সরকার ভয় পাচ্ছে কেন? : আব্দুল মঈন খান
নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
রবিবার, জুলাই ৯, ২০২৩ ১২:৩৮ পূর্বাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
রবিবার, জুলাই ৯, ২০২৩ ১২:৩৮ পূর্বাহ্ণ

নিউজ ডেস্ক
আব্দুল মঈন খান। বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য। সাবেক মন্ত্রী। কথা বলেন মেপে মেপে। তার পিতা আবদুল মোমেন খানও ছিলেন স্বনামখ্যাত রাজনীতিক। ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী। পাশ্চাত্যে লেখাপড়া করা মঈন খান। সম্প্রতি মঈন খান মুখোমুখি হন মানবজমিনের। কথা বলেন সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে। মানবজমিনকে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আজ গণতন্ত্র নেই, মানবাধিকার নেই, গুম খুন হচ্ছে।
এসব এখন আর গোপন নেই। দেশে এবং বিদেশে এসব বিষয় একেবারে পরিষ্কার। বিভিন্ন দেশ, মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ নিয়ে বারবার সরকারকে সতর্ক করছে।
সামনে কী ধরনের কর্মসূচি নিয়ে আসছে বিএনপি?
আব্দুল মঈন খান: আপনারা দেখে আসছেন বিএনপি সবসময় শান্তিপূর্ণ এবং সুশৃঙ্খল নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। আমি বলতে চাই, আগামীতেও বিএনপি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ভেতরে থেকে কর্মসূচি দেবে। সরকারের অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে। কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য থাকবে জনগণকে নিয়ে এই সরকারের অন্যায়ের, অপশাসনের, জুলুম, অত্যাচার ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন।
কবে নাগাদ চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু হবে?
আব্দুল মঈন খান: আপনারা জানেন আমরা আন্দোলনে আছি। এখন এক দফার আন্দোলনে যাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। শিগগিরই এক দফার আন্দোলনের ঘোষণা আসবে। সমমনা দলগুলোকে নিয়ে যুগপৎভাবে অথবা একসঙ্গে এ ঘোষণা আসবে কিছুদিনের মধ্যেই।
হরতাল বা ধর্মঘটের মতো কোনো কর্মসূচিতে যাবেন কিনা?
আব্দুল মঈন খান: হরতাল, ধর্মঘট একসময় এই দেশে হয়েছে। আজকের পরিস্থিতিতে যে প্রক্রিয়াটি সবচেয়ে বেশি জনগণের জন্য প্রযোজ্য হবে আমরা সে কর্মসূচিই দেবো। আমরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছি। তাতে জনগণের ঢল নেমেছে। জনসম্পৃক্ত আন্দোলন নিয়ে আমরা এগিয়ে যাবো।
আপনারা আন্দোলনে সফল হবেন বলে মনে করেন কি?
আব্দুল মঈন খান: আমরা আন্দোলনে আছি। এ আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করছি। মানুষ আজ স্বেচ্ছায় স্বপ্রণোদিতভাবে রাজপথে বের হয়ে এসেছেন। সরকারের অন্যায়ের প্রতিবাদে জনগণ জেগে উঠেছে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই সরকারকে বিদায় নিতে হবে।
আপনারা প্রায়ই বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে দেখা করেন- তারা কী বলেন? তারা কি বাংলাদেশের নির্বাচনে কোনো ভূমিকা রাখতে পারবেন?
আব্দুল মঈন খান: বিদেশিরা যা বলেন সেটা অত্যন্ত স্পষ্ট। একটি বিষয় তারা পরিষ্কার করে দিয়েছেন বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই, মানবাধিকার নেই। বাংলাদেশে গুম খুন যে হচ্ছে তা কিন্তু আজ আর গোপন নেই। এগুলো নিয়ে শুধু বিদেশের সরকার নয়, বিদেশের যে মানবাধিকার সংগঠনগুলো আছে তারাও কিন্তু বাংলাদেশের অন্যায় অত্যাচার মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। লিখে যাচ্ছে এবং মানুষকে তারা সচেতন করছে। তারা উপলব্ধি করতে পেরেছে যে বাংলাদেশে উন্নয়নের যে ধারা যেটা সরকার দাবি করে সেই উন্নয়নের ধারা যদি অব্যাহত রাখতে হয় কেবল ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর দিয়ে সম্ভব নয়। এখানে মানুষের জীবনযাপনের নিশ্চয়তা, মানুষের অন্তর্নিহিত অধিকারগুলো থাকতে হবে। মানুষ নিশ্চিন্তে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারার অধিকার থাকতে হবে। দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করতে হবে। এই কথাগুলোই তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়। আপনারা ইতিমধ্যেই দেখেছেন তারাও কিন্তু বাংলাদেশের বিদ্যমান অন্যায় পরিস্থিতির প্রতিবাদ গণতান্ত্রিক ভাষায় করছে। আপনারা দেখেছেন তারা র্যাবের উপর স্যাংশন দিয়েছে। যারা অন্যায় করে, যারা মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে চায়, সুষ্ঠু নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়, যারা ভোট রেগিং করে, তাদের বিরুদ্ধে তারা ভিসা রেস্ট্রিকশন দিয়েছে। কাজেই তারা কোন্ পদ্ধতিতে কাজ করছে এটা এখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট।
এ পদ্ধতিতে তারা সফল হতে পারবে বলে মনে করেন কি?
আব্দুল মঈন খান: সময়ই বলে দেবে কে কতোদূর সফল হবে। আমরা কতোদূর সফল হবো। তবে মুখে যাই বলুক সরকার এটা উপলব্ধি করতে পারছে তাদের ওপর দেশি বা বিদেশি কারও কোনো আস্থা নেই। তারা যে প্রক্রিয়ায় দেশ পরিচালনা করছে এটা একটি অলিখিত বাকশাল স্বৈরাচারী সরকার। আমরা চাই- এই সরকার বিদায় নিয়ে চলে যাক। একটি অন্তর্বর্তীকালীন অথবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসুক। যারা নতুন করে একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। যে কমিশন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনা করবে। এবং জনগণ যাকে চায় তারাই সরকার গঠন করবে। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলে দিচ্ছি আজকে যদি একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় এবং মানুষ নিজেরা গিয়ে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে পুনরায় সরকার গঠনের সুযোগ দেয় তাহলে আমি সর্বপ্রথম অভিনন্দন জানাবো। কিন্তু তারা ভয় পাচ্ছে কেন?
সরকার তো বলছে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে-
আব্দুল মঈন খান: যে সংবিধানের দোহাই সরকার দিচ্ছে তারাই তো সর্বপ্রথম সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। একবার নয় বারবার। বাংলাদেশের সংবিধান বারবার লঙ্ঘিত হয়েছে, বারবার পুনঃলিখিত হয়েছে। সংবিধান জনগণের উপরে নয়। জনগণ সংবিধানের উপরে। জনগণের জন্য সংবিধান সংশোধিত হবে। জনগণ সবার উপরে। সংবিধান কোনো বাইবেল নয় যে, এটা পরিবর্তন করা যাবে না। জনগণের প্রয়োজনে সংবিধান পরিবর্তিত হবে এবং সেটা আমরা করবো।
কেউ কেউ বলছেন বিএনপি বিদেশিদের দিকে তাকিয়ে আছে?
আব্দুল মঈন খান: বিএনপি’র বিদেশিদের দিকে তাকানোর দরকার নেই। বিএনপি দশটি বিভাগীয় সমাবেশ করেছে। সবগুলো মিলিয়ে এক কোটির ঊর্ধ্বে মানুষ হয়েছে। এটা কি বিদেশিরা করে দিয়েছিল? এটা হাস্যকর কথা।
বিএনপি কার নেতৃত্বে সামনে আন্দোলন করবে?
আব্দুল মঈন খান: বিএনপি’র নেতৃত্ব তো আছে। আপনারা জানেন আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তাকে সরকার রাজনৈতিক মামলা দিয়ে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আছেন লন্ডনে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলা রয়েছে। আমাদের স্ট্যান্ডিং কমিটি আছে। আমরা সবাই মিলেই বিএনপি’র নীতিনির্ধারণ করে থাকি। এই প্রক্রিয়ায় বিএনপি সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
জামায়াতের বিষয়ে বিএনপি’র অবস্থান কি?
আব্দুল মঈন খান: আমি বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা দিতে চাই। জামায়াত কিন্তু ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলে আন্দোলন করেছে। ২০০১ সালে পরিস্থিতি ছিল একটু ভিন্ন। আমরা স্টাডি করে দেখেছিলাম বাংলাদেশের বেশ কিছু আসনে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে ভোটের যে ব্যবধান সেটা কিন্তু খুব কম। কোনো ক্ষেত্রে ৫% কোনো ক্ষেত্রে ৭%। সেটা দিয়ে কেউ জয়ী হবে বা বিজয়ী হবে সেটা নির্ধারিত হচ্ছে। পরবর্তীতে আমরা সারা দেশে জামায়াতের সমর্থন কী পরিমাণ আছে সেটাও স্টাডি করেছি। আমরা স্টাডি করে দেখেছিলাম যে, ফাইনাল রেজাল্টটা ৫১ শতাংশ ও ৪৯ শতাংশ নির্ধারিত হয় সেখানে চার-পাঁচ পার্সেন্ট এর ব্যবধান যদি থাকে সেটা যোগ-বিয়োগ করলে রেজাল্টটা উল্টে যেতে পারে। আমরা কিন্তু সেই বিবেচনায় ২০০১ সালে জামায়াতের সঙ্গে জোট করেছিলাম। আমি বিষয়টি ব্যাখ্যা দিলাম এই বিষয়টি অনেকেই জানে না বা উপলব্ধি করে না।
এই যে জোটগুলো হচ্ছে সেগুলো যে সব সময় নীতির প্রশ্নে হয় তা নয়। সেখানে কিন্তু এই অঙ্কটা কাজ করে। ঠিক সেভাবেই আমরা জামায়াতের সঙ্গে জোট করেছিলাম। আমি ব্যক্তিগতভাবে যতটুকু স্টাডি করেছি বা সার্ভে করেছি তাতে আমরা দেখি ২০০১ সালের চিত্রটি কিন্তু এখন আর নেই। সমাজ পরিবর্তনশীল। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না ২০০১ সালে জামায়াতের যে অবস্থান ছিল আজকের জামায়াতের সেই অবস্থান রয়েছে। আপনারা দেখেছেন ১০ বছর ধরে আওয়ামী লীগ জামায়াতকে রাজপথে নামতে দিচ্ছে না। হঠাৎ করে কেন তাদের অনুমতি দেয়া হলো? আমরা তো এই প্রশ্ন করতে পারি জামায়াত কি তাহলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে রাজনীতিতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ কেন তাদের এই সুযোগ করে দিলো। এতদিন তারা জামায়াতের সমালোচনা করে এসেছে। কাজেই এটা রাজনীতির হিসাবনিকাশ। অনেক সময় রাজনীতিতে পরম শত্রুর সঙ্গেও আপস করে নেয়। আওয়ামী লীগ তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ।
আন্দোলনে বিএনপি’র সঙ্গে জামায়াতের কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন কি?
আব্দুল মঈন খান: এখানে প্রয়োজনের প্রশ্নটা আমি গুরুত্বপূর্ণ মনে করি না। আমি যে জিনিসটিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি সেটা হচ্ছে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ যেটা তা হলো- গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। আজকে দেশে যদি গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা না করতে পারি তাহলে কিন্তু আমাদের সব চেষ্টা, মুক্তিযুদ্ধ সব বৃথা হয়ে যাবে। সে কারণেই বাংলাদেশের যেকোনো রাজনৈতিক দল হোক না কেন আমরা একটি মধ্যপন্থি উদার রাজনৈতিক দল হিসেবে সেভাবে রাজনীতি পরিচালনা করি। এ ছাড়াও যে দলগুলো রয়েছে আমরা কিন্তু সবার সঙ্গে কথা বলেছি। একটি বিষয়ে আমরা নিশ্চিত করেছি। যারাই এদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চায়। আমরা তাদের সঙ্গে এক হয়ে এই নির্দিষ্ট আন্দোলনে একসঙ্গে হয়ে বা যুগপৎভাবে কাজ করে যাবো।
সরকার যদি ২০১৪ বা ’১৮ সালের মতো নির্বাচন করে সে ক্ষেত্রে বিএনপি কী করবে?
আব্দুল মঈন খান: আমরা গণতন্ত্রের ভাষায় প্রতিবাদ করেছি, করবো এবং করে যাবো। আমরা স্পষ্ট করে দিতে চাই- সরকার যদি আবার অতীতের মতো ভুয়া নির্বাচন করে সরকার গঠন করতে চায় বাংলাদেশের মানুষ সেটা গ্রহণ করবে না।
মানবজমিন
জনতার আওয়াজ/আ আ
