ভোটে আস্থা ফেরানোর মিশনে ‘আউয়াল’ কমিশন - জনতার আওয়াজ
  • আজ রাত ৩:২৬, শুক্রবার, ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • jonotarawaz24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

ভোটে আস্থা ফেরানোর মিশনে ‘আউয়াল’ কমিশন

নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ: সোমবার, মার্চ ১৪, ২০২২ ৬:২৪ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: সোমবার, মার্চ ১৪, ২০২২ ৬:২৪ অপরাহ্ণ

 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে চায় নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তাই রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে শিক্ষাবিদদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে ১৩ মার্চ থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রথম দিনে ইসির ডাকে তেমন সাড়া দেননি শিক্ষাবিদরা। আমন্ত্রিত ৩০ জনের মধ্যে ১৩ জন বৈঠকে অংশ নিয়েছেন।

তবে ভোটের প্রতি দেশের মানুষের আস্থা ফেরানোই নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা। তাদের মতে, বিদায়ী কমিশনের নেতৃত্বে গত ৫ বছরে জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে যে ভোট হয়েছে-তাতে মানুষের মতামত প্রতিফলিত হয়নি; বরং অনেক জায়গায় ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে। এ কারণে সাধারণ মানুষের ভোটের প্রতি এক ধরনের অনাস্থা তৈরি হয়েছে। তাই এ সংলাপের মাধ্যমে পরামর্শ নিয়ে তা বাস্তবায়ন না করলে এ ইসির প্রতি মানুষের আস্থা আসবে না; বরং রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হবে।

অন্যদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নবগঠিত ইসির প্রথম কাজ হবে মানুষের আস্থা ফেরানো। তাই এ মুহূর্তে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে পারামর্শের জন্য সংলাপের উদ্যোগটি ইতিবাচক। এর মাধ্যমে অংশীজনদের মতামত শুনে আস্থা অর্জনে কাজে লাগাতে পারবে নতুন ইসির দায়িত্বপ্রাপ্তরা।

ইসি সূত্র জানায়, ১৩ মার্চ সুশীল সমাজ বা শিক্ষাবিদদের প্রতিনিধি নিয়ে এই সংলাপ শুরু হয়েছে। ধাপে ধাপে রাজনৈতিক দল, নির্বাচন পর্যবেক্ষক, নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে এই সংলাপ পর্ব।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং নির্বাচন কমিশনার হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান, অবসরপ্রাপ্ত জেলা দায়রা জজ বেগম রাশেদা সুলতানা, সাবেক সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর ও মো. আনিছুর রহমানকে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। ২৭ ফেব্রুয়ারি শপথ নিয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে নির্বাচন ভবনে অফিস শুরু করে হাবিবুল আউয়াল কমিশন। ওইদিন বিকেলে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে নতুন কমিশন।

১ মার্চ জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ইসি। ২ মার্চ জাতীয় ভোটার দিবসে অংশগ্রহণ এবং ৬ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধে শ্রদ্ধা জানায় কমিশন। এখন নতুন কমিশন আস্তে আস্তে নিজেদের কাজে মন দিচ্ছে বলে জানা গেছে।

এদিকে নতুন নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা সরকারের পছন্দের লোক মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তারা সবাই সরকারের অনুগত, সুবিধাভোগী ও তোষামোদকারী। তাই সংলাপের নামে নাটক করে আবারো মানুষের ভোটাধিকার বঞ্চিত করবে। এ ইসির অধীনে নির্বাচনে যাবেন না তারা।

বিএনপিকে আস্থায় আনার বিষয়ে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, তাদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করব। বিএনপি যদি ঘোষণা দিয়েও থাকে, তাদের কি আহ্বান জানাতে পারবো না? কোনো কিছুই শেষ নয়। আমরা তো তাদের চা খেতে আমন্ত্রণ জানাতেই পারি।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনি ব্যবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি নানা কারণে ভেঙে পড়েছে। এই ভেঙে পড়া ইসিকে পুনর্গঠন, পুনর্বিন্যাস করে এবং নির্বাচনের প্রতি জনআস্থা ফিরিয়ে আনাই হবে নতুন ইসির জন্য আগামী দিনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আর যদি তারা তা করতে ব্যর্থ হন- তাহলে ফলাফল কারো জন্যই সুখকর হবে না। তবে আগামী নির্বাচন নিয়ে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে ইসির এ সংলাপ অনেকটা ইতিবাচক বলে তিনি মনে করনে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, এই কমিশন দেশের মানুষের ভোটে আস্থা ফেরাতে কাজ করবেন বলে তিনি আশাবাদী। তাছাড়া আগামীতে তাদের মেয়াদকালে অনুষ্ঠিতব্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানে সাফল্য অর্জন করবেন। এ জন্য সবার সঙ্গে পরামর্শ করে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা একটি ভালো উদ্যোগ।

জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, কাজী হাবিবুল আউয়াল (প্রধান নির্বাচন কমিশনার) সহ ইসির সব সদস্যদের চিনি, জানি। তাই তারা আগামীতে সর্বজন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে পারবে বলে তিনি আশাপ্রকাশ করেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিভিন্ন মহলের সঙ্গে পরামর্শের জন্য ইসির সংলাপের উদ্যোগটি ইতিবাচক। এর মাধ্যমে অংশীজনদের মতামত শুনে আস্থা অর্জনে কাজে লাগাতে পারবে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ হলো যেসব সুপারিশ আসবে, সেগুলো বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেওয়া। এই সংলাপ যেন লোকদেখানো বা প্রতারণামূলক না হয়।

ভোটে আস্থা ফেরানোর বিষয়ে সিইসি বলেন, আমরা সততা নিষ্ঠার সাথে নির্বাচন বিষয়ে দায়িত্ব পালন করবো। আমরা কতোটা সৎ ছিলাম, দায়িত্ব পালন করেছি সেটি পরে মূল্যায়ন করতে পারবেন। আমরা প্রত্যাশা করি সকলে নির্বাচনে অংশ নিয়ে গণতন্ত্রকে সুসংহত করবেন। বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে পরামর্শ নিয়ে আগামী ভোটে মানুষের আস্থা ফেরাতে পারব।

Print Friendly, PDF & Email
 
 
জনতার আওয়াজ/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ