বিএনপি মুক্তিকামী জনতার খরস্রোতা নদী – জনতার আওয়াজ
  • আজ সকাল ১১:৪৬, শুক্রবার, ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • jonotarawaz24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

বিএনপি মুক্তিকামী জনতার খরস্রোতা নদী

নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ: শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ১, ২০২৩ ১:১৬ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ১, ২০২৩ ১:১৬ অপরাহ্ণ

 

প্রফেসর ড. মোর্শেদ হাসান খান
একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে মেজর জিয়াউর রহমানের ভূমিকার বিষয়টি সর্বজনবিদিত। সেদিন তার স্বাধীনতার ঘোষণা দেশের মুক্তিকামী জনতার কানে না পৌঁছালে হয়তো এ ভূখণ্ড এখনো সেই পাকিস্তানীদের শোষণ-বঞ্চনার গহ্বরেই নিমজ্জিত থাকতো। একটি স্বাধীন ভূ-খণ্ড আর একটা লাল-সবুজের পতাকার দৃশ্যকল্প আমাদের অচেনাই রয়ে যেতো আজো।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের অভ্যুদয় ঘটে, যার নাম বাংলাদেশ। গঠিত হয় একটি নতুন সরকার। সাড়ে ৭ কোটি মানুষের নতুন স্বপ্ন আর আকাঙ্খার উন্মেষ ঘটলো। কিন্তু দুর্ভাগ্য সদ্য ভূমিষ্ট সেই রাষ্ট্রটিকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে ব্যর্থ সে সরকার অচিরেই ভুলে যায় মুক্তিকামী মানুষের সেই স্বপ্ন আর প্রত্যাশার কথা। যে শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তি পেতে তারা লড়াই-সংগ্রাম করেছিলো, সেই শোষণ ও বঞ্চনা নতুন দেশটিতে ফিরে আসে নতুন মোড়কে। দেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষ ফের হতাশায় পতিত হয়। দারিদ্রক্লিস্ট-নিরন্ন মানুষের হাহাকার যেনো নতুন রূপে ফিরে এই বাংলাদেশে।
এমন অনিবার্য বাস্তবতা ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তম প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। তিনি এ দলের মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করেন মহান আল্লাহর প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও সামাজিক ন্যায়বিচারকে। দলের জন্য নির্ধারণ করেন ১৯ দফা কর্মসূচি। সেই থেকে বিএনপি জনপ্রিয় ও গণমানুষের একটি রাজনৈতিক দল। নেতাকর্মী-সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের শ্রম, মেধা, ঘাম আর ভালোবাসায় দলটি যেন এক খরস্রোতা নদী। যে নদী বয়ে চলেছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে, জনপদ থেকে জনপদে। মানুষের কল্যাণে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে বিএনপির নেতৃত্বে পাঁচবার সরকার গঠিত হয়। বাকশালের অন্ধকার সময় পেরিয়ে এ দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করে বিএনপি। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকেও নতুন জীবন দান করে উদার-গণতান্ত্রিক এ দলটি। মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও ভোটাধিকার নিশ্চিতের পাশাপাশি দেশে সংবাদ মাধ্যমেরও পুনর্জীবন দান করে বিএনপি। এরপর দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত করেন তা এদেশের বিবেকবান প্রতিটি মানুষ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি, চিকিৎসা-প্রযুক্তিসহ একটি দেশের জন্য প্রয়োজন এমন প্রত্যেকটি খাতেই তিনি অভাবনীয় উন্নয়ন সাধন করেন। প্রেসিডেন্ট জিয়া ছিলেন একজন ‘ভিশনারি লিডার’। তিনি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখতেন। তাইতো তাঁর স্বল্প সময়কালে কেবল উন্নত দেশপ্রেম ও সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনার জন্য বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রনায়কদের কাছে প্রেসিডেন্ট জিয়া হয়ে ওঠেন একজন ‘আইডল’। ধ্বংসস্তুপ থেকে টেনে তুলে কিভাবে একটি দেশকে উন্নয়নের মূলস্রোতে নিয়ে আসতে হয় সেটিই বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।
দেশপ্রেম ও ভিশনারি নেতৃত্বের কারণে দেশি-বিদেশি একটি চক্রের টার্গেটে পরিণত হয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। সংঘবদ্ধ চক্রান্তকারীদের ক্রীড়নক কিছু বিপদগামী সৈন্যের হাতে ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে ঘুমন্ত অবস্থায় শাহাদাতবরণ করেন তিনি। তার শাহাদাতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একজন দেশপ্রেমিক ও যোগ্য নেতাকে হারায়। এরপরের ইতিহাস পালহীন তরি আর রাখালহীন মেষদলের মতো।
তাঁর মৃত্যুর পর গণমানুষের দল বিএনপির হাল ধরেন বেগম খালেদা জিয়া। দেশের ক্রান্তিকালে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে রাজপথে নেমে আসেন একজন সাধারণ গৃহবধু। আর তাতেই ঘটে বাজিমাত। নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে খালেদা জিয়ার দৃঢ়চেতা আপসহীন নেতৃত্ব দেশ-বিদেশে ব্যাপক পরিচিতি পায়। রাতারাতি তিনি হয়ে ওঠেন এদেশের মুক্তিকামী মানুষের কণ্ঠস্বর। দিশেহারা মানুষের অত্যন্ত আপনজন।
বিএনপি বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করেছে। পক্ষপাতহীন ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রতিষ্ঠা করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। কাজেই রাজনৈতিকভাবে বিএনপির রয়েছে স্বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাস।
মূলত নেতৃত্বই রাজনৈতিক দলের চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। আধুনিক বাংলাদেশের ইতিহাসে বিএনপি এক অসাধারণ ভূমিকা পালনকারী রাজনৈতিক দল। সময় যেমন বিএনপিকে সহায়তা করেছে ঠিক তেমনই সময়কেও বিএনপি দেশের কাজে লাগিয়েছে। আমাদের জাতীয় ইতিহাসের কিছু ক্রান্তিকাল বিএনপিকে পার করতে হয়েছে এবং বিএনপি সেটি করেছেও সফলতার সাথে। যুগোপযোগী অর্থনৈতিকনীতিমালা ও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ, রাজনীতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধের স্বীকৃতি, ভূখণ্ডকেন্দ্রিক জাতীয় পরিচয় ও জাতীয়তাবাদের দর্শন সমুন্নতকরণের মাধ্যমে বিএনপি রাজনীতিতে একটি বলয় বা প্লাটফর্ম সৃষ্টিতে সক্ষম হয়, যা আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে আনে গুণগত পরিবর্তন।
বিএনপির রাজনীতির মূল স্পিরিট ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’। নৃতাত্ত্বিক ও আদর্শিক চেতনা মিশ্র স্বতন্ত্ররূপ ও পরিচয় রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ধারণা প্রবর্তন করেন। এটি বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ইতিহাসবোধ, অনুভূতি ও বিশ্বাসকে প্রবলভাবে নাড়া দেয়। সেই বিশ্বাসী তরঙ্গে এখনো এদেশের মানুষ উদ্বেলিত হয়। তাই বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের’ পক্ষে অটল-অবিচল রয়েছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ সেই জাতীয়তাবাদের সবচেয়ে বড় প্রতীক। রাজপথে তার সংগ্রামের দিনগুলোতে তিনি যে দীক্ষা সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে তাদের ঐক্যবদ্ধ করেন সেটি এই জাতীয়তাবাদের বোধ। এই বোধের মধ্যেই দেশপ্রেম, দেশ ও মানুষের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তাইতো দেশ মাতৃকার কল্যাণে বিএনপি দীর্ঘ দেড় দশক যে সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছে তাতে প্রতিদিনই যোগ হচ্ছে হাজারো নতুন মুখ। যাদের দু’চোখ জুড়ে মুক্তির স্বপ্ন। বুকের ভেতর শহিদ জিয়ার স্বাধীনতা ও দেশপ্রেমের অমর চেতনা।
দেশে একটি কালো অধ্যায় বিরাজমান। জনগণের ভোটাধিকার হরণকারী বাকশালের নব্য প্রেতাত্মা আওয়ামী লীগ গেলো দেড় দশক মানুষের ঘাড়ে চেপে বসেছে জগদ্দল পাথরের মতো। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়ে কেবল ক্ষমতার মসনদই যাদের লক্ষ্য তাদের কাছে সাধারণ মানুষের জান-মাল কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়। তাইতো তারা অবৈধভাবে দেশের ক্ষমতা দখল করে কেবলই লুটপাটের মহোৎসব চালাচ্ছে। হত্যা-গুম-হামলা-মামলা তাদের হাতিয়ার। লুটপাট-দুর্নীতি তাদের মূল লক্ষ্য। যে কারণে দেশের অর্থ ব্যবস্থা আজ পঙ্গু। সুস্থ রাজনৈতিক ধারা আজ মৃত। শিক্ষা-স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে সবগুলো খাত আজ ধংসের দ্বারপ্রান্তে। দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে আবারো সেই পুরনো ক্ষোভ দানা বেধেছে। ৭১ থেকে ৭৫-এর সেই অচলাবস্থা বিরাজ করছে সবখানে। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস কায়েমের মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে প্রজা বানিয়ে রেখেছে সরকার। যেই প্রজা গায়ের রক্ত পানি করে কেবল রাষ্ট্রকে দিয়েই যাচ্ছে বিনিময়ে পাচ্ছে না কিছুই। শান্তিতে বাঁচার অধিকারতো দূরের কথা শঙ্কাহীন মৃত্যুও যেন নেই দেশের জনগণের ভাগ্যে। সবখানে একটা ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে কেবল নিজেদের আখের গোছানোতে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ।
দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে বসে নেই বিএনপি। জনগণের পাশে থাকার ব্রত নিয়ে যে দলটির জন্ম, সময়ের অনিবার্যতায় যে দলটির বিকাশ শত প্রতিকূলতার মধ্যেও তারা কেবল জনগণেরই কথা বলে। তাইতো একটি নতুন ভোরের জন্য, একটি নতুন অধ্যায় রচনা করতে রাজপথে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে দলটি। বিএনপি বিশ্বাস করে জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের এই আন্দোলনকে জনগণই সফল করবে। বিএনপি কেবল তাদের নেতৃত্ব দিয়ে সঠিক পথে নিয়ে যাবে। আর এ জন্যই জাতীয়তবাদী শক্তির আগামীর কাণ্ডারি দেশনায়ক তারেক রহমান পিতা শহিদ জিয়ার মতো দূরদৃষ্টি নিয়ে, মাতা বেগম খালেদা জিয়ার মতো আপসহীন নেতৃত্ব নিয়ে কোটি মানুষের এই সংগ্রামের অগ্রভাগে রয়েছেন। তার নেতৃত্বে আজ বিএনপি অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে অধিক গতিশীল ও শক্তিশালী। পিতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যেমন একটি ভঙ্গুর ও ধংসপ্রায় দেশকে নিজ নেতৃত্বগুনে ঢেলে সাজিয়েছিলেন তেমনি তারেক রহমানও আওয়ামী লুটপাটতন্ত্রের কবল থেকে দেশকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। এজন্য তিনি ঘোষণা করেছেন রাষ্ট্র সংস্কারের ২৭ দফা। যেই ২৭ দফা আক্ষরিক অর্থে একটি স্বনির্ভর, আত্ম মর্যাদাশীল ও উন্নত বাংলাদেশের পরিপূরক। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর সংবিধান, রাষ্ট্র কাঠামো এবং শাসন ব্যবস্থার আলোকে প্রণীত এই দর্শণ বাস্তবায়িত হলে দেশ সত্যিকারার্থে উন্নত হবে। লুটপাট-দুর্নীতিমুক্ত হবে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র। ভোট ও ভাতের অধিকার পুণ:প্রতিষ্ঠিত হবে। সর্বোপরি দেশের ১৮ কোটি মানুষের জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। নাগরিক হিসেবে মানুষের মৌল-মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠাই তাই বিএনপির একমাত্র উদ্দেশ্য।
লেখক
অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, মহাসচিব, ইউট্যাব ও সহপ্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক, বিএনপি এবং সদস্য, বিএনপির মিডিয়া সেল।

Print Friendly, PDF & Email
 
 
জনতার আওয়াজ/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ