আন্দোলনে সরব দেশ, কোটা আসলে কারা চান
নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
মঙ্গলবার, জুলাই ৯, ২০২৪ ১১:১৭ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
মঙ্গলবার, জুলাই ৯, ২০২৪ ১১:১৭ অপরাহ্ণ

জনতার আওয়াজ ডেস্ক
কোটাবিরোধী আন্দোলন রাজধানীসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এর পক্ষ বিপক্ষ নিয়ে নানা কথাও উঠেছে। এ অবস্থায় দেশের অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। সার্বজনীন পেনশন প্রত্যয় স্কিম বাতিল ইস্যুতে গত ১ জুলাই থেকে শিক্ষকরা কর্মবিরতিতে আছেন। ক্যাম্পাস বন্ধ রেখে তারা সভা-সমাবেশ করছেন।
এর মধ্যে রাজপথে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিলের দাবিতে মাঠে নেমেছেন। তারা এর একটা সুন্দর সমাধান চান। অনেকে কোটা রাখার পক্ষেও মতামত-বক্তব্য দিচ্ছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো- কোটা আসলে চান কারা? আর কেনইবা কোটা নিয়ে এই আন্দোলন?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একদিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলে তার ক্ষতির পরিমাণটা সরকারের নীতি-নির্ধারকেরা ভেবে দেখেছেন বলে মনে হয় না। আমাদের বেশিরভাগ নেতানেত্রীর ছেলেমেয়েরা বিদেশে পড়েন। বিদেশেই তারা ক্যারিয়ার গড়ে নেন। সেক্ষেত্রে দেশের শিক্ষা নিয়ে তাদের না ভাবলেও চলে। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করেন, তাদের অধিকাংশই সাধারণ পরিবার থেকে আসা। তাদের বিদেশে কিংবা দেশের ভেতরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সামর্থ্যও কম। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যতদিন বন্ধ থাকবে, ততদিন তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
জানা গেছে, সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় সরকার বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৪০৩টি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে প্রত্যয় স্কিম চালু করেছে। তবে এতে এক বছর পর সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য আলাদা স্কিম হবে। অন্যদিকে সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন। ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীরা কোটা পুরোপুরি বাতিলের দাবি জানাননি। তারা সংস্কার চেয়েছিলেন। তাদের মনে করেছিল ৫৬ শতাংশ কোটা অন্যায্য ও অযৌক্তিক।
সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আগামীকাল বুধবার আপিল বিভাগে শুনানি হবে। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম শুনানির জন্য এ দিন ধার্য করেছেন।
এদিকে শিক্ষকেরা যেহেতু কর্মবিরতি পালন করছেন, সেহেতু শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে হয়নি। তাদের আন্দোলন ক্যাম্পাস ছাড়িয়ে এখন রাজপথে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কলেজের শিক্ষার্থীরাও যোগ দিয়েছেন। বিভিন্ন স্থানে মহাসড়ক অবরোধ করছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রবিবার ‘বাংলা ব্লকেড’ পালনের পর সোমবারও একই কর্মসূচি পালন করে। দেশে বর্তমানে যে ৩৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় চালু আছে, তার কোনোটিতে ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না। কর্মচারীরাও অফিস করছেন না। সেই অর্থে ক্যাম্পাসে পাঠদান ব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়েছে।
শিক্ষকেরা বলেছেন, দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। শিক্ষার্থীরাও বলেছেন, কোটাপদ্ধতি বাতিল না করা পর্যন্ত তারা রাজপথে থাকবেন।
শিক্ষকদের আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা চান না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদা।
তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলনে কোনো শিক্ষার্থী সম্পৃক্ত হোক, এটি আমরা চাইনি। কাউকে জানানোর কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে বলেও মনে করি না। এটা পুরোপুরি শিক্ষকদের আন্দোলন, শিক্ষকেরাই এ আন্দোলন করবে। এটার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত রবিবার যুব মহিলা লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বলেছেন, কোটার বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতের নিষ্পত্তি করা উচিত। তিনি পড়াশোনা বাদ দিয়ে রাস্তায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
এছাড়া একই দিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলন ও শিক্ষকদের পেনশনবিরোধী আন্দোলন তারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
জনতার আওয়াজ/আ আ
