শ্রমজীবী মানুষের অধিকার রক্ষিত হোক : আব্দুল ওয়াদুদ সরদার - জনতার আওয়াজ
  • আজ রাত ৪:০৭, সোমবার, ২৯শে মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৯ই জিলকদ, ১৪৪৪ হিজরি
  • jonotarawaz24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

শ্রমজীবী মানুষের অধিকার রক্ষিত হোক : আব্দুল ওয়াদুদ সরদার

নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ: সোমবার, মে ১, ২০২৩ ১২:৪২ পূর্বাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: সোমবার, মে ১, ২০২৩ ১২:৪৩ পূর্বাহ্ণ

 

শ্রমিকের হাতের স্পর্শে বিশ্ব সভ্যতা উন্নতির শিখরে আরোহণ করছে। শ্রম ব্যতীত কোনো কিছুই উৎপাদিত হয় না- এ সত্য অস্বীকারের কোনো উপায় নেই। একজন শ্রমিকের কর্মঘণ্টা কতক্ষণ হবে? সে কি তার শ্রমসময়ের মূল্য নির্ধারণ করতে পারবে? কতটুকু মূল্য পেলে তার জীবন বিকশিত করার সুযোগ পাবে, জীবনের চাহিদা বলতে আসলে কী বোঝায়? শ্রমের কাজে নিয়োজিত মানুষের ভূমিকা, মূল্য ও মর্যাদা কীভাবে বিবেচিত হবে, জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদন ও জীবন বিকাশের জন্য সংস্কৃতি নির্মাণে শ্রমের ভূমিকা কী, শ্রমিক কি শুধু প্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদনে শ্রম প্রদান করবে? উৎপাদিত দ্রব্যের ক্রেতাদের এক বিপুল অংশ, লাখো-কোটি শ্রমিক পণ্য না কিনলে তা বিক্রি হবে কীভাবে? শ্রমিকের মজুরি উৎপাদিত দ্রব্যের বিপণনে কী ভূমিকা রাখে? মুনাফা আসে কোথা থেকে, মুনাফা বৃদ্ধিতে মালিকের তৎপরতা কত ধরনের, শ্রমিক কেন মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে অংশ নেয়, শ্রমিকের সন্তানদের জীবন কেমন হবে? এরকম অসংখ্য প্রশ্নের ঘনীভূত রূপ হিসেবে দাবি উঠেছিল ৮ ঘণ্টা কর্মদিবস চাই।

এই দাবির অন্তরালে ছিল আরেকটি দাবি- ৮ ঘণ্টা কাজ করে এমন মজুরি চাই যেন তা দিয়ে আমার পরিবার নিয়ে মানসম্পন্ন জীবনযাপন করতে পারি। কিন্তু শ্রমিকদের দাবি যতই ন্যায়সঙ্গত মনে হোক না কেন, মুনাফা ও মজুরির সঙ্ঘাত এত তীব্র যে, আলোচনার পথে নয়; বরং নিষ্ঠুর দমন ও রক্তাক্ত পথে সরকার ও মালিকরা সেই আন্দোলন দমন করতে চেয়েছিল।

১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটের সামনে ১-৪ তারিখ পর্যন্ত লাখ লাখ শ্রমিক সমবেত কণ্ঠে দাবি তুলেছিল সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত নয়, ৮ ঘণ্টা কর্মদিবস চাই। মে মাসের সেই আন্দোলনকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করাই শুধু নয়; আন্দোলনের নেতা অগাস্ট, এঞ্জেলস, স্পাইস, ফিসারকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। শিকাগো শহরের সেই রক্তাক্ত আন্দোলন শ্রমিকের বেদনা ও বিক্ষোভ রূপে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল, যা আজকের ‘মে দিবস’ পরিণত হয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে।

ফরাসি বিপ্লব সাম্য প্রতিষ্ঠার চেতনার মাধ্যমে জন্ম নিয়েছিল মে দিবসের চেতনা। ফরাসি বিপ্লব শুধু সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতা, ভ্রাতৃত্বের স্লোগান তুলেনি; সাথে সাথে মত প্রকাশের, মত প্রচারের, মত প্রতিষ্ঠার অধিকারের আকাক্সক্ষার জন্ম দিয়েছিল। ১৭৮৯ সালের পরের পৃথিবী তাই আর আগের মতো থাকেনি। মানুষ বাঁচবে কীভাবে, মর্যাদা আর অধিকার ছাড়া মানুষের জীবন কি পশুর জীবনের মতো হয়ে যায় না? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে শ্রমের ভূমিকার কথা ভাবতে হয়েছে। এডাম স্মিথ ও ডেভিড রিকার্ডো দেখালেন মানুষের শ্রমের ফলেই মূল্য তৈরি হয়। মূল্যের শ্রমতত্ত্ব স্বীকার করল শ্রমিকের শ্রমের ভূমিকার কথা। কিন্তু, তার বিনিময়ে শ্রমিক কী পাবে সে প্রশ্নের সমাধান হলো না।

ইসলামবিবর্জিত শ্রমনীতি শ্রমিকের যথাযথ মর্যাদা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই ১৮৮৬ সালে শ্রমিকদের তার অধিকার সংরক্ষণের জন্য আন্দোলনে নেমে রক্ত ঝরাতে ও জীবন দিতে হয়েছে। আধুনিক সভ্য সমাজ ইসলামের শেষ নবীর মুখ থেকে বের হওয়া কুরআনের বাণী অমান্য করে শ্রমিকদের যার যার খুশি মতো ব্যবহার করে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। কুরআনের বাণী মেনে নিলে এর সমাধান মিলে সহজে।

গ্রাম থেকে উঠে এসে কারখানা শ্রমিকে পরিণত হওয়া মানুষটি জীবন বাঁচাতে উদয়াস্ত পরিশ্রম করছে। কিন্তু তার জীবনের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। অথচ মালিকদের প্রাচুর্য ও জৌলুস বাড়ছে। এই বৈষম্য তাদের মধ্যে বিক্ষোভের জন্ম দিতে শুরু করল, যার ফলে কারখানা ভাঙা, ম্যানেজার হত্যার মতো ঘটনা ঘটতে শুরু করল। ১৮৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের শতবর্ষ উপলক্ষে প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে ফ্রেদেরিক এঙ্গেলসের উপস্থিতিতে ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরবর্তীতে ১৯১৯ সালে আইএলও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সারা বিশ্বে মে দিবস পালিত হয়ে আসছে। যদিও যে দেশে মে দিবস আন্দোলনের সূচনা সেই আমেরিকাতে রাষ্ট্রীয়ভাবে মে দিবস পালিত হয় না। তারপরও পৃথিবীর অন্তত ৮০টি দেশে মে দিবস সরকারি ছুটির দিন হিসেবে স্বীকৃত। আর সারা বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষ গভীর আবেগ নিয়ে মে দিবস পালন করে শ্রমদাসত্ব থেকে মুক্তির আকাক্সক্ষায়।

বাংলাদেশ ও মে দিবস
স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে মে দিবস পালিত হয়ে আসছে। মে দিবসের প্রধান দাবি ৮ ঘণ্টা কর্মদিবস ২২ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে বাস্তবায়িত হলেও কোটি কোটি বেসরকারি শ্রমিক-কর্মচারী এখনো ৮ ঘণ্টা কর্মদিবসের সুফল পায় না; বরং শ্রমআইনে কৌশলে ১০ ঘণ্টা কাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিম্ন মজুরির ফাঁদে শ্রমজীবী মানুষকে আটকে ফেলা হয়েছে ওভারটাইম করতে, তা না হলে তার সংসার চালানো অসম্ভব।

এক গবেষণায় দেখা যায়, মালিকের মুনাফা বাড়ানোর দু’টি পথ। শ্রমিকের শ্রম ও সময় বাড়ানো, আর যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ানো। ফলে কর্মঘণ্টা বাড়ছে, উৎপাদন বাড়ছে। সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বেকারত্ব। বিপুল সংখ্যক বেকার শ্রমিক বাজারে বেকার জীবনযাপন করছে বলে কম মজুরিতেই তাদের কাজ করানো সম্ভব হচ্ছে।
প্রতি বছর শ্রমবাজারে কাজপ্রত্যাশী ২০-২২ লাখ তরুণ-যুবক আসে যাদের মাত্র দুই লাখের মতো কর্মসংস্থান রাষ্ট্র করতে পারে। এরপর, সাত থেকে ১০ লাখ মানুষ পাড়ি জমায় বিদেশে কাজ করতে। আর বাকিরা দেশে কোনো মতে কাজ খুঁজে নেয়ার চেষ্টা করে। দেশের ছয় কোটি ৩৪ লাখ শ্রমজীবীর মধ্যে প্রায় তিন কোটি কাজ করে কৃষি খাতে। যেখানে বছরে তিন মাসের বেশি কাজ থাকে না। ফলে বহু ধরনের অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজের মাধ্যমে তারা টিকে থাকার চেষ্টা করে। এর বাইরে ৪০ লাখ শ্রমিক গার্মেন্টে; ৩০ লাখের বেশি নির্মাণ খাতে; ৫০ লাখ পরিবহন খাতে; ১০ লাখের বেশি দোকান কর্মচারী; পাট, চা, চামড়া, তাঁত, রি-রোলিং, মোটর মেকানিক, লবণ, চিংড়ি, সংবাদমাধ্যম, হাসপাতাল-ক্লিনিক, পুস্তক বাঁধাই, হকার, রিকশা-ভ্যানচালক, ইজিবাইক চালক, নিরাপত্তা প্রহরীসহ বিভিন্ন খাতে কাজ করছে।

শ্রমশক্তির এক কোটি দুই লাখ প্রাতিষ্ঠানিক খাতে আর বাকিরা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে থাকে। মজুরি বোর্ডের মাধ্যমে ৪৩টি সেক্টরের শ্রমজীবীদের নিম্নতম মজুরি নির্ধারণের ব্যবস্থা থাকলেও বাকি কোটি কোটি শ্রমিকের ‘কাজ নেই তো মজুরি নেই’ নীতিতে কাজ করানো হয়ে থাকে। শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার পথে আইনি ও আইন বহিভর্‚ত অসংখ্য বাধা। সে কারণে দুই লাখের মতো ছোট-বড় প্রতিষ্ঠান থাকলেও ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা আট হাজারের কম। দেশের প্রধান রফতানি খাত গার্মেন্টে চার হাজারের বেশি কারখানা থাকলেও ট্রেড ইউনিয়ন আছে এমন কারখানা কাগজে-কলমে ১৯৮৩-২০২১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে নিবন্ধিত ট্রেড ইউনিয়ন সংখ্যা এক হাজার ৩৩টি। বাস্তবে সক্রিয় ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা আরো কম। দেশের আটটি ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার নেই।

আইএলও কনভেনশন ’৮৭ ও ’৯৮ বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে অনুসমর্থন করলেও স্বাধীনভাবে ট্রেড ইউনিয়ন করা ও পছন্দ মতো নেতা নির্বাচনের অধিকার থেকে শ্রমিকরা বঞ্চিত। ট্রেড ইউনিয়ন হলো শ্রমিকের ঐক্যবদ্ধ ও শিক্ষিত হওয়ার একমাত্র উপায় যা না হলে সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও শ্রমিকরা অসহায়। মালিকদের ক্ষমতা আর শ্রমআইনের সহায়তা নিয়ে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করা ও টিকিয়ে রাখাকে দুঃসাধ্য করে ফেলা হচ্ছে এবং এ কারণেই স্বল্প মজুরি আর দীর্ঘ কর্মসময়ের দুষ্টচক্রে বাঁধা পড়ে রয়েছে বাংলাদেশের শ্রমিক। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ছে, মাথাপিছু আয় বাড়ছে। মাথাপিছু আয় বর্তমানে এক হাজার ৯০৯ ডলার। বর্তমান বাজারে এক ডলার সমান ১০৬ টাকা। তা হলে একজন শ্রমিকের বার্ষিক মাথাপিছু আয় দাঁড়ায় দুই লাখ দুই হাজার ৪৫৪ টাকা, অর্থাৎ মাসিক দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৮৬২ টাকা। অথচ দেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাতের শ্রমিকের সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে আট হাজার টাকা। ফলে উৎপাদনের প্রধান চালিকাশক্তি শ্রমিক মাথাপিছু আয়ের তুলনায় আট হাজার ৮৬২ টাকা কম মজুরি পাচ্ছে এবং বৈষম্য ক্রমাগত আকাশচুম্বী হচ্ছে। মে দিবসের স্লোগানে এই বৈষম্যের কথাই মূর্ত হয়ে উঠছে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শ্রমিকের এই স্বাধিকার আন্দোলনের পুনর্ব্যক্ত করতে গেলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে ওই সব হতদরিদ্র শ্রমিককে বন্দী করে কারাগারে পাঠানোর দৃশ্যও আমরা ২০২২ সালে লক্ষ করেছি। যেটি আইএলও কনভেনশন ’৮৭ ও ’৯৮ বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে অনুসমর্থন পরিপন্থী। যারা এ কাজটি করেছে তারা আইনের চোখে দণ্ডণীয়। আমরা আশা করব, ভবিষ্যতে তারা দায়িত্বশীলের ভূমিকা পালন করবে।

কর্মসময় কমছে না; বরং আধুনিক যন্ত্র কেড়ে নিচ্ছে কাজ
যন্ত্রের শক্তি মানুষের শ্রমকে লাঘব করবে। ফলে অল্প সময়ে বেশি উৎপাদন হবে- এই প্রত্যাশা থাকলেও বাস্তবে শ্রমিকের শ্রমসময় কমছে না। নারী শ্রমিকের শিল্পে আগমন বেড়েছে কিন্তু তাদের মাতৃত্ব, সংসারের কাজ নিয়ে দ্বিগুণ চাপ বহন করতে হচ্ছে। কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিশ্রম ও একঘেয়ে সাংসারিক কাজ নিংড়ে নিচ্ছে নারীদের শ্রমশক্তি। দ্রæত হারিয়ে ফেলছে সে তার কাজ করার ক্ষমতা। তাই দেখা যায়, শিল্প-কারখানায় ৪০ বছরের বেশি বয়সী নারী শ্রমিক কাজ করতে পারছে না। অন্য দিকে, কারখানার উচ্চপদে বা ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃত্বে নারী শ্রমিকদের উপস্থিতি কম। ওভারটাইম আর যন্ত্র মিলে অল্প শ্রমিক দিয়ে বেশি কাজ করানোর ফলে কর্মক্ষম যুবশক্তির একটি বড় অংশ বেকার। এ পরিস্থিতি বিরাজ করছে বিশ্বব্যাপী। এর মধ্যে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের নির্বাহী প্রধান ক্লাউস শোয়াব চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সূচনা হয়েছে বলে যে ঘোষণা দিয়েছেন তা এখন আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মুনাফা ও মজুরির যে বিরোধ- সেই বিরোধে শ্রমিক সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও দুর্বল ও শোষিত। ফলে সারা দুনিয়াতে খাদ্যপণ্য ও ব্যবহারিক পণ্য উৎপাদন সব রেকর্ড ভেঙে ফেললেও তা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে থেকে যাচ্ছে। আয়ের বড় অংশ খাদ্য, বাড়িভাড়া, পোশাক, চিকিৎসায় ব্যয় হয়ে যাওয়ার ফলে সঞ্চয় যেমন থাকছে না; তেমনি দক্ষতা অর্জনের জন্য বাড়তি খরচ করাও শ্রমিকের জন্য সম্ভব হয়ে উঠছে না। তাহলে ডিজিটাল দক্ষতা শ্রমিকরা অর্জন করবে কিভাবে? চতুর্থ শিল্প বিপ্লব কি তাহলে বেকারত্বের ভয়াবহতা নিয়ে আবির্ভূত হবে?

আমাদের করণীয়
পাক-ভারত উপমহাদেশে কাজের ঘণ্টা কার্যকর হলেও উপযুক্ত মজুরি, যথাসময়ে মজুরি ও শ্রমিকদের যথাযথ মর্যাদা প্রদান এখনো কার্যকর হয়নি। যার কারণে ন্যায্য মজুরি, বকেয়া মজুরি দাবিতে রাস্তা অবরোধ, ধর্মঘট ও মিল-ফ্যাক্টরি ভাঙচুর হতে দেখা যায়।

সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনকাঠামোর বিশাল ব্যবধান দেশে দেখা যায়। এ ব্যবধান কমিয়ে ১ : ৫ করা যেতে পারে। অর্থের অভাবে শ্রমিক ও তাদের পোষ্যদের পুষ্টিহীনতায় ভুগতে দেখা যাচ্ছে। দিন দিন তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। অর্থের অভাবে তারা তাদের সন্তানদের উপযুক্ত শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রতি বছর অকর্মণ্য হয়ে জাতির ঘাড়ে বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অন্য দিকে উচ্চবিত্ত অবৈধ ও অনৈতিক পথে অর্থ ব্যয় করছে। লিপ্ত হচ্ছে লাগামছাড়া জীবযাপনে। নানা অসামাজিক কার্যকলাপ বেড়ে যাচ্ছে তাদের মধ্যে।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ইসলামের আদর্শের দিকে ফিরে আসতে হবে। এতে শ্রমিক তার যথাযত মজুরি সঠিক সময় পাবে। মিল-কলকারখানার অর্জিত লভ্যাংশের অংশীদার শ্রমিকও হবে। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনকাঠামো পুনর্বিন্যাস হবে। মালিক-শ্রমিক ভাই ভাইয়ের সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হবে। তবেই শ্রমিকের আচরণে থাকবে না আত্মঘাতীমূলক মনোভাব, মালিকের মধ্যে জন্মাবে সহমর্মিতা ও সহানুভ‚তি। সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে ভারসাম্য।
এ ব্যাপারে মোহাম্মদ সা:-এর বাণী স্মরণ করা যেতে পারে, তিনি বলেছেন, তোমরা যা খাবে তোমার অধীনস্থদের তাই খাওয়াবে, তোমরা যা পরবে তোমার অধীনস্থদের তাই পরাবে।’ ‘শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকানোর আগেই তার পাওনা মিটিয়ে দাও।’

আমাদের সমাজে অনেক স্কলারের সাথে মজুরি নির্ধারণের নীতিমালা কী হবে আলোচনার উত্তরে অনেকেই বলে থাকেন, এটি একটি চুক্তি যার সাথে যেমন চুক্তি করা হবে এর ভিত্তিতে মজুরি নির্ধারিত হবে। আমরা এটি যদি ধরেও নেই তা হলে একজন মানুষের ন্যূনতম প্রয়োজনের দিকে খেয়াল রেখে এটি করতে হবে।

শ্রমিকের মজুরি বিলম্বে দেয়ার প্রবণতা রোধে বর্তমান মজুরিবৈষম্যের ক্ষেত্রে অধিক মজুরিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সবার শেষে পরিশোধ করলে অল্প মজুরিপ্রাপ্ত শ্রমিক তাদের মজুরি পেয়ে যাবে খুব সহজেই। তা হলে কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ হবে না, হৈ হাঙ্গামা অনেকাংশে কমে যাবে।

আসুন এবার আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে সব শ্রমিককে ভাই, বন্ধু ও সম্পদ হিসেবে বুকে টেনে নেই, সব ভেদাভেদ ও বৈষম্য ভুলে বেতনকাঠামো পুনর্নির্ধারণ করে জাতির বৃহত্তর কল্যাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই। আল্লাহ তায়ালার কাছে ফরিয়াদ করি, হে বিশ্ব জাহানের মালিক- আপনি মালিক- শ্রমিকের সব সমস্যা সমাধান করে বাস্তব জীবনে আমল করার তৌফিক দিন।

Print Friendly, PDF & Email
 
 
জনতার আওয়াজ/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com