তারেক রহমানের অপেক্ষায় বাংলাদেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
সোমবার, নভেম্বর ২১, ২০২২ ১০:৫৭ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
সোমবার, নভেম্বর ২১, ২০২২ ১০:৫৭ অপরাহ্ণ

আমিরুল ইসলাম কাগজী
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আগামীর রাষ্ট্রনায়ক দেশনায়ক তারেক রহমানের ৫৮তম জন্মদিনে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা। শুভেচ্ছা রত্নগর্ভা জননী, তিন তিন বারের জনুগণের ভোটে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এবং বিনম্র শ্রদ্ধা স্বাধীনতার ঘোষক বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক বিশ্বের সাড়া জাগানো প্রেসিডেন্ট শহিদ জিয়াউর রহমান বীরউত্তমকে। এই তিনটি নাম বাংলাদেশের অভ্যুদয়, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির ইতিহাসের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ ঢাকার ৩২ নম্বর বাড়িতে রাত ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার জন্য তাজউদ্দীন আহমেদ ক্যাসেট রেকর্ডার নিয়ে শত চেষ্টা করেও ঘোষণা আদায় করতে পারেন নি। ঠিক একই সময়ে চট্টগ্রাম নগরীতে আরেকজন সেনা কর্মকর্তা নানা প্রতিকূলতা অতিক্রান্ত করে অস্ত্র উচিয়ে ঘোষণা করলেন ‘উই রিভোল্ট’। পরের দিন সেই সেনা অফিসার মেজর জিয়া স্বকন্ঠে উচ্চারণ করলেন স্বাধীনতার ঘোষণা। ইথারে ইথারে ছড়িয়ে পড়লো সেই ঘোষণা, স্ফুলিঙ্গের মতো শিহরণ জাগালো দিশা হারা, পথ হারা জাতির হৃদয়ে। ঘুরে দাঁড়ালো গোটা জাতি। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হলো নতুন দেশ স্বাধীন বাংলাদেশ।
কিন্তু এই নয় মাস সুখে কাটেনি স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং পুত্র তারেক রহমান পিনো ও আরাফাত রহমান কোকোর। মেজর জিয়ার বিদ্রোহ ঘোষণার কারণে কারারুদ্ধ হতে হয় তাদের। যুদ্ধের এই নয় মাসের মধ্যে ১৬৭ দিন বন্দিজীবন কাটান তাঁরা।
দ্বিতীয়বার ১৯৭৫ সালে পিতা মাতার সঙ্গে গৃহবন্দি হয়ে কাটাতে হয় চার দিন। এরপর পিতার বিরুদ্ধে ১৯টি ক্যু প্রত্যক্ষ করেছেন তারেক রহমান। তৃতীয়বার কারারুদ্ধ হন ১/১১ এর মইন – ফখরুদ্দিন এর অবৈধ সরকারের অধীনে। কারা নির্যাতন ভোগ করেন ৫৪৪ দিন। এরপর দীর্ঘ নির্বাসনে তিনি লন্ডনে বসে বাংলাদেশে দলীয় নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে উজ্জীবিত রাখছেন।
জীবনের শুরু থেকে আজ এই ৫৮তম জন্মদিন পর্যন্ত দীর্ঘ রাজনৈতিক উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে পোড় খাওয়া তারেক রহমানের অভিজ্ঞতার ঝুলি আজ অনেক ভারি। অনেক সমৃদ্ধ। তাঁর মতো এমন অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে কেন, গোটা পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তার কর্মপরিকল্পনায় সম্পৃক্ত আজ দেশের লক্ষকোটি মানুষ। জনতার জোয়ার আজ তাঁর পেছনে একাট্টা। চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল, ফরিদপুর, সিলেটের মানুষ সেটা দেখিয়ে দিয়েছে। দেশবাসী এখন তাকিয়ে আছে ঢাকার মহাসমাবেশের দিকে।
তাঁর কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে মনে পড়ে যায় বিগত শতকের দুজন নেতার কথা। একজন রুশ বিপ্লবের নায়ক মহামতি লেনিন এবং আরেকজন ইসলামি বিপ্লবের মহানায়ক আয়াতুল্লাহ খোমেনি। রুশ রাজতন্ত্রের শেষ প্রতিভূ জার স্বৈরশাসক নিকোলাসের অত্যাচার নির্যাতনে অতীষ্ঠ হয়ে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন বলশেভিক পার্টির নেতা লেনিন। প্রথমে লন্ডন পরে সুইজারল্যান্ড, এমনি করে ইউরোপের পথে পথে ঘুরে ঘুরে তিনি রাশিয়ায় বলশেভিক পার্টিকে সংগঠিত করেন। সেই প্রবাস থেকেই প্রথমে ১৯১৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি কৃষক আন্দোলন ঘটিয়ে জার রাজতন্ত্র উৎখাত করেন এবং ৩ এপ্রিল রাশিয়ায় প্রবেশ করেন। এরপর টানা সাত মাস আন্দোলন করে অক্টোবর মাসে চূড়ান্ত বিপ্লব ঘটিয়ে পৃথিবীর বুকে উপহার দেন এক নতুন দেশের যার নাম সোভিয়েত ইউনিয়ন।
আরেকজন নেতা হলেন আয়াতুল্লাহ খোমেনি। রেজা শাহ পাহলবির অত্যাচার নির্যাতনে ইরান ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। ফ্রান্সের এক নিভৃত পল্লীতে বসে তিনি ইরানে ইসলামি বিপ্লবীদের সংগঠিত করেন। দীর্ঘ প্রবাস জীবনের অবসান ঘটিয়ে যেদিন ১৯৭৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তেহরান বিমান বন্দরে অবতরণ করেন তখন পাহলবীর অবশিষ্ট সেনা সদস্যরা লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যায় এবং ইসলামী বিপ্লবের ৭০ লক্ষ বিপ্লবী গার্ড প্রাণঢালা অভিনন্দনে বরণ করে নেয় খোমেনিকে। সৃষ্টি হয় এক নতুন ইরান।
তারেক রহমানের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাজনীতি ক্রমেই সেই রূপ ধারন করতে চলেছে। সাত সমুদ্র তের নদীর ওপারে সুদূর লন্ডনে বসেও তিনি আসন গেড়ে বসে আছেন বাংলাদেশের লক্ষকোটি জনগণের হৃদয়মন্দিরে। আয়াতুল্লাহ খোমেনির জন্য যদি তেহরান বিমানবন্দরে ৭০ লক্ষ মানুষ জড়ো হয় তাহলে তারেক রহমান যেদিন ঢাকার বুকে পদার্পণ করবেন সেদিন বিমানবন্দর ঘিরে থাকবে কোটি জনতা। পুষ্পবৃষ্টিতে স্নাত হবে ঢাকার রাজপথ। অবসান হবে স্বৈরশাসনের। লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যাবে দুঃশাসনের পেটোয়া বাহিনি। বাংলাদেশের মানুষ ফিরে পাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ফিরে পাবে গণতন্ত্র এবং ভোট ও ভাতের অধিকার। সেদিনের অপেক্ষায় বাংলাদেশ। ৫৮তম জন্মদিনে এই হোক দেশবাসীর প্রার্থনা। দেশের মানুষ এখন বলতে শুরু করেছে, ‘তারেক রহমান — বাংলাদেশের প্রাণ’। সেই প্রাণভোমরার দীর্ঘ জীবন কামনা করছি।
জনতার আওয়াজ/আ আ
