সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে দলীয় সরকার জনগণের অধিকার দেবে না: রব
নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ৩১, ২০২৪ ৯:৪১ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ৩১, ২০২৪ ৯:৪১ অপরাহ্ণ
জনতার আওয়াজ ডেস্ক
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেছেন, সংস্কার না করে যদি নির্বাচন হয়, কোন দলীয় সরকার জনগণের অধিকার দিতে চাইবে না। ডেমোক্রেসি হবে না। আবার দলীয় শাসন কায়েম হবে। তাহলে বাংলাদেশের মানুষের কিন্তু আবার অভ্যূত্থান করবে।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) ৫২তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আ স ম আব্দুর রব বলেন, বাংলাদেশে যে ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থান, বিপ্লব হলো সেটাকে আমি তিন বছর আগে থেকে বলে আসছি দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ করতে হবে; এটা দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ। ছাত্ররা আপনারা আন্দোলন করবেন। কিন্তু অতি বিপ্লবীও ভালো না আবার সবকিছু নিয়ে বাড়াবাড়িও ভালো না। এই যে মব জাস্টিস, পিটিয়ে মেরে ফেলা, পিটিয়ে পুলিশ-সেনাবাহিনীর হাতে দেয়া; এটা কিন্তু ঠিক না। তাহলে হাসিনা সরকারের সাথে আমাদের পার্থক্য কোথায়?
তিনি বলেন, আজকে একটি কথাই বলবো, সাহসের কোন বিকল্প নাই। অন্যায়কারী, জুলুমকারীর সাথে পশুর সাথে কোন পার্থক্য নাই। মানুষের সাথে পার্থক্য মানুষের বিবেক আছে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারে। সেই দেশে আপনি (শেখ হাসিনা) কথা বলতে দেন না; পালিয়ে গেছেন। আমি জানিনা কি হবে আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালে। তবে একটা হত্যার জন্য যদি একজনের ফাঁসি হয় তাহলে হাজার হাজার লোককে হত্যার জন্য কি হবে আমি জানি না। প্রত্যেকটি হত্যার বিচার, প্রত্যেকটি খুনের বিচার চাই।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনার কমিশনতো ঘুমিয়ে গিয়েছে। আপনাদের সব কমিশন ঘুমন্ত হয়ে গিয়েছে। এদের জাগান। এদের বলেন মানুষ কিন্তু সংস্কার দেখতেছে না। মানুষ কিন্তু শান্তির জন্য, সুখের জন্য, ভাত খাওয়ার জন্য প্রান দিয়েছে। নির্বাচনের জন্য প্রান দেয় নাই। তাই সংস্কার না করে যদি নির্বাচন হয়, কোন দলীয় সরকার জনগণের অধিকার দিতে চাইবে না। ডেমোক্রেসি হবে না। আবার দলীয় শাসন কায়েম হবে। তাহলে বাংলাদেশের মানুষের কিন্তু আবার অভ্যূত্থান করবে।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা তার সঙ্গে বৈঠক হয়েছিল সেখানে আমি প্রশ্ন করেছিলাম আপনি যে সংস্কারের কথা বলছেন এই সংস্কারের মানে কি ? আপনার যা মনে হবে সেই সংস্কার আপনি জনগণের উপর চাপিয়ে দিতে পারবেন ? ড. ইউনূস আমাদের ধারনা মতে এখনো জনগণের পক্ষের লোক। উনি বলেছেন ‘আমি এরকম সংস্কার চাই না।’ আমরা জানতে চেয়েছি আপনি কিরকমভাবে সংস্কার করবেন। একটাই পথ আছে, সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কথা বলেন। সেই কথার মধ্য দিয়ে ঠিক করেন সবাই মিলে কোন কোন জিনিস চায়।
তিনি আরও বলেন, এই সরকারের দুইজন উপদেষ্টা, যারা ছাত্র। ছাত্রদের প্রতিনিধিরা ওইখানে প্রেসিডেন্ট হাউজ ঘেরাও করে, এইখানে মঞ্চ করে, অন্য জায়গায় ডেমোরেস্ট্রেশন দেয় রাষ্ট্রপতিকে চাই না। আমি মনে করি এই রাষ্ট্রপতিকে সম্ভবত বাংলাদেশের একটা লোকও চায় না। কিন্তু আমিরা বলি ছাত্ররা চায় না। ছাত্রদের মধ্যে সরকারের লোক আছে, সরকার কী চায় কী চায় না? তাহলে সরকার কেন বলে সকল দলের সাথে আলোচনা করে যে সিদ্ধান্ত হবে সেটা গ্রহন করব ? একটা সরকারের মধ্যে যদি দুই মত তিন মত থাকে তাহলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ খারাপ।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। আইন উপদেষ্টা বলেছেন, নির্বাচনের যাত্রাটা শুরু হলো। নির্বাচনের ট্রেন যে যাত্রাটা শুরু করেছে এই নির্বাচনী ট্রেন কোথাও থেমে যাবে না। কোন খাদে তারা পড়বে না। আমরা আশা করি, দক্ষ, যোগ্য, সম্মানীয় ব্যাক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন হবে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, বিদ্যমান সংবিধান ৭২ সালেই প্রতিষ্ঠাকালে একটা স্বৈরাচারী ক্ষমতা কাঠামোর সংবিধান এই কথা সেই সময়ের জাসদ নেতৃবৃন্দ অন্যভাবে উপস্থাপন করেছিলেন। সে সময় মাওলানা ভাসানী বলেছিলেন, ন্যাপ মোজাফফর নেতা প্রফেসর মোজাফফর আহমদও বলেছিলেন, বাহাত্তর সালে যেভাবে সত্তরের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দিয়ে গণপরিষদ ঘোষণা করা হলো তার মধ্যদিয়ে একাত্তর সালের মুক্তিসংগ্রামকে অস্বীকার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অভ্যূত্থান মানুষের স্বপ্ন, আকাঙ্খাকে আরও প্রসারিত করেছে। মানুষের আকাঙ্খা এবং নতুন বাংলাদেশের যাত্রা এই দুটোকেই আমাদের ধারণ করতে হবে। মানুষের যে স্বপ্ন তৈরি হয়েছে তা ধরতে পারার চ্যালেঞ্জই আগামী দিনে রাজনৈতিক দলগুলোর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রবের সভাপতিত্বে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহবায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জেএসডির সিনিয়র সহ-সভাপতি তানিয়া রব, সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন প্রমুখ।