খালেদা জিয়া রাজনীতিতে সক্রিয় মানেই নতুন স্বপ্ন দেখা
নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
বৃহস্পতিবার, মে ১১, ২০২৩ ৯:৩৩ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
বৃহস্পতিবার, মে ১১, ২০২৩ ৯:৩৩ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম যাকে মানুষ বিদ্রোহী কবি হিসেবেই চেনে। তার একটি বিখ্যাত কবিতার নাম বিদ্রোহী। নশ্বর পৃথিবীতে নির্যাতিত নিপীড়িত যে কোনো মানুষ বিদ্রোহ বিক্ষোভের দিশা পাবে এই কবিতায়। আমি ছিন্নমস্তা চন্ডী, আমি রণদা সর্বনাশী, আমি জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি!
আমি মৃন্ময়, আমি চিন্ময়,
আমি অজর অমর অক্ষয়, আমি অব্যয়!
আমি মানব দানব দেবতার ভয়,
বিশ্বের আমি চির-দুর্জয়,

স্বামী রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে সক্রিয় হন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। কিন্তু ১৯৮৪ সালের ১০ মে বিএনপির কাউন্সিলের মাধ্যমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দলের চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন তিনি। সেই হিসেবে দলের চেয়ারপার্সন হিসেবে রাজনীতিতে আসার ৪১ বছর পূর্ণ করেছেন তিনি। বর্তমান রাজনীতিতে অনেকটা নিষ্ক্রিয় থাকলেও দলের চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

ঘর থেকে বের হয়ে রাজপথে এসেছেন দেশনেত্রী আপসহীন নেত্রী বাংলাদেশের গণমানুষের নন্দিত নেত্রী ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি বেগম খালেদা জিয়া’। যেদিন প্রিয় এই নেত্রী স্বাধীন বাংলাদেশে রাজপথে আসেন সেদিন ছিল সর্বব্যাপী সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দুর্যোগ।এরশাদ শাহী স্বৈরশাসনের অন্ধকারে নিমজ্জিত স্বদেশে তিনি হয়ে ওঠেন আলোকবর্তিকা, অন্ধকারের অমানিশা দূর করে আলোর পথযাত্রী। দীর্ঘ ৯ বছর অত্যাচার অবিচার, জেল জুলুম সহ্য করে, নিষ্ঠা ও সততা ও দক্ষতার সাথে বিরাট দল বিএনপির নেতৃত্ব দিয়ে তিনবার গণরায়ে অভিষিক্ত হয়ে সরকার গঠন করে রাষ্ট্র পরিচালনা যোগ্যতায় স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। ১৯৮১ সালে ৩১ মে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর জাতি যখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছিল, সেই দুঃসময়ে তিনি দলের হাল ধরেন।

পুরো সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা সামরিক শাসনের দুঃশাসনে নিপতিত। স্বৈরশাসনের অবসান ঘটাতে তিনি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দেশে আজ ভোটের অধিকার নেই, গণতন্ত্র নেই। কথিত নির্বাচনে ক্ষমতাসীন সরকার স্বৈরাচারী আচরণ করছে। দেশের এ সঙ্কটকালে দেশবাসী তাকিয়ে আছে বেগম জিয়ার সংগ্রামী নেতৃত্বের প্রতি।
৩১ মে ১৯৮১ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এক ব্যর্থ অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামে নিহত হন। তার কিছুদিন পর নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারের হাত থেকে ক্ষমতা দখল করলেন সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদ।

আশির দশকের মাঝামাঝি দেশের ছাত্রসমাজ প্রথমে শুরু করল স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন। কিছুদিনের মধ্যে তাতে যোগ দিলো বিভিন্ন দল আর শ্রমিক সংগঠনগুলো। কিন্তু এরশাদের চাতুর্য আর রাষ্ট্রীয় পেশিশক্তির সাথে তারা ঠিক পেরে উঠছিলেন না। তখনো বিএনপি নিজ দল গোছাতে ব্যস্ত। দলের অনেকেই এরশাদের সাথে আগেই হাত মিলিয়েছেন। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের কারণে দল ও সে আন্দোলন এগিয়ে যায় এবং তিনি আন্দোলনের মধ্যদিয়ে আপসহীন নেতৃত্ব হিসেবে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হন। পরিণামে ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে এরশাদের পতন ঘটে।
১৯৯০ সালে ডিসেম্বরে এরশাদ একটি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। এই সরকারের একমাত্র কাজ ছিল একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা আর নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর।

১৯৯১ সালে সরকার গঠন করেন বিজয়ী দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তার সরকারের উল্লেখযোগ্য অর্জন ছিল দেশের শাসন ব্যবস্থা রাষ্ট্রপতি পদ্ধতি থেকে সংসদীয় পদ্ধতিতে ফিরে যেতে সংবিধান সংশোধন এবং কৃষকের ২৫ বিঘা পর্যন্ত খাজনা মওকুফ করা। বেগম জিয়া কৃষিঋণ পাঁচ হাজার টাকা সুদ-আসল পর্যন্ত মওকুফ এবং ১০ হাজার টাকা সুদ মওকুফ করে দেন। বেগম জিয়ার নেতৃত্ব তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিল পাস হলো। নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। যে কারণে ‘আমার ভোট আমি দিতে পেরেছি’। র্যাব গঠন করে জঙ্গিবাদের উত্থান ঠেকিয়েছিলেন, আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হয়েছিল তখন। আজ দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সরকার মিথ্যা মামলা দিয়েছে এবং দণ্ডও দিয়েছে। বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন তিনি। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে তাকে সরকার দিচ্ছে না। দেশের মানুষ চায় বেগম জিয়ার মামলা প্রত্যাহার, জনগণ চায় তার দণ্ড মওকুফ, দেশের মানুষ বেগম জিয়ার জন্য দোয়া করছে তিনি যেন সুস্থ হয়ে দেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে শরিক হতে পারেন।

বেগম খালেদা জিয়ার নতুন পথে যাত্রা শুরু হয়েছিল। সেদিন থেকে রাজভয়-লোকভয়, কোনো ভয়ই তাকে বিপথে নিয়ে যেতে পারেনি। সেদিন নিজেকে নতুন করে চিনেছিলেন তিনি। আর তাই কাউকে চিনতে বাকি ছিল না তার। সত্যি করে তার সত্যকে চিনছিলেন বলেই তার অন্তরে মিথ্যার ভয় ছিল না। ফলে বাইরের কোনো ভয়ই তার কোনো অনিষ্ট করতে পারেনি। জীবনানন্দ দাশের কবিতার পঙ্ক্তির মতো তিনি আমাদের মতো ক্লান্ত ও ক্লান্তিহীন নাবিকের হাতে তুলে দিয়েছেন এক অসাধারণ উজ্জ্বল বাংলাদেশ। সেই দিনে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, ‘আমি যুগে যুগে আসিয়াছি পুনঃ মহাবিপ্লব হেতু।’ তৎকালীন শাসকদের জন্য কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় শনি মহাকাল ধূমকেতু হয়ে তার আগমন ঘটেছিল। মহাপ্রলয়ের পরে মেঘমুক্ত আকাশে ইতিহাসের একটি নির্মল আত্মপ্রকাশ হয়তো আরম্ভ হবে এই পূর্বাচলে সূর্যোদয়ের দিগন্ত থেকে। আর একদিন অপরাজিত মানুষ নিজের জয়যাত্রায় অভিযানে সব বাধা অতিক্রম করে অগ্রসর হবে তার মহৎ মর্যাদা ফিরে পাওয়ার পথে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কথাগুলো প্রমাণিত হয়েছিল সেদিন। বাংলাদেশের অপরাজিত মানুষ সেদিন নতুন করে তার মহৎ মর্যাদা ফিরে পেতে জয়যাত্রা অভিযানে সব বাধা অতিক্রম করে অগ্রসর হওয়ার শপথ নিয়েছিল। প্রবল প্রতাপশালীরা এবং ক্ষমতা মদমত্ততাও আত্মম্ভরিতা যে নিরাপদ নয় সেই সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল নতুন করে। এই যে সব বাধা অতিক্রম করে জয়যাত্রা অভিযান সূচিত হয়েছিল, তারই ধারাবাহিকতায় বেগম জিয়া নব্বইয়ের ঐতিহাসিক গণআন্দোলনের নেতৃত্ব দিলেন। আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালে ৬ ডিসেম্বর এরশাদ সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয় এবং ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকার গঠন করেছিল। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তখন প্রথমবারের মতো শপথ নেন তিনি।

বেগম খালেদা জিয়া নীহারিকার মহা ক্ষেত্রে সে জ্যোতিষ্ক যিনি দেশবাসীর অন্তরে উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে পেরেছেন। তার প্রতিটি কাজে প্রতিটি পদক্ষেপে প্রচ্ছন্ন হয়ে আছে বাংলাদেশ। তিনি থাকবেন বাংলাদেশের মধ্যে। বাংলাদেশ তাকে নিয়ে গর্ব করে। ভবিষ্যতেও করবে।
তাই – বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতিতে সক্রিয় মানেই নতুন স্বপ্ন দেখা।
লেখক : প্রধান সম্পাদক
জনতার আওয়াজ ডটকম
জনতার আওয়াজ/আ আ
