সাংবাদিকদের সুরক্ষা আইনের দাবি সম্পাদক পরিষদের
নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
মঙ্গলবার, মে ২, ২০২৩ ৫:০৫ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
মঙ্গলবার, মে ২, ২০২৩ ৫:০৫ অপরাহ্ণ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) বাতিল অন্যথায় স্বাধীন সাংবাদিক ও মুক্তমত প্রকাশকারীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যাবে না এমন ধারা যোগ করার দাবি জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। একইসঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদের সুরক্ষার জন্য নতুন আইনেরও দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। মঙ্গলবার (০২ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবে সম্পাদক পরিষদের উদ্যোগে ‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ দাবি জানান সংগঠনটির সভাপতি মাহফুজ আনাম।
এ সময় তিনি বিভিন্ন দাবি উল্লেখ করে বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ব্যাহত হয় এমন সব আইন ধারা স্থগিত করতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বিলুপ্ত করতে হবে অন্যথায় এ আইন স্বাধীন সাংবাদিকদের এবং মুক্তমত প্রকাশকারীদের জন্য প্রযোজ্য নয় এমন ধারা যোগ করতে হবে। এখন পর্যন্ত ডিএসএ’তে যত মামলা এবং গ্রেফতার হয়েছে সবাইকে মুক্তি দিতে হবে, মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। যে ভায়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হয়েছে সেখান থেকে সহজ এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে এবং মত প্রকাশে যেন কোনো আইনি বাধা না আসে এজন্য গণমাধ্যমকর্মীদের সুরক্ষায় আইন করতে হবে।
দ্য নিউএজের সম্পাদক নুরুল কবির বলেন, একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় ভিন্নমত প্রকাশ করতে দেওয়া হবে না, দেবেও না। যে আইনের জন্য সবাইকে ভুগতে হচ্ছে, অনুনয় করে লাভ হবে না। সরকারের মন্ত্রী, এমপি পর্যায় থেকে বারবার বলা হয়েছে সংশোধন করা হবে কিন্তু হয়নি। গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সঙ্গে নিয়ে জনগণকে সমন্বয় করে আন্দোলন করতে হবে।
প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, বাংলাদেশ মত প্রকাশের যথেষ্ট স্বাধীনতা আছে। বুঝে নেন, ওইভাবে বলতে পারছি না। সংবিধানে মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ে বলা আছে কিন্তু কীভাবে ক্ষমতাসীনেরা বিরক্ত হবে না সেটা পরিষ্কার ব্যখ্যা পরিষ্কার করা নেই। যে কারও বিরুদ্ধে যে কোনো সময় ডিএসই’তে মামলা হতে পারে।
সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসন মন্জু বলেন, সাংবাদিকদের নিজেদের আগে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মতভিন্নতা দূর করে বিপন্ন হয়ে ওঠা পেশার জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। সমস্ত পেশাজীবীদের একসঙ্গে করে নিজেদের জন্য ভাবতে হবে। আইনমন্ত্রী ভাঙ্গা রেকর্ড বারবার বাজাচ্ছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগই এখন অপপ্রয়োগ।
এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু প্রশ্ন তোলেন যে, কিছু গণমাধ্যম রাজাকারের পক্ষে, সামরিক শাসনের পক্ষে কাজ করছে। গণতন্ত্রবিরোধীদের পক্ষে কথা বলছে। এটা কি স্বাধীনতার পক্ষে যায়? ডিএসএ কি সাংবাদিকতার একমাত্র বিপদ? এর বাইরে কর্পোরেট দুনিয়া, প্রশাসন, বিভিন্ন বাহিনী মালিকপক্ষ যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে গণমাধ্যমকে তা নিয়ে ভাবতে হবে। বিজ্ঞাপন আসবে না তাই অনেক ক্ষেত্র নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেন না আপনারা। নানা সময় গোয়েন্দারা যেভাবে বিধিনিষেধ দেয়, সেগুলো আপনারা প্রকাশ করেন।
ভুল বার্তা আমাদের ক্ষতি করছে উল্লেখ করে ইনু বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য কোনো দরকষাকষি চলতে পারে না। সাইবার জগতে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে একই সঙ্গে বাকস্বাধীনতাও নিশ্চিত করতে হবে।
ইনুর বক্তব্যের কিছু অংশের বিরোধীতা করেন ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম। তিনি কোন কোন গণমাধ্যম অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পক্ষে সংবাদ প্রায় করেছে, সামরিক শাসনের জন্য কাজ করে সরকারকে বিব্রত করেছে তার প্রমাণ চান। গণমাধ্যম সম্পর্কিত আইনগুলোতে সংশ্লিষ্টদের অন্তর্ভুক্ত করারও দাবি জানান তিনি।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমিনা হোসেন, ফাইনেন্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, দেশ রূপান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা মামুন ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল প্রমুখ।
জনতার আওয়াজ/আ আ
