আমি আর ইলেকশন করতাম নায় এই ধরনের মানুষের আমরার দরখার
নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
শনিবার, মার্চ ৫, ২০২২ ৬:০৫ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
শনিবার, মার্চ ৫, ২০২২ ৬:০৫ অপরাহ্ণ
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
‘দরকার হলে আমি তান লগে লগে ঘুইরা ইলেকশন করবো। আমি আর ইলেকশন করতাম নায়। এই ধরনের মানুষের আমরার দরখার।’ সিলেট-৩ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি হাবিবুর রহমান হাবিবকে পাশে রেখে এ কথা বলেন এ আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি শফি আহমদ চৌধুরী। বলেন, ‘যে এলাকার উন্নয়ন করে, মানুষের রাজনীতি করে; এই মানুষের পিছে আমরার দৌড়ানো দরকার। আমি ইলেকশনে খাড়া হইছিলাম, আমার বিএনপির যারা আছইন এরা নিয়ে ঢুকাইছিলা। আমি বুঝছি নাই। এখন উনার (হাবিব) সঙ্গে দেখা হইছে আমি ইলেকশনে আইতাম নায়।’ গত ৪ঠা সেপ্টেম্বর সিলেট-৩ আসনের উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ আসনের তিনবারের আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি আলহাজ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুর পর শূন্য হওয়া আসনে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন হাবিবুর রহমান হাবিব, জাতীয় পার্টি থেকে প্রার্থী হন আতিকুর রহমান আতিক ও স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করেন শফি আহমদ চৌধুরী। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব জয়লাভ করে এমপি নির্বাচিত হন। পরাজিত হন শফি আহমদ চৌধুরী। তিনি ছিলেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সদস্য। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওয়ায় তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। নির্বাচনে হাবিবের মুখোমুখি ছিলেন শফি চৌধুরী। ওই সময় মাঠে দু’জনের মধ্যে কথার যুদ্ধ হয়েছে। একজন আরেকজনকে আক্রমণ করেও বক্তব্য রাখেন। এ কারণে তাদের দু’জনকে নিয়ে ভোটারের মধ্যে ছিল ভিন্ন আমেজ। তবে সেই মুখোমুখি বেশিদিন দীর্ঘ হয়নি। নির্বাচনের পরদিন হাবিবুর রহমান হাবিব নিজেই শফি আহমদ চৌধুরীর কাছে ছুটে গিয়েছিলেন। সহযোগিতাও কামনা করেছিলেন। গতকাল শনিবার দক্ষিণ সুরমার লতিফা-শফি চৌধুরী কলেজের ৫ তলা আইসিটি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠান। অনেক আগেই কলেজের এ ভবনের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করতে পারতেন হাবিবুর রহমান হাবিব এমপি। কিন্তু তিনি অপেক্ষায় ছিলেন শফি আহমদ চৌধুরীর। কারণ, এই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা শফি আহমদ চৌধুরী। এ আসনের এমপি থাকাকালে তিনি নারী শিক্ষার দ্বার খুলে দিতে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখন দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মধ্যে অন্যতম এই কলেজ। শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৭শ’। কলেজটি পরিচালনা করছেন শফি আহমদ চৌধুরী। দেশের বাইরে থাকার কারণে শফি আহমদ চৌধুরীর অপেক্ষায় ছিলেন হাবিবুর রহমান হাবিব এমপি। তিনি শফি চৌধুরীকে বলেও দিয়েছিলেন, ‘আপনি না আসা পর্যন্ত ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে না। আপনিই উপস্থিত থাকতে হবে।’ হাবিবুর রহমান হাবিব এমপি’র এই বদন্যতায় খুশি হয়েছেন শফি চৌধুরী। দু’জন আলোচনা করে সময় নির্ধারণ করলেন গতকাল শনিবার। দুপুরে শফি আহমদ চৌধুরী নিজেই কলেজ প্রাঙ্গণে এমপি হাবিবকে স্বাগত জানান। এরপর দু’জন গিয়ে ৫ তলা বিশিষ্ট আইসিটি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে অনুষ্ঠানে তারা দু’জনই বক্তৃতা করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাবিবুর রহমান হাবিব এমপি আফসোস করে বলেন, ‘দক্ষিণ সুরমার ছেলে কিংবা মেয়েরা সরকারের ভালো পজিশনের কোনো চাকরিতে যেতে পারে না। যদি শুনতাম কোনো ছেলে মেয়ে ভালো পোস্টে চাকরি করছে তাহলে মনটা ভরে যেতো। আমরা সাধ্যমতো সবই করছি। শফি আহমদ চৌধুরী নিজেই এ কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন। সুতরাং শিক্ষার্থীদের উচিত এখন পড়ালেখার মাধ্যমে নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তোলা। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পর চাকরির জন্য যদি কারো কোনো তদবির লাগে সেটা তিনি করবেন।’ হাবিব জানান, ‘দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজের পর যদি আর কোনো কলেজের নাম সরকারি প্রস্তাবনায় আসে তাহলে এই কলেজের নাম আসবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে আমি সেটা করবো।’ এদিকে হাবিবুর রহমান হাবিব এমপির এ আশ্বাসে আপ্লুত হন শফি চৌধুরী। বলেন, ‘নির্বাচনের পর আমি হাবিবুর রহমান হাবিব এমপির আচরণে মুগ্ধ হয়েছি। তিনি আন্তরিক। পারবেন এলাকার উন্নয়ন করতে। তার সঙ্গে আমার রক্তের সম্পর্কের চেয়ে বেশি সম্পর্ক হয়েছে।’ অনুষ্ঠানে তিনি স্মরণ করেছেন সিলেট-৩ আসনের সাবেক নেতা পীর হবিবুর রহমানকে। বলেন, ‘পীর হবিবুর রহমান তাকে ছোটো ভাইয়ের মতো স্নেহ করতেন। আমি তার বাড়ির রাস্তা করে দিয়েছি। উনি খুব গুনী ব্যক্তি ছিলেন। বর্তমানে যিনি আছেন তিনিও গুণী মানুষ।’ অনুষ্ঠানে শফি আহমদ চৌধুরী তার পরিবারের অবদান তুলে ধরে বলেন, ‘আমার পিতা ছিলেন আসাম প্রদেশের এমপি। অন্য ভাইরা সবাই অফিসার। তিনি কেবল রাজনীতিতে এসেছেন। ১৯৮৬ সাল থেকে তিনি ভোটের মাঠে ছিলেন বলে জানান। এমপি থাকাকালে এলাকার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করেছেন বলে জানান শফি আহমদ চৌধুরী।