কূটনীতি-রাজনীতির আপ-ডাউন : রিন্টু আনোয়ার - জনতার আওয়াজ
  • আজ রাত ৪:৪৪, সোমবার, ২৯শে মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৯ই জিলকদ, ১৪৪৪ হিজরি
  • jonotarawaz24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

কূটনীতি-রাজনীতির আপ-ডাউন : রিন্টু আনোয়ার

নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ: শনিবার, মে ২০, ২০২৩ ৯:৪০ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: শনিবার, মে ২০, ২০২৩ ৯:৪১ অপরাহ্ণ

 

রাষ্ট্রের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় শক্তিশালী প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাথে দক্ষ কূটনৈতিক ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা সম্ভব নয়। আধুনিক যুগে বৈদেশিক সম্পর্ক চাট্টিখানি বিষয় নয়। ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্কই হোক বা বন্ধুপ্রতিম সম্পর্কই হোক, মনে করার কারণ নেই যে, সবাই সব সময় ভাইয়ের মতো মমতা মাখানো বা বন্ধুর মতো অন্তরঙ্গ আচরণ করবে নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে। বৈদেশিক সম্পর্ক পারস্পরিক স্বার্থনির্ভর। আমি তোমাকে দেবো, তুমি আমাকে দেবে। তবে সব কিছুর ঊর্ধ্বে জাতীয় স্বার্থ। দুটি রাষ্ট্রের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রেম-প্রীতির ব্যাপার নয়; দেয়া-নেয়ার বিষয়; মর্যাদা ও স্বার্থরক্ষার বিষয়। তাই বেশি, অতিরিক্ত, বাড়তি কিছুই ভালো ফল দেয় না, এর প্রমাণ আবারো আমাদের সামনে। ঢাকাস্থ কূটনীতিকদের বাড়তি নিরাপত্তা ইস্যুতে দেশ গরম। বিশ্বমিডিয়ায় নেতিবাচক ধারণা বাংলাদেশের অতিথি নিরাপত্তা নিয়ে। অযাচিত-অনাকাক্সিক্ষতভাবে এ কাজটা আমরাই করে ফেললাম। আর সেটা ঢাকতে গিয়ে অতিরিক্ত-অপ্রয়োজনীয় কথার ছড়াছড়ি। এক কথা দিয়ে আরেক কথা ঢাকতে গিয়ে অতিরিক্ত কথামালা। যে যা বলেন, সবই যুক্তিগ্রাহ্য প্রমাণের চেষ্টাও। এ সবের মধ্য দিয়ে একটা ধাক্কা পড়লো বাংলাদেশের বিদেশী মেহমান সমাদরের ঐতিহ্যের ওপর।

ঢাকায় বিদেশী কূটনীতিকদের নিরাপত্তা প্রত্যাহার নিয়ে এক পর্যায়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অর্থনৈতিক অবস্থার অজুহাত দিয়েছেন। অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে নানা কৃচ্ছ্রসাধন করতে হচ্ছে বলে যুক্তি দিয়েছেন তিনি। এক পর্যায়ে বলে ফেলেছেন, কূটনীতিকদের বাড়তি নিরাপত্তা-সুবিধা দিলে বিদেশীদের কাছে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা নিয়ে ভুল বার্তা যায়। আমরা ভুল বার্তা দিতে চাই না।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর শুরু করা কথা ও সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে পাকানো ভেজালের মাঝে নতুন আরেক কথা বলে বসেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বলেছেন, বাড়তি নিরাপত্তা চাইলে অর্থ দিতে হবে বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের। যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতদের কাছ থেকে যে বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহার করা হয়েছে, তা তারা চাইলে ফেরত দেয়া হবে। তবে এ জন্য তাদের অবশ্যই অর্থ দিতে হবে। বিদেশী ক‚টনীতিকরা না চাইলেও কয়েকটি দেশকে বিশেষ প্রয়োজনে বাড়তি বিশেষ নিরাপত্তা তথা সুরক্ষা দিয়ে আসছিল সরকার। সেটাও লিখিত নয়। মুখে মুখে দেয়া হুকুমই বাস্তবায়ন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী, সরকার এখন মনে করে, ওই বাড়তি নিরাপত্তা দেয়ার আর দরকার নেই।

ফলে, একেক সময় একেক কথা বলে জটিলতা আরো পাকানো হয়েছে। আসল সমস্যাটা তো ‘বাড়তি’ আর ‘মনে করা’ নিয়েই। প্রয়োজনে মনে হয়েছে বাড়তি সমাদর করা দরকার। আবার মনে হয়েছে দরকার শেষ। তাই শেষ। মূল কথা সবই মনে করা, প্রয়োজন আর বাড়তির বাড়াবাড়ি। আড়াল করার কোনো উপায় নেই যে, যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক আগের মতো ভালো যাচ্ছে না। সেটা হতে পারে নির্বাচন, গণতন্ত্রায়ণ, বাকস্বাধীনতা প্রশ্নে। অবশ্য দীর্ঘ সময় এ দেশগুলোই সরকারকে কেবল সমর্থন নয়, সহযোগিতাও দিয়েছে। ২০১৪-১৮ সালের প্রশ্নযুক্ত নির্বাচনকেও বৈধতা দিয়েছে। এখন নির্বাচন সামনে রেখে চিত্র ভিন্ন হয়ে যাচ্ছে। আরো ভিন্ন হওয়ার লক্ষণ স্পষ্ট। সুষ্ঠু নির্বাচনের তাগিদ দিচ্ছে মাত্রা ছাড়িয়ে।

স্বাভাবিকভাবেই সরকারের জন্য এটি বিব্রতকর। আর সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির জন্য পরমানন্দের। কখনো কখনো অবস্থার এমন প্রকাশ ঘটছে যেন, বিএনপির কথাগুলোই বিদেশী কূটনীতিকরা বলছেন। রাজনীতি আর কূটনীতি এখানে একাকার হয়ে পড়েছে। সেই একাকারে ফর্মে চলে যাচ্ছে কূটনীতি। রাজনীতির এ কূটনৈতিক ধকল এখন কূটনীতি না জানা মানুষও বুঝে ফেলছে। অতিকূটনীতি চর্চায় বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচনকে দেশের সীমানার বাইরের বিষয় আশয় করে ফেলার কাজটি শুরু হয়েছে আরো আগে থেকেই। এখন এটি একটি বিশেষ পর্যায়ে। সামনে তা আরো ডালপালা মেলছে। সাধারণ মানুষ দেখছে, কেউ বিদেশীদের কাছে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করে দেয়ার আরজি নিয়ে ঘোরে। কেউ বিদেশীদের কাছে সুষ্ঠু নির্বাচনের ওয়াদা দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু দেশ বলছে, কেবল তারা নন, বিভিন্ন দেশেরও নজর বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের দিকে। সরকারের শীর্ষমহল থেকেও সুষ্ঠু নির্বাচনের ওয়াদা শোনানো হচ্ছে বিদেশীদের কাছে। কিছু দিন ধরে যেসব হাই-প্রোফাইল বিদেশী এসেছেন বা সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের যারা বাইরে যাচ্ছেন তারা বিদেশীদেরকে আগামীতে বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু বা মডেল নির্বাচনের আশ্বাস শোনাচ্ছেন। জনগণ আর নামকাওয়াস্তেও ফ্যাক্টর থাকছে না। সরকার জনগণের চেয়ে বিদেশীদের কাছে ওয়াদা বেশি দরকার মনে করছে। আর বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য জনগণকে নিয়ে মাঠ গরম করার চেয়ে বিদেশীদের কাছে যাতায়াতকে বেশি কার্যকর ভাবছে যা করে ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮-তে করে টানা সফল হয়েছে আজকের ক্ষমতাসীনরা। প্রকৃতপক্ষে খেলা আগেরটাই। তবে এবার গতি একটু বেশি। আবার পরিস্থিতির বাঁকও নানান দিকে। আগের শত্রু-মিত্র চেহারা ভিন্ন। পরিস্থিতি বিবেচনায় নির্বাচন প্রশ্নে বিদেশীদের কোনো কথা শোনা হবে না বলে বাড়তি আওয়াজও দিয়ে রাখছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। আবার মাঝেমধ্যে কূটনীতিকদের কাছেও চলে যায় বিদেশ সফর কর্মসূচি করে। বড় বড় দেশ সমর্থন-সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে-মর্মে প্রচারণা চালায়। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে জাপান, যুক্তরাজ্যসহ শক্তিধর দেশগুলো মুগ্ধ-বিমোহিত; -এমন চমৎকৃত তথ্যও বাজারজাত করে। মোট কথা মুখে এদিক-ওদিক নানান কথা বললেও বিদেশীদের আয়ত্ত করার এক দুর্নিবার চেষ্টা আওয়ামী লীগ-বিএনপি দু’দিকেই। এ চেষ্টায় কেউ সেকেন্ড হতে চায় না।

আর বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর কয়েকটি ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে কেবল নির্বাচনের কথাই আনছে। নানা নসিহত-তাগিদ দিচ্ছেন তাদের ঢাকাস্থ দূতরা। নির্বাচনের সঙ্গে সুষ্ঠু, অবাধ, অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্যসহ কত শব্দ তারা ব্যবহার করছেন! বিষয়টি বিএনপির জন্য যারপরনাই পুলকের। বিএনপির এমন তৃপ্তির ঢেঁকুর সরকারের জন্য আসলেই সহ্য করা কঠিন যার একটি গরম প্রকাশ বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহার। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ আর বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের বাড়তি নিরাপত্তা সুবিধা দেবে না মর্মে দেয়া বার্তাটি মাটিতে পড়তে পারেনি। চার দিক থেকে প্রতিক্রিয়ার ধুম। কারো প্রতিবাদ, কারো খুশিতে নানান কথার ছড়াছড়ি। সব কূটনৈতিক মিশন ও কূটনীতিকদের নিরাপত্তা দিতে হোস্ট রাষ্ট্র বাধ্য বলে বিবৃতি দিতে একটুও সময় নেয়নি ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস। বিবৃতিতে বলা হয়, ভিয়েনা কনভেনশন অনুসারে সব কূটনৈতিক মিশন ও কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা থেকে সরার কোনো সুযোগ নেই হোস্ট রাষ্ট্রের, মানে বাংলাদেশের। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূনীতিকদের কয়েকজনের ওপর বিরক্তি সরকারের দিক থেকে মাঝেমধ্যেই প্রকাশ করা হয়েছে রাফ অ্যান্ড টাফ ভাষায়। তারা বেশি ‘ঢং’ করেন বলে উষ্মা জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া আরো কঠোর। যারা স্যাংশন দেয় তাদের কাছ থেকে বাংলাদেশ আর কোনো কেনাকাটা করবে না- এমন ঘোষণা কম দুঃখে দেননি তিনি। যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের ভূমিকায় তিনি ক্ষোভ জানিয়ে আসছিলেন অনেক দিন থেকেই। কারো কোনো চাপ তাকে টলাতে পারবে না- এমন সাহসী উচ্চারণের মাঝে এক পর্যায়ে বলেই বসেছেন, যুক্তরাষ্ট্র চাইলে বিভিন্ন দেশে সরকার পাল্টে দিতে পারে বলে। বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো আওয়ামী লীগকে আর ক্ষমতায় চায় না। সরকারের দিক থেকে আসা এ ধরনের কথাও এক ধরনের বাড়তি কথা। সরকারের কেন এমন অবস্থান ও কঠোর কথা জানান দেয়া জরুরি হয়ে পড়ল, এ প্রশ্ন ঘুরছে। আবার সরকারের মাঝে আতঙ্ক-অস্থিরতাও স্পষ্ট। বিদেশী ক‚টনীতিকদের অতিমাত্রায় তোয়াজ-তোষণ বা ক্ষেপে গিয়ে যা ইচ্ছা বলা কোনোটাই শোভন নয়। বাংলাদেশে এক সঙ্গে অশোভন কাজ দুটোই চলছে। ক‚টনীতিকদের পক্ষ থেকে সরকারকে জেনেভা কনভেনশনের কথা মনে করিয়ে দেয়া হয়েছে। আবার সরকারের দিক থেকে জেনেভা কনভেনশনের সবক শোনানো হচ্ছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, দু’পক্ষের কেউই জেনেভা কনভেনশন জানেন না, মনে করার কারণ নেই।

এ ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ছাড়াও তার পূর্ববর্তী কয়েকজনের নাম বেশ প্রাসঙ্গিক। তাদের সাথে জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী যা করা যায়, করছে সরকার। গত নভেম্বরে বাংলাদেশের ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোট দেয়া নিয়ে মন্তব্য করে প্রশংসা-সমালোচনার দুটোরই মুখে পড়েছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি। তিনি তার বক্তব্যে গত নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তির প্রসঙ্গটি এনেছিলেন। তাকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। ভিয়েনা কনভেনশন অনুসারে সরকার তা পারে। কনভেনশনটিতে সব কূটনৈতিক মিশন ও কূটনীতিকদের নিরাপত্তা হোস্ট দেশকে নিশ্চিত করার নির্দেশনা রয়েছে। আবার কূটনীতিকরা নিয়োগপ্রাপ্ত দেশে কোনো অসদাচরণ বা কূটনৈতিক নীতিবিবর্জিত কাজ করলে প্রত্যাহারসহ শাস্তি দেয়ার বিধানও আছে ভিয়েনা কনভেনশনে। এ কনভেনশনের বেশির ভাগ ধারাই কূটনীতিকদের অনুকূলে। আবার কূটনীতিককে ডেকে পাঠানো-প্রত্যাহারের প্রচলনও আছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। এর প্রায়শ্চিত্তও করতে হয়। বাংলাদেশকে কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো দেশের কূটনীতিককে বরখাস্তের কলঙ্ক পায়নি।

পরিশেষে, বিচক্ষণ ফরাসি প্রেসিডেন্ট শার্ল দ্য গল তাঁর এক বিখ্যাত উক্তিতে বলেছিলেন : রাজনীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শুধু রাজনীতিবিদদের ওপর ছেড়ে দেয়া যায় না। এর অনুকরণে আমরা বলতে পারি, কূটনীতি এমন জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে তা শুধু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের হাতে ছেড়ে দেয়া উচিত নয়। কোনো দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদি দক্ষ, কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন ও দেশপ্রেমিক কর্মকর্তাদের দ্বারা পরিচালিত না হয়, তাহলে সেই দেশের গণতান্ত্রিক সরকারও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করতে পারে না। কূটনৈতিক ক্ষেত্রে অদক্ষতার কারণে একটি দেশের অবস্থান আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দুর্বল হয়।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
rintu108@gmail.com

Print Friendly, PDF & Email
 
 
জনতার আওয়াজ/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com