বৈশাখের বিভা ছড়াক সবখানে
নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
শুক্রবার, এপ্রিল ১৪, ২০২৩ ৯:৫৯ পূর্বাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
শুক্রবার, এপ্রিল ১৪, ২০২৩ ৯:৫৯ পূর্বাহ্ণ

বৈশাখ ঘিরে যে উৎসবময়তা, এর আগমনে যে আনন্দ-আয়োজন, তার বিশেষত্ব বাঙালি-জীবনে এতটাই বিস্তৃত পরিসরে প্রকাশিত যে তা শুধু দৃষ্টিগোচরের বিষয় নয়, নয়ন মুদে উপলব্ধিরও বিষয়। দিন আনি দিন খাই—এমন বহু মানুষের জীবনে নববর্ষ হয়তো উৎসবের বার্তা নিয়ে সেভাবে হাজির হয় না, তবু আনন্দ-উপাচার-উচ্ছ্বলতায় উদ্যাপনের ডালা এতটুকু অপূর্ণও থাকে না। কেননা, ধর্ম–মত–নির্বিশেষে সবাইকে বাংলা বর্ষবরণ এমন এক অচ্ছেদ্য বন্ধন ঘেরের মধ্যে দাঁড় করায়, সেই বেষ্টনীর নাম ভ্রাতৃত্ব; তার স্পন্দনে রণিত মানুষের হৃদয়। এই বন্ধন-স্পন্দনের সারকথাটি সর্বজনীনতা। এ কারণে পয়লা বৈশাখ বাংলাদেশের সবচেয়ে সেক্যুলার উৎসব, সর্বজনীন লোকাচার। যেভাবে ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ কিংবা ১৬ ডিসেম্বর সব মানুষের; ধনবান-নির্ধনের বিভাজন বা শহর-মফস্সলের ফারাক এখানে অনুপস্থিত; মত-বিশ্বাসের ভেদ এখানে বাজে মৈত্রীর ঐকতানে।
পঞ্জিকার পাতায় বাংলা বর্ষবরণের লগ্নটিকে তাই চিহ্নিত করা গেলেও বাঙালি-জীবনে তার বিস্তারকে সীমায়িত করা যায় না। করাল করোনাকালে বৈশাখী ঢোল বাজেনি বটে, কিন্তু মানুষের মনে তার ছন্দ-দুলুনি যে চিরদিনের! দুঃসময়ের সেই আয়োজনশূন্যতায় তাই বাংলা নববর্ষের তাৎপর্য বিফল হয়নি, তার আবেদনও কমেনি এতটুকু। এরই মধ্যে ‘করোনা-কুয়াশা’ কাটিয়ে প্রখর হয়েছে ‘সুসময়ের’ সূর্য; তাই বৈশাখবরণে যোগ হয়েছে আগের সেই আলো-ঝলমলতা। দুঃসময়কে পরাহত করে পেছনে ফেলে আসার স্বস্তি মানুষকে অনেক বেশি উজ্জীবিত করছে উৎসবমুখর হতে। আর প্রকৃতির অঙ্গনে তো বৈশাখের উপস্থিতি বরাবরের মতোই অবারিত।
দিনক্ষণের হিসাব ধরে বৈশাখ আসার আগেই কিন্তু তার অপার রূপ-লক্ষণ ফুটে উঠতে থাকে দশদিকে। আকাশের সুনীল শামিয়ানা, সফেদ মেঘখণ্ডের অলস ভেসে চলা, কনকরঙা রোদ্দুরের ঔজ্জল্য, আমের মুকুলের মন-মাতানো গন্ধ আর আচমকা আকাশ আড়াল করা কালবৈশাখীর আগমনে লেখা থাকে বৈশাখের বার্তা। গাঁয়ের বাঁকে বাঁকে বয়ে চলা হাঁটুজলের নদী, দূরের মেঠোপথে ধুলো উড়িয়ে গরুর গাড়ির মন্থর চলাচলও তো সাক্ষ্য দেয় বৈশাখেরই।
জনতার আওয়াজ/আ আ
