একবিংশ শতাব্দীতে ইউক্রেনের যুদ্ধে কেবল রণাঙ্গনে চোখ রাখাই যথেষ্ট নয় - জনতার আওয়াজ
  • আজ দুপুর ১২:২৬, রবিবার, ১৩ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
  • jonotarawaz24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

একবিংশ শতাব্দীতে ইউক্রেনের যুদ্ধে কেবল রণাঙ্গনে চোখ রাখাই যথেষ্ট নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ: সোমবার, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২২ ৮:৩৮ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: সোমবার, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২২ ৮:৩৮ অপরাহ্ণ

 

আলী রীয়াজ

একবিংশ শতাব্দীতে যুদ্ধের ফ্রন্ট একটা নয়, অনেকগুলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধের ফ্রন্ট ছিলো দুটি – একটি রণক্ষেত্র, অন্যটি প্রচারণা। শেষোক্তটির কারণেই এই কথা চালু হয়েছে যে, যুদ্ধের প্রথম শিকার হচ্ছে সত্য। একথা বলার অপেক্ষা রাখেনা গোয়েবলসের সেই সর্বজ্ঞাত বাক্য – একটি মিথ্যা একশো বারের বার হলেও তা সত্য বলে স্বীকৃত হবে। দীর্ঘ মেয়াদে তা টিকে কিনা সেটা ইতিহাস বিচারের প্রশ্ন। কিন্ত সাময়িক ভাবে হলেও তা যে প্রভাব ফেলে সেটা মানতেই হবে। এই মিথ্যাচারের বা প্রচারণার ধারা অব্যাহত আছে। আজকের দিনে তা রূপ নিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যাচার, ফেক নিউজ ইত্যাদিতে।

তার রূপ যাই হোক, মাধ্যম যাই হোক যুদ্ধে যারাই জড়িয়ে পড়ে তাঁরাই চায় ‘তথ্যের প্রচারণায়’ এগিয়ে থাকতে। একবিংশ শতাব্দীতে তার অন্যথা ঘটছে না। এর পাশাপাশি হচ্ছে মানসিক লড়াই, ‘সাইক ওয়ার’ – মানসিকভাবে চাপ তৈরি। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সূচনার পরে রাশিয়া যে তাঁর পারমাণবিক যুদ্ধের অস্ত্রগুলো সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় নেবার ঘোষণা দিয়েছে সেটা হচ্ছে এই সাইক-ওয়ারের অংশ। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি ইউক্রেনের জনগণের মধ্যে ভীতি উৎপাদনের জন্যেই করা হয়েছে। যাতে করে প্রতিরোধের বদলে তাঁরা আত্মসমর্পণের জন্যে তাঁদের সরকারের ওপরে চাপ দেয়। মানসিকভাবে দুর্বল করে পরাস্ত করার চেষ্টা।

কিন্ত এই যুদ্ধের আরেকটি দিক হচ্ছে অর্থনৈতিক যুদ্ধ। এটাও একার্থে নতুন নয়। সম্ভবত সবচেয়ে পুরনো পদ্ধতি শত্রুকে অর্থনৈতিকভাবে পরাস্ত করার চেষ্টা। একে বলা হয় ‘ব্লিডিং টু ডেথ’। এই কৌশল বিশেষ করে ব্যবহৃত হয় অসম যুদ্ধের ক্ষেত্রে – ‘এসিমেট্রিকাল ওয়ার’ যাকে বলা হয়। কিন্ত যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে এর গুরুত্ব কেবল অসম যুদ্ধেই সীমিত থাকছে না, এর কারণ বিশ্বায়ন। সারা পৃথিবীর অর্থনীতি এমনভাবে সংযুক্ত হয়ে আছে, দেশগুলো এমনভাবে পরস্পর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে যে, আগের যে কোন সময়ের চেয়ে অর্থনৈতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করার প্রভাব অনেক বেশি।

ইউক্রেনে রাশিয়া যে যুদ্ধের সূচনা করেছে সেখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি একদিকে চলছে রণক্ষেত্রে লড়াই, চলছে প্রচারণার লড়াই, চলছে ‘সাইক ওয়ার’ বা সাইকোলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার এবং অর্থনৈতিকভাবে পরাস্ত করার লড়াই। পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টিকে রণকৌশল হিসেবে প্রয়োগ করছে। বিভিন্ন ধরণের নিষেধাজ্ঞা আরোপ হচ্ছে সেই কৌশলের ব্যবহার। এর মধ্যে আজকে সুইৎজারল্যান্ডের নেয়া সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতদিন ধরে সুইৎজারল্যান্ডকে ‘নিরপেক্ষ’ দেশ বলেই বর্ণনা করা হতো। কিন্ত এই যুদ্ধের সময়ে এতদিনের ‘নিরপেক্ষতার’ বিষয়টিকে দেশটি ত্যাগ করে রাশিয়ার সব এসেট ফ্রিজ করেছে। রণাঙ্গনে রাশিয়া এখন পর্যন্ত আশাব্যঞ্জক সাফল্য না পেলেও তাঁরা যে অচিরেই ইউক্রেনে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে সেটা নিশ্চিত। কিন্ত প্রশ্ন হচ্ছে অর্থনৈতিক ফ্রন্টে যে লড়াই হচ্ছে সেখানে রাশিয়ার অর্থনীতি টিকতে পারবে কি-না। ইতিমধ্যেই রুবলের দাম পড়ে গেছে, লোকজন তাঁদের সঞ্চয় ব্যাংক থেকে তুলে নিতে চেষ্টা করছেন। অথচ যুদ্ধের মাত্র তিন দিন গেছে। ইউক্রেনের এই যুদ্ধ হচ্ছে এই দুই ধরণের কৌশলের লড়াই।

এর পরে যেটা আসবে, যার লক্ষণ আমার আগেই দেখেছি, তা হচ্ছে সাইবার লড়াই। পশ্চিমের অর্থনৈতিক এবং অন্যান্য সেবা কাঠামোর ওপরে রাশিয়ার হ্যাকাররা হামলা চালাবে; আমি অনুমান করি তা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে – সফল হলেই আমরা তা জানতে পারবো। এই কাজ একা রাশিয়া করবে না – পশ্চিমারাও তাই করবে। অন্যদিকে পশ্চিমের ওপরে সাইবার হামলায় রাশিয়ার সঙ্গে আর কোন দেশ যোগ দেবে তা নিশ্চয় অনুমান করা যায়। ফলে ইউক্রেনের যুদ্ধে কেবল রণাঙ্গনে চোখ রাখাই যথেষ্ট নয়। একবিংশ শতাব্দীতে যুদ্ধের এই হচ্ছে রূপ। কিন্ত এ সবের মধ্যে এটাও মনে রাখতে হবে যে, এই লড়াইয়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন সাধারণ মানুষ – মানবিক বিপর্যয়ের মাত্র সূচনা হয়েছে। এই যুদ্ধের সিদ্ধান্ত যারা নেননি সেই সাধারণ নাগরিকরাই এর বোঝা সবচেয়ে বেশি বইবেন।

[লেখকঃ যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর, আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো এবং আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট। লেখাটি ফেসবুক থেকে নেয়া]

Print Friendly, PDF & Email
 
 
জনতার আওয়াজ/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com