জোরালো হচ্ছে কোটাবিরোধী আন্দোলন - জনতার আওয়াজ
  • আজ বিকাল ৫:৪৬, বুধবার, ১৪ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩১শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৬ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি
  • jonotarawaz24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

জোরালো হচ্ছে কোটাবিরোধী আন্দোলন

নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ: বৃহস্পতিবার, জুলাই ৪, ২০২৪ ১:২৪ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: বৃহস্পতিবার, জুলাই ৪, ২০২৪ ১:২৫ অপরাহ্ণ

 

জনতার আওয়াজ ডেস্ক

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র বহালের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো আন্দোলন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে পদযাত্রা, বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেন তারা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন জোরালো ভাবে চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। তবে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে দাবি করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, বুধবার (৩ জুলাই) বিকাল তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক (ডেইরি গেইট) সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গিয়ে অবরোধ করেন তারা।

তাদের অন্য দাবিগুলো হলো: ২০১৮ এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সকল গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া এবং সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা; সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে; দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।

অবরোধের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজুল ইসলাম মেঘ বলেন, ‘আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে এসেও দেখছি সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা বিদ্যমান। এই বৈষম্যের জন্যই কি মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করেছিলেন? আমরা ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহালসহ চার দফা দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছি। অতিদ্রুত কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তৌহিদ সিয়াম বলেন, ‘আগামীকাল ৪ জুলাই কোটা নিয়ে আপিল বিভাগের শুনানি হবে। সেখানে যদি সরকারি চাকরিতে কোটা বহাল রাখা হয়, তাহলে আমাদের আন্দোলন আরো জোরালো হবে।’

এদিকে অবরোধের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ প্রক্টরিয়াল বডির অন্য সদস্যরা। তারা শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন, তবে শিক্ষার্থীরা পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যান। পরে বিকাল পাঁচটায় অবরোধ কর্মসূচি তুলে নেন তারা।

জবি প্রতিনিধি জানান, সরকারি চাকরিতে সব ধরনের কোটা বাতিলের দাবিতে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল, ছাত্র সমাবেশ ও পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার মোড় অবরোধ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঁঠালতলা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন আন্দোলনকারীরা। মিছিলটি বাংলাবাজার, ভিক্টোরিয়া পার্ক ও রায় সাহেব বাজার হয়ে তাঁতীবাজার মোড় অবরোধ করে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা।
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর থেকে মিছিল বের করেন তারা। মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে একই জায়গায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা।

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রাহাত হোসেন বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের জন্য একটি স্বাধীন, সার্বভৌম গণতান্ত্রিক এবং বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তাহলে এখন কেন স্বাধীন বাংলাদেশে মেধাবী শিক্ষার্থীরা কোটা নিয়ে বৈষম্যের শিকার হবে? প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরির ৫৬ শতাংশ যদি কোটার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয় তাহলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা কী করবে। মেধাবীদের পক্ষে অবহেলা এবং বৈষম্য মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। শেকৃবি প্রতিনিধি জানান, কোটা বাতিল করে মেধাভিত্তিক নিয়োগের দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ ও সড়ক অবরোধ করেছেন রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিল ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে আগারগাঁও-খামারবাড়ি রাস্তা অবরোধ করেন আন্দোলনরত শতাধিক শিক্ষার্থী। এ সময় রাস্তায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে দুপুর ১টার দিকে রাস্তা ছেড়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

কোটা নিয়ে অপপ্রচারের প্রতিবাদে রাবিতে মানববন্ধন: মুক্তিযুদ্ধ, বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে অপপ্রচার এবং অবমাননার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম শাখার সদস্যরা। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে এ মানববন্ধন করেন তারা। সংগঠনের সহসভাপতি হবিবুর রহমান বলেন, এ কর্মসূচির উদ্দেশ্য যারা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে হেয় করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা। মেধাকে কখনো দাঁড়িপাল্লা দিয়ে মাপা যায় না। আমাদের ছবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে এটা অন্যায়। নারীদের ৬০%, রেলওয়েতে ৪০% কোটা রয়েছে কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে না। সবাই কথা বলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে। অবাঞ্ছিত তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে হেয় করা হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যঙ্গ করে ‘মুরগিযোদ্ধা’ বলা হচ্ছে। এদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
 
 
জনতার আওয়াজ/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ