সরকারের চরম অব্যবস্থাপনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতিতে ড্যাব এর উদ্বেগ - জনতার আওয়াজ
  • আজ বিকাল ৪:৪৯, বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
  • jonotarawaz24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

সরকারের চরম অব্যবস্থাপনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতিতে ড্যাব এর উদ্বেগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ: বৃহস্পতিবার, জুলাই ১৩, ২০২৩ ৩:৩৬ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: বৃহস্পতিবার, জুলাই ১৩, ২০২৩ ৩:৩৬ অপরাহ্ণ

 

ডেস্ক নিউজ
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও ঢাকার দুই সিটির মেয়র ব্যর্থ মর্মে তাদের পদত্যাগ করা উচিত সেইসঙ্গে শাস্তির আওতায় আনা দরকার। এমতাবস্থায় ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করে সারাদেশে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ এবং আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছে চিকিত্সকদের ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানানো হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ড্যাবের মহাসচিব ডা. মো. আবদুস সালাম। বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ। তিনি বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায় নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, ঢাকার দুই মেয়রের পদত্যাগ করা উচিত। তারা যেভাবে জরিমানা করছে সেটি উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা। তবে ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে দায়িত্বশীল সংগঠন হিসেবে ড্যাবের কিছু কর্মসূচি থাকবে বলে তিনি জানান।

লিখিত বক্তব্যে ডা. আবদুস সালাম বলেন, চলতি বছরের শুরু থেকেই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু। বিগত কয়েক বছর ধরেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকলেও এই বছর এ সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস সত্যেও সরকারের দায়িত্বশীল ব্যাক্তিদের উদাসীনতায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করার সম্ভবনা রয়েছে। বিশেষত আগামী অগাস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাসে পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তনের আভাস ইতোমধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে। সরকারিভাবেই বলা হচ্ছে দেশের ৫৮ জেলায় ডেঙ্গু রোগ ছড়িয়ে পরেছে, যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।

বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়-
বাংলাদেশে ১৯৬৪ সালে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঘটে। তখন এটিকে ঢাকা ফিভার্ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবে সর্বপ্রথম ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নেয় ২০০০ সালে। বাংলাদেশে ডেঙ্গু সবচেয়ে বড় আঘাত হানে ২০১৯ সালে। ওই বছর ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন এবং সারা বাংলাদেশের ৬৩টি জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল প্রায় ৫০০ জন। সরকারি হিসাব মতে, ২০২২ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা যথাক্রমে ৬২ হাজার ৩২১ ও ২৮১। তবে দেশে কোনো বছরের প্রথম ছয় মাসে ডেঙ্গুর এমন ভয়াবহ রূপ আর কখনো দেখা যায়নি। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে প্রথম ছয় মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ২০৮ জন। মারা গিয়েছিলেন ৮ জন।

ডা. সালাম বলেন, এই বছর এখন পর্যন্ত পাওয়া সরকারি তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ইতিমধ্যে দেশে ডেঙ্গুতে ৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ১০,২৯২ জন আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন হাসপাতালে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছে এবং ৯ হাজারের বেশি আক্রান্ত ব্যাক্তি চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে।

তিনি বলেন, গণমাধ্যমের তথ্যমতে, দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা সরকারি হিসাব থেকে অনেক বেশি। অন্যান্য সকল বিষয়ের মতো ডেঙ্গু মহামারীর সময়েও সরকার তথ্য নিয়ে মিথ্যাচার বা লুকোচুরি করে যাচ্ছে। বিগত কয়েকদিন যাবত গড়ে প্রতিদিন ৬০০ এর কাছাকাছি মানুষ ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যদিও এ হিসাব ঢাকার ৫৩টি হাসপাতাল ও বিভিন্ন জেলার সিভিল সার্জন অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য। এই হাসপাতালগুলো ছাড়াও ছোট বড় অনেক বেসরকারি ক্লিনিক ও বাসায় থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন আরও অনেক রোগী। যেসব ক্লিনিক বা হাসপাতাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে তথ্য পাঠায় না, সেই রোগীদের হিসাব ডেঙ্গু পরিসংখ্যানে যুক্ত হয় না।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত প্রতি চারজন রোগীর একজন শিশু।ঢাকার বাইরেও ডেঙ্গু পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারের তথ্য মতে, বাংলাদেশে মোট ভর্তি রোগীর প্রায় ২৯ শতাংশ ঢাকার বাইরের। ডেঙ্গুতে প্রাণহানি কমানো এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় রোগী দ্রুত শনাক্ত জরুরি। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার কথা বললেও নেওয়া হচ্ছে না তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ।

২০২০ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লে সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। তবে এবার এ ধরনের কোনো উদ্যোগ নেই। এ ছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার অস্থায়ী ১২ কেন্দ্রের সবগুলো কিট সংকটে বন্ধ রয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) ৩২টিতে সেবা মিললেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

ড্যাবের মহাসচিব বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত প্রাক্-বর্ষা জরিপ অনুযায়ী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সব এলাকাতেই ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার উপস্থিতি বেশি। এবার ডেঙ্গুর মৌসুম গত বছরের মতো দীর্ঘ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। সিটি করপোরেশনগুলো কার্যক্রম জোরালো উদ্যোগ না নিলে পরিস্থিতি ভয়ানক রূপ ধারণ করতে পারে।

ডেঙ্গু নিয়ে চিকিৎসা সংকটের কারণ হিসেবে ডা. সালাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উষ্ণ আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে বাংলাদেশ মশা ও মশাবাহিত রোগ বিস্তারের জন্য উত্তম জায়গা। ডেঙ্গু নতুন কোনো রোগ নয়। এটা প্রতিকারের জন্য সিটি করপোরেশন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন ছিল, তাতে তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সারা বছর ধরে যে ধরনের সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দিক থেকে তেমন উদ্যোগ দেখা যায় না বলেই ডেঙ্গু পরিস্থিতির এমন অবনতি ঘটছে। উল্লেখ্য ২০১৯ সালে ভয়াবহ ডেঙ্গু পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রী সপরিবারে বিদেশ ভ্রমণে যেয়ে ইতিহাস তৈরি করার নজির রয়েছে।

এডিস মশা যে শুধু মানুষের ঘরের ফুলের টবে কিংবা ছাদে জমে থাকা পরিষ্কার পানিতেই হয়, তা নয়। পরিত্যক্ত টায়ার, ইটের গর্ত ইত্যাদিতে জমে থাকা পানিতে জন্মাতে পারে। এ কারণেই ২০১৯ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জ্যেষ্ঠ কীটতত্ত্ববিদ বি এন নাগপাল ঢাকায় এসে বলে গিয়েছিলেন, নির্মাণাধীন প্রকল্পগুলো এডিস মশার অন্যতম বড় উৎস, এখানকার মশা উৎপাদনক্ষেত্র বিনাশ করা সম্ভব হলে ডেঙ্গুর প্রকোপ ৪০ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব। সুতরাং এ কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা ও সমন্বিত প্রচেষ্টা কর্তৃপক্ষের ছিল না। যেটুকু উদ্যোগ দেখা গেছে, তা পরিস্থিতি বিবেচনায় অপ্রতুল।

ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে করণীয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডেঙ্গু সব জায়গায় একবারে ছড়ায় না, কোনো কোনো অঞ্চলে এর প্রাদুর্ভাব বেশি থাকে। সময়মতো শুরুর দিকের ক্লাস্টারগুলোতে ডেঙ্গু দমনের যথাযথ পদক্ষেপ নিলে সারা শহর বা সারাদেশে সহজে ছড়াতে পারে না। কাজেই এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সারা বছর নিয়মিত কাজের পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের ঠিকানার মাধ্যমে এ ধরনের ডেঙ্গু ক্লাসটারগুলো শনাক্ত করে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।

অবিলম্বে সকল সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিৎসক-নার্স সংকট মোকাবেলার জন্য নার্সিং ইন্সটিটিউট ও মেডিক্যাল কলেজগুলোর ছাত্রছাত্রীদের কাজে লাগানো যেতে পারে।
ডেঙ্গুতে শিশুদের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি অল্পতেই মারাত্মক আকার ধারণ করে বিধায় শিশুদের জন্য প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এর জন্য ঢাকা শহরে কয়েকটি ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি করা যেতে পারে।

বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে এই মুহূর্ত থেকেই সারাদেশে এডিস মশার লার্ভা শনাক্ত এবং ধ্বংসের উদ্যোগ নিতে হবে। ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করে সারাদেশে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ এবং আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশ বিদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করে তাদের পরামর্শ মোতাবেক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। সম্ভাব্য সংকট মোকাবেলার জন্য চিকিৎসা অবকাঠামো প্রস্তুত এবং ২৪ ঘন্টা ডেঙ্গু পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে।

ড্যাবের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ড্যাবের কোষাধ্যক্ষ ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ডা. মেহেদী হাসান, যুগ্ম মহাসচিব ডা. শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ, যুগ্ম মহাসচিব ও হেমাটোলজিস্ট ডা. আদনান হাসান মাসুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. রেজওয়ানুর রহমান সোহেল, প্রকাশনা সম্পাদক ডা. মো. জাফর ইকবাল, ঢাকা দক্ষিণ ড্যাবের সভাপতি ডা. দিদারুল আলম, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মো. সায়েম বাবু, ডা. ইব্রাহিম রহমান, নার্সেস এসোসিয়েশনের সভাপতি বিলকিস জাহান চৌধুরী, এ্যামট্যাবের সভাপতি বিপ্লবুজ্জামান বিপ্লব, ফিজিওথেরাপিস্ট মাহাতাব উদ্দিন প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email
 
 
জনতার আওয়াজ/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com