প্রেসিডেন্ট জিয়া এবং রাজনৈতিক অমরত্ব নিয়ে কিছু কথা
নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
বৃহস্পতিবার, জানুয়ারি ১৯, ২০২৩ ৬:২৬ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
বৃহস্পতিবার, জানুয়ারি ১৯, ২০২৩ ৬:২৬ অপরাহ্ণ

বেলাল উদ্দিন সরকার তুহিন
আজ উনিশ জানুয়ারি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৭তম জন্মদিন। ১৯৩৬ সালের এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মাত্র ৪৫ বছর বয়সে চলে যাওয়া এই বীর উত্তম ছিলেন রাষ্ট্রনায়, সব্যসাচী রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতার ঘোষক, সেক্টর কমান্ডার, রণাঙ্গনে বীর যোদ্ধা, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। বাংলাদেশ, বাংলাদেশের জনগণ এবং দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির উন্মেষ ঘটেছিলো তার হাত ধরে।
তার জীবন বর্ণাঢ্য গল্প গাঁথা এবং নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টির রূপকথা বলা যায়। শহীদ জিয়া বগুড়া জেলার ভাগবানী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মনসুর রহমান। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মরহুম মনসুর রসায়ন শাস্ত্রে এম.এস.সি ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। ঐ সময়ে এটা সাধারণ বিষয় ছিলো না। তিনি নামকরা রসায়নবিদ ছিলেন।
জিয়াউর রহমানের মা জাহানারা বেগম ছিলেন একজন বিদুষী নারী। চমৎকার গান করতেন তিনি। সংস্কৃতির চর্চা হতো তাদের পরিবারে। এছাড়া পারিবারিক ঐতিহ্য ও মূল্যবোধ ছিলো উঁচু মানের। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ব্যক্তিত্বে তা লক্ষ করা যায়।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এসেই জিয়াউর রহমান একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বন্ধ করে দেন। প্রান্তিক জনতার চিন্তাভাবনা রাজনৈতিক অঙ্গনে সম্পৃক্ত করার জন্য ১৯৭৮ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর ২ ঘন্টাব্যাপী এক সাংবাদিক সম্মেলন করেন তিনি। সেই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নামে একটি রাজনৈতিক দলের ঘোষণা করেন। যে দল বর্তমানে বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে।
জিয়া একজন রাজনৈতিক নেতাই ছিলেন না, স্টেটসম্যান হিসেবে সারা বিশ্বে সুপরিচিতিও লাভ করেন। অদম্য সাহসী এই নেতা ১৯৭১ সলের মুক্তিযুদ্ধে জীবনের মায়া ত্যাগ করে সরাসরি রণাঙ্গনে অংশগ্রহণ করেন। পরে বিপ্লবী নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত হন।
জনগণের মুক্তির মূল মন্ত্র বা মুক্তির সনদ হিসেবে তিনি দেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে কিছু বৈপ্লবিক কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন। অর্থনৈতিক মুক্তি, গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রতিষ্ঠা করা, রাজনীতির মাধ্যমে জনগণের মৌলিক সেবা করা ছিলো তার মূল লক্ষ। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে, স্বাধীনতা যুদ্ধে, দেশ গঠনে শহীদ প্রেসিডেন্টের অবদান উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে থাকবে।
দেশের সব স্তরের মানুষকে রাষ্ট্র পরিচালনার সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন জিয়া। জমিদার এবং অভিজাত শ্রেণীর শাসন ব্যবস্থার মূলৎপাটন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রদেরকে জাতীয় সংসদে প্রবেশের সুযোগ দিয়ে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন তিনি। বহুদলীয় গণতন্ত্রের মূল প্রতিপাদ্য হলো জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানো। এটি বাস্তবায়ন করা ছিল এই বিপ্লবীর সাহসী উদ্যোগ। ওই সময়ের প্রেক্ষাপটে এটি এত সহজ ছিল না।
প্রান্তিক জনতার কথা চিন্তা করে তিনি গ্রাম সরকার ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে এরকম একটি বৈপ্লবিক জনকল্যাণমুখী স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়া হয়। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মূলনীতিকে অনুসরণ করে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান একটি উন্নত মানের এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গ্রহণযোগ্য পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করেছিলেন।
তিনি বিশ্ব রাজনীতির গতিধারা সম্পর্কে অবগত ছিলেন। সেই কারণে আন্তর্জাতিক রাজনীতির কুপ্রভাব থেকে বাঁচার জন্য দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্ক তার হাত দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই গুরুত্বপূর্ণ ফোরামটির এখন আর কার্যকারিতা নেই। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষজ্ঞগণ এর গুরুত্ব এখনো অনুধাবন করেন। ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বকে বিবেচনা নিয়ে এই সংস্থাটি তিনি গঠন করেছিলেন।
রাজনীতির গুণগতমান পরিবর্তনের জন্য ১৯৭৮ সালের ২৫ অক্টোবর ‘রাজনীতি ও সমাজ বিজ্ঞান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ চালু করেছিলেন শহীদ জিয়া। রাজনৈতিক কর্মীদেরকে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তার ঐকান্তিক চিন্তাভাবনা ছিল। হাতে-কলমে দেশ সম্পর্কে, দেশজ সম্পদ সম্পর্কে তরুণ সমাজকে অবগত করে মানবসম্পদ হিসেবে রূপান্তর করতে চেয়েছিলেন তিনি।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের চেতনার আলোকে এবং আপন বৈশিষ্ট্য সংস্কৃতি ক্রিয়াশীল করার লক্ষ্যে শিল্পকলা একাডেমি, প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ, শিশু একাডেমি, ফিল্ম সিটি ( গাজীপুর), ইনস্টিটিউট ও আর্কাইভ, জাতীয় শিশুশিল্পী পুরস্কার, একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদক প্রবর্তন করেন।
রাজনীতিতে তিনি ডান বাম মধ্যপন্থীর সমন্বয়ে প্রগতিশীল চেতনা নিয়ে বিএনপির আদর্শিক দর্শন চালু করেছিলেন। এই আবেদনটি ক্রমশ জনগণকে প্রবল আকর্ষণ করছে। ফলে সীমাহীন অত্যাচার করার পরও বিএনপি ছেড়ে কেউ আদর্শ বিবর্জিত অন্য দলে প্রবেশ করছে না। রাষ্ট্রনায়কগণ রাজনৈতিক অমরত্ব লাভ করেন আদর্শ কর্মীর মাধম্যে। বিপুল জনতার চাহিদা বাস্তবায়ন করা এবং জিয়াউর রহমান এর ভিশনারী ভাবনার কারণেই তিনি রাজনৈতিক অমরত্ব লাভ করেছেন।
লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সাবেক ছাত্রনেতা।
জনতার আওয়াজ/আ আ
