ডাকসুসহ সারা দেশের ছাত্র সংসদ নির্বাচন ও চ্যান্সেলর নিয়োগ - জনতার আওয়াজ
  • আজ বিকাল ৫:৪৫, শনিবার, ৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৫শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি
  • jonotarawaz24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

ডাকসুসহ সারা দেশের ছাত্র সংসদ নির্বাচন ও চ্যান্সেলর নিয়োগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ: রবিবার, জানুয়ারি ১২, ২০২৫ ৩:৫০ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: রবিবার, জানুয়ারি ১২, ২০২৫ ৩:৫৩ অপরাহ্ণ

 

ব‍্যারিস্টার রফিক আহমেদ, লন্ডন

বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হিসেবে রাষ্ট্রপ্রধানের নিয়োগ কতটা সঙ্গত? বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি প্রতিষ্ঠিত প্রথা যে রাষ্ট্রপতিই বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হবেন। তবে এ প্রথার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সময় এসেছে। ইউরোপ ও আমেরিকার কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন রাষ্ট্রপ্রধানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ‍্যান্সেলর নিয়োগ দেয়া হয়েছে মর্মে কোন তথ্য পাইনি।

বিলেতে পড়াশোনার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চ্যান্সেলর নিয়োগে পুরোপুরি স্বাধীন। চারটি ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করলেও কোথাও দেখিনি রাষ্ট্রপ্রধানের মতো কাউকে এই দায়িত্বে আসীন করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ড. মুহাম্মদ ইউনুস, যিনি একজন বাংলাদেশি হয়েও ব্রিটেনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এটি প্রমাণ করে, চ্যান্সেলর নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসনের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টি বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ। একদিকে, চ্যান্সেলর হিসেবে রাষ্ট্রপ্রধানের ভূমিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিগত স্বাধীনতাকে খর্ব করে। অন্যদিকে, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ওপর সরকারের সদিচ্ছার প্রভাব প্রতিনিয়তই অনুভূত হয়। সরকারের অনুমতি বা সদিচ্ছা ছাড়া ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের মূল ধারণাকেই ভ্রান্ত করে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য চ্যান্সেলর নিয়োগের সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। এটি নির্ধারণের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। তবে, চ্যান্সেলর নিয়োগের জন্য একটি স্বচ্ছ ও মানসম্মত নীতিমালা থাকা আবশ্যক।

ছাত্র সংসদ নির্বাচন ও লেজুড় ভিত্তিক রাজনীতি

ছাত্র সংসদ নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি তৈরি করে এবং তাদের মত প্রকাশের সুযোগ দেয়। তবে জাতীয় রাজনীতির লেজুড় ভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ইউরোপ বা আমেরিকার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় রাজনীতির প্রভাব বিস্তারকারী ছাত্র রাজনীতি দেখা যায় না। তবুও সেখানকার শিক্ষার্থীরা সফল নেতৃত্ব গড়ে তুলতে সক্ষম। অক্সফোর্ড বা কেমব্রিজের মতো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উঠে আসা নেতারা বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাদের এই সাফল্যের পেছনে প্রধান কারণ ছিল স্বতন্ত্র ছাত্র রাজনীতি, যা জাতীয় রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিল না।

বাংলাদেশে লেজুড় ভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবেশকে শুধু কলুষিতই করছে না, বরং বহু মেধাবী শিক্ষার্থীর জীবনকেও ঝুঁকিতে ফেলছে। অতীতে আমরা অসংখ্য শিক্ষার্থীকে এই অপসংস্কৃতির বলি হতে দেখেছি। কিন্তু তবুও জাতীয় রাজনীতিবিদদের এ বিষয়ে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

এটি স্পষ্ট যে, ছাত্ররাজনীতির গঠনমূলক বিকাশে লেজুড় ভিত্তিক রাজনীতি একটি বড় বাধা। জাতীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত একটি স্বাধীন ছাত্র রাজনীতিই পারে নেতৃত্বের প্রকৃত বিকাশ ঘটাতে। ডাকসু নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের সাথে যুক্ত করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। বরং এর মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতিকে আরও সংকীর্ণ এবং বিভক্ত করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতিকে সুষ্ঠু পথে পরিচালিত করতে হলে জাতীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত একটি স্বচ্ছ এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এতে যেমন নেতৃত্ব বিকাশ ঘটবে, তেমনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার পরিবেশও রক্ষা পাবে। ছাত্ররাজনীতি হতে হবে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষার একটি মাধ্যম, জাতীয় রাজনীতির হাতিয়ার নয়।

Print Friendly, PDF & Email
 
 
জনতার আওয়াজ/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ