বর্ণিল আয়োজন ও মহা সমারোহে ঢাবি অ্যালামনাইয়ের ‘শতবর্ষ মিলনমেলা’ - জনতার আওয়াজ
  • আজ রাত ২:৩০, শুক্রবার, ৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি
  • jonotarawaz24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

বর্ণিল আয়োজন ও মহা সমারোহে ঢাবি অ্যালামনাইয়ের ‘শতবর্ষ মিলনমেলা’

নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ: শনিবার, মার্চ ১২, ২০২২ ৯:০৪ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: শনিবার, মার্চ ১২, ২০২২ ৯:০৪ অপরাহ্ণ

 

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার

বর্ণিল আয়োজন ও মহা সমারোহে পালিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের বহুল প্রতীক্ষিত শতবর্ষ মিলনমেলা অনুষ্ঠান। ঢাবির শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে বিশাল পরিসরে এই মিলনমেলা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন। করোনার কারণে কয়েক দফা পিছিয়ে সর্বশেষ গতকাল শতবর্ষ মিলনমেলা অনুষ্ঠানটি হয়।
অনুষ্ঠানটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আগেই ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে গতকাল সকাল ১০টায় বেলুন উড়িয়ে মিলনমেলার উদ্বোধন ঘোষণা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণতম শিক্ষার্থী মো. মতিউল ইসলাম। এ সময় জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও পতাকা উত্তোলন করা হয়। এ সময় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ মাহবুব-উল-আলম হানিফ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের পদযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই-স্লোগানে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের শুরুতে শতজন শিল্পী মনমুগ্ধকর অর্কেস্ট্রা, সংগীত এবং নিত্য পরিবেশন করে। দশটা থেকে শুরু হলেও এর বহু আগে থেকেই অনুষ্ঠানের জন্য রেজিস্ট্রেশন করা প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা আসতে থাকেন অনুষ্ঠানস্থলে।

অনুষ্ঠান শুরুর আগেই সাবেক শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি করা প্যান্ডেল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে।
প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত এত বড় অনুষ্ঠানে আসতে পেরে তাদের আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ কর?তে দেখা যায়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সত্তরের দশকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. মিজানুর রহমান অতীতের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, আমাদের সময় রাজনৈতিক কারণে ক্যাম্পাস কিছুদিন পর পরই বন্ধ হয়ে যেত। এখন আর সেসব নেই বললেই চলে। এখন নির্দিষ্ট সময়ে একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে বের হতে পারেন। তিনি আরও বলেন, খুব সুন্দর পরিবেশে মিলনমেলা উদযাপিত হচ্ছে। আমি আয়োজক কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই এমন একটা অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য। এর মাধ্যমে তারা আমাদের ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মাঝে এক মেলবন্ধনের সৃষ্টি করে দিয়েছে।
বিশ বছর আগে ক্যাম্পাস জীবন শেষ করা ডাচ্‌বাংলা ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা রাইসুল হক বলেন, আমার প্রাণের ক্যাম্পাসের শতবর্ষ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান মনে করছি। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যাপিত জীবনের ব্যস্ততার মাঝে হারিয়ে ফেলা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বন্ধুর সঙ্গে অনেক বছর পরে দেখা হওয়ার সুযোগ হলো। পেশায় কলেজ শিক্ষক হাসান আলী শিকদার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আর কোনো বড় অনুষ্ঠান পাব কি-না সন্দেহ আছে। তাই পরিবার নিয়ে এসে আজকের মিলনমেলা অনুষ্ঠান পুরোপুরি উপভোগ করছি।
এদিকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর অতিথিরা মঞ্চে উপবিষ্ট হন। পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থসমূহ থেকে পাঠের মাধ্যমে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। শুরুতে অ্যালামনাই প্রয়াত সদস্যদের স্মরণে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এরপর আমন্ত্রিত অতিথিরা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। প্রথম পর্বের এ আলোচনা সভায় ঢাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একে আজাদ বলেন, শতবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে পৌঁছানোর কথা ছিল সেখানে আসতে পারেনি। আমরা দেখেছি বিশ্বের ১০০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের র?্যাঙ্কিংয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ১০০ র?্যাঙ্কিংয়ের ভেতরে আনতে আমাদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করবে।’
সংগঠনের মহাসচিব রঞ্জন কর্মকার বলেন, আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের পেছনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যালামনাইদের রয়েছে অতুলনীয় অবদান। প্রত্যেকেই মেধা, শ্রম ও রক্ত দিয়ে এই অবদান রেখেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু উচ্চ শিক্ষায় অবদান রাখেনি। রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি, মাতৃভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধিকার আন্দোলনসহ প্রত্যেকটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরেই বাংলাদেশ নামক জাতিরাষ্ট্রের সৃষ্টি।
এ সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি সমগ্র দেশের সমৃদ্ধি ও অগ্রযাত্রায় ঢাবি অ্যালামনাই ভূমিকা রাখবে বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণতম শিক্ষার্থী মো. মতিউল ইসলাম তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে স্বাধীনতার মাসে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের একটি তাৎপর্য আছে। এই তাৎপর্যের কথা চিন্তা করেই বলছি, দেশকে আমি যা দিয়েছি, দেশ আমাকে তার চেয়ে বেশি দিয়েছে। আমাকে প্রধান অতিথি করায় আমি সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
প্রথম দফার অনুষ্ঠান শেষে মধ্যাহ্নভোজের বিরতি দেয়া হয়। পরে বিকালে আরেকটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিশিষ্ট লেখক ও বঙ্গবন্ধু গবেষক সুভাষ সিংহ রায়ের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি ও খনিজ উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, ডাকসুর সাবেক জিএস ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, সাবেক সংসদ সদস্য শামসুজ্জামান দুদু এবং এফবিসিসি আইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাছির।
আলোচনা সভার পর অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে শত গুণীজনকে সম্মাননা (মরণোত্তর) দেয়া হয়। অনুষ্ঠানের চলার ফাঁকে ফাঁকেই সাবেক শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের পুরনো বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে ছোট ছোট জটলায় খোশগল্প আর স্মৃতিচারণে মেতে ওঠেন।
এরপর সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে আধুনিক ও পুরনো দিনের গান পরিবেশন করে অনুষ্ঠানে আগতদের মধ্যে মুগ্ধতা ছড়ান সামিনা চৌধুরী ও সন্দীপন।

Print Friendly, PDF & Email
 
 
জনতার আওয়াজ/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ