জাহাঙ্গীরের ছায়ার কাছেই হেরে গেলেন আজমত - জনতার আওয়াজ
  • আজ ভোর ৫:৪৬, সোমবার, ২৯শে মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৯ই জিলকদ, ১৪৪৪ হিজরি
  • jonotarawaz24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

জাহাঙ্গীরের ছায়ার কাছেই হেরে গেলেন আজমত

নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ: শুক্রবার, মে ২৬, ২০২৩ ১:৫২ পূর্বাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: শুক্রবার, মে ২৬, ২০২৩ ১:৫২ পূর্বাহ্ণ

 

জাহাঙ্গীরের ছায়ার কাছেই হেরে গেলেন আজমত
গাজীপুর থেকে

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বাজিমাত করলেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী এডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ১৬১৯৭ ভোটে হারিয়ে তিনি এ সিটির প্রথম নারী মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। জায়েদা ভোট পেয়েছেন ২,৩৮,৯৩৪, আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২,২২,৭৩৭ ভোট। দিনভর অনেকটা শান্তিপূর্ণ ভোট হলেও রাতে ফল ঘোষণায় দীর্ঘ সময় লাগায় টানটান উত্তেজনা দেখা দেয়। দুই প্রার্থী হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে থাকায় তাদের সমর্থকদের মধ্যেও উত্তেজনা বিরাজ করে। ফল প্রকাশে দেরি হওয়ায় প্রশ্ন তোলেন মেয়র প্রার্থীরা। গভীর রাতে চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম।
ফল ঘোষণার শুরু থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন এগিয়ে ছিলেন। দুই প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান বেশি না হওয়ায় অনেকে নানা শঙ্কা প্রকাশ করতে থাকেন। চূড়ান্ত ফল ঘোষণার আগেই অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আজমত উল্লা বিজয়ী হয়েছেন বলে তাকে অভিনন্দন জানাতে থাকেন। ভোটের ফল দেরিতে আসায় অনেকে সামাজিক মাধ্যমে নানা রকম মন্তব্য করেন।
গাজীপুর সিটি নির্বাচন বর্জন করে এতে কোনো প্রার্থী দেয়নি বিএনপি ও সমমনা দলগুলো।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মূল প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন সাবেক মেয়র এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। শুরুতে জাহাঙ্গীর আলম নিজেই প্রার্থী হয়েছিলেন। খেলাপি ঋণ থাকার কারণে তার মনোনয়ন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। আপিল করেও মনোনয়ন ফিরে না পাওয়ায় তিনি মা জায়েদা খাতুনকে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামেন। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনী মাঠে থাকায় তাকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করে আওয়ামী লীগ। নিজের মনোনয়ন বাতিল, দলীয় পরিচয় হারানোর পরও মাকে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে দৃঢ় অবস্থান নেন জাহাঙ্গীর আলম। প্রচার প্রচারণার সময় বেশ কয়েক দফা তিনি ও তার মা হামলার শিকার হন। প্রচারে বাধা দেয়া, এজেন্টদের হুমকি ও হয়রানি করার অভিযোগ করা হয় জায়েদা খাতুনের পক্ষ থেকে। ভোট গ্রহণের দিন অনেক কেন্দ্রে জায়েদা খাতুনের এজেন্টও দেখা যায়নি। কিন্তু ভোটের ফলে বাজিমাত করেন জায়েদা। মূলত তার ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের ছায়ার কাছেই হেরে যান আওয়ামী লীগের প্রার্থী। সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর মেয়র থাকার সময় গাজীপুরে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি বিতর্কিত বক্তব্যের জেরে তাকে দলীয় পদ হারাতে হয়। সাময়িক বরখাস্ত করা হয় মেয়র পদ থেকে।
গতকাল বিকাল চারটায় ভোট শেষ হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই ফলাফল আসতে শুরু করে নগরীর বঙ্গতাজ মিলনায়তনে স্থাপিত ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্রে। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা শুরু হয় অনেক পরে।

মিশ্র মডেলের ভোট: ওদিকে বড় কোনো অঘটন ছাড়াই শেষ হয়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। সকাল আটটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত চলা নির্বাচনে ৫০ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে বলে ধারণা করছে নির্বাচন কমিশন। সকালে শান্তিপূর্ণভাবেই ভোটগ্রহণ শুরু হয়। পুরো সিটিতেই ভোটগ্রহণ করা হয় ইভিএমে। সকালে ভোট দিয়ে প্রধান দুই প্রতিদ্বনিদ্ব প্রার্থী নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ। তারা উভয়েই নিজেদের জয়ের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সামনে বড় এক চ্যালেঞ্জ হয়ে এসেছিল এই নির্বাচন। নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে করা গেলেও নানা অভিযোগ ছিল সাধারণ ভোটারদের। ইভিএম এ ধীর গতি। আঙ্গুলের ছাপ না মেলা। কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করে ভোটারদের নির্দিষ্ট প্রার্থীর পক্ষে ভোট দেয়ার প্রচারণা চালানোর অভিযোগ করেছেন ভোটাররা। এছাড়া ইভিএম মেশিন নষ্ট হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় ভোটারদের। সম্প্রতি হওয়া কয়েকটি নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় গাজীপুরে একটি মিশ্র মডেলের ভোট হয়েছে। এখানে আগের নির্বাচনগুলোর মতো বড় সংঘাত সহিংসতা ও কেন্দ্র দখলের মতো পরিস্থিতি হয়নি। কোনো কেন্দ্রের ভোট বাতিল করতে হয়নি নির্বাচন কমিশনকে। কিন্তু পুরনো কিছু অভিযোগ ছিল আগের মতোই।
নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নগরজুড়ে সতর্ক অবস্থানে ছিল। অনিয়মের কারণে কয়েকজনকে আটকও করা হয়। একটি কেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশ ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
ওদিকে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। ভোট গ্রহণ শেষে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, আমরা অত্যন্ত সন্তুষ্ট। জনগণ ও ভোটাররা সন্তুষ্ট। প্রার্থীরা সন্তুষ্ট। আপনাদের প্রতিনিধিরা (সাংবাদিক) সন্তুষ্ট। গণমাধ্যমেই তারা এ প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনার আলমগীর বলেন, গাজীপুরের ভোট মিডিয়াসহ সবাই দেখেছেন; সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষেভাবে ভোট হয়েছে। প্রার্থী সবাই সন্তুষ্ট, যেই ফলাফলই হোক, সবাই মেনে নেবে বলেছেন।

আলমগীর বলেন, নির্বাচন কমিশনের আমরা দেখেছি; রিটার্নিং অফিসার, আইন শৃঙ্খলাবাহিনী, গণমাধ্যমের প্রতিবেদন ও ইসির নিজস্ব পর্যবেক্ষকসহ সবার কাছ থেকে একই তথ্য পেয়েছি- গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অবাধভাবে হয়েছে। ভোটে যারা অংশ নিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা, বিশেষ করে মেয়র প্রার্থীরা বলেছেন, নির্বাচনী পরিবেশ ও ব্যবস্থায় তারা অত্যন্ত সন্তুষ্ট।
ইসির পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৩ সালে গাজীপুরের নির্বাচনে ৬৮ শতাংশ এবং ২০১৮ সালে ৫৮ শতাংশ ভোট পড়েছিল। এবার ভোটের হার ৫০ শতাংশের কাছাকাছি হতে পারে বলে ধারণার কথা জানান ইসি আলমগীর।

Print Friendly, PDF & Email
 
 
জনতার আওয়াজ/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com