মসজিদের দান সিন্দুক খুলে পাওয়া গেছে তিন কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার ২৯৫ টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
শনিবার, মার্চ ১২, ২০২২ ৫:৩৭ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
শনিবার, মার্চ ১২, ২০২২ ৫:৩৭ অপরাহ্ণ
কিশোরগঞ্জ থেকে
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দান সিন্দুকে এবার রেকর্ড পরিমাণ অর্থ দান করা হয়েছে। শনিবার মসজিদের দান সিন্দুক খুলে পাওয়া গেছে তিন কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার ২৯৫ টাকা। যা দান সিন্দুক থেকে পাওয়া দানের হিসাবে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। সকাল ৯টায় মসজিদের ৮টি দান সিন্দুক খোলার পর রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত টাকা গণনা শেষে এই হিসাব পাওয়া যায়। মোট ২২০ জন মানুষ টানা সাড়ে ১১ ঘন্টা সময় ধরে এ টাকা গণনা করেন। বিপুল পরিমাণ দানের এই নগদ টাকা ছাড়াও বিভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রা ও দান হিসেবে বেশকিছু স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গেছে। বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কারও অন্যবারের চেয়ে পরিমাণে বেশি পাওয়া গেছে। এর আগে সর্বশেষ গত ৬ই নভেম্বর দান সিন্দুক খোলা হয়েছিল।
তখন সর্বোচ্চ তিন কোটি ৭ লাখ ১৭ হাজার ৫৮৫ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। সাধারণত তিন মাস পর পর পাগলা মসজিদের দান সিন্দুক খোলা হয়। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দান সিন্দুক খোলার সময়ের ব্যবধান বাড়ানো হয়েছে। এবার ৪ মাস ৬ দিন পর এসব দান সিন্দুক খোলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শনিবার সকাল ৯টায় জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণের উপস্থিতিতে মসজিদের ৮টি দান সিন্দুক খোলা হয়। তবে এবার ৮টি দানসিন্দুকের মধ্যে ৬টি দান সিন্দুকই খোলার অন্তত ১৫ দিন আগেই পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় সেগুলোতে দান গ্রহণ বন্ধ রাখা হয়েছিল। দান সিন্দুক থেকে টাকা খুলে প্রথমে বস্তায় ভরা হয়। গত ৬ই নভেম্বর দান সিন্দুক খোলার পর বড় বস্তার ১২ বস্তা টাকা হয়েছিল। এবার বড় বস্তার ১৫ বস্তা টাকা হয়েছে। এরপর শুরু হয় দিনব্যাপী টাকা গণনা। টাকা গণনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদ-মাদ্রাসার ১২৫ জন ছাত্রশিক্ষক, রূপালী ব্যাংকের ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী, ১০ জন আনসার এবং ৩৫ জন মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্য ও সার্বক্ষণিক দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মোট ২২০ জন মানুষ অংশ নেন।
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. নাজমুল ইসলাম সরকারের তত্ত্বাবধানে জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার মো. ইকবাল হাসান, মো. মাহবুব হাসান ও সুশান্ত সিংহ, পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শওকত উদ্দীন ভূঞা, রূপালী ব্যাংকের এজিএম মো. রফিকুল ইসলাম প্রমুখ টাকা গণনার কাজ তদারকি করেন। টাকা গণনার এই এলাহী কা- নিজ চোখে অবলোকন করতে শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ মসজিদে ছুটে যান।
পাগলা মসজিদের মালামাল সংরক্ষক মো. বিল্লাল হোসেন জানান, প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ মসজিদের দান সিন্দুকগুলোতে নগদ টাকা-পয়সা ছাড়াও স্বর্ণালঙ্কার দান করেন। দান সিন্দুকে দান করা ছাড়াও মসজিদের নিলামঘরে প্রতিদিন মানুষ নানা ধরনের জিনিসপত্র দান করেন। এসবের মধ্যে রয়েছে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, ফল-ফলাদি, কোরআন শরীফ ইত্যাদি। নিলামঘরে প্রতিদিন এসব নিলামে বিক্রি করে দেয়া হয়।
পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শওকত উদ্দীন ভূঞা জানান, সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ এ মসজিদে দান করেন। তাদের বিশ্বাস, এখানে দান করলে রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তির পাশাপাশি মনের বাসনা পূরণ হয়। এই বিশ্বাস থেকেই দূর-দূরান্তের মানুষও এখানে দান করতে ছুটে আসেন। মজার বিষয় হচ্ছে, দান সিন্দুক খুললে চিঠিপত্রও পাওয়া যায়। সেসব চিঠিতে দানকারীরা নিজেদের মনের বাসনার কথা লিখে দেন।
টাকা গণনা কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. নাজমুল ইসলাম সরকার জানান, পাগলা মসজিদের দান সিন্দুক খুলে পাওয়া টাকাগুলো রূপালী ব্যাংকে জমা করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাগলা মসজিদের দান সিন্দুকে জমা পড়েছে।
ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, পাগলা মসজিদ সারা বাংলাদেশে একটি বিখ্যাত মসজিদ। এখানে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ নামাজ পড়তে আসেন। অনেকেই বিশ্বাস করেন, এখানে দান করলে মনের বাসনা পূরণ হয়। সারা বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের বাইরে থেকেও লোকজন আসেন এবং তারা দান করে থাকেন। আমাদের এখানে এখন স্থান সংকুলান হচ্ছে না, অনেক কষ্টের মধ্যে মুসল্লিরা নামাজ পড়ছেন। আমরা মসজিদ কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমরা এখানে একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন মসজিদ ও ইসলামিক কমপ্লেক্স করবো। যেখানে একসঙ্গে ৩০ হাজার মুসল্লি নামাজ পড়তে পারবেন। নারীদের জন্যও থাকবে নামাজের ব্যবস্থা। গত ৮ই মার্চ এ ব্যাপারে কনসালটিং ফার্মের সঙ্গে আমাদের আলাপ হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১১৫ কোটি টাকা এর ব্যয় ধরা হয়েছে। আমরা অচিরেই এর নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করবো।
কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ ভূমির ওপর এই মসজিদটি গড়ে উঠেছিল। সময়ের বিবর্তনে আজ এ মসজিদের পরিধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে এর খ্যাতি ও ঐতিহাসিক মূল্যও। মসজিদকে কেন্দ্র করে একটি অত্যাধুনিক ধর্মীয় কমপ্লেক্স এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রসারিত হয়েছে মূল মসজিদ ভবন। দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত মসজিদটিকে পাগলা মসজিদ ইসলামী কমপ্লেক্স নামকরণ করা হয়েছে। এ মসজিদের আয় দিয়ে কমপ্লেক্সের বিশাল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া মসজিদের আয় থেকে বিভিন্ন সেবামূলক খাতে অর্থ সাহায্য করা হয়।