এ কেমন বাজেট, প্রেমেও বাধা, বিয়েতেও বাধা!
নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
শুক্রবার, জুন ৭, ২০২৪ ৯:২০ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
শুক্রবার, জুন ৭, ২০২৪ ৯:২০ অপরাহ্ণ

সারফুদ্দিন আহমেদ
গনি মিয়া গরিব মানুষ। তার নিজের কোনো দোকানপাট নাই। সে নিউমার্কেটে কার্পেটের দোকানে ম্যানেজারির চাকরি করে। বেসরকারি চাকরি মানে কষ্টের চাকরি। কোনো বকশিশ–টকশিশ নেই। উপরি কামাই নাই। সে বেতন পায় ২০ হাজার টাকা।
২৮ বছর বয়সী গনি মিয়া এখনো বিয়ে না করলেও ‘ইয়ে’ করেছে। তাঁর ইয়ের নাম নিয়ে কাজ নাই। মেয়েটা দেখতে–শুনতে ভালো বলে তার মুঠোফোনে ইয়ের কথা শুনতে এবং নিজের কথা ইয়েকে শোনাতে ভালো লাগে।
কিন্তু এই বাজেট ঘোষণার পর গনি মিয়ার ওপর শনি ভর করেছে। ম্যানেজারগিরির ফাঁকে ফাঁকে আর দিন শেষে মেসে ফিরে রাতে ইয়ের সঙ্গে কথা বলতে যে খরচ হয়, তাতেই তার খবর হয়ে যায়। ১০০ টাকার টকটাইম চার্জ করতে তাকে ১৩৩ টাকা ২৫ পয়সা রিচার্জ করতে হয়। এখন সেই পরিমাণ কথা বলতে লাগবে ১৩৯ টাকা।
মানে, গনি মিয়া ১০০ টাকা রিচার্জ করলে সরকার কর হিসেবে ২৮ টাকা কেটে নেবে। বাকিটা তাকে দেবে।
মুঠোফোন নম্বরে সরাসরি কথা না বলে ইমো বা মেসেঞ্জারে কথা বলবে, সেখানেও একই ঘটনা। ইন্টারনেটেও ১৫ শতাংশের জায়গায় ঘ্যাট করে ২০ শতাংশ ভ্যাট বসানো হয়েছে।
প্রেমের আলাপে প্রলাপ যতই থাক, তা অপলাপ নয়। ‘ভালোবাসা হইল শরমের ব্যাপার, তয় এইটার দরকার আছে।’ ‘বহুব্রীহি’ নাটকের কাদের এই কথা জানত আর গনি মিয়া জানবে না, তা তো হয় না।
কিন্তু এবারের বাজেটে কলরেট ও ইন্টারনেটের দাম বাড়িয়ে সরকার এই দরকারি কাজকে গনি মিয়ার জন্য কঠিন করে দিয়েছে।
গনি মিয়ার ইদানীং ইয়ের সঙ্গে মুঠোফোনে ইয়ের চেয়ে বিয়ে নিয়ে আলাপ হচ্ছে বেশি। ইয়েকে সে বলে এসেছে, তাদের বিয়ে হবে বিউটি কমিউনিটি সেন্টারে। জীবনে এই প্রথমবার সে বিয়ে করবে, একটা স্বাদ–আহ্লাদ তো আছে! ধারদেনা করে হলেও সে কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ে করবে, এমনটাই ইয়েকে সে কথা দিয়েছিল।
কিন্তু গনির মাথায় বাজ ফেলেছে বাজেট। কারণ, ট্যাক্স রিটার্ন ছাড়া কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের অনুষ্ঠান করা যাবে না।
যার আয় বছরে সাড়ে তিন লাখ টাকার কম, অর্থাৎ কিনা মাসে যার ২৯ হাজার ১৬৬ টাকা রোজগার, তার তো ট্যাক্স দেওয়ার ব্যাপার নাই।
গনি মিয়া গরিব মানুষ। সে আয় করে, কিন্তু কর দেয় না। তার আয়ে টান আছে, টার্ন নাই; সে আয়কর রিটার্ন পাবে কোথায়? এখন কি কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ে করার জন্য তাকে নীলক্ষেতের আশপাশের কম্পিউটারের দোকান থেকে ভুয়া আয়কর সনদ জোগাড় করতে হবে?
গনি মিয়া ভাবল, ‘এই বাজেট গনি মারার বাজেট’। তার মন খারাপ হলো। সে তার ইয়েকে ফোন করতে গিয়েও করল না। বাজেটের নতুন ভ্যাটের ভয়ে সে এখন চ্যাটের মাধ্যমে ইয়ের সঙ্গে বিয়ের আলাপ সারার কথা ভাবল। কিন্তু মনে পড়ল, সেখানেও তো ভ্যাট বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার।
একটা কমিউনিটি সেন্টারের গেটের পাশে দাঁড়িয়ে সে বড় একটা শ্বাস ছাড়ল। তার গলা শুকিয়ে এল। ইয়ের বিরহে তার বুক ভেঙে আসলো।
এ ধরনের পরিস্থিতিতে গনি মিয়ার সিগারেটের খুব তিয়াস পায়। সে বিরহমাখা গলায় দোকানদারের কাছে সিগারেট চাইল।
দোকানদার সিগারেট দিল। গনি মিয়া একটা দশ টাকার নোট এগিয়ে দিল। দোকানদার বলল, ‘জানেন না আইজকা বাজেট ঘোষণা হইছে? জানেন না, বিড়ি–সিগারেটের দাম বাড়ছে? ১১ টাকা দ্যান!’
সূত্রঃ প্রথম আলো
জনতার আওয়াজ/আ আ
