শূন্য কার্বন নিঃসরণে বাংলাদেশ ও বাস্তব প্রেক্ষাপট
নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
রবিবার, মার্চ ৯, ২০২৫ ৫:০৮ পূর্বাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
রবিবার, মার্চ ৯, ২০২৫ ৬:৫০ পূর্বাহ্ণ

ডঃ নাসির খান
গত ৫ ই আগস্ট ২০২৪ ছাত্র জনতার যুগপদ আন্দোলনে দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের পতন হয়েছে এবং সর্বজন স্বীকৃত ও স্বনামধন্য প্রফেসর ডঃ মোঃ ইউনুস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নিয়েছেন।
নোবেল জয়ী ডঃ মোঃ ইউনুস তার ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসার ধারনার জন্য নোবেল বিজয়ী ও বিশ্বব্যপি সমাদৃত। তিনি বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যপি বৈষম্যহীন সমাজ গঠন, দারিদ্র দুরিকরণ ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার জন্য তিন শূনের পৃথিবী গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন যা ইতিমধ্যে সবার নজর কেড়েছে। এই তিন শূনের ধারণা হচ্ছে, শূন্য বেকারত্ব (Zero Unemployment), শূন্য সম্পদ পুঞ্জিভুতকরণ (Zero Wealth Concentration) ও শূন্য কার্বন নিঃসরণ (Zero Carbon Emission)। শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য সম্পদ পুঞ্জিভুতকরণ প্রক্রিয়া, ডঃ মোঃ ইউনুস কর্তৃক উদ্ভাবিত সামাজিক ব্যবসার প্রসারের মাধ্যমে বিস্তৃতি লাভ করতে পারে কিন্তু শূন্য কার্বন নিঃসরণ একটি সামগ্রিক প্রক্রিয়া, যার মধ্যে সমাজ সচেতনতা, আইন প্রনয়ন, কারিগরি প্রস্তুতি, বাজেট প্রনয়ন ও সময়ভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ধাপে ধাপে তার বাস্তবায়ন অন্তর্ভুক্ত। ইতিমধ্যে বিশ্বব্যপি অনেক দেশে যে শূন্য কার্বন নিঃসরণ (Net Zero Carbon Emission) এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে, তা কতটুকু ডঃ মোঃ ইউনুস কর্তৃক ঘোষিত শূন্য কার্বন নিঃসরণ এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ তা আমার জানা নাই। একটা কথা মনে রাখতে হবে, শূন্য কার্বন নিঃসরণ মানে পুরাপুরি কার্বন নিঃসরণ বন্ধ করা হবে তা কিন্তু নয়, তা বাস্তবে সম্ভব ও নয়।
২০১৫ সালে প্যারিসে কপ২১ সামিটে প্যারিস চুক্তি নামে একটি চুক্তি সই হয় যেখানে বিশ্বের ১৯১ টি দেশ অন্তর্ভুক্ত হয় এবং তাতে ২০৫০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫-২ ডিগ্রি কমানোর লক্ষে নির্ধারিত পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ কমানোর কথা বলা হয়। তার ধারাবাহিকতায় আন্তরাষ্ট্রীয় জলবায়ু পরিবর্তন প্যানেল (IPCC) ১৯৯০ সালকে ভিত্তি সাল (Base year) নির্ধারণ করে যুক্তরাজ্যসহ জি৭ ভুক্ত দেশগুলিকে আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্য কার্বন নিঃসরণ (Net Zero Carbon Emission) অর্জন করার বাধ্যবাধকতা নির্ধারণ করে দিয়েছে। তার মানে হচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে ঐ দেশগুলিকে তাঁদের কার্বন নিঃসরণ এর পরিমাণ ১৯৯০ সালের সমান কমিয়ে আনতে হবে, এটাকেই তাঁদের জন্য শূন্য কার্বন নিঃসরণ বলা হচ্ছে। তার একটা যুক্তি হচ্ছে, IPCC এর হিসাব অনুযায়ী ২০৫০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা যে ১.৫-২.০ ডিগ্রি বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে তা ১৯৯০ সালের কার্বন নিঃসরণ এর সাথে তুলনা করে। ২০২৩ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী যুক্তরাজ্য ১৯৯০ সালের কার্বন নিঃসরণ এর সাথে তুলনায় ৪৬% কার্বন নিঃসরণ কমিয়েছে যা জি৭ ভুক্ত দেশগুলির মধ্যে সর্বোচ্ছ এবং লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ ১০০% কমিয়ে ১৯৯০ সালের (ভিত্তি সাল) সমপর্যায়ে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা গ্রহন করেছে যা।PCC গাইডলাইন অনুসারে শূন্য কার্বন নিঃসরণ (Net Zero Carbon Emission) হিসাবে গণ্য করা হবে। জি৭ ভুক্ত অন্যান্য দেশগুলিও তাঁদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে।
IPCC গাইডলাইন অনুসারে শূন্য কার্বন নিঃসরণের লক্ষ্যমাত্রা ভিন্ন ভিন্ন দেশের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ভাবে নির্ধারিত করা আছে। এই জন্য প্রতিটি দেশকে তার উন্নয়ন ও কার্বন নিঃসরণের উপর ভিত্তি করে
শ্রেণিবিভাগ করে দিয়েছে। তার অংশ হিসাবে বাংলাদেশ ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে, UNFCCC (United Nations Framework Convention on Climate Change) এর কাছে বিভিন্ন সেকটরে যথারীতি ব্যবসা (Business as usual) অনুসরন করে ২০১২ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত কার্বন নিঃসরণের একটা উপাত্ত জমা দিয়েছে যাকে NDC (Nationally Determined Contribution) ও INDC (Intended Nationally Determined Contribution) বলা হয়ে থাকে। এর উপর নির্ভর করে বাংলাদেশের উপর ২০১২ কে ভিত্তি সাল নির্ধারণ করে দেয়া হয় এবং সে অনুযায়ী বাংলাদেশকে কার্বন নিঃসরণের একটা লক্ষ্যমাত্রা ও বেধে দেয়া হয় আর তা হল ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ২০৩০ সালের সম্ভাব্য কার্বন নিঃসরণের তুলনায় শর্তহীন ভাবে ৬.৭৩% এবং শর্তযুক্ত ভাবে ১৫.১২% কার্বন নিঃসরণ কমাতে হবে। ২০২১ সালে সংশোধিত NDC অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে যে যে খাতে উল্লেখযোগ্য ভাবে কার্বন নিঃসরণ বৃদ্ধি পাবে তা হলো, শিল্প ২৪.৯১%, বিদ্যুৎ ২৩.২৪%, যানবাহন ৮.৮৬%, ইটেরভাটা ৫.৮৬%, কৃষি ১৩.৩৫% ও গৃহস্থালি কঠিন বর্জ্য ও তরল বর্জ্য ৭.৫৫%। এখানে উল্লেখ্য, শর্তহীন ভাবে যে ৬.৭৩% কার্বন নিঃসরণ কমাতে হবে তা বাংলাদেশ সরকারকে নিজস্ব তহবিল থেকে আর শর্তযুক্ত ভাবে যে ১৫.১২% কার্বন নিঃসরণ কমাতে হবে তা শিল্পউন্নত দেশগুলি বা আন্তর্জাতিক অর্থতহবিল বা উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে যৌথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। এসবক্ষেত্রে ঐ সব দেশ ও সংস্থাগুলিতে UNFCC কর্তৃক এই বিষয়ে স্পষ্ট নীতিমালা রয়েছে। কিন্তু তার জন্য দরকার যথাযথ যোগাযোগ আর সঠিক প্রকল্প পরিকল্পনা।
অন্যদিকে শর্তহীনভাবে যে ৬.৭৩% কার্বন নিঃসরণ কমাতে হবে, তা উপরিল্লিখিত খাতগুলি থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্বাচন করা জরুরী। নিন্মে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিভিন্ন পদ্দতিগুলি উল্লেখ করা হলোঃ
গৃহস্থালি কঠিন বর্জ্য ও তরল বর্জ্যঃ এই খাতে বাংলাদেশের কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ ৭.৫৫%। আমাদের দেশে আজঅবধি গৃহস্থালি কঠিন বর্জ্যের কোন ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠে নি, যার ফলে জলাবদ্ধতা, বায়ু দূষণ, পানি দূষণ ইত্যাদি তো রয়েছেই, তদুপরি যত্রতত্র বর্জ্য নিক্ষেপের ফলে তা থেকে মিথেন গ্যাস নির্গত হয় যা বায়ুমণ্ডলে ২১ গুন কার্বন নিঃসরণের সমান। অন্যদিকে তরল পয়ঃবর্জ্য পরিশোধন থেকেও আমরা অনেক পিছিয়ে আছি, এই খাতকে সরকার অগ্রাধিকার দিলে শুধু কার্বন নিঃসরণই কমবে না বরং স্বাস্থ্য খাত থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে।
বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরনঃ এই খাতে বাংলাদেশের কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ ২৩.৪৪%, দেশের অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে বিদ্যুৎ খাত সম্পৃক্ত, তাই বিদ্যুৎ খাত সম্প্রসারণের সাথে সাথে জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যাবহার কমানো, নবায়নযোগ্য জ্বালানী ভিত্তিক বিদ্যুতের উৎপাদন ও ব্যাবহার বাড়ানো সহ সিস্টেমলস সহনীয় মাত্রায় কমিয়ে টেকসই সরবরাহ ও বিতরন ব্যবস্থা নিশ্চিত করে এই খাতে কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে যেতে পারে।
শিল্পখাতঃ এই খাতে বাংলাদেশের কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশী (২৪.৯১%)। বাংলাদেশের শিল্পখাত, জ্বালানী ব্যবহারের ক্ষেত্রে বরাবর নিয়ন্ত্রণহীন, এখানে কার্বন নিঃসরণ কমানো নিয়ে যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে, কারখানা গুলিতে উৎপাদিত পণের পরিমাণের ভিত্তিতে জ্বালানী ও পানি ব্যবহারের পরিমাণ নির্ধারিত করে দিতে হবে। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত মানমাত্রা রয়েছে। এ ছাড়াও কারখানা গুলিতে বাৎসরিক জ্বালানী ব্যবহারের উপর উপাত্ত (Audit) প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা করে দিতে হবে। কারখানা ভিত্তিক সর্বোচ্ছ নবায়নযোগ্য জ্বালানী ব্যবহারকারিদের বিভিন্ন প্রণোদনা দিতে হবে।
যানবাহনঃ যানবাহনের ক্ষেত্রে এখন সবচাইতে বেশী যা দরকার তা হচ্ছে, যানজট কমানো, বর্তমানে যানজটের কারণে সবচাইতে বেশী কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে। এ ছাড়াও যানবাহনের উপযুক্ততা (Fitness) প্রদানের ক্ষেত্রে সচ্ছতা নিশ্চিত করা, অতি পুরাতন যানবাহনকে উপযুক্ততা (Fitness) প্রদানের ক্ষেত্রে বিধিনিষেদ আরোপ করা, স্থানবিশেষে যানবাহনের গতিসীমা নির্ধারিত করে দেওয়া, জনগণকে ব্যক্তিগত
শ্রেণিবিভাগ করে দিয়েছে। তার অংশ হিসাবে বাংলাদেশ ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে, UNFCCC (United Nations Framework Convention on Climate Change) এর কাছে বিভিন্ন সেকটরে যথারীতি ব্যবসা (Business as usual) অনুসরন করে ২০১২ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত কার্বন নিঃসরণের একটা উপাত্ত জমা দিয়েছে যাকে NDC (Nationally Determined Contribution) ও INDC (Intended Nationally Determined Contribution) বলা হয়ে থাকে। এর উপর নির্ভর করে বাংলাদেশের উপর ২০১২ কে ভিত্তি সাল নির্ধারণ করে দেয়া হয় এবং সে অনুযায়ী বাংলাদেশকে কার্বন নিঃসরণের একটা লক্ষ্যমাত্রা ও বেধে দেয়া হয় আর তা হল ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ২০৩০ সালের সম্ভাব্য কার্বন নিঃসরণের তুলনায় শর্তহীন ভাবে ৬.৭৩% এবং শর্তযুক্ত ভাবে ১৫.১২% কার্বন নিঃসরণ কমাতে হবে। ২০২১ সালে সংশোধিত NDC অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে যে যে খাতে উল্লেখযোগ্য ভাবে কার্বন নিঃসরণ বৃদ্ধি পাবে তা হলো, শিল্প ২৪.৯১%, বিদ্যুৎ ২৩.২৪%, যানবাহন ৮.৮৬%, ইটেরভাটা ৫.৮৬%, কৃষি ১৩.৩৫% ও গৃহস্থালি কঠিন বর্জ্য ও তরল বর্জ্য ৭.৫৫%। এখানে উল্লেখ্য, শর্তহীন ভাবে যে ৬.৭৩% কার্বন নিঃসরণ কমাতে হবে তা বাংলাদেশ সরকারকে নিজস্ব তহবিল থেকে আর শর্তযুক্ত ভাবে যে ১৫.১২% কার্বন নিঃসরণ কমাতে হবে তা শিল্পউন্নত দেশগুলি বা আন্তর্জাতিক অর্থতহবিল বা উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে যৌথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। এসবক্ষেত্রে ঐ সব দেশ ও সংস্থাগুলিতে UNFCC কর্তৃক এই বিষয়ে স্পষ্ট নীতিমালা রয়েছে। কিন্তু তার জন্য দরকার যথাযথ যোগাযোগ আর সঠিক প্রকল্প পরিকল্পনা।
অন্যদিকে শর্তহীনভাবে যে ৬.৭৩% কার্বন নিঃসরণ কমাতে হবে, তা উপরিল্লিখিত খাতগুলি থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্বাচন করা জরুরী। নিন্মে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিভিন্ন পদ্দতিগুলি উল্লেখ করা হলোঃ
গৃহস্থালি কঠিন বর্জ্য ও তরল বর্জ্যঃ এই খাতে বাংলাদেশের কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ ৭.৫৫%। আমাদের দেশে আজঅবধি গৃহস্থালি কঠিন বর্জ্যের কোন ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠে নি, যার ফলে জলাবদ্ধতা, বায়ু দূষণ, পানি দূষণ ইত্যাদি তো রয়েছেই, তদুপরি যত্রতত্র বর্জ্য নিক্ষেপের ফলে তা থেকে মিথেন গ্যাস নির্গত হয় যা বায়ুমণ্ডলে ২১ গুন কার্বন নিঃসরণের সমান। অন্যদিকে তরল পয়ঃবর্জ্য পরিশোধন থেকেও আমরা অনেক পিছিয়ে আছি, এই খাতকে সরকার অগ্রাধিকার দিলে শুধু কার্বন নিঃসরণই কমবে না বরং স্বাস্থ্য খাত থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে।
বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরনঃ এই খাতে বাংলাদেশের কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ ২৩.৪৪%, দেশের অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে বিদ্যুৎ খাত সম্পৃক্ত, তাই বিদ্যুৎ খাত সম্প্রসারণের সাথে সাথে জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যাবহার কমানো, নবায়নযোগ্য জ্বালানী ভিত্তিক বিদ্যুতের উৎপাদন ও ব্যাবহার বাড়ানো সহ সিস্টেমলস সহনীয় মাত্রায় কমিয়ে টেকসই সরবরাহ ও বিতরন ব্যবস্থা নিশ্চিত করে এই খাতে কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে যেতে পারে।
শিল্পখাতঃ এই খাতে বাংলাদেশের কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশী (২৪.৯১%)। বাংলাদেশের শিল্পখাত, জ্বালানী ব্যবহারের ক্ষেত্রে বরাবর নিয়ন্ত্রণহীন, এখানে কার্বন নিঃসরণ কমানো নিয়ে যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে, কারখানা গুলিতে উৎপাদিত পণের পরিমাণের ভিত্তিতে জ্বালানী ও পানি ব্যবহারের পরিমাণ নির্ধারিত করে দিতে হবে। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত মানমাত্রা রয়েছে। এ ছাড়াও কারখানা গুলিতে বাৎসরিক জ্বালানী ব্যবহারের উপর উপাত্ত (Audit) প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা করে দিতে হবে। কারখানা ভিত্তিক সর্বোচ্ছ নবায়নযোগ্য জ্বালানী ব্যবহারকারিদের বিভিন্ন প্রণোদনা দিতে হবে।
যানবাহনঃ যানবাহনের ক্ষেত্রে এখন সবচাইতে বেশী যা দরকার তা হচ্ছে, যানজট কমানো, বর্তমানে যানজটের কারণে সবচাইতে বেশী কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে। এ ছাড়াও যানবাহনের উপযুক্ততা (Fitness) প্রদানের ক্ষেত্রে সচ্ছতা নিশ্চিত করা, অতি পুরাতন যানবাহনকে উপযুক্ততা (Fitness) প্রদানের ক্ষেত্রে বিধিনিষেদ আরোপ করা, স্থানবিশেষে যানবাহনের গতিসীমা নির্ধারিত করে দেওয়া, জনগণকে ব্যক্তিগত
যানবাহনের চাইতে গনপরিবহনে উৎসাহিত করা ও পর্যাপ্ত গনপরিবহণের চলাচল নিশ্চিত করা, স্থানবিশেষে যেখানে ট্রাফিক জ্যাম বেশী হওয়ার সম্ভাবনা, সেখানে অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রিত বা নিষিদ্ধ করা, স্থানবিশেষে বিশেষ স্থানে ব্যক্তিগত যানবাহনের জন্য দিনের বিভিন্ন সময়ে যানজট মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া, বিভিন্ন স্থানে যানজট নিরসনের লক্ষে ট্রাফিক বাতি স্থাপন, যত্রতত্র পার্কিং নিয়ন্ত্রণ করা ইত্যাদি। ক্ষেত্রবিশেষে হাইব্রিড ও বৈদ্যুতিক যানবাহন উৎসাহিত করণ, এসব যানবাহনের ক্ষেত্রে সড়ক কর ও আমদানি কর নিন্মগামী করাও জরুরী।
ইটের ভাটাঃ ইটের ভাটা গুলিতে শুধু কার্বন নিঃসরণই হচ্ছে না, প্রচুর পরিমাণ বায়ু দূষণ ও হচ্ছে, তাই দেশের নির্মাণ খাতে পোড়ামাটির ইটের ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে, এ ক্ষেত্রে কংক্রিট ব্লকের ব্যবহার বাড়াতে হবে। বর্তমানে প্রচলিত ইটের ভাটা গুলিকে আধুনিক প্রযুক্তিতে রূপান্তরিত করে জ্বালানী সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব করে গড়ে তুলতে হবে যাতে এই খাতে কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রনে আসে।
কৃষিখাতঃ এই খাতে সবচেয়ে বেশী কার্বন নির্গমন হয় রাসায়নিক সার উৎপাদন, বিতরন ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে। এই খাতে কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2), মিথেন (CH4) ও নাইটরাস অক্সাইড (NO2) গ্যাস উৎপন্ন হয় যেখানে মিথেন কার্বন ডাই অক্সাইডের তুলনায় ২১ গুন ও নাইটরাস অক্সাইড ৩০০ গুন সমতুল্য। তাই কৃষিখাতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমানো জরুরী, এ ছাড়াও ধানের চাতালগুলিতে লাগামহীন ভাবে জীবাশ্মজ্বালানীর ব্যাবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। গবাধিপশুর খামার গুলিতে যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্থাপন করতে হবে, এই খাতে মিথেন উৎপাদন সবচাইতে বেশী হয়।
শূন্য কার্বন নিঃসরণ একটি সমন্বিত রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ব্যবস্থা, যা সমাজে সবাইকে একিভুত করে ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করতে হবে, যার জন্য জনসচেতনতা ও জন্ সম্পৃক্ততা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
লেখকঃ ডঃ নাসির খান,পরিবেশ ব্যবস্থাপনা পরামর্শক,যুক্তরাজ্য থেকে
Email: nukhan05@gmail.com
বার্তা প্রেরক,
ইয়াসমিন আক্তার
বিশেষ প্রতিনিধি
জনতার আওয়াজ,লন্ডন
জনতার আওয়াজ/আ আ
