চীন ও ভারতে নির্লজ্জ ধরনা দিয়ে কি পার পাবে আওয়ামী লীগ?
নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
সোমবার, আগস্ট ১৪, ২০২৩ ৯:৫৮ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
সোমবার, আগস্ট ১৪, ২০২৩ ৯:৫৮ অপরাহ্ণ

আমিরুল ইসলাম কাগজী ও ড মোর্শেদ হাসান খান
এক।
আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল সম্প্রতি ভারত সফর করে এসে গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সেখানে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে একটি আশার আলো ও একটি ক্ষোভের আভাস পাওয়া যায়। আশার আলো হলো; আওয়ামী লীগের ধারণা, নির্বাচনে দলটির পাশে থাকবে ভারত। আর ক্ষোভের কথা হলো, বিএনপি বিদেশীদের ওপর নির্ভর করে এখন দেখছে যে কিছু নেই, পানিতে ডুবে যাবে।
আমরা প্রথম আলো পত্রিকার রিপোর্ট দেখে নিতে পারি —
আগামী নির্বাচনে ভারতকে পাশে পাবে আওয়ামী লীগ, এমন একটা ধারণা নিয়ে দেশে ফিরেছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রতিনিধিরা। তিন দিনের ভারত সফরে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলটি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি-বিজেপির সভাপতি জেপি নাড্ডাসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই দলের সদস্যদের সূত্রে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতা ও সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর জোর দিয়েছেন। এক্ষেত্রে মার্কিন ভিসা নীতি, র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞাসহ নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের চাপের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। ভারতের নেতারা জানিয়েছেন, তারা তাদের মত করে এ বিষয়ে কাজ করছেন। ক্রমে এর প্রভাব দেখা যাবে। — প্রথম আলো/ আগস্ট ১১, ২০২৩।
রিপোর্টে পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে যে আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দল ভারত সরকারের কাছ থেকে একটা ইতিবাচক আশ্বাস নিয়ে দেশে ফিরেছেন। তারা খুব খুশি। আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, মার্কিন ভিসা নীতি এবং র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞাসহ নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের চাপের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভারতের নেতারা জানিয়েছেন, তারা তাদের মত করে এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছেন । আর বাংলাদেশের নির্বাচন সংবিধান অনুসারেই হোক সেটাই চায় ভারত।
তাহলে তো ঝামেলা চুকে গেল, ভারত যেহেতু আওয়ামী লীগের পাশে থাকবে, সেহেতু ২০১৪ সালের মত আরেকটি ভোটারবিহীন নির্বাচন হতে সমস্যা কোথায়? ২০১৪ সালে ভোট করার জন্য ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং বাংলাদেশে এসেছিলেন এবং নির্বাচনে এরশাদের জাতীয় পার্টিকে শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিয়ে দেশে ফিরে গিয়েছিলেন। ফল ১৫৪ এমপি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত।-এটা পুরনো খবর। নতুন খবর হচ্ছে, রাজ্জাক সাহেব পাঁচ জন জাঁদরেল নেতাকে নিয়ে ভারত সফর করে আসলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষে মোদি সরকারের সমর্থন আদায় করে নিয়ে আসলেন। আর ঢাকায় এসেই সংবাদ সম্মেলন করে বললেন, বিএনপি বিদেশীদের ওপর নির্ভর করে এখন দেখছে যে কিছু নেই, পানিতে ডুবে যাবে।
দুই।
কয়েকদিন আগে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়াকে পাঠানো হয়েছিল চীন সফরে। তারা চীনকে শেখ হাসিনার পাশে থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। জবাবে চীনা কর্তৃপক্ষ বলেছে, উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার ধারাবাহিকতা রক্ষায় শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। বাংলাদেশের নির্বাচনের মতো অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পশ্চিমা হস্তক্ষেপ তারা পছন্দ করছে না।
রীতিমতো মামা বাড়ির আবদার। কে না জানে ২০১৮ সালের নির্বাচনে আগের রাতের ভোট গ্রহণ করার কৌশল বাতলে দেওয়ার মহান কারিগর ছিল এই চীন। এই মেনন সাহেব পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘আমরা তো রাতের ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য।’ সে কথা কি তিনি এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন? তার এই কথার জবাব দেওয়ার জন্য দলের সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপিকে বিবৃতি দিতে হয়েছিল। সেখানে বলতে হয়েছিল এটা মেনন সাহেবের নিজস্ব বক্তব্য, দলের বক্তব্য নয়। এখন সেই মেনন সাহেব রাতের ভোটের সরকারকে আবারো ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে চীনের দ্বারস্থ হয়েছেন। বাকি থাকল রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়া। সেখানে কাদের পাঠানো হবে? সেক্ষেত্রে ইরানকে কাজে লাগানো যেতে পারে। ইরান তো এই নিশি রাতের সরকারকে নির্লজ্জ সমর্থন দিয়ে গেছে।
তিন।
এসব কথা বলার একটাই উদ্দেশ্য, আওয়ামী লীগ তার অবৈধ শাসন ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য তাদের যত বিদেশি মিত্র আছে সবার কাছে যেতে পারবে। দরকার হলে তাদের সব উজাড় করে দিতে পারবে। ভারতকে যা দিয়েছি সারাজীবনে তা পরিশোধ করতে পারবে না, এই উক্তি সবার মনে আছে বৈকি। তাতে কোন দোষ নেই বরং তারা সেটা বুক চেতিয়ে জনগণের সামনে উপস্থাপন করবে। আবার গলাবাজি করে বলবে বিএনপি বিদেশিদের কাছে ধরনা দেয়। —- এরই নাম আওয়ামী লীগ। তরুণ সমাজ যারা ভোটার হওয়ার পরও ভোটকেন্দ্রে যেতে পারো নাই তারা চিনে রাখো এই দলটিকে। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালেও দলটির এমন চরিত্র ছিলো। সেটা ইতিহাসের পাতায় কিংবা গুরুজনদের কাছ থেকে শুনে থাকবে। এখন তাদের আসল চরিত্র তোমরা স্বচক্ষে দেখছো।
চার।
ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে একটা কথাই বলছেন, তার দেশ বাংলাদেশে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়। মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেখতে চায়। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বিঘ্নে সভা সমাবেশ করুক এটা চায়। তিনি তো কোন দলের পক্ষ হয়ে কথা বলছেন না। তিনি বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ নিয়ে কথা বলছেন। একই সঙ্গে তিনি বলে দিচ্ছেন যদি কেউ এই সমস্ত কর্মকাণ্ডে বাধা সৃষ্টি করে, তাহলে সেই বাধা সৃষ্টিকারীদের উপর আমেরিকার নতুন ভিসা নীতি আরোপ করা হবে।
আওয়ামী লীগের অবৈধ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি, সবাই মিলে পিটার হাসের এই কর্মকাণ্ডকে বিদেশি হস্তক্ষেপ বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলছেন। কিন্তু তাঁরা নিশ্চয়ই দেখেছেন যে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বৈশ্বিক দুর্নীতি বিভাগের সমন্বয়ক রিচার্ড নেফিউ বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। এ সময় তিনি দুদক কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন যে বিশ্বব্যাপী দুর্নীতি বিরোধী কার্যক্রমকে যুক্তরাষ্ট্র অগ্রাধিকার দিচ্ছে। ভবিষ্যতে এটি ব্যবসায় ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হতে পারে। তার মানে বুঝতে পারলেন? বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে যে বাংলাদেশের এমন ১১ জন ব্যবসায়ীর নাম যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আছে যাদের সেখানে বিনিয়োগের পরিমান গড়ে ৫ মিলিয়ন ডলারের ওপরে। তাদের বিচার করার ক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের আছে। ভিসানীতির পরে এবার দুর্নীতি বিষয়ক খড়গ, কোন পথে বাংলাদেশ?
জনতার আওয়াজ/আ আ
