গনতন্ত্র, সুশাসন, ভোট ও শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠাই এখন বাংলাদেশের মূল রাজনীতি
নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
সোমবার, জানুয়ারি ৮, ২০২৪ ৭:২৪ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
সোমবার, জানুয়ারি ৮, ২০২৪ ৭:২৪ অপরাহ্ণ
এক.
বাংলাদেশের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে শ্রমজীবী মানুষের শ্রম ও ঘামের উপর। কৃষি উৎপাদন, প্রবাসী রেমিটেন্স এবং গার্মেন্টস শ্রমিকরাই সচল রেখেছে বাংলাদেশের অর্থনীতি।আরো স্পষ্ট করে বললে তুলনামূলক স্বল্প শিক্ষিত মেহনতি মানুষরাই বাংলাদেশের আর্থিক খাতের প্রাণ শক্তি। আর মধ্য ও উচ্চ শিক্ষিত বিরাট এক জেনারেশন এদেশে বেকার! কিন্তু দুর্ভাগ্য, যাদের পরিশ্রমে রক্ত আর ঘামে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরছে তারা আজ অধিকার থেকে বঞ্চিত। নায্য প্রাপ্যটা পাওয়ার জন্য রাজপথে তাদের লড়াই করতে হচ্ছে।ব্রিটিশভারত, পাকিস্তান পরবর্তী বাংলাদেশে এখনও শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস অনেক উজ্জ্বল। উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং
৭১’এর স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে শ্রমিক আন্দোলন বড় ভূমিকা রেখেছে।ঐতিহাসিকভাবে শ্রমিকশ্রেনী শুধু নিজের জন্য নয় সামগ্রিকভাবে দেশের উন্নয়ন ও গন মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই সংগ্রাম করে থাকে।
৬৯’এর গনঅভ্যুত্থান ৭১’এর মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী ৯০’এর গনঅভ্যুন্থানেও শ্রমিক কর্মচারীরা জোটবদ্ধ হয়ে( স্কপ) ছাত্র জনতার সাথে মিলে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে লড়াই করে রক্ত ঝড়িয়েছে। স্বৈরাচারের পতন, গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য শ্রমিক কর্মচারীরা বার বার রক্ত ঝড়িয়েছে। কলকারখানা ও অফিস ছেড়ে শ্রমিকরা রাজপথে নেমে এসেছে। অধিকারের প্রশ্নে ঐতিহাসিকভাবে শ্রমিকশ্রেনী যুগে যুগে আপোষহীন।
সত্তরের দশকে গাজীপুরের টঙ্গী, নারায়ণগঞ্জের আদমজী, খুলনার খালিশপুর, যশোহরের নোয়াপাডা আর চট্টগ্রামের শ্রমিক আন্দোলন এদেশের রাজনীতির গতিপথ পাল্টে দিয়েছিল। জনগনের অতীত ত্যাগকে কালিমালীপ্ত করে আওয়ামীলীগ তার প্রভুদের সহায়তায় বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে। আওয়ামীলীগ ও তার দোষররা অবাধ লুটপাট ও ভোগ দখল টিকিয়ে রাখার জন্য সুস্হধারার রাজনীতিকে কলংকিত করেছে। বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গবেষনা,বিজ্ঞান, জ্ঞানচর্চা ও চিরাচরিত সহঅবস্হানের ধারা বিনাশ করেছে এবং অফিস, প্রতিষ্ঠান ও কল কারখানায় শ্রমিক অন্দোলনের টুটি চেপে ধরে রেখেছে। বাংলাদেশের বাস্তবতায় শ্রমিকশ্রেনী এবং ছাত্র সমাজ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর শক্তি। ছাত্রসমাজ ও শ্রমিকশ্রেনী জেগে উঠলে বাংলাদেশের নতুন ইতিহাস লেখা সম্ভব। অলরেডি শ্রমিকরা নতুন উদ্দোমে সংগঠিত ও স্বোচ্ছার হয়েছে। গার্মেন্টস, পরিবহনসহ বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক অপ্রতিষ্ঠানিক শ্রমিকরা নিজেদের অধিকার নিয়ে মাঠে নামছে।
দুই.
বাংলাদেশে প্রায় ১৮ কোটি মানুষের মধ্য প্রায় ১২ কোটি ভোটার এবং বিবিএস’এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী শ্রমিক কর্মচারীর সংখ্যা সাত কোটি ৩৫ লাখ। সাত কোটি ৩৫ লাখ শ্রমিক কর্মচারীর মধ্য নিবন্ধিত শ্রমিক কর্মচারীর সংখ্যা সত্তর লাখ এবং অনিবন্ধিত শ্রমিকের সংখ্যা ছয় কোটি ৬৫ লাখ। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও শ্রম সংস্হার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী বাংলাদেশে শ্রমিক শোষণ ও নির্যাতনের ঘটনা উদ্বেগজনক।শ্রম আইন অনুযায়ী বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক কর্মচারীদের সংগঠন করার অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও পুলিশ ও আওয়ামীলীগ দলীয় ক্যাডারদের সহায়তায় সরকার ভিন্নমতসহ বিএনপি সমর্থক ট্রেড ইউনিয়নের অফিস সমুহের বেশির ভাগই দখল করে নিয়েছে। সরকার সমর্থক শ্রমিকলীগ বিরোধীদল সমর্থক শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম পেশীশক্তি ও প্রসাশনিক হস্তক্ষেপে বন্ধকরে দিয়েছে।
আওয়ামীলীগ তার প্রভুদের সহায়তায় ১/১১’এর চক্রান্তের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হাতে পেয়ে বিরোধী পক্ষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রমে অংশ নিতে বাধা দিয়ে আসছে।
ফলে সরকারি বেসরকারি প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানে একতরফাভাবে শ্রমিকলীগ সিবিএ নির্বাচিত হয়।
আওয়ামী লীগ সমর্থক শ্রমিক লীগ সরকারি ক্ষমতা ও পেশী শক্তির জোরে অবৈধ ও অনৈতিকভাবে সিবিএ নির্বাচিত হয়ে শ্রমিক দলের অন্তর্ভুক্ত বেসিক ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের গনহারে দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে হয়রানীমূলক বদলি শুরু করে। আওয়ামীলীগ সরকার বিরোধীদল সমর্থক শ্রমিক কর্মচারীদের বরাদ্ধকৃত বাসা বাতিল করে তাদের বাস্তচ্যুত করে। বিরোধীদলীয় সমর্থক শ্রমিক কর্মচারীদের ঘন ঘন হয়রানীমূলক বদলির ফলে শ্রমিক নেতাদের সন্তানদের লেখা পড়া বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে।
হয়রানীমূলক বদলীই শুধুনয়, মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে অনেককে চাকরিচ্যুত, বেতন ইনক্রিমেন্ট বন্ধ, এমনকি শারিরিক ও মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে অনেককে সর্বশান্ত করে দেওয়া হয়েছে। ফলে নিয়মতান্ত্রিক ও স্বাভাবিক শ্রমিক আন্দোলন হুমকির মুখে পড়েছে। জুলুম নির্যাতনের মাধ্যমে ভিন্ন মতকে স্তব্ধ করে দেওয়ার এ এক জঘন্য আওয়ামী চক্রান্ত যা খালি চোখে এসব ধরা পড়ছে খুব কম।এতদসত্বেও মিরপুর, গাজীপুর, ভালুকা,নারায়ণগঞ্জ আর চট্টগ্রামের শ্রমিক শ্রেণি জেগে উঠলে জনগনের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সময়ের ব্যাপার মাত্র। আকাশচুম্বী দ্রব্যমূল্যে বৃদ্ধির বাজারে শ্রমিকদের বর্তমান বেতনে জীবন যাপন বড়ই কঠিন হয়ে গেছে। এই অবস্থার অবসানের জন্য লড়াই করে তারা চাকরি হারাচ্ছে, নির্যাতিত হচ্ছে, মার খাচ্ছে। এই ভয়াবহ শোষণ যন্ত্রণার বিরুদ্ধে শ্রমিকশ্রেনী বিদ্রোহ, বিপ্লবের মাধ্যমে মুক্তির সংগ্রামে বৃহৎ উপন্যাস হয়ে দাঁড়াবে। সেদিকেই যাচ্ছে পরিস্থিতি।
তিন.
বাংলাদেশে শ্রম আইন অনুযায়ী ট্রেড ইউনিয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা ও সভা সমাবেশে অংশ গ্রহনের অধিকার থাকলেও শান্তিপূর্ন সমাবেশে অংশ গ্রহনের কারনে ট্রেড ইউনিয়ন শ্রমিকদের অনেক নেতাকে পুলিশ সম্পুর্ন বেআইনি ভাবে গ্রেফতার ও মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে। গ্রেফতার ও মিথ্যা মামলার ফলে তারা চাকরি হতে বরখাস্ত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। শ্রমিক আন্দোলন এবং শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কথা বলা আওয়ামী জামানায় এখন অপরাধের পর্যায়ে চলে গেছে। গ্রেফতারের পরের চিত্র আরও ভয়াবহ। গ্রেফতারকৃতদের পুলিশী হেফাজতে থানায় শারিরীক নির্যাতন করা হয়। বিনা বিচারে মাসের পর মাস জেলখানায় আটক করে রাখা হচ্ছে। বিরোধী মতের ট্রেড ইউনিয়ন ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের জেলখানায় প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে তাদের শারিরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। প্রয়োজনীয় খাদ্য, অসুস্থ হলে জরুরী চিকিৎসা এমনকি ঔষধ পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছেনা। যার সর্বশেষ উদাহরণ কারাগারে আটক বিচারধীন শ্রমিকদল নেতা ফজলুর রহমান কাজলের বিনা চিকিৎসায় করুন মৃত্যু।
বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশ বানচাল করার লক্ষে ২৬ অক্টোবর বিনা ওয়ারেন্টে শ্রমিক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের মুগদা থানা কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ফজলুর রহমান কাজলকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পুলিশের দেওয়া মিথ্যা মামলায় আদালত কাজলকে জামিন না দিয়ে কারাগারে প্রেরন করে। আটকাবস্হায় কাশিমপুর কারা কতৃপক্ষের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনে কাজল অসুস্থ হয়ে পড়ে। কারা কর্তৃপক্ষ হাতে হ্যান্ডকাপ ও পায়ে ডান্ডাবেড়ি পড়িয়ে ২৬ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেলে পরবর্তীতে সরওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। বিনা বেডে হাসপাতালের ফ্লোরে দু’হাতে হ্যান্ডকাপ ও পায়ে ডান্ডাবেড়ি পড়া অবস্থায় ২৮ ডিসেম্বর রাতে শ্রমিক দল নেতা ফজলুর রহমান কাজল বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করে। কারাগারে আটক শ্রমিকনেতা কাজলের হাতে পায়ে ডান্ডাবেরী পড়ানো অবস্হায় মৃত্যুতে সচেতন সকল মহল থেকে প্রতিবাদ হলেও সরকার ও কারাকর্তৃপক্ষ একেবারে চুপ। প্রকৃত পক্ষে কাজলের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি। এটা একটি হত্যার শামিল। এই হত্যার তদন্ত এবং বিচার হতে হবে।
চার.
বৈদেশিক মুদ্রা ও দেশেরসুনাম অর্জনকারী গার্মেন্টস খাতের শ্রমিকরা নায্য মজুরির দাবীতে আন্দোলন করতে গিয়ে আঞ্জুয়ারা খাতুন, রাসেল হাওলাদার, জালাল উদ্দীন ও ইমরান রাজপথে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। গার্মেন্টস মালিকদের পক্ষ নিয়ে পুলিশের পাশাপাশি সরকারীদলের সন্ত্রাসীরা কারখানায় হামলা করে হাজার হাজার শ্রমিককে আহত ও অনেককে চিরতরে পঙ্গু করে। শুধু হামলাই নয় উল্টো পুলিশ ও গার্মেন্টস মালিক পক্ষ আন্দোলনরত শ্রমিকদের নামে মামলা করে হাজার হাজার শ্রমিককে হয়রানি করছে এবং অনেককে চাকরি হতে ছাটাই করেছে।ন্যায়বিচার, সুশাসন ও গনতন্ত্র হত্যাকরে আওয়ামীলীগ বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে।অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্য আওয়ামীলীগ নিরপেক্ষ নির্বাচনী ব্যবস্হা ধ্বংস করে ৭’জানুয়ারী পূনরায় একটি পাতানো, ও একতরফা ডামী নির্বাচনের নাটক মঞ্চস্থ করেছে। দেশের সচেতন মানুষের পাশাপাশি শ্রমিক সমাজ পাতানো ও একতরফা ডামী নির্বাচনে অংশগ্রহন থেকে বিরত থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। শ্রমিক সমাজের প্রতিবাদী কন্ঠকে স্তব্ধ করতে শুধুমাত্র বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের প্রায় সহশ্রাধিক নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। বিরোধীদলসহ শ্রমিক দলের নেতাকর্মীরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছেনা। পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা প্রতিনিয়ত তাদের কর্মস্থল ও বাসাবাড়িতে হানা দিচ্ছে। বিরোধীদল ও শ্রমিক দলের নেতাকর্মীরা বাসায় রাত যাপন করতে পারছেন না। নেতাদের বাসায় না পেয়ে স্ত্রী, সন্তানদের পুলিশ হয়রানি করে ভীতিকর এক ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
পাঁচ.
এতো স্বপ্ন ভঙ্গ আর হতাশার মধ্যে আশার দিক হচ্ছে গনতন্ত্রকামী জনতার পাশাপাশি শ্রমিকরা আবার সংগঠিত হচ্ছে। শ্রমিকশ্রেনী সংগঠিত প্রতিরোধের মাধ্যমে নিজেদের কথা বলছে। রাস্তায় নামছে। রক্ত ও জীবন দিতেও পিছপা হচ্ছেনা। শ্রমিকশ্রেনী নতুন ইতিহাস লেখার রসদ জোগাচ্ছে। নব উদ্দোমে আন্দোলন ও সংগ্রামের ভিত্তি তৈরি করছে।শ্রমিকদের পক্ষে স্বোচ্ছার হয়েছে দেশ ও বিদেশের গনতান্তিক শক্তি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শ্রমিক অধিকারের পক্ষে কথা বলছেন। শ্রমিকদেরকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করলে,নির্যাতন করলে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওয়াজ উঠছে।বাংলাদেশের শ্রমিক আন্দোলনের কর্মী কল্পনা আক্তারের নাম উল্লেখ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও বিদেশ সচিব এন্টনি ব্লিংকেন কথা বলছেন। এইসব পদক্ষেপ বাংলাদেশের অধিকার বঞ্চিত শ্রমিক আন্দোলনে নতুন আশার দিক।শ্রমিকশ্রেনীর সাংগাঠনিক ও সমষ্টিগত লড়াই সমাজে ন্যায় ও সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য। শ্রমিকরা সাহস পাচ্ছে, সংগঠিত হচ্ছে, রাস্তায় নামছে শুধু বেতনের জন্য নয়,দেশ ও জনগনের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যও। সম্প্রতি ৩০’ সেপ্টেম্বর’২০২৩ ৪০ বছর পর ২১টি শ্রমিক সংগঠন “জাতীয় শ্রমিক কর্মচারী কনভেনশনে” মিলিত হয়ে ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলন গডে তোলার প্রত্যয় ঘোষনা করেছে।
আওয়ামী ফ্যাসিবাদ নিজেদের ভোগ দখলের উদ্দেশ্য রাজনীতি ও রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রন করার মাধ্যমে জাতিসত্তার বিকাশের মূলে আঘাত করেছে।
এই ঘোর দুঃসময়ে দরদী রাজনীতির পাশাপাশি কৃষক, শ্রমিক আর ছাত্র আন্দোলনই পারে বাংলাদেশকে মুক্তির পথ দেখাতে। দেশে এখন কৃষক আন্দোলন নেই, এই সুযোগে সরকার অত্যাবশ্যকীয় পরিশেবা বিলের মাধ্যমে শ্রমিক আন্দোলনের হাতে পায়ে বেরি পড়াতে চায়। আওয়ামীলীগ দেশে ফ্যাসিবাদ ও লুটতন্ত্র বহাল রাখার পরিকল্পনার অংশ হিসাবে শ্রমিক আন্দোলন নিয়ন্ত্রনের সাথে সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভিন্ন মতের ছাত্রদের সহঅবস্হান, ছাত্র সংসদ গঠন ও সুস্হ ধারার ছাত্র রাজনীতির প্রধান বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবে বৃহত্তর গন আন্দোলন গড়ে উঠতে পারছে না! দেশ ও জাতির এই ক্রান্তি লগ্নে শ্রমিক অধিকার নিয়ে স্বোচ্ছার হওয়ার ঘটনা আমাদের নতুন স্বপ্ন দেখায়।নিজেদের অধিকার এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনেও শ্রমিক আন্দোলন অনেক বেশি প্রয়োজন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন পদক্ষেপ শ্রমিকদের প্রাপ্য অধিকার পেতে সহায়ক হবে।নতুন দিনের সূচনা করতে শ্রমিক আন্দোলন অতীতের মতো ভবিষ্যতেও নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবে।শ্রমিকদের মুক্তি এবং বাংলাদেশের মুক্তির জন্য শ্রমিক আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল সেই লড়াইয়ের একটা শক্ত ভিত্তি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। আশা রাখছি মুক্তির এই সংগ্রামে মানুষ বিজয়ী হবে ইনশাল্লাহ।
অতীতে শ্রমিকশ্রেনী বার বার সভ্যতার গতিপথ পালটে দিয়েছে। আধুনিক সমাজে আজও শ্রমিকের সেবা ছাড়া একটি মুহূর্ত কল্পনা করা যায় না। শ্রমিকদের রক্ত আর ঘামের উপর দাঁড়িয়ে আছে এই সভ্যতা।শ্রমিকদের নায্য মজুরী থেকে বঞ্চিত রেখে তাদের উপর জুলুম করা চরম মানবাধিকারের লঙ্ঘনের শামিল। এই জুলুমের অবসান করে একটি কল্যাণকামী ও ন্যায় ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন আওয়ামী ফ্যাসিবাদের কবল থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করা। আসুন এই লড়াইয়ে অংশ নিয়ে মা মাটি আর মাতৃভূমিকে মুক্ত করি।
লেখক :বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী।