কার্যকর কোনো প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হয়নি আওয়ামী লীগ - জনতার আওয়াজ
  • আজ রাত ১:১২, শুক্রবার, ৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি
  • jonotarawaz24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

কার্যকর কোনো প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হয়নি আওয়ামী লীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ: সোমবার, জানুয়ারি ৮, ২০২৪ ৭:২৩ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: সোমবার, জানুয়ারি ৮, ২০২৪ ৭:২৩ অপরাহ্ণ

 

নিউজ ডেস্ক
বিরোধী দল, যাকে তিনি ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ বলেছেন, তাদের বর্জনের পর ৭ই জানুয়ারির নির্বাচনে পঞ্চম মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভোট গণনা চলমান থাকা অবস্থায় বার্তা সংস্থা এএফপিকে নির্বাচন কমিশনের একজন মুখপাত্র বলেছেন, শেখ হাসিনার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ শতকরা কমপক্ষে ৫০ ভাগ আসনে জয়ী হয়েছে। দারিদ্র্যে নিষ্পেষিত থাকা এক সময়ের দেশকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে নেতৃত্ব দিয়েছেন শেখ হাসিনা। কিন্তু ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিরোধীদের বিরুদ্ধে বেপরোয়া দমনপীড়নের অভিযোগ আছে তার সরকারের বিরুদ্ধে। প্রতিযোগিতামূলক আসনগুলোতে কার্যত কোনো প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হয়নি তার দল। তবে কয়েকটি আসনে প্রার্থী দেয়া এড়িয়ে গেছে তার দল। পার্লামেন্ট একদলীয় হিসেবে চিহ্নিত করা হবে- এমনটা এড়ানোর দৃশ্যত এটা একটা প্রচেষ্টা। ‘বাংলাদেশ পিএম শেখ হাসিনা রি-ইলেকটেড ফর ফিফথ টার্ম আনঅপোজড’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এসব কথা লিখেছে দ্য স্ট্রেইটস টাইমস।

এতে আরও বলা হয়, গণ গ্রেপ্তারের মাধ্যমে বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিকে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। তারা এই নির্বাচনকে প্রতারণার নির্বাচন আখ্যায়িত করে অংশগ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। হরতাল এবং বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে তারা।

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আস্থা প্রদর্শন করতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন ৭৬ বছর বয়সী শেখ হাসিনা। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা বলেছেন, প্রাথমিক রিপোর্টে ভোটার উপস্থিতি শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ। ভোট দেয়ার পর প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, বিএনপি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। দেশে যাতে গণতন্ত্র অব্যাহত থাকে তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি আমি।
নির্বাচন কেন্দ্রগুলো থেকে পাওয়ার সময় অর্থাৎ এই রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত ফলাফলের ভিত্তিতে মিডিয়ার রিপোর্টে বলা হয়েছে, শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ ফল ঘোষণা করা হয়েছে। এতে পার্লামেন্টের দুই তৃতীয়াংশের বেশি আসনে জিতেছেন শেখ হাসিনা। বেসরকারি একটি নিউজ চ্যানেল তার প্রাপ্ত ফলে ওই সময় বলে যে, ৩০০ আসনের মধ্যে ২৬৪টিতে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়েছে ২০৪টি আসনে, মিত্র জাতীয় পার্টি জিতেছে ৯টি আসনে। বিজয়ীদের মধ্যে আছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাবিক আল হাসান।
প্রথমবারের মতো পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন অমিত বোস (২১)। কিন্তু অন্যরা বলেছেন, ফল কি হবে তা আগেই নিশ্চিত। ফলে তারা নির্বাচন নিয়ে তেমন ভাবেননি। রিক্সাচালক মোহাম্মদ সাইদুর (৩১) বলেন, যখন একটি দল নির্বাচন করছে অন্য দল নেই, তাহলে কেন আমি ভোট দিতে যাবো? বিএনপির শীর্ষ নেতা বলেছেন, ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে ভুয়া ভোট দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, যা দেখা যাচ্ছে তা নির্বাচন নয়, তা হলো বাংলাদেশের গণতন্ত্রের আকাঙক্ষাকে অসম্মান করা। এ বিষয়ে তিনি হতাশাজনক ছবি ও ভিডিও দেখেছেন।

গত বছর কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করেছে বিএনপি ও অন্য দলগুলো। তাদের দাবি, নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। ৭ই জানুয়ারি বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বিরোধীদের প্রতিবাদ বিক্ষোভ ভণ্ডুল করে দিয়েছেন কর্মকর্তারা। সেখানে শটগান এবং কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়। তবে নির্বাচনী কর্মকর্তারা বলছেন, ভোট হয়েছে শান্তিপূর্ণভাবে। সারাদেশে মোতায়েন করা হয়েছিল প্রায় আট লাখ পুলিশ ও সেনা সদস্য। ৭ই জানুয়ারি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক উপপরিচালক মিনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বিরোধী দলের সমর্থকদের এটা বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। বরং আরও দমনপীড়নের আশঙ্কায় ছিলেন তাদের অনেকে।

বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অষ্টম। এই দেশের রাজনীতিতে দেশের প্রতিষ্ঠা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্ত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মধ্যে বিরোধ আধিপত্য বিস্তার করে আছে দীর্ঘদিন। ২০০৯ সালে ভূমিধস বিজয়ের পর বিজয়ের বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন শেখ হাসিনা। তবে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ আছে। দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৮ সালে অভিযুক্ত হয়েছেন ৭৮ বছর বয়সী খালেদা জিয়া। তিনি অসুস্থ হয়ে এখন ঢাকার একটি হাসপাতালে। তার ছেলে তারেক রহমান এখন বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
গত বছর প্রতিবাদ বিক্ষোভকালে আগুন ও স্যাবোটাজের জন্য বিএনপিকে অভিযুক্ত করেন শেখ হাসিনা। তবে ওই বিক্ষোভের বেশির ভাগই ছিল শান্তিপূর্ণ। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে কয়েকজন নিহত হয়েছেন। নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের বিরুদ্ধে আছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও জোরপূর্বক গুমের অভিযোগ। তবে তারা এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। ২০২২ সালে কয়েক মাস ধরে জটিল বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও খাদ্যের মূল্য দ্রুত বেড়ে যাওয়ার পর শেখ হাসিনার সরকারের ওপর অর্থনৈতিক অসন্তোষ দেখা দেয় অনেকের মধ্যে। ভোটের আগে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের পিয়েরে প্রকাশ বলেছেন, কয়েক বছর আগের তুলনায় স্পষ্টত কমই জনপ্রিয় শেখ হাসিনার সরকার।

Print Friendly, PDF & Email
 
 
জনতার আওয়াজ/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ