রোহিঙ্গা সংকট গুরুতর আঞ্চলিক সংকটে পরিণত হয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী - জনতার আওয়াজ
  • আজ দুপুর ২:৩১, বুধবার, ২৩শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১০ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৫শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
  • jonotarawaz24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

রোহিঙ্গা সংকট গুরুতর আঞ্চলিক সংকটে পরিণত হয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ: রবিবার, মে ১৯, ২০২৪ ৫:০২ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: রবিবার, মে ১৯, ২০২৪ ৫:০২ অপরাহ্ণ

 

জনতার আওয়াজ ডেস্ক
রোহিঙ্গা সংকট গুরুতর আঞ্চলিক সংকটে পরিণত হয়েছে বলে জা‌নি‌য়ে‌ছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এই সংকটের মূল‌্য আরও অনেক গভীরে প্রোথিত হতে পারে। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা জরুরি। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভারত ও চীনের ভূমিকা অত্যান্ত মূখ্য। তাদেরকে যদি আমরা এই বিষয়ে আরও বেশি করে যুক্ত করতে পারি, তাহলে আমি বিশ্বাস করি এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব’

রবিবার (১৯ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ওভারসীস করেসপন্ডেন্টস বাংলাদেশ (ওকাব) আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা সংকট: ভবিষ্যত পরিকল্পনা’-শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ কূটনৈতিক পথ অবলম্বন করছে। একইসঙ্গে আমরা আন্তর্জাতিক আদালতে গেছি। আমরা গাম্বিয়া ও ওআইসির মাধ্যমে আইসিজেতে মামলা করেছি। সেই মামলায় এখন পর্যন্ত যে আউটকাম এসেছে, সেটি আমাদের পক্ষে। আমরা আশা করছি, খুব দ্রুত এই মামলার ইতিবাচক ফলাফল আসবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আইসিজের মাধ্যমে একটি আন্তর্জাতিক চাপ মিয়ানমারের ওপর পড়বে। আমরা ক্রমাগতভাবে চেষ্টা করেছি, আন্তর্জাতিকভাবে যেসব দেশের প্রভাব মিয়ানমারের ওপর আছে, তাদের এই বিষয়ে যুক্ত করার। কয়দিন আগে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন। তার সঙ্গেও রোহিঙ্গা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’

চলতি বছর উগান্ডায় মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ওই বৈঠক থেকে আমার কাছে মনে হয়েছে, আন্তর্জাতিক সমালোচনা এড়ানোর জন্য হলেও মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন শুরু করতে চায়। কিন্তু মিয়ানমারের অভ্যন্তরে রাখাইন প্রদেশে এখন যে পরিস্থিতি, সেখানকার সেনাবাহিনী পালিয়ে আমাদের এখানে আসছে। এই পরিস্থিতিতে তো আমরা রোহিঙ্গাদের সেখানে ঠেলে দিতে পারি না’।

রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন-উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের জীবকা নির্বাহের সুযোগ দিতে বলেছে। ক্যাম্পে তারা কিছু কাজ করছে। কিন্তু তাদের পুরোপুরি জীবিকা নির্বাহের নিশ্চয়তা আমরা কিভাবে দিবো? রোহিঙ্গাদের জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করা সমাধান নয়। একমাত্র সমাধান হচ্ছে সব অধিকারসহ তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন’।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘গত বছর রোহিঙ্গাদের ফান্ডিং অনেক কমে গিয়েছিল। আগে মাথাপিছু ১২ ডলার ছিল। যা গত বছর ৮ ডলারে নেমে যায়। এ বছর ১০ ডলারের বেশি হতে পারে। গত বছর ইউক্রেন-রাশিয়া ও গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধের কারণে ফান্ডিং কমে গিয়েছিল। এ বছর আমাদের চেষ্টায় ফান্ডিং মাথাপিছু ১০ ডলারের উপরে যাবে’।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওকাবের কার্যকরী কমিটির সদস্য ফরিদ আহমেদ। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের অব্যাহত অবস্থান বাংলাদেশের অর্থনীতি, জীববৈচিত্র্য, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর প্রভাব ফেলছে। রোহিঙ্গারা মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান, সন্ত্রাসী তৎপরতা, পাচারের মতো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। অনেকে মানব পাচারকারীদের শিকার হচ্ছেন এবং ক্যাম্প থেকে পালিয়ে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশে ভ্রমণের চেষ্টা করছে। এমনকি তারা বাংলাদেশের পাসপোর্ট ও এনআইডি কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের অধ্যাপক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংকট রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনকে বাধাগ্রস্ত করছে।’ রোহিঙ্গারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ছড়িয়ে পড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সংখ্যার দিক থেকে বাঙ্গালীরাই এখন উখিয়ায় সংখ্যালঘু। সেখান থেকে তারা (রোহিঙ্গা) শুধু টেকনাফ কক্সবাজার নয় সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়ছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ক্যাম্পগুলোতে আরসা সহ বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর কার্যক্রম বাড়ছে কিনা তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টাই ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ‘শুরুর দিকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক যে সমর্থন ছিল তা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, গাজা-ইসরাইল যুদ্ধের কারণে রোহিঙ্গা সংকট বিশ্বব্যাপী অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে’।

রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে মানবিক দিক ও প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে জোরারোপ করেন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট এখনো বিশ্বব্যাপী একটি বড় সমস্যা। এই সংকটের আরো অনেক গভীরে যেতে হবে। যতদিন যাবে এই সমস্যার গভীরতা আরও বাড়বে৷ তাই শান্তিপূর্ণ উপায়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এর সমাধানে আঞ্চলিক শক্তিগুলোকে একযোগে উদ্যোগী হতে হবে’।

ওকাবের সভাপতি নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, ডিক্যাবের সভাপতি নুরুল ইসলাম হাসিব প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email
 
 
জনতার আওয়াজ/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ