যেখানে গণতন্ত্র নেই সেখানে কোনো ক্ষেত্রেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে না : নিপুন রায়
নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
মঙ্গলবার, মার্চ ৮, ২০২২ ৬:১১ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
মঙ্গলবার, মার্চ ৮, ২০২২ ৬:১১ অপরাহ্ণ

ডেস্ক নিউজ
নিপুন রায় চৌধুরী। আইনজীবী ও রাজনীতিক। রাজনীতিতে সক্রিয় হন ইডেন কলেজের ছাত্রী থাকাকালে। বর্তমানে তিনি বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ শাখা বিএনপির সভাপতি।
নিপুনের বাবা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী। শ্বশুর বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। স্বামী অমিতাভ রায় প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নারী নেত্রীরা সামনে এগিয়ে যেতে চাইলেও দেশের সমাজ ব্যবস্থার কারণে তা হচ্ছে না। বর্তমান অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার কারণে এটা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে মুখোমুখি হন নিপুন রায়। বলেছেন নারীর পদযাত্রা ও রাজনীতির নানা প্রসঙ্গে ।
প্রথমে জানতে চাই—বর্তমান রাজনীতিতে নারীর অবস্থান কেমন?
নিপুন রায় চৌধুরী: যে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বাংলাদেশ চলছে, তা অগণতান্ত্রিক। সেই জায়গায় নারীর বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা তো রয়েছেই। এছাড়া রাজনীতি, শিক্ষকতা বা অন্য যে কোনো ক্ষেত্রেই প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন নারীরা। যে দেশে গণতান্ত্রিক পন্থায় সরকার গঠন হয়নি। সে দেশে জনগণের ওপর সরকারের দায়বদ্ধতা থাকবে না এটাই তো স্বাভাবিক। সেখানে জনগণ বা নারীর অধিকার নেই। আমরা প্রতিদিনই সংবাদমাধ্যমে দেখতে পাই বিরোধী দল দমনে নারী নির্যাতন।
রাজনীতিতে নারীর প্রতিবন্ধকতা কী?
নিপুন রায় চৌধুরী: আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় একটা গলদ আছে। এ কারণেই দেশে অগণতান্ত্রিক সরকার বসে আছে। গণতন্ত্র অনুপস্থিত। যেখানে গণতন্ত্র নেই সেখানে নারী বলেন আর পুরুষ বলেন, কোনো ক্ষেত্রেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে না।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নারী নেত্রীরা সামনে এগিয়ে যেতে চাইলেও দেশের সমাজ ব্যবস্থার কারণে তা হচ্ছে না। বর্তমান অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার কারণে এটা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে সরকারের সমালোচক বা ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন করা হচ্ছে। সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে যখন দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেওয়া হয়, তখন রাজপথের আন্দোলনে আমাদের ৪৫ জন নারী নেত্রীকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর নির্বাচনের সময় আমিসহ অনেক নেত্রী গ্রেফতার হন। এটা কিন্তু বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে ছিল না। এটা শুরু হয়েছে অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার কারণে। শুধু তাই নয়, ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও নারীদের নির্যাতন করছে এ সরকার।
বর্তমানে সারাদেশে গণধর্ষণ, ধর্ষণসহ যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন নারীরা। বিচার হচ্ছে না। এটা কিন্তু অগণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার কারণে। শুধু নারীরা পিছিয়ে আছে তাই নয়। সমগ্র বাংলাদেশই পিছিয়ে আছে।
ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা সরাসরি অস্ত্রের মুখে জনগণকে জিম্মি করে ফেলেছেন। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে যেভাবে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে তাতেই বোঝা যায় বিচার বিভাগ কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে। হুদা কমিশন যে নির্বাচন উপহার দিয়েছে এটা বাংলাদেশ কেন, বিশ্বের ইতিহাসে কোনো নজির নেই। নারীদের প্রতি সরকার সম্মান প্রদর্শনে ব্যর্থ। সংঘবদ্ধ ধর্ষণের বিচার কোথায় হচ্ছে? হচ্ছে না।
রাজনীতি থেকে নারীদের ঝরে পড়ার কারণ কী?
নিপুন রায় চৌধুরী: ঝরে পড়ার একটাই কারণ অবৈধ সরকারের ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে ভিন্নমত দমন করা। বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র। জিয়াউর রহমান নারীদের পুলিশের চাকরি করার সুযোগ করে দিয়েছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করার জন্য দলের সব কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বলেছেন। রাজনীতিতে যদি নারীর অংশগ্রহণ বাড়ে রাষ্ট্র সঠিকভাবে পরিচালিত হতে পারবে। আমরা দেখছি, যখন একজন নারী খুব সাহসিকতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিচ্ছে তাকে বিতর্কিত করার জন্য ক্ষমতাসীন দল মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ায়, তখন সম্মান রক্ষার্থে অনেকে পিছিয়ে পড়ে। আবার অনেকেই এগিয়ে যায়। নারীদের পিছিয়ে পড়া বা ঝরে যাওয়ার একমাত্র কারণ হচ্ছে অগণতান্ত্রিক সরকার।
নারীদের রাজনীতিতে আকৃষ্ট করতে বিএনপির কোনো উদ্যোগ রয়েছে কি না?
নিপুন রায় চৌধুরী: রাজনীতিতে নারীদের আকৃষ্ট করতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম গঠন করেছেন। তার নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান। আমরা চেষ্টা করছি, সারাদেশে যেখানে নারী নির্যাতিত ও নিপীড়িত হচ্ছেন, সেখানে সর্বোচ্চ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার। বর্তমানে আইনের সহায়তা ও মেডিকেল সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। তারা যেন নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়, সেজন্য আমরা কাউন্সিল করছি। আমি মনে করি, নারীদের রাজনীতিতে আকৃষ্ট করার জন্য এটাই হচ্ছে বড় উদ্যোগ।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। কর্মসূচিতে আপনি নিজেও সরব ছিলেন। সেই কর্মসূচিতে নারীদের অংশগ্রহণ কেমন ছিল?
নিপুন রায় চৌধুরী: জনগণের নেত্রী জনগণের আস্থার প্রতীক দেশমাতা খালেদা জিয়া। তিনি নির্যাতনের শিকার একটা দেশের সব মানুষই জানে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের জন্য নারী নেত্রীরা সরব আছেন। নেত্রীর মুক্তির আন্দোলনে সর্বত্রই মাঠের আন্দোলনে রয়েছে। দেশের সব ধর্মের নারীরাই খালেদা জিয়ার জন্য প্রার্থনা করছেন। এটা একটা বিরল উদাহরণ। এর থেকে ক্ষমতাসীনদের শিক্ষা নেওয়া দরকার।
বিএনপির এমন কী আছে যা দেখে এ দলের প্রতি নারীরা আকৃষ্ট হবেন?
নিপুন রায় চৌধুরী: নারীরা বিএনপির রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে এবং আরও বেশি করে হবে কারণ আমি নিজেই। স্নাতক পড়ছে এরকম মেয়েরা বিএনপির পতাকা তলে আসছে। এটা দেখে আমি খুবই অবাক হই।
জনতার আওয়াজ/আ আ
