মাহবুব তালুকদারের ‘নির্বাচননামা’ থেকে: আমার গাড়িকে একজন মোটরসাইকেল আরোহী ফলো করছেন - জনতার আওয়াজ
  • আজ বিকাল ৩:৫১, রবিবার, ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • jonotarawaz24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

মাহবুব তালুকদারের ‘নির্বাচননামা’ থেকে: আমার গাড়িকে একজন মোটরসাইকেল আরোহী ফলো করছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ: বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ১৬, ২০২৩ ৫:৫৮ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ১৬, ২০২৩ ৫:৫৮ অপরাহ্ণ

 

অফিসে যাওয়ার পথে একদিন লক্ষ করলাম আমার গাড়িকে একজন মোটরসাইকেল আরোহী ফলো করছেন। অফিস থেকে ফেরার পথেও তাকে আমার গাড়িটিকে অনুসরণ করতে দেখা গেল। কয়েক দিন একই ঘটনা ঘটার পর আমার গানম্যান ও পুলিশ রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে অনুসরণকারীকে চ্যালেঞ্জ করেন। তিনি জানালেন, তিনি একটি গোয়েন্দা সংস্থায় কর্মরত। তাঁর পরিচিতিপত্র দেখতে চাইলে তিনি মেয়াদোত্তীর্ণ একটি পরিচিতিপত্র দেখান এবং জানান যে নতুন পরিচয়পত্র কয়েক দিনের মধ্যেই পাওয়া যাবে। তিনি আমার নিরাপত্তা বিধানের জন্যই নাকি আমার সঙ্গে থাকেন। কথাগুলো জেনে আমি মনে মনে বলি, তার হাত থেকে আমাকে নিরাপত্তা কে দেবে?

প্রয়াত নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার তার ‘নির্বাচননামা’ বইয়ে এসব কথা বলেন। বহুল আলোচিত এই নির্বাচন কমিশনার আরও লিখেছেন, আরও একটি ঘটনা ঘটল। আমার এক গৃহকর্মীকে বাসার সংলগ্ন চায়ের দোকানে ওই ব্যক্তির সঙ্গে প্রায়ই চা খেতে দেখা যায় বলে খবর পেলাম। গৃহকর্মীকে জিজ্ঞাসা করে জানলাম, লোকটি বেশ ভালো।

তাদের দুজনের মাঝেমধ্যে টেলিফোনে আলাপ হয় কি না জানতে চাইলে সে জানায় মাঝে মাঝে ওই ব্যক্তি তার ভালোমন্দের খোঁজ খবর নেন। এসব জানার পর আমি তাৎক্ষণিকভাবে গৃহকর্মীকে চাকরিচ্যুত করি এবং বাড়ি থেকে বের করে দিই। বিস্ময়ের বিষয় গোয়েন্দা সংস্থার ওই ব্যক্তি পরদিন আমার অফিসে এসে আমার একান্ত সচিব মুহাম্মদ এনাম উদ্দীনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমার সঙ্গে দেখা করতে চান। আমার পিএস সাক্ষাতের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্যার, গৃহকর্মীকে অন্যায়ভাবে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন, তার কোনো দোষ ছিল না।’ এ কথা জানাতেই তিনি আমার সাক্ষাৎপ্রার্থী! এসব জেনে তার ধৃষ্টতায় আমি বিস্মিত হই। পিএস তাকে আমার সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে জানান, ‘প্রয়োজন হলে আপনার ডিজিকে স্যারের সঙ্গে কথা বলতে বলুন।’
নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছিল, অফিসে গোয়েন্দাদের তৎপরতা ততই বেড়ে যাচ্ছিল। আমার অফিসের সামনে প্রায়ই গোয়েন্দা বিভাগের ব্যক্তিরা বসে থাকেন। এটা আমি অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার বলে মনে করি যখন আমি কোনো বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করি, তখন অগণিত সাংবাদিকের সঙ্গে তাঁরাও আমার অফিসকক্ষে ঢুকে পড়েন। এটাও আমি সর্বদা উপেক্ষা করে চলি। ব্যক্তিগতভাবে আমি ইউনিফর্মধারী বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। দু-একবার তাঁদের উপস্থিতিতে বক্তৃতায় আমি বলেছি, ‘আপনারা জাতির সার্বভৌমত্বের প্রতীক। আপনারা যে পোশাকটি পরেন, তা দেশের ১৬ কোটি লোকের অবদান, আপনারা কাজের সাফল্যের যে মেডেল বুকে ধারণ করেন, তা স্বাধীনতার প্রতীক, দেশ স্বাধীন না হলে কর্মজীবনের এই সাফল্যের প্রতীক আপনারা বুকে ধারণ করতে পারতেন না, আপনারা মাথায় যে টুপিটি পরেন, তা স্বাধীনতাযুদ্ধের অগণিত শহীদের আত্মত্যাগের স্মৃতিবিজড়িত। তাই আপনাদের প্রতি আমার অভিবাদন।’

কথাগুলো অনেকটা আবেগতাড়িতভাবে বলা হলেও এটা আমার আন্তরিক অনুভূতি। একই সঙ্গে কারও কাছে প্রকাশ না করলেও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ড আমার নিজের মনেই নানা প্রশ্নের উদ্রেক করে। আমি যদ্দুর বুঝি, গোয়েন্দাদের কাজ হচ্ছে বিপত্তিকর কোনো ঘটনা ঘটার পূর্বে আগাম তথ্য দেওয়া। কিন্তু অন্তত চারটি ক্ষেত্রে তাদের ব্যর্থতা আমার কাছে দৃশ্যমান হয়েছে। ১৫ই আগস্ট ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পূর্বে এত বড় ষড়যন্ত্র হলো, তারা সরকারপ্রধানকে কোনো আগাম সতর্কতা জানাতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রামে জিয়াউর রহমান হত্যার সময়ও কোনো আগাম সংবাদ তারা জানাতে পারেনি কিংবা জানায়নি। একুশে আগস্টে শেখ হাসিনার ওপর যে বর্বরোচিত আক্রমণ হয়, সে ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা কী ছিল? তারা জজ মিয়া নাটক পর্যন্ত সাজিয়েছিল। সর্বোপরি পিলখানা হত্যাযজ্ঞের সময় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কোনো আগাম তথ্য ও সতর্কবার্তা দিতে পারেনি। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের রায়ে সে কথার উল্লেখ আছে। আশ্চর্য যে, এ ঘটনাগুলোতে তাদের কোনো মনোযোগ ছিল না, মনোযোগ দেখা যায় কেবল আমার মতো নগণ্য একজন নির্বাচন কমিশনারের বিষয়ে। আমি গোয়েন্দাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে সিইসি কে এম নূরুল হুদাকে সবিস্তার সব জানাই এবং বলি যে তাদের আচরণে আমার আত্মমর্যাদায় আঘাত লাগছে। তিনি এ বিষয়ে ওপরে কথা বলতে চাইলে আমি মানা করি এবং বলি যে আমি জাতীয় নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চাই। শিডিউল ঘোষণার পরও যদি তাদের কর্মধারা অব্যাহত থাকে, তখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ।

Print Friendly, PDF & Email
 
 
জনতার আওয়াজ/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ