ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন খাদিজার কারাভোগের এক বছর
নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
রবিবার, আগস্ট ২৭, ২০২৩ ১২:১২ পূর্বাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
রবিবার, আগস্ট ২৭, ২০২৩ ১২:১২ পূর্বাহ্ণ

নিউজ ডেস্ক
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা। বাবা কুয়েত প্রবাসী। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হওয়া এক মামলায় ২০২২ সালের ২৭শে আগস্ট খাদিজাকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। খাদিজার কারাবাসের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। বর্তমানে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে বন্দি জবি’র এই শিক্ষার্থী। দীর্ঘ এক বছর কারাবরণ করা খাদিজার পরিবারের সঙ্গে কথা হয় মানবজমিন-এর। মা ফাতেমা বেগম বলেন, আমার একটাই চাওয়া খাদিজাকে মুক্তি দিন। ওর পড়াশোনাটা নিয়মিত করতে দিন। খাদিজাকে আমি এক মুহূর্তের জন্যও চোখের আড়াল করিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েরা বিভিন্নস্থানে বেড়াতে যায়।
কিন্তু খাদিজাকে কখনো আমি ঢাকার বাইরে পর্যন্ত যেতে দেইনি।
সেই মেয়ে আজ আমার থেকে কতদূরে কারাগারে আছে। একজন মায়ের কাছে এর চেয়ে কষ্টের আর কী হতে পারে। একটি শিশু যেমন মায়ের কোল ছাড়া ঘুমাতে পারে না। খাদিজাও আমার কাছে তেমনই ছিল। গত একটি বছর খাদিজাকে ছাড়া কেটেছে। মেয়ের চিন্তায় আমার শরীরে নানান জটিল রোগ বাসা বেঁধেছে। মেয়েটার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে মহামান্য আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, খাদিজাকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়া হোক। তিনি বলেন, প্রতি সপ্তাহে কারাগার থেকে ফোনে কথা হয়। ফোন দিলে ওপ্রান্তে থাকা খাদিজা কান্নায় কথা বলতে পারে না। আমি তখন মানসিকভাবে আরও ভেঙে পড়ি।
আদালত ও আইনজীবীদের তথ্যমতে, বিচারিক আদালতে দু’বার খাদিজার জামিন আবেদন নাকচ হয়। পরে তিনি হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন। গত ১৬ই ফেব্রুয়ারি তার জামিন মঞ্জুর করেন হাইকোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেয়া জামিন স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
খাদিজাতুল কুবরার বড় বোন মিরপুর বাঙলা কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সিরাজুম মুনিরা বলেন, গত ৭ই জুলাই খাদিজার জন্মদিন ছিল। সেদিন ওর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ ছিল না। তাই এর আগে যখন দেখা হয় তখন খাদিজাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাই। খাদিজা এতে খুব খুশি হয়। বর্তমানে কারাগারে খাদিজা রাইটারের কাজ করছে। ইদানীং দাদ-একজিমা থেকে শুরু করে হাত-পা কাঁপাসহ নানান শারীরিক জটিলতা দেখা দিয়েছে। গত সপ্তাহে ওর সঙ্গে কাশিমপুর কারাগারে দেখা করে কিছু ওষুধ দিয়ে আসি। এ সময় খাদিজা জানতে চায়, আপু চার মাসের মাঝে কি আমার জামিন হবে না? রিটপিটিশন করলে না কি জামিন হয়। কিছুই করা যাবে না? তখন বলি, না কিছু করা যাবে না। এ সময় খাদিজা জানায়, তাহলে আমার বইয়ের ব্যবস্থা করো। বই-খাতার পারমিশন নেয়ার ব্যবস্থা করো। আদালত থেকে অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত বই দেয়া যাবে না। তিনি বলেন, মা’কে মানাতে পারছি না। সারাক্ষণ কাঁদেন। আমাদের কী বলার আছে? সরকার ও আদালতের কাছে আমাদের একটিই আবেদন, খাদিজার ভবিষ্যৎ এর কথা চিন্তা করে তাকে যেন অচিরেই মুক্তি দেয়া হয়। সে যেন পড়ালেখা কন্টিনিউ করতে পারে।
মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি মামলায় একটি মেয়ে এক বছর ধরে কারাগারে আছে। আমাদের জন্য আরও দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে দু’টি ঈদ মেয়েটা কারাগারে কাটিয়েছে তার পরিবার ছাড়া। আমরা বিভিন্ন সময় বলে আসছি, এই আইনের মাধ্যমে মানুষকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। এটি তার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এ ধরনের আইন যখন একটা রাষ্ট্রে বহাল থাকে, যে আইনের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মনে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। সেই আইনে একজন নারী শিক্ষার্থীকে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
জনতার আওয়াজ/আ আ
