুজ্জামান এবং বেনজীরের টাকা এবং সম্পদ সৈয়দ আহসান উদ্দিন আহমেদ সায়মন নিজের নামে রেখে এই সম্পদ রক্ষা করছেন। গুনশানে ফ্ল্যাট, বাড়ী সহ বিভিন্ন সম্পদ নিজের নামে রেখেছেন। মূলত এসব সম্পদের মূল মালিক হচ্ছেন আসাদুজ্জামান এবং বেনজীর আহমেদ। গুলশান-১ এ রয়েছে একটি ফ্ল্যাট, উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে ২টি বহুতল ভবন, দুবাই ও মালয়েশিয়াতে রিয়েল স্টেটের ব্যবসা, গুলশান ২ নাম্বারের সিক্স সিজন হোটেলের পার্শ্বে ৫ হাজার স্কয়ার ফিটের রয়েছে ব্যক্তিগত অফিস। গুলশান ২ রোড নাম্বার ২ তে রয়েছে তার ব্যক্তিগত ফ্ল্যাট, স্যুট এ/১ ভ্যালেন্টাইন প্যালেসে রয়েছে ব্যক্তিগত একটি অফিস, রোড নাম্বার ৯৬, প্লট নাম্বার ৪/১ রয়েছে আরো একটি ব্যক্তিগত অফিস। বনানীর হাউস নং ৭৭-বি, রোড নাম্বার ১২ তেও রয়েছে তার আরো একটি অফিস। প্রতিটি অফিসেই রয়েছে একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী, রয়েছে সুন্দরী নারীদের আনাগোনা। এছাড়া নামে-বেনামে ও বড় ভাই মাসুম সহ তার শ্বশুড় বাড়ীর লোকজনের নামে দেশ এবং দেশের বাইরে রয়েছে অঢেল সম্পত্তি।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বেনজীরের বিদেশে অর্থপাচারের অন্যতম হাতিয়ার ছিলো সৈয়দ আহসান উদ্দিন আহমেদ সায়মনের শ্যালক আসিফ। বর্তমানে উত্তরা ১১ নং সেক্টরে শ্যালক আসিফের সাথেই আতœগোপনে থাকা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামানের কমিশন বানিজ্যের কোটি কোটি টাকা ও ডলার নিয়ে সৈয়দ আহসান উদ্দিন আহমেদ সায়মন আতœগোপন করে আছে।
জানা যায়, ফতুল্লার লালপুর এলাকার সৈয়দ নরুদ্দিন খুশির দ্বিতীয় সন্তান সৈয়দ আহসান উদ্দিন আহমেদ সায়মনের সঙ্গে আসাদুজ্জামান কামাল এবং বেনজির আহমেদের সখ্যতা অনেক দিনের পুরনো। সম্পর্কের স‚ত্র ধরেই আসাদুজ্জামান, বেনজিরের বিভিন্ন সেক্টরের কমিশন বানিজ্য থেকে শুরু করে অবৈধ টাকা বিদেশে পাঠানোর দায়িত্ব পালন করতেন। বেনজিরের দেশত্যাগ এবং আসাদুজ্জামান কামালের গ্রেপ্তারের পর তাদের টাকা, ডলার, ইউরো নিয়ে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছেন।
উল্লেখ্য, যদিও তার বাবা নুরুদ্দিন খুশি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার জামায়াতের শ্রমিক সংগঠনের সক্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিত। সূত্রটি জানায় সায়মনের বাবা জামায়েতের শ্রমিক সংগঠনের ফতুল্লা থানার সহ-সভাপতি হিসেবে অধিষ্ঠিত রয়েছেন। কিন্ত অর্থ পিপাসু ছেলের নৈতিক চরিত্রের কারনে অর্থ ও ক্ষমতার মোহে মুজিব কোর্ট পরতে ও দ্বিধাবোধ করেননি। যে কোন পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে ও বাবা নুরুদ্দিন খুশি তার দুই পুত্রকে নিয়ে মুজিব কোর্ট পরে উপস্থিত হতেন। ঢাকার আভিজাত্য এলাকা গুলশান ও বনানীর অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে সরকারী রাষ্ট্রীয় অর্থ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বেনজীরের অবৈধ বিদেশে পাচারকৃত অর্থের সকল তথ্য সায়মনের নিকট রয়েছে। তাছাড়া জানা যায়, সৈয়দ আহসান উদ্দিন আহমেদ সায়মনের শালীর বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। আহসান আহম্মেদ সায়মনের পারিবারিক যেকোন অনুষ্ঠানেই বেনজীর ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান উপস্থিত থাকতেন।
বিগত দেড় দশকে সৈয়দ আহসান আহম্মেদ সায়মনের ব্যাংক এ্যাকাউন্ট হিসাব পর্যালোচনা করলে সহজেই বেরিয়ে আসবে কি পরিমাণ অর্থ লেনদেন হয়েছে ও বিদেশে পাচার হয়েছে এবং অবৈধ উপায়ে কত টাকা উপার্জন করেছে। সৈয়দ আহসান উদ্দিন আহমেদ সায়মনকে আইনের আওতায় আনা গেলে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও বেনজীরের অবৈধ সম্পদের সন্ধান পাওয়া যাবে বলে এলাকাবাসি জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য সৈয়দ আহসান উদ্দিন আহমেদ সায়মন এর মোবাইলে বার বার ফোন করলেও বন্ধ পাওয়া যায়। তিনি বর্তমানে আত্মগোপনে আছেন বলে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

Print Friendly, PDF & Email
 
 
জনতার আওয়াজ/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ