খুলনায় অবরোধের চিত্রঃ এবার ড্রাইভার-হেলপারদের চেয়ে সাধারণ মানুষ বেশি ভয় পাচ্ছে’
নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২, ২০২৩ ৪:১৯ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২, ২০২৩ ৪:১৯ অপরাহ্ণ

ফকির শহিদুল ইসলাম,খুলনাঃ
খুলনা-পাইকগাছা রুটের বাসচালক মো. বাপ্পী শেখ বাসে যাত্রী ওঠানোর জন্য হাঁকডাক দিচ্ছেন। বাসের আশপাশে কাউকে দেখলেই পাইকগাছা যাবেন কি না জিজ্ঞাসা করছেন। বুধবার সকাল ১০টা ৫ মিনিটে তাঁর গাড়িটি ছেড়ে যাওয়ার কথা। হাতে ১০ মিনিট সময় বাকি থাকলেও তখনো পর্যন্ত যাত্রী হয়েছে চারজন।
১০টা ২০ মিনিটে বাপ্পী শেখ গাড়ি নিয়ে যখন শহরের বাইরের জিরো পয়েন্ট এলাকায় গিয়ে পৌঁছান, তখন বাসে যাত্রীর সংখ্যা সাতজন। খুলনা-পাইকগাছা রুটের অন্য একটি গাড়ি সেখানে দাঁড়ানো। পাশাপাশি খুলনা-সাতক্ষীরা রুটের আরও দুটি গাড়ি যাত্রীর অপেক্ষায়।
গাড়ি থেকে নেমে পান চিবাতে চিবাতে বাপ্পী শেখ বলেন, ‘১৫ মিনিট পরপর এই রুটের গাড়ি ছেড়ে যায়। যাত্রী পাচ্ছি না। তবু যেতে হচ্ছে। ওপর থেকে গাড়ি ছাড়ার অনুমতি দিয়েছে। আবার মালিক বলছেন, সবাই চালাচ্ছে তোমরাও চালাও। তবে নতুন গাড়ি নিয়ে ভয়ে তো থাকতেই হয়, কখন কী হয়, বলা তো আর যায় না।’
খুলনা বিভাগের সবচেয়ে বড় বাস টার্মিনাল সোনাডাঙ্গা আন্তজেলা বাস টার্মিনালের একটি বাসে বসে তিনজন চালকের সহকারী গল্প করছিলেন। তাঁরা বেশ হতাশার সঙ্গে বলেন, ‘যাত্রীর ওপর নির্ভর করে আমরা টাকা কমবেশি পাই। এই অবরোধের কারণে সমস্যা হয়ে গেল।’ তাঁদের একজন মো. আলামিন বলেন, ‘এবার ড্রাইভার-হেলপারদের চেয়ে সাধারণ মানুষ বেশি ভয় পাচ্ছে। লোকই হচ্ছে না। তবে লোক হোক না হোক, যেতে হচ্ছে। মালিক সমিতির নির্দেশে আমরা যাচ্ছি।
বিএনপি-জামায়াতের ডাকা দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে খুলনায় অভ্যন্তরীণ রুটের বাস, ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল করছে। দূরপাল্লার কয়েকটি রুটেও বাস চলছে। তবে যাত্রী একদমই কম।
যশোরগামী একজন যাত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, যশোরের দিকে কোনো গাড়ি যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে অটোরিকশায় উঠতে হচ্ছে। যেখানে বাসে ১৩০ টাকায় যশোর যাওয়া যায়, সেখানে এখন ৩০০ টাকা লাগছে।
সকাল ১০টা পর্যন্ত ঢাকা-খুলনা রুটের টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসের দুটি গাড়ি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। প্রতিটি গাড়িতে ১২ থেকে ১৪ যাত্রী পেয়েছিলেন বাসচালকেরা। টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসের সোনাডাঙ্গা কাউন্টারের কাউন্টার মাস্টার মো. রায়হান বলেন, যাত্রীর চাপ তো দূরের কথা, যাত্রীই পাচ্ছেন না তাঁরা। এ কারণে নির্দিষ্ট সময়সূচি অনুযায়ী গাড়ি ছাড়তে পারছেন না। তবে ভাড়া একই রকম রাখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সেখানকার ফাল্গুনী পরিবহনের কাউন্টার ব্যবস্থাপক মো. তামিম ইসলাম বলেন, ‘কয়েকটা ট্রিপ মিলে একটা ট্রিপ হয়তো হচ্ছে। তিন-চারজন নিয়ে গাড়ি ছাড়া তো সম্ভব নয়। আবার আমরা অনেক সময় খুলনা থেকে কম লোক নিয়েও ছেড়ে যাই, পথে যাত্রীও পাওয়া যায়। সেই উপায় তো নেই।’
সকালে খুলনা থেকে সব ট্রেনই সূচি অনুযায়ী ছেড়ে গেছে জানিয়ে খুলনা রেলস্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার সুদেব বড়াল প্রথম আলোকে বলেন, খুলনা রেলস্টেশন থেকে ছয়টি আন্তনগর ট্রেন ছাড়ে। সূচি অনুযায়ী প্রায় প্রতিদিন সকালে খুলনা থেকে রাজশাহী, সৈয়দপুর ও ঢাকার উদ্দেশে চারটি ট্রেন ছেড়ে যায়। সব ট্রেন শিডিউল মেনে চলছে।
খুলনা থেকে এখন মাত্র কয়রা রুটে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল করে। বিআইডব্লিউটিএর খুলনার কর্মী মো. লাবলু মোল্লা জানান, ওই রুটে সকালে দুটি এবং বিকেল ও রাতে আরও দুটি লঞ্চ ছেড়ে যায়। সূচি অনুযায়ী সকাল ৯টার লঞ্চটি যান্ত্রকি ত্রুটির কারণে ছাড়তে পারেনি। অন্য সব সূচি অনুযায়ী চলবে।
সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শহরের পরিস্থিতি একদমই স্বাভাবিক। রাস্তায় প্রচুর পরিমাণে ইজিবাইক চলছে। অল্প সময়ের জন্য তৈরি হওয়া চিরচেনা জট আজও আছে। দোকানপাট সব খোলা রয়েছে। কেডি ঘোষ রোডের বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের মূল গেট খোলা থাকলেও সেখানে কাউকে দেখা যায়নি। গতকাল মঙ্গলবারের চেয়ে পুলিশের উপস্থিতিও অনেক কম। নগরের কয়েকটি মোড়ে ব্যানার টানিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের বেঞ্চ পেতে বসে থাকতে দেখা গেছে। অবরোধের প্রথম দিনে শহরে বিএনপির পক্ষ থেকে কয়েকটি ছোট–বড় মিছিল হয়েছিল। সেখান থেকে বিএনপির তিন কর্মীকেও গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। তবে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত শহরে বিএনপির নেতা–কর্মীদের সরব উপস্থিতি বা মিছিল চোখে পড়েনি।
জনতার আওয়াজ/আ আ
