সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় না হলে দীর্ঘকালীন অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে – জনতার আওয়াজ
  • আজ সকাল ১১:৪৪, শুক্রবার, ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • jonotarawaz24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় না হলে দীর্ঘকালীন অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ: সোমবার, জুলাই ৩১, ২০২৩ ১২:০৮ পূর্বাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: সোমবার, জুলাই ৩১, ২০২৩ ১২:০৮ পূর্বাহ্ণ

 

নিউজ ডেস্ক
ড. আসিফ নজরুল
দেশের রাজনীতি কোনদিকে যাচ্ছে তা স্পষ্ট হবে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই। কিন্তু বিদেশিদের ভিসা নীতি, স্যাংশন জারির পরও বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর যেভাবে হামলা হয়েছে তাতে মনে হয় গত পনের বছরে এটা সরকারি দলের ডিএনএ’র ভেতর ঢুকে গেছে। সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় না হলে দীর্ঘকালীন অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে। আর বর্তমান পরিস্থিতিতে জরুরি অবস্থা জারি করা হবে সরকারের জন্য রং সাজেসন্স। জরুরি শাসন জারি করে অতীতে সরকারগুলো ক্ষমতায় টিকতে পারেনি। মানবজমিনকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বর্তমান সংকট থেকে কীভাবে উত্তরণ সম্ভব তা নিয়েও কথা বলেছেন।

প্রশ্ন: বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুবই উত্তপ্ত। বড় দুই দলসহ অন্য দলগুলোও মাঠে সরব। এ অবস্থায় দেশের রাজনীতি ক্রমেই আরও উত্তপ্ত হচ্ছে। আপনি কীভাবে দেখেন?
উত্তর: রাজনৈতিক বিবেচনায় এই সময়টা খুবই ইন্টারেস্টিং। বিদেশে থেকেও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিএনপি’র জনসভার যে ছবি দেখেছি এবং যতটুকু খবর পাচ্ছি তাতে মনে হচ্ছে অভূতপূর্ব জনসমাগম হয়েছে।

আমার নিজের কাছে মনে হয় এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে, শেখ হাসিনার ’৯৬ সালের আন্দোলনে যত মানুষ অংশ নিয়েছিল সম্ভবত তার চেয়েও বেশি মানুষ বর্তমান কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে। আমরা অতীতেও বিএনপিকে এরকম বড় জনসমাগম করতে দেখেছি। কিন্তু বর্তমান আন্দোলনে দুটি গুণগত পরিবর্তন হয়েছে, বিদেশিরা সরাসরি চাপ দিচ্ছে, যা তারা অনেক দিন পর্যন্ত দেয়নি এবং এর ফলে সরকারের ওপর একটি বড় ধরনের চাপ তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপি’র লিডারশিপের মধ্যে আমরা একটি বড় ধরনের ম্যাচিউরিটি দেখছি, এক ধরনের কো-অর্ডিনেশন দেখছি, ঐক্য দেখছি যা আগের আন্দোলনগুলোতে এতটা ছিল না।
এই আন্দোলনকে দমন করার জন্য সরকার যেভাবে নেমেছে বা সহনশীলতা প্রদর্শন করছে এগুলোও নতুন ব্যাপার। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, সরকার যতটুকু সহনশীলতা দেখিয়েছে তা করেছে যখন বিদেশিরা ভিসা নীতিসহ বিভিন্ন ধরনের স্যাংশন দিয়েছে তখন। দেশের মানুষের আকাক্সক্ষা বা সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে করছে- এটা বলা যাবে না, এটাই দুঃখজনক। আমার কাছে মনে হয়, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পরিস্থিতি আরও স্পষ্ট হবে এবং সরকারের যে শ্রেণি চরিত্র এবং অতীত আচরণ তাতে সরকার কতোদিন ধৈর্য ধরে রাখতে পারবে এবং কতোদিন রাজনৈতিকভাবে এটা মোকাবিলা করবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। এক পর্যায়ে হয়তো সরকারের উস্কানিতে বা হয়তো বিরোধী দলের উস্কানিতে সংঘাতের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। সম্ভবত তখন কোনো একটা ডিসাইসিভ কিছু হতে পারে।

প্রশ্ন: আপনি জানেন যে, অতীতেও যারা সরকারে ছিল তারা বিরোধী দলের এ ধরনের কর্মসূচিতে নানা বাধা বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। ২০০৬ সালেও বিএনপি’র জমানায় সেটি হয়েছিল।
উত্তর: আমি নিজেও দেখলাম ফেসবুকে অনেকে উল্লেখ করেছে, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের যারা আছেন। তারা অনেকেই বলছেন যে, ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের শত শত কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসব দেখে আমার দুটো প্রতিক্রিয়া হয়। এক. ২০০৬ সালে আপনাদের পিটিয়েছিল, গ্রেপ্তার করেছিল বিএনপি আর আপনারা তো পনের বছর যাবৎ পিটাচ্ছেন আর গ্রেপ্তার করছেন। আর তা করছেন আরও ব্যাপক মাত্রায়। বিএনপি’র কোনো কোনো নেতার বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা আছে, অনেকবার পিটিয়েছেন। এমনকি ছাত্রদের আন্দোলনে পর্যন্ত পুলিশ এবং যুবলীগ চড়াও হয়েছিল। কথা হচ্ছে, একটি দল এক বছর মেরেছে বলে আপনি পনের বছর মারার পর এখনো কি থামার সময় আসেনি? দুই. বিএনপি ২০০৬ সালে প্রচ- মেরেছে কিন্তু এক পর্যায়ে আন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়েছে। আপনাদের ওপর যে পনের বছর যাবৎ চাপ সৃষ্টি হচ্ছে, বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ বলছে, এমনকি এক সময় আওয়ামী লীগের সঙ্গী ছিল গণফোরাম, সিপিবি, বাম দলগুলোর (মেনন, ইনুদের মতো বাম দলগুলো বাদ) পক্ষ থেকেও দাবি ওঠেছে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করা অসম্ভব এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন দিতে হবে।

আপনারা ভালো কাজকে ফলো করেন, বিএনপি তো ২০০৬ সালে এক বছরের আন্দোলনের মাথায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়েছে। এ ধরনের তুলনা আমাদের এগিয়ে যাওয়াকে নির্দেশ করে না। আমি মনে করি, শনিবার বিএনপি’র অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে আমানউল্লাহ আমান ও গয়েশ্বর রায়ের ওপর যে ধরনের হামলা হয়েছে বিশেষ করে গয়েশ্বর রায়ের ওপর যেভাবে হামলা হয়েছে এটা অবিশ্বাস্য ব্যাপার। যখন ভিসা নীতি ঘোষণা করা হয়েছে, সবার নজর আছে দেশের পরিস্থিতিতে, বিদেশিদের নিষেধাজ্ঞা আছে, গণমাধ্যম আগের চেয়ে সতর্কভাবে সংবাদ পরিবেশন করছে এরকম সময়ে একজনকে এভাবে মারা, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মারা- এটা বোধহয় গত পনের বছরে তাদের ডিএনএ’র ভেতর ঢুকে গেছে। এ ধরনের কর্মকা- তারা কতোদিন না করে থাকতে পারবে এটা আমার সন্দেহ আছে।

প্রশ্ন: আওয়ামী ঘরানার একজন বুদ্ধিজীবী বলেছেন, পরিস্থিতি যেদিকে এগুচ্ছে তাতে জরুরি অবস্থা জারি করা হতে পারে?
উত্তর: ইন্টারনাল ডিস্টার্বেন্সের কারণে সরকার জরুরি অবস্থা জারি করতেই পারে। তবে মনে রাখতে হবে, জরুরি অবস্থা জারি করা মানেই কিন্তু সরকারের পিছু হটা। তার মানে সরকার স্বাভাবিক অবস্থায় নেই, সরকার স্বাভাবিকভাবে পরিস্থিতি ডিল করতে পারছে না। অতীতে কিন্তু জরুরি অবস্থার পরে সরকারগুলোর পতন দেখেছি। এমন তিন/চারটি ঘটনা আছে। জরুরি অবস্থা সরকারের দুর্বলতাকে নির্দেশ করে। আমার মনে হয় না ভালো বার্তা দেবে, এটা বরং সাজেসন্স হবে।

প্রশ্ন: বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা কি এই সংকটকালে?
উত্তর: আগে যখন আওয়ামী লীগ আন্দোলন করতো আমরা দেখেছি কবীর চৌধুরী, শামসুর রাহমান সবাই নেমে আসতো রাস্তায়। প্রকাশ্যে ভূমিকা রাখতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ভূমিকা রাখতো, শহীদ মিনারে চলে যেতো। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট মিছিলের পর মিছিল করতো। এখন দেখি সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রধান নেতা নাসিরুদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু আরাফাতের পক্ষে লিফলেট নিয়ে প্রচারণায় নেমেছেন নায়ক ফেরদৌসের সঙ্গে। কি পরিমাণ অ্যারোশান হয়েছে এ পরিস্থিতি দেখলেই বুঝা যায়।
আমার মনে হয়, আমাদের এখানে যারা বুদ্ধিজীবী আছেন তাদের একটা অংশের হৃদয়টা বাকশাল। তারা যেটাই বলুক না কেন যখন বিএনপি ক্ষমতায় আসবে তখন গুড গভর্ন্যান্স, রুল অব ল’, ডেমোক্রেসি, হিউম্যান রাইটস এসব নিয়ে কথা বলবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তারা এটা কোনোমতে বলে আবার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপি কতোটা খারাপ ছিল এটাও বলে। বুদ্ধিজীবীদের আরেকটা অংশ প্রলোভনের মধ্যে আছে, ভীতির মধ্যে আছে। কিছু কিছু বিবেকবান কণ্ঠ আছে আমরা দেখি। এখন তো ফেসবুকের যুগ সবাই সবকিছু এক্সপোজ করে দেয়। নাসিরুদ্দিন ইউসুফের ছবিটা ফেসবুকে প্রচার হওয়ার পড়ে কী ধরনের কমেন্ট এসেছে এটা যদি ওনাকে দেখাতে পারতাম। বর্তমানে চালাকি করাটা খুব কঠিন হয়ে গেছে। এখন আপনি যখন বলবেন সরকার এটা করছে কেন, আওয়ামী লীগ এটা করছে কেন বা বিএনপি এটা করছে কেন। সঙ্গে সঙ্গে মানুষজন পুরনো ম্যাটারিয়েলস দিয়ে দেখিয়ে দেবে তখন কি করেছেন। বর্তমান সংকটে বুদ্ধিজীবীদের সার্বিক অবস্থা হতাশজনক।

প্রশ্ন: সংকট থেকে উত্তরণের কোনো পথ কি আছে নাকি এভাবেই চলতে থাকবে?
উত্তর: সংকট থেকে উত্তরণের যদি নিয়ত থাকে তবে তার পথ সংবিধানেও আছে আবার সংবিধানে না থাকলেও পোস্ট ভ্যালিডিটি দেয়া সম্ভব। কথা হচ্ছে, আওয়ামী লীগকে, সরকারকে এই নিয়ত দেখাতে বাধ্য করা যাবে কিনা? বর্তমান পরিস্থিতিতে দুটি নতুন বিষয় যুক্ত হয়েছে, এক. বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিগুলোতে ব্যাপক জনসমাগম, দুই. বিদেশিদের অব্যাহত চাপ। এই দুটি কারণে হয়তো সরকারের একটা সময় শুভবুদ্ধির উদয় হতে পারে। যদি তা না হয় তাহলে আমরা অনেক দিনের জন্য একটা অচলাবস্থার মধ্যে পড়তে যাচ্ছি।সূত্রঃ মানবজমিন

Print Friendly, PDF & Email
 
 
জনতার আওয়াজ/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ