ড. ইউনূসের পাশে আমাদের দাঁড়তে হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
সোমবার, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৩ ৯:১২ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
সোমবার, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৩ ৯:১২ অপরাহ্ণ

ড. মোর্শেদ হাসান খান
ড. ইউনূস আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের গর্ব। প্রায় চল্লিশ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম ও মেধার সমন্বয়ে ড. ইউনূস বিশ্বকে ক্ষুদ্রঋণের সফল মডেল উপহার দিয়েছেন। এই মডেলের মাধ্যমে কোটি— কোটি মানুষ হতদরিদ্র অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। ড. ইউনূসের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার তরুণ নিজেদের সমাজ কল্যাণে উৎসর্গ করেছে। উনার অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার অর্জন করেন। নোবেল পুরষ্কারের সাথে উনি আমেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল অ্যাওয়ার্ড এবং কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল অর্জন করেছেন। এই পর্যন্ত মাত্র সাতজন বরেণ্য ব্যক্তি এমন বিরল সন্মানের অধিকারী হয়েছেন, যাদের মাঝে আছে নেলসন ম্যান্ডেলা, মারটিন লুথার কিং ও মাদার তেরেসা। আগামী বহুযুগ ধরে বিশ্ববাসী ড. ইউনুসের অবদান শ্রদ্ধাভরে স্বরণ করবে। এই অর্জন আমাদের সকলের।
অতীব দুঃখ এবং লজ্জার বিষয় ব্যক্তিগত হিংসার শিকার হয়ে ড. ইউনূস অমাদের দেশে নিপীড়ন এবং লাঞ্ছনার মুখোমুখি হয়েছেন ও হচ্ছেন নিত্যদিন। বিচার বিভাগকে হাতিয়ার করে অসংখ্য বানোয়াট মামলার মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার ঘৃণিত প্রক্রিয়াতে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সারকার সিদ্ধহস্ত। এর ধারাবাহিকতায় ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে আদালতে ১৬৮টি মামলা চলমান। যেখানে আমাদের দায়িত্ব ড. ইউনূসকে নির্বিঘ্নে সৃজনশীল কাজ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া, সেখানে উনি দিনের পর দিন মামলার হাজিরা দিয়ে চলেছেন।
ড. ইউনুসের ব্যক্তিবিশেষের জনসমক্ষে প্রকাশিত ক্ষোভের কারনসমূহ অবান্তর। যেকোনো ব্যক্তির অধিকার আছে রাজনৈতিক দল গঠন করার। গণতান্ত্রিক দেশে একমাত্র জনগণের অধিকার রয়েছে ভোটের মাধ্যমে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি সমর্থন জানানোর । ড. ইউনূসের রাজনৈতিক দল গঠনের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্তকরা ও সেজন্য মতামত চাওয়া কোনো অপরাধ নয়। বরং এই উদ্দ্যোগ প্রশংসার দাবিদার। ড. ইউনূস বিশ্বব্যাংকে পদ্মাসেতুর অর্থায়ন থেকে সরে যাওয়ার জন্য সুপারিশ করেছেন এমন কোনো নথিপত্র কখনই প্রকশিত হয়নি। ড. ইউনূসের ক্ষুদ্রঋন এবং দারিদ্রতা বিমোচনের গবেষণা ও কার্যকলাপ বোঝা এবং তা নিয়ে সমালোচনা করার যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও ঢালাও ভাবে উনাকে সুদখোর বলা মানসিক দৈন্যতার পরিচয় বহন করে।
দেরিতে হলেও ড. ইউনূসকে হয়রানির প্রতিবাদে ৩৪ বিশিষ্টজনের বিবৃতিকে সাধুবাদ জানাই। মামলা, হামলা আর হেলমেট বাহিনীর ভয় জয় করে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে এমন বিবৃতি সহজ কাজ নয়। তবুও আমরা এটাকে প্রতিবাদের সূচনা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ড. ইউনূসকে নিপিড়নের বিরুদ্ধে প্রথিতযশা ব্যক্তিরা সোচ্চার হয়েছেন। বিশেষ করে একশজনের অধিক নোবেল বিজয়ীসহ দেড়শতাধিক নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তির খোলা চিঠি প্রকাশের পর আমাদের কোনো দ্বিধা থাকা উচিত নয়। এমনিতেই বিশ্ব পরিমণ্ডলে মানব সভ্যতা উ্ন্নয়নে আমাদের দেশ থেকে অবদান কম। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চা, চপ আর সমুসার দোকানে পরিণত হয়েছে। সেখানে ড. ইউনূসের মতোন বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিকে আমরা চোখের সামনে অবিচার ও নিপিড়নের শিকার হতে দিতে পারি না। তাহলে সারাবিশ্ব আমাদের কাপুরুষ ভাববে। ড. ইউনূসের কোনো দল নেই, নেই কোনো ভাড়াটে গুণ্ডাবাহিনী। তার সম্বল হলো অতি দারিদ্রতা মুক্ত কোটি কোটি কৃতজ্ঞ মানুষ এবং তাঁর সংস্পর্শে অনুপ্রাণিত গুনগ্রাহী ও শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দ। আমাদের সকল ক্ষমতা নিয়ে ড. ইউনুসের পাশে দাঁড়াতে হবে।
জনতার আওয়াজ/আ আ
