কালের চক্র : বেবী সাউ - জনতার আওয়াজ
  • আজ রাত ৪:২৩, সোমবার, ২৯শে মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৯ই জিলকদ, ১৪৪৪ হিজরি
  • jonotarawaz24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

কালের চক্র : বেবী সাউ

নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ: সোমবার, এপ্রিল ১৭, ২০২৩ ৩:০২ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: সোমবার, এপ্রিল ১৭, ২০২৩ ৩:০২ অপরাহ্ণ

 

“ঝরা পাতাটির জন্য তোমার মনখারাপ করে?”

অন্যমনস্ক আমি হঠাৎ চমকে উঠি। তাকাই। ঋকের মনে একটা ঘন গোধূলি খেলা করছিল। যেন কত কত বছরের ইতিহাস, ছেড়ে আসা চরিত্র এবং অসংখ্য হারিয়ে ফেলা হৃদয় নিয়ে ব্যথাতুর সে।

আমি আলতো হেসে বললাম

–এবার কিন্তু চারপাশে নতুন, সবুজে ভরে যাবে!

— আমার করে! খুব করে। এই থাকা যেন কিছুক্ষণের কিংবা নেই-কে স্বাগত জানাতেই এত আয়োজন। জানিস তো, ঝরা পাতাটি একটি সময়, একটা কাল। ইতিহাসের জন্য সে হারিয়ে গেল। এবং একটা ইতিহাস লেখা হয়ে গেল কোথাও।

আমার মনও কিছুক্ষণের জন্য বিষণ্ণ। ইতিহাসের পাতার ভেতর হাঁটতে হাঁটতে ঢুকে পড়ি কত কত রাস্তা, অলিগলির ভেতর। চুয়াচন্দন, আতরের গন্ধ পাই। আর এক বিরাট অংশ হিসেবে ইতিহাসের প্রতিটি পাতাকে দেখি। চোখ বুলাই।

ঋককে কিছু বুঝতে না দিয়ে বলি, –এটাই নিয়ম। প্রকৃতির।

ঋক চুপ। জবাব নেই? নাকি সেও হাঁটছে ইতিহাসের পাতায়?

ভাবি, এই যে দু’দিন পরে নতুন বছর। পুরানো একটা ক্যালেন্ডারকে দেওয়াল থেকে সরিয়ে নতুন অন্য একের প্রতিস্থাপন তা কী আসলেই সময়কে ব্যাখ্যা করার জন্য? নাকি ক্যালেন্ডারটি একটি প্রতীক মাত্র। সরাসরি তো পালটায় না কিছুই। ঝরা পাতাটির এই ঝরে যাওয়া এবং দলমার বুকে এই ফিল্ড সার্ভেতে এসে প্রজাপতি মৌমাছি খুঁজে ফেরা ঋক-রা বারবার আসে। হারায়। মুছে যায়। আবার আসে ক্যালেন্ডার ধরে। সময় তারিখ মিলিয়ে। আবার ফিরবে। আসা এবং যাওয়ার এই মধ্যবর্তী সময়টুকুই আমাদের। আমাদের মতো করে সাজিয়ে নেওয়া। গুছিয়ে তোলা। তারপর পা দেওয়া নতুন এক উঠোনে। কিংবা ঝরা পাতাটির মতো ইতিহাসে মুখ লুকানো।

আজ এই বিষণ্ণ গোধূলিবেলায়, ডিমনার স্বচ্ছ জলধারা লাল হয়ে উঠেছে। পলাশের অবশিষ্ট নেই। একটা ছোট ডিঙি শুধু চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে নিচ্ছে ঋক এবং আমাকে। এই ডিঙিটি কি হাজার হাজার বছর আগেও এরকম ভাবে দেখেছিল আদম এবং ইভের হাতে হাত রেখে হেঁটে যাওয়ার মুহূর্তটি! ভেবেছিল, “যুগে যুগে আসে তারা জীর্ণ জীবনের লোভে!”

আমি অপর মানুষটিকে যতই আশ্বাস দিই না কেন, নিজের ভেতরেও একটা গভীর শ্বাস দলা পাকিয়ে উঠেছিল। আমি এই এপ্রিলের বিকেলে ঘেমে উঠতে আরম্ভ করলাম। দেখলাম, সমস্ত পৃথিবী ঝরে ঝরে পড়ছে। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, কথা, অক্ষর, শব্দ, গান –ঝরা পাতাটির মতো মিলিয়ে যাচ্ছে মহাকালের গহ্বরে। আর কিলবিল করে ছুটে আসছে ‘নতুন’। জায়গা ছাড়তে হবে। জায়গা দিতে হবে।

তবু, প্রত্যেকের জায়গা থেকে যায়। কারণ আপাত দেখা এবং চিরকালীনতাকে দেখার মধ্যে একটা পার্থক্য থেকেই যায়।

এই ঘটনার কিছুদিন পরে, আমি আমার ছেড়ে আসা স্কুলে যাই, আমন্ত্রিত হয়ে। আমার সেই নবম শ্রেণী, আমার প্রথম বয়:সন্ধি, প্রথম প্রেম, কবিতা ইত্যাদি ইত্যাদিকে ফিরে পাওয়ার নেশা আমাকে এতটাই বিহ্বল এবং উত্তেজিত করে তুলেছিল যে, পূর্বরাতে কিছুতেই ঘুমুতে পারি না। পরের দিন ফেরার পথে ঋকের কথাগুলো খুব মনে পড়ছিল— ঝরে গেছে। হারিয়ে গেছে। মুখগুলোই সব অচেনা।

স্বপ্নে দেখি, ঋক আর আমি নতুন একটা পথের খোঁজে হেঁটে যাচ্ছি অজস্র ঝরা পাতার মধ্য দিয়ে। শুধু খস খস… খস খস… মহাকাল একমনে লিখে যাচ্ছেন ইতিহাস…

নতুন বছর আসে। নতুন বছর যায়। ক্যালেন্ডার পালটে যায় সাড়ম্বরে, আর আমরা পাল্টাই নীরবে, অজান্তে…

Print Friendly, PDF & Email
 
 
জনতার আওয়াজ/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com