প্রকৌশলী সাইফুদ্দীন আহমদ এর ৮ম মৃত্যু বার্ষিকী নিরবে চলে গেলো – জনতার আওয়াজ
  • আজ ভোর ৫:৩০, শুক্রবার, ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • jonotarawaz24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

প্রকৌশলী সাইফুদ্দীন আহমদ এর ৮ম মৃত্যু বার্ষিকী নিরবে চলে গেলো

নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ: সোমবার, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩ ৮:২৩ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: সোমবার, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩ ৮:২৩ অপরাহ্ণ

 

প্রকৌশলী সাইফুদ্দীন আহমদ কে কেউ মনে রাখেনি
১৯৩১ সালে ১ নভেম্বর কুমিল্লা জেলার হোমনা থানার মিশিকারি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। উপজেলার উজানচর হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করার পরে ঢাকায় সাবেক জগন্নাথ কলেজ বর্তমান জগন্নাভ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান শাখায় এইচএসসি পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে আহসান উল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ক্যামিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বিশেষ কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। জগন্নাথ কলেজে পড়াকালীন সময় ৫২’র ভাষা আন্দোলন শুরু হয়। সেই আন্দোলন ছাত্র অবস্থায় সরাসরি অংশগ্রহণ করেন।

পরবর্তীতে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিক সহযোগিতা করেছিলেন তিনি। ঘোড়াশাল সার কারখানায় প্রথম জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সেই সময় ঢাকার বনানী কামাল আতাতুর্ক এভিনিউতে ৭৯/বি তে জায়গা কিনে বাড়ী করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯৫০ সালে ১৪ই ডিসেম্বর পুরান ঢাকার নূরজাহান বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ব্যক্তি জীবনে ৫ মেয়ে এবং ১ পুত্র সন্তানের জনক প্রকৌশলী সাইফুদ্দীন আহমদ নানা সামাজিক কর্মকান্ডে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন। তিনি তাদের বন্ধুদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ঐতিহ্যবাহী বনানী বিদ্যা নিকেতন স্কুল।

এছাড়াও তিনি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য বনানী মসজিদ, গুলশান রোট্যারী ক্লাব, গুলশান ক্লাবসহ নানান সামাজিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি সকলের কাছে অনেক জনপ্রিয় ছিলেন। নিজ গ্রামের বাড়ীতে একটি মসজিদ এবং শ্বশুর বাড়ী এলাকাতেও একটি মসজিদ গড়ে তোলেন তিনি। তার বড় মেয়ে ড. সাইদাহ আহমেদ বর্তমানে ইংল্যান্ডে বসবাস করছেন। মেঝ মেয়ে প্রফেসর ড. সাদিয়া আহমদ জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং অন্য তিন মেয়ে ও এক ছেলে অ্যামেরিকা ও কানাডায় বসবাস করছেন। তার স্ত্রী নূর জাহান বেগম ২০১৪ সালের ২৪ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন এবং তিনি ২০১৫ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন এবং নিজ হাতে তৈরী হোমনা থানার মিশিকারি গ্রামের মসজিদের পাশে চির নিদ্রায় শায়িত আছেন। আজ তাঁর ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী।
কেউ মনে রাখেনি প্রিয় ভাষা সৈনিক ও প্রকৌশলী সাইফুদ্দীন আহমেদ কে।

যে মানুষটি এক সময় ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক ছিলেন এবং পরবর্তীতে মহান মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিক সহযোগিতা করেছেন এবং ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বনানী এলকার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম হয়েও মাত্র ৮ বছরের ব্যবধানে সবাই তাকে ভুলে গেছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে মৃত্যুবার্ষিকী এলে তাঁর মেঝ মেয়ে প্রফেসর ড. সাদিয়া আহমদ এবং অন্যরা গ্রামে গিয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও ফতেহা পাঠ ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেন। এছাড়া যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে ছিলেন সেই সমস্ত প্রতিষ্ঠান বর্তমানে মহিরুন হলেও তাঁকে কেউ স্মরণ করেনি। যা অন্তত দুঃখ জনক ও পীড়াদায়ক।

ভাষা সৈনিক প্রকৌশলী সাইফুদ্দীন আহমেদ এর নিজ হাতে গড়া ৭৯/বি কামাল আতাতুর্ক এভিনিউর বাস ভবনটি প্রখ্যাত শিল্পী জয়নাল আবেদীন এর ঐতিহাসিক কিছু ছবি এবং প্রকৃতির সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে আছে। সব কিছু থাকলেও যে মানুষটি ঐসব স্মৃতির সাথে জড়িত সে মানুষটি আজ আর নেই। তিনি ভাষা আন্দোলনে ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছিলেন। এই দাবি তুলেছেন তারই মেঝ কন্যা যিনি বর্তমানে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণী বিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি কাঁদতে কাঁদতেই বললেন আমার বাবা সব সময় মানুষের জন্য নিজেকে উজার করে দিয়েছিলেন। কিন্তু কোন মানুষই আমার বাবাকে স্মরণ করে না। ভাষা আন্দোলনে আমার বাবার অসামান্য অবদান ছিল। সেই ইতিহাসও আজ অতল গহবরে হারিয়ে যাচ্ছে।

যারা তৎকালীন সময় ভাষাসৈনিক ছিলেন, তাদের অধিকাংশই আমার বাবার মতো না ফেরার দেশে চলে গেছেন। যে কজন বেঁচে আছেন তারাও মৃত্যুর পথযাত্রী। অথচ আজও ভাষাসৈনিকদের রাষ্ট্রীয় কোন তালিকা করা হলো না।

রাষ্ট্রীয় তালিকা থাকলে অবশ্যই সেই তালিকায় আমার বাবার নাম থাকত। আমি ও আমার পরিবার গর্ব করে বলতে পারতাম আমরা ভাষাসৈনিকের সন্তান। সেই অধিকার থেকেও রাষ্ট্র আমাদেরকে বঞ্চিত করেছে। আমরা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে সকল ভাষাসৈনিকদেরকে স্মরণ করতে চাই। সেই সাথে যারা ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের সবার তালিকা রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা করার জন্য রাষ্ট্রকে বিনীতভাবে আহ্বান জানাচ্ছি।

লেখক
মোঃ মঞ্জুর হোসেন ঈসা
চেয়ারম্যান
বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতি

Print Friendly, PDF & Email
 
 
জনতার আওয়াজ/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ