ষড়যন্ত্র কে রুখে দিতে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা দরকার : সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম
নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
সোমবার, মার্চ ৭, ২০২২ ৫:৪২ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
সোমবার, মার্চ ৭, ২০২২ ৫:৪২ অপরাহ্ণ
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
দেশে বর্তমান সময়ে ভঙ্গুর অবস্থা বিরাজ করছে উল্লেখ করে এর থেকে উত্তরণের জন্য গঠনমূলক পরিবর্তনের আহবান জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতারা। সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এক গোল টেবিল আলোচনা সভায় তারা এসব কথা বলেন। ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ শীর্ষক ব্যানারে এ সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি।
সভায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু সম্মিলিত সংগ্রামের কথা বলেছেন। সবাইকে মিলিতভাবে কাজ করার কথা বলেছেন। আজকে দ্রব্যমূল্য আমাদের শ্বাসরুদ্ধ অবস্থার মধ্যে রেখেছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আজকে বিরোধীদল একটা ন্যায্য আন্দোলন করছে। সরকার দ্রব্যমূল্যের দাম কমাতেতো পারছেনই না, উল্টো বিরোধীদলের উপর আক্রমন করছে।
এটা ভূল কাজ। বিএনপিসহ বিরোধীদলের যারাই আন্দোলন করতে যায় তাদের সরকারের পুলিশ এবং সরকারের কিছু ক্যাডাররা আক্রমণ করে। এসব করে কখনো টিকে থাকা যাবে না।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সুশাসনের লক্ষ্যে, কল্যাণের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে এসব হটকারিতা করে কখনো টিকে থাকতে পারবেন না। সরকারকে অবশ্যই সুশাসনের দিকে আসতে হবে। যদি না হয় তাহলে এই সরকার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এসএসসি পরীক্ষা থেকে ধর্ম শিক্ষা বাদ দেয়ার নিন্দা জানিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে ধর্ম শিক্ষা চালু করার আহবান জানিয়েছেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, আজকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে জাতির বিবেকের কাছে নানাবিধ প্রশ্ন উঠছে। শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে যে স্বপ্নকে সামনে রেখে বীর বাঙ্গালি শত্রুর মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তা কি বাস্তবায়িত হয়েছে? বুকের ছাই চাপা আগুনকে উসকে দিয়েছিল যে স্বপ্ন তা কি এই? যা এখন আমরা দেখছি। স্বাধীনতা অর্জিত হলেও সেই স্বাধীনতা কি আসলেই জাতিকে সমৃদ্ধ করতে পেরেছে? স্বাধীনতা যে সুরক্ষিত সেটাও তো মানুষ বুঝতে পারছেনা।
তিনি বলেন, শ্বাপদ, হায়েনা আর শকুনদের লকলকে লোভী দৃষ্টি আমাদেরকে আতঙ্কিত করে। মানবিক মূল্যবোধ, সামাজিক মূল্যবোধ, পারিবারিক মূল্যবোধ, ধর্মীয় মূল্যবোধকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জাতিকে পথভ্রষ্ট করার সুদূর প্রসারী নীলনকশা বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে সুপ্ত বিবেক জেগে উঠুক। গর্জে উঠুক বাংলার মানুষ, সকল ষড়যন্ত্র কে রুখে দিতে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা দরকার। খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে আবারো দৃপ্ত কন্ঠে উচ্চারণ করতে হবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার কায়েম কর। কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন কর। সুস্থ বিবেকবান সামাজিক, পারিবারিক, ধর্মীয় মূল্যবোধ সম্পন্ন আগামীর প্রজন্ম গড়ে শোষণ বঞ্চনার সমাপ্তির রেখা টানতে হবে। পথভ্রষ্ট জাতিকে আলোর দিশা দিতে হবে এবং সেটা এখনই।
সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলন বলেন, সরকার সময়ের অপব্যবহার করে জিয়া ভাসানীর নাম পাল্টে দিয়েছে। মেধার অপব্যবহার করে নির্বাচন কমিশন গঠনকে কলুষিত করেছে। গঠনমূলক পরিবর্তনে নৈতিকতা লাগে। আজকে কোথাও নৈতিকতা নেই, আদর্শ নেই। ঘুম থেকে জাগলেই দ্রব্যমূল্য বাড়ার খবর পাই। শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বসে পড়েছে। বাইশ যাবে, তেইশ আসবে সরকার যাদুর বাক্সের কেরামতিতে আবারো ক্ষমতায় থাকবে। সেই যাদুর বাক্সের নাম ই ভি এম। এটা হতে দেয়া যায়না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের আজকে কি অবস্থা চলছে এটা সবাই জানেন। চারদিকে সবকিছুই ভঙ্গুর অবস্থা। এই ভঙ্গুর পরিস্থিতি থেকে পরিবর্তনের জন্য সবাইকে রাস্তায় নামতে হবে। এই সরকারকে আর সময় দেয়া যাবে না। আজকে র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এটা হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর উপহার। যারা আমাদের রক্ষা করবে তারাই আমাদের গুম করছে। আজকে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির কারণে দেশের মানুষের অবস্থা নাজেহাল। এসব হচ্ছে এই সরকারের দুর্ণীতি ও সিন্ডিকেটের কারণে। সরকার দেশটাকে শেষ করে দিচ্ছে। এর জন্য আমাদের গঠনমূলক পরিবর্তন প্রয়োজন।
গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর বলেন, এদেশে জ্ঞানী গুনীদের কদর হয়না। কদর হয় চামচাদের। বিগত সময়ে যেই গিয়েছে লঙ্কায় সেই হয়েছে রাবন। মুখে আমরা ধর্মের কথা বলি কিন্তু কাজে সেটা খুজে পাওয়া যায়না। শত শত আলেম ওলামা আজকে জেলে, তাদের মুক্তির ব্যাপারে আমরা নিশ্চুপ। পঞ্চাশ বছরে বিদেশী প্রভুদের সহায়তায় সাম্প্রদায়িক অসাম্প্রদায়িক, স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বিপক্ষের শক্তি নামে বিভক্ত করে রেখেছে। সেই বিদেশী শক্তির মদদে এদেশ থেকে ইসলামকে মুছে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। আগামীতে বাংলাদেশের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রশ্ন। শেখ হাসিনার পতনের জন্য, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এর জন্য যারাই মাঠে থাকবে আমরা তাদের সাথে থাকব।
কল্যাণ পার্টির স্থায়ী কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো ইলিয়াছ এর সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য রাখেন- এন ডি পি চেয়ারম্যান ক্বারী এম এ তাহের, প্রগতিশীল ন্যাপ এর আহ্বায়ক পরশ ভাষানী, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, সাবেক রাষ্ট্রদূত ও নৈতিক সমাজের আহ্বায়ক মেজর জেনারেল (অব.) আমসা আমিন, সাবেক ভিসি প্রফেসর আবদুল লতিফ মাসুম, কর্ণেল (অব.) জেড আর এম আশরাফ উদ্দিন, অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া, জাগপার সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, আসাদ পারভেজ, লেফটেনেন্ট কমান্ডার ফয়সাল মেহেদী সহ কল্যাণপার্টির নেতৃবৃন্দ।