রুচির দুর্ভিক্ষ সর্বস্তরে : সেলিম মোহাম্মেদ
নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
মঙ্গলবার, মার্চ ২৮, ২০২৩ ৬:৫৬ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
মঙ্গলবার, মার্চ ২৮, ২০২৩ ৬:৫৬ অপরাহ্ণ

গত দু’দিন ধরে সর্বত্রই চলছে বাঙ্গালীর রুচিবোধ নিয়ে নানান রকমের আলোচনা সমালোচনা, এই আলোচনার মূল উপাত্ত এসেছে অভিনেতা মামুনুর রশিদ সাহেবের একটি মন্তব্য থেকে। আমি মামুনুর রশিদ সাহেবের মন্তব্যের সাথে শতভাগ সহমত পোষণ না করলেও পুরোপুরি দ্বিমতও পোষণ করতে পারছিনা! আমি শুধু চেষ্টা করবো আমাদের এই “রুচিবোধের দুর্ভিক্ষের” মূল কারণগুলো সনাক্ত করতে। মামুনুর রশিদ সাহেবের এই একপেশে মন্তব্যটাও কিন্তু রুচিবোধের দুর্ভিক্ষের সহায়ক শক্তি। নিশ্চয়ই ভাবছেন আমি তাঁর মন্তব্যটাকে একপেশে বলছি কেন?
মামুন সাহেব শুধু হিরো আলমের নাম উল্লেখ করাতেই আমি তাঁর মন্তব্যটাকে একপেশে বলছি। বাংলাদেশে হিরো আলমের চেয়ে আরো অনেক বেসুরো গলায় গান গাওয়ার শিল্পী রয়েছে, মামুনুর রশিদ সাহেবেরা তাঁদের নাম উল্লেখ করতে সাহস না করাটাই প্রমাণ করে,এটা তাঁর একপেশে মন্তব্য এবং সে নিজেও রুচির দুর্ভিক্ষের মাঝে হারিয়ে গেছে। তাঁদের নাম বললে মামুনুর রশিদ সাহেবদের নাটক ব্যবসার ক্ষতি হয়ে যাবে, তাই যত দোষ নন্দ ঘোষের মতো হিরো আলমের দিকে আঙ্গুল তুলে নিজেকে মহা রুচিশীল প্রমাণের অপচেষ্টা করলেন।
আচ্ছা আপনারাই বলুন, এটিএন বাংলার ডঃ মাহফুজ সাহেব যখন প্রতি ঈদে তাঁর গাওয়া গান প্রচার করে, তখন কি মামুনুর রশিদ সাহেবের একবারও মনে হয়নি রুচির দুর্ভিক্ষের কথা? যে মানুষের সামান্যতম জ্ঞান বা ধারণা আছে সঙ্গীত সম্পর্কে, তাঁদের কেউ মাহফুজুর রহমানের এই বেসুরো কন্ঠে গাওয়া গান শুনার পর কাকে প্রথম স্থান দেবে হিরো আলমকে না মাহফুজ সাহেবকে? মামুনুর রশিদদের মুখ বন্ধ থাকে মাহফুজুর রহমানের মতো ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের সময়ে, তাঁদের ব্যপারে মুখ খুললে তাঁর নিজের নাটক প্রচার বন্ধ হয়ে যাবে,এভাবে সর্বক্ষেত্রে নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষার কারণেই রুচির দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে সমাজের সর্বস্তরে। এই হিরো আলম পৃথিবীজুড়ে পরিচিতি লাভ করেছে পার্লামেন্ট নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পর থেকে। চলুন এবার দেখি কাদের রুচিবোধের আকালের কারণে নির্বাচনের মাঠে হিরো আলমদের জন্ম হয়!!
বাংলাদেশে আগেও নির্বাচন হয়েছে কিছু কিছু কারচুপিও হয়েছে, তারপরও সবাই নির্বাচনে অংশ নিতো, মানুষ ভোটও দিতো, গত কয়েক বছরে নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পুর্ন ধ্বংস করে দেয়ায় এখন আর কেউ ভোটে অংশ নিতে চায়না। যদি আগের মতো সামান্য হলেও কিছুটা সঠিক নির্বাচনের সুযোগ থাকতো তাহলে নিশ্চয়ই সবাই নির্বাচনে অংশ নিতো, তখন কি হিরো আলমের মতো মানুষরা নির্বাচন করার সাহস পেতো? এই নির্বাচন পদ্ধতিকে কলুষিত করে, জোর করে ক্ষমতায় থাকার জন্য অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সকলকে দূরে সরিয়ে, মাঠ দখল করে শূণ্যতার সৃষ্টি করা হয়েছে। মনে রাখবেন প্রকৃতি কখনোই শূণ্যতা মেনে নেয়না, তাই প্রকৃতি হিরো আলমদের নিয়ে এসেছে শুণ্যতা পুরন করতে। মানুষ অন্যায়ের প্রতিবাদ স্বরুপ হিরো আলমদের কে ভোট দেয়। সমাজে আরো অনেক হিরো আলমের জন্ম হবে, সমাজে যখন মানুষের স্বাভাবিক অধিকার চর্চার সুযোগ কেড়ে নেয়া হয়, তখনই জন্ম হয় বিভিন্ন নামে বিভিন্ন ভাবে নানা রকমের প্রতিবাদী মানুষের, হিরো আলম তাঁদেরই একজন। মামুনুর রশিদ সাহেব কি করে ভুলে গেলেন তাঁর নিজের তৈরি “ওরা কদম আলী” নাটকের কথা? তাঁর সেই কদম আলীই তো আজকের হিরো আলম!
ভালো করে ভেবে দেখুন সমাজে কাদের মাঝে চলছে রুচির দুর্ভিক্ষ? এ সমাজকে রুচিহীন করে দিয়েছে তাঁরা, যারা জোর করে মানুষের ভোটাধিকার হাইজ্যাক করে ক্ষমতা দখল করে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য, সমাজের সর্বস্তরে নিজেদের পোষা গুন্ডাপান্ডা বসিয়েছ, তাঁদের রুচিহীন কর্মের জন্যই জন্ম হচ্ছে নতুন নতুন হিরো আলমদের। আঙ্গুল যদি তুলতে হয় তাহলে সাহস করে ওসব হারামজাদাদের দিকে তুলুন, যারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বানিয়েছে ব্যবসাকেন্দ্র, শিক্ষকের যায়গাতে বসিয়েছে দলিয় গুন্ডাপান্ডাদের, মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে বিনাভোটে গড়ে তুলেছে পার্লামেন্ট, এসব কাজ যারা করেছে তাঁদের কর্মের ফসল হিরো আলমরা। রুচির দুর্ভিক্ষের মাঝে আছে তাঁরা, যারা এসব অপকর্ম দেখেও প্রতিবাদ না করে উল্টো প্রতিবাদী মানুষের দিকে আঙ্গুল তুলে। রুচির উন্নয়ন ঘটাতে চাইলে চাটুকারিতা বন্ধ করে, সকল অপরাধীর বিরুদ্ধে উচ্চ স্বরে প্রতিবাদ করুন, সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলার সাহস থাকতে হবে, দেখবেন সমাজ বদলে যাবে। যতক্ষন আপনাদের এক চোখা রুচির পরিবর্তন না হবে, ততক্ষণ আমি অধম বলেই যাবো “জয়তু হিরো আলম”।
সেলিম মোহাম্মদের ফেইস বুক থেকে নেয়া
জনতার আওয়াজ/আ আ
