সারা দেশে নারী হেনস্তার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ রিজভীর
নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
শনিবার, মার্চ ৮, ২০২৫ ৩:৩৬ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
শনিবার, মার্চ ৮, ২০২৫ ৩:৩৬ অপরাহ্ণ

জনতার আওয়াজ ডেস্ক
সারা দেশে নারী হেনস্তার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এসব ঘটনায় উগ্রবাদী গোষ্ঠীর মদদ থাকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নের পথে যেন জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। নারীদের পোশাক নিয়ে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। নিষিদ্ধ সংগঠন কীভাবে মিছিল করে, তা সরকারকে গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে। সরকারকে লক্ষ্য রাখতে হবে দেশে যেন অশুভ শক্তির উদয় না হয়। ক্যাম্পাসে মেয়েদের পোশাক নিয়ে উগ্রবাদী গোষ্ঠী কাজ করছে।
শনিবার(৮ মার্চ) নয়াপল্টনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশকে অতি রক্ষণশীল দেশ হিসেবে পরিচিত করার গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে উগ্রবাদী গোষ্ঠীর মদদে নারী হেনস্তার ঘটনা ঘটছে। নারীদের পোশাক নিয়ে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আধুনিক যুগে নারীদের বন্দি রাখলে সমাজ এগিয়ে যাবে না। বিএনপি ক্ষমতায় এলে নারীদের নিরাপত্তায় নতুন যুগের সূচনা করবে।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি যে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশজুড়ে নারীদের প্রতি সহিংসতা ও হেনস্থার ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গিয়েছে। দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে নারীরা যেমন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, ঠিক তেমনি অনলাইনেও তাঁরা বিরূপ আচরণের শিকার হচ্ছেন। রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে ছাত্রী, নারী শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার নারীদের ইভটিজিং, শ্লীলতাহানী এবং হেনস্থা করা হচ্ছে। ধর্ষণ ও নির্যাতন করে নারীদেরকে হত্যা করা হচ্ছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, একের পর এক নারীকে হেনস্থা ও আক্রমণ এবং সামগ্রিক বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি গড়ে উঠছে, তা রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা ও সম্প্রীতির জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামাজিক অবক্ষয়ের মাধ্যমে কেন আজ নারীদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা ক্ষুন্ন হচ্ছে এবং এর পেছনে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ষড়যন্ত্র রয়েছে কিনা, সেটি যাচাই করা প্রয়োজন। এই অসভ্যতা ও সহিংসতার পেছনে কোনো উগ্রগোষ্ঠীর উস্কানি বা মদদ থাকতে পারে, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করে ফায়দা লোটার অপচেষ্টা করছে এবং যাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে একটি অতি রক্ষণশীল রাষ্ট্র বানানো, যেন নারীরা নিজ দেশে অধিকারহীন হয়ে পড়েন।
রিজভী বলেন, বাংলাদেশে নারীদের ক্ষমতায়নের পথিকৃৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা ধারাবাহিকভাবে ঘটে চলা এই প্রতিটি ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং দোষীদের যথাযথ শাস্তির দাবি করছি। নারীদের সম্মান ও স্বাধীনতা রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব, যা তাদের সংবিধান অনুযায়ী স্বীকৃত অধিকার। অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান, নারী নির্যাতনসহ সকল নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি কঠোরভাবে দমন করে দেশে ন্যায়বিচার এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে বেগম খালেদা জিয়া ধর্ষণ ও অ্যাসিড সন্ত্রাস দমন আইন প্রণয়ন করে নারীদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অপরাধ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেন। নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যৌতুকবিরোধী আইন প্রণয়ন করেন, যা অর্থনৈতিক ও সামাজিক নির্যাতন কমাতে সহায়ক হয়। নারী ও শিশু নির্যাতনের বিচার দ্রুত নিশ্চিত করতে তিনি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেন এবং অপরাধ অনুযায়ী শাস্তি নির্ধারণ করেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠন করে বেগম খালেদা জিয়া নারী শিক্ষায় সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেন। নারীদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের অগ্রাধিকার দিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কোটা সংরক্ষণ করেন এবং দেশে প্রথমবারের মতো প্রাইভেট বিশ্ব বিদ্যালয়ের সূচনা করে বহু নারী শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, দরিদ্র নারীদের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার অর্জন নিশ্চিত করতে তিনি তৃণমূল পর্যায়ে বস্তিবাসী, দুস্থ নারী ও গ্রামীণ মেয়েদের জন্য স্বল্পকালীন ঋণ ব্যবস্থা চালু করেন, যা নারীদের উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে। শিক্ষা ও ক্ষমতায়নের জন্য আন্তর্জাতিক উদ্যোগেও বেগম খালেদা জিয়া অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। নারী স্বাস্থ্যসেবা, উন্নয়ন ও শিক্ষার প্রসারে তিনি “এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব উইমেন”- এর জন্য ফান্ড গঠন করে চট্টগ্রামে ১০০ একর জমি দান করেন, যা নারীদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ আরও সম্প্রসারিত করেছে। নারীরা যাতে প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করতে পারে, সেই লক্ষ্যে তিঁনি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও ব্যবহারিক কাজে নারীদের যুক্ত করেন, যার ফলে অসংখ্য নারী কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়। নারীদের কৃতিত্বের স্বীকৃতি দিতে তিনি নবাব ফয়জুন্নেসা ও বেগম রোকেয়ার নামে একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন এবং তাদের নামে পদক প্রদান শুরু করেন।
বেগম খালেদা জিয়া শুধু নারীর উন্নয়ন কথায় সীমাবদ্ধ থাকেননি বরং একের পর এক বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ নিয়ে নারীদের জন্য নতুন পথ তৈরি করেছেন। তাঁর গ্রহণ করা উদ্যোগগুলো আজও নারীদের জন্য সুফল বয়ে আনে এবং এসব উদ্যোগ নারীর ক্ষমতায়নের ইতিহাসে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
নারীর স্বাধীনতা, মর্যাদা, আত্মনির্ভরশীলতা ও নিরাপত্তায় তারেক রহমানের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন,’নারীর স্বাধীনতা, মর্যাদা, আত্মনির্ভরশীলতা ও নিরাপত্তার ধারক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের জন্য হারিয়েছেন তাঁর বাবা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে এবং একমাত্র ভাই আরাফাত রহমান কোকোকে। আজ তাঁর পাশে রয়েছেন তাঁর মমতামীয় মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, স্ত্রী ডাক্তার জোবাইদা রহমান এবং একমাত্র সন্তান ব্যারিস্টার জায়মা রহমান-যাঁরা তিনজনই নারী। তাই নারীর মর্যাদা, আত্মনির্ভরশীলতা, ক্ষমতা এবং সমাজে তাদের সঠিক ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা তিনি গভীরভাবে উপলব্ধি করেন। তাঁর কাছে নারী শুধুমাত্র একটি সংখ্যা বা পরিসংখ্যান নয় বরং সমাজের অমূল্য অস্তিত্ব, যাঁরা নিজেদের শক্তি এবং সমর্থন দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।
এ কারণেই জনাব তারেক রহমান বলেছেন, বিএনপি যখন জনগণের ভোটে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আসবে, তখন দেশের প্রতিটি পরিবারের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘ফ্যামিলি কার্ড’ প্রদান করা হবে। এই কার্ডটি পরিবারের মা বা গৃহিণীর নামে দেওয়া হবে, যাতে নারীরা তাদের পরিবারে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এটি একটি সার্বজনীন কার্ড হবে, যাতে কোনো প্রকার দলীয় বা স্থানীয় প্রভাব দ্বারা কেই বঞ্চিত হবে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী যেমন- চাল, ডাল, তেল, লবণ, চিনি, ইত্যাদি-এই কার্ডের মাধ্যমে বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে, যা নারীদের প্রতি রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা ও স্বীকৃতির প্রতিফলন। প্রাথমিকভাবে এটি গ্রামাঞ্চলের তৃণমূল জনগণের জন্য চালু হবে, তবে পরবর্তীতে দেশের প্রতিটি পরিবার এর আওতায় আসবে, ইনশাল্লাহ।
রিজভী বলেন, নারীর ক্ষমতায়নকে দৃঢ়ভাবে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বিএনপির ৩১ দফায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে নারীর মর্যাদা, সুরক্ষা এবং সমাজে তাদের প্রাপ্যস্থান প্রতিষ্ঠার জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। জাতীয় উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নারীর কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য নারীর ক্ষমতায়নে একাধিক কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। নারী ও শিশুদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য যুগোপযোগী উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হবে, যাতে তারা সঠিক সুযোগ ও সুরক্ষা পায়।
রিজভী বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি নারীর ক্ষমতায়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তাই আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বিএনপি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে অতীতের মতো ভবিষ্যতেও দেশের নারীরা সকল সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন। তাঁদের শক্তি, সাহস এবং অবদান দেশের উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে আর নারীদের সেই ক্ষমতায়নের রাজনৈতিক পাথেয় হিসেবে সবসময় পাশে থাকবে বিএনপি, ইনশাল্লাহ।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইয়েদুল আলম বাবুল,মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস,সাধারণ সম্পাদক সুলতান আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জনতার আওয়াজ/আ আ
