বিদেশিরা সফল হলে জনগণ উদ্ধার হবে, সরকারের কাছে অপশন কম
নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
রবিবার, জুন ২৫, ২০২৩ ১:৩৫ পূর্বাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
রবিবার, জুন ২৫, ২০২৩ ১:৩৫ পূর্বাহ্ণ

ডেস্ক নিউজ
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, জনগণের হাতে রাজনীতি নেই, জনগণের কাছে দেশের মালিকানাও নেই। রাজনীতি চলে গেছে যারা দেশ শাসন করছেন তাদের হাতে। এই পরিস্থিতিতে এখন বিদেশিদের দিকে তাকিয়ে আছি। বিদেশিরা চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। এই চাপটা যদি তারা সৃষ্টি করে সফল হয় তাহলে জনগণ উদ্ধার হবে। বর্তমান সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি।একান্ত সাক্ষাৎকারে জিএম কাদের এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, সত্যিকার অর্থে সবাই নির্বাচনে না আসলে এটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না। ইচ্ছা করে আসে না মানে তারা বর্জন করলো। যত দলই আসুক না কেন।
সরকারের কাছে অপশন খুব কম। এখন হঠাৎ করে কিছু করে বসতে পারে সেটা এখন আমি বলতে পারবো না।
আগামী নির্বাচনকে ঘিরে জাতীয় পার্টির পরিকল্পনা কী?
কাদের: আমরা ৩০০টি সংসদীয় আসনে আমাদের সংগঠনকে নির্বাচনমুখী সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। তৃণমূল পর্যায় থেকে, ইউনিয়ন থেকে উপজেলা, উপজেলা থেকে জেলা পর্যায় কাউন্সিল হচ্ছে। প্রায় প্রতি সপ্তাহে একটি-দুটি করে জেলায় কাউন্সিল হচ্ছে। আমরা একটা জিনিস জনগণের কাছে পরিষ্কার করতে চাচ্ছি সেটা হলো আমাদের রাজনীতি। আমাদের কাজ রাজনীতিকে জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া। আরেকদিকে সংগঠনকে শক্তিশালী করা। এটি আমরা মনে করছি সামনের নির্বাচনের জন্য আমাদের প্রস্তুতি।
দলীয় সরকারের অধীনে সামনে আপনারা নির্বাচনে যাবেন কিনা?
কাদের: আমরা যাবো কিনা সেটি এই মুহূর্তে বলবো না। যেহেতু সিদ্ধান্তটা আমাদের একেবারে শীর্ষ পর্যায়ের সকলের সঙ্গে আলোচনা করে করা হবে এবং আমরা তৃণমূল থেকে শুরু করে দেশের জনগণ এবং নির্বাচনকালীন সময়কার পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নিবো। তবে আমরা একটা কথা বিশ্বাস করি এবং একেবারে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে এটা আমরা বিভিন্ন সময় দেখেছি যে, বর্তমান পদ্ধতিতে যে নির্বাচন করছে সরকার সেই নির্বাচনে কখনই কোনো সুষ্ঠু ও অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়।
কিছুদিন আগে একটি প্রোগ্রামে আপনি বলেছেন বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কাকে ছাড়িয়ে গেছে? আপনি ঠিক কী বুঝিয়েছেন?
কাদের: শ্রীলঙ্কায় যখন রাস্তায় লোক নেমেছে তখন আমরা কী দেখেছি? যে ইলেকট্রিসিটি দিতে পারছিলো না সরকার। যথেষ্ট পরিমাণে তারা তেল বা গ্যাস বা ইলেকট্রিসিটি তৈরি করার জন্য যে জ্বালানি সেটা কেনার মতো তাদের অর্থ ছিল না। কাজেই লোডশেডিং হচ্ছিল। অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছিল না। আমাদের দেশে সেই ঘটনা ঘটছে। আর একটা বিষয় দেখা যাচ্ছিল যে, জিনিসপত্রের দাম লাগামহীন হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে সেই পরিস্থিতি চলছে। আরেকটা হয়েছিল যে মানুষের বিভিন্ন কারণে যেহেতু ইলেকট্রিসিটি ছিল না, ইমপোর্ট করতে পারছিল না, বিভিন্ন মিল ফ্যাক্টরি কাজ করছিল না। বিভিন্ন আয় ইনকামের জায়গা সেগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। মানুষ বেকার হচ্ছিল এবং এই কারণে মানুষের আয় কমে যাচ্ছিল। বেকারত্ব বাড়ছিল, জিনিসপত্রের দাম বাড়ছিল। সেই সমস্ত সবই বাংলাদেশে বিদ্যমান। কাজেই শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আমাদের কোনো পার্থক্য নেই। আমি বলছি শুধু একটাই পার্থক্য ওখানে রাস্তায় লোক নেমে এসেছিল এবং সেই প্রোটেস্টগুলো সব পিসফুল ছিল। পুলিশ সেখানে কোনো গোলাগুলি করেনি। কোনো সাংঘর্ষিক অবস্থায় যায়নি। শুধু তাদেরকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা করার জন্য যতটুকু দরকার ততটুকুই করেছে। এবং তাদের সরকার যেটা কিন্তু একটা সুষ্ঠু ভোটে নির্বাচিত এবং বিপুল ভোটে নির্বাচিত সরকার। তারা এই জনরোষে পড়বে দেখে তারা পদত্যাগ করে চলে গেছে। বাংলাদেশে এই জিনিসটি হয়নি যে মানুষ রাস্তায় নামতে ভয় করেছে আর পুলিশও যে মারমুখী অবস্থান নিয়েছিল শ্রীলঙ্কার তুলনায় অনেক বেশি আর সরকার পদত্যাগ করেনি। এছাড়া বাকি সমস্ত সিচুয়েশনটা আমি মনে করি শ্রীলঙ্কার মতোই ছিল।
এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?
কাদের: এটি হলো সবচেয়ে মূল্যবান প্রশ্ন। পরিত্রাণের উপায় এখন আমাদের দেশের মানুষের কাছে সত্যি কথা বলতে আমরা যেটা মনে করছি সেটা হলো আমরা এখন বিদেশিদের দিকে তাকিয়ে আছি। বিদেশিরা একটা কোনো না কোনো চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। এই চাপটা যদি তারা সৃষ্টি করে সফল হয় তাহলে জনগণ উদ্ধার হবে। আমরা নিজেদের মধ্যে এই সলিউশন করতে পারছি না। যতটুকু আন্দোলন করার চেষ্টা করছে কিছু কিছু দল সেটা খুব সফল হচ্ছে না। এখন পর্যন্ত সামনে কতোটুকু সফল হবে জানি না। মানুষ রাজনীতি থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। দেশের রাজনীতি তাদের হাত থেকে চলে গেছে। জনগণের হাতে রাজনীতি নেই, জনগণের কাছে দেশের মালিকানাও নেই।
রাজনীতি এখন কাদের হাতে?
কাদের: রাজনীতি এখন যারা দেশ শাসন করছে তাদের হাতে। দেশ শাসন করছে এখন বর্তমানে আওয়ামী লীগ। এবং আওয়ামী লীগ কিছু লোকের মাধ্যমে একটা স্ট্রাকচার তৈরি করেছে। বাকশাল আমলে যেমন একটা স্ট্রাকচার ছিল। যে দলীয় নেতা দল বা দেশ শাসন করবে এবং দলের মধ্যে প্রফেশনসও থাকবে, প্রশাসকরা থাকবে সেখানে প্রশাসন থাকবে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকবে, বাহিনীর সদস্য থাকবে। বর্তমান কাঠামোতে এই ধরনের কিছু লোককে বাছাই করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যেমন ইলেকশন কমিশন, কর্মকমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, সব তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এখন তারাই হলেন সমস্ত রাজনীতির মালিক। তারাই হলেন দেশের মালিক।
আপনি বলেছেন, সরকার জাপা এবং ভিন্ন নামে জামায়াতকে কিছু আসন দিতে চায়- এ ব্যাপারে বিস্তারিত যদি কিছু বলেন?
কাদের: আমি শুনছি যে, আমাকে কেউ একজন জানিয়েছে- তারা শুনেছেন যে একটা আলাপ আলোচনা নীতিনির্ধারকদের মধ্যে যে জামায়াতের কিছু সদস্যকে অন্য কোনো নামে পার্লামেন্টে আনা হবে। জামায়াত নামে নয় আর আমাদেরকেও বেশি সিট দেয়া হবে। এবং সেটার জন্য আমাদের সংগঠন শক্তিশালী হোক তারা আলাপ আলোচনা করছেন। এটা কতোটুকু সত্য বা মিথ্যা আমরা জানি না। এজন্যই আমি কথাটা প্রকাশ করেছি যে, এ ধরনের একটি সম্ভাবনা হতে পারে। এরকম যদি সামনে সাজানো নির্বাচন হয় এবং সে নির্বাচনে যদি বেশি ধরনের দলকে সংযুক্ত করলে বিদেশ থেকে স্বীকৃতি আসে এ ধরনের একটি পরিকল্পনা নিতেই পারে। এ জন্য আমি কথাটা বলেছি।
আপনার দৃষ্টিতে কি মনে হয় আগামী নির্বাচন কেমন হবে?
কাদের: বিদেশিরা যেটা বলছে সেটা যদি সত্যিকার অর্থে খুব জোরালোভাবে এগিয়ে আসে তাহলে আমাদের আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারে।
জাপা জামায়াতবিরোধী দলে যেতে পারে- এমন গুঞ্জনও শোনা যায়-
কাদের: এটা এখন আমি বলতে পারবো না। যদি বিএনপি না আসে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সারাবিশ্বে করতে গেলে কোনো বড় দল-টল লাগবে পার্লামেন্টে। এই ধরনের কারণেই অনেকে চিন্তা করছেন। তবে আমার মনে হয় সব দল অংশগ্রহণ না করলে সত্যিকার অর্থেই এটা অংশগ্রহণমূলক না হলে এটাকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন বলা যাবে না। কারণ দেশের একটা বড় অংশ যারা রিপ্রেজেন্ট করে তারা যদি নির্বাচনে না আসে যতই দল আসুক গ্রহণযোগ্যতা সেই ভাবে আসে না। এখন অগ্রহণযোগ্যতা অনেক ক্ষেত্রে অনেক ভাবেই আদায় করা হয়, ম্যানেজ করা হয়- সেটা হতে পারে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে সবাই নির্বাচনে না আসলে একটা অংশ নির্বাচনে ভোট দিতেই আসলো না এটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না। যত দলই আসুক না কেন। সরকারের কাছে অপশন খুব কম। এখন হঠাৎ করে কিছু করে বসতে পারেন সেটা এখন আমি বলতে পারবো না।মানবজমিন
জনতার আওয়াজ/আ আ
