হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে এগিয়ে ইমরানের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
শুক্রবার, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৪ ৭:০০ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
শুক্রবার, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৪ ৭:০০ অপরাহ্ণ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
পাকিস্তানের ১৬তম সারারণ নির্বাচনের ভোট গণনা এখনো চলছে। গতকাল অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণায় বেশ দেরি হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই খানিকটা এগিয়ে আছে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত মোট ১৩২টি আসনের ফল ঘোষণা করেছ।
বিবিসি উর্দু জানিয়েছে, বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা পর্যন্ত মিনিট পর্যন্ত আসনভিত্তিক প্রাপ্ত ফলাফলে জেতার দিক থেকে এগিয়ে আছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তারা এখন পর্যন্ত ৪৮টি আসনে জয়লাভ করেছেন।
বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রার্থীরা পেয়েছেন ৩২টি আসন।
অন্যদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনায় থাকা নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল) এখন পর্যন্ত ৪১টি আসন পেয়েছে।
বাকি ১১টি আসনে জয়যুক্ত হয়েছে নির্বাচনে অংশ নেওয়া অন্যান্য প্রার্থীরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগের নির্বাচনগুলোর তুলনায় এবার ভোট গণনায় ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যোগাযোগে গোলযোগের কারণে ভোট গণনায় দেরি হচ্ছে।
গতকাল ৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের দিন নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভোটগ্রহণ শুরুর মাত্র ১০ মিনিট আগে মোবাইল পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল পাকিস্তানে। কল ও ডেটা সেবা, কোনটিই সচল ছিল না।
গত বুধবার অর্থাৎ ৭ ফেব্রুয়ারির হামলার ঘটনা মোবাইল পরিষেবা বন্ধের কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সেদিন পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে প্রার্থীদের কার্যালয়ে দুটি পৃথক বোমা হামলায় কমপক্ষে ২৮ জন নিহত হয়েছে।
কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইল পরিষেবা বন্ধ থাকায় এখন নির্বাচনী ফলাফল আসতে দেরি হচ্ছে। পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন স্থানীয় কর্মকর্তাদের প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত করতে বলেছে।
এদিকে, ইমরান খানের দল বলছে ফলাফল ঘোষণায় এমন বিলম্ব ভোট কারচুপির লক্ষণ।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও তার দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন) এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় আছে বলে মনে করা হচ্ছিল। যদিও তার এমন উন্নতি কেউ কল্পনাও করতে পারেনি।
কারণ মাত্র ছয় বছর আগে, অর্থাৎ গত নির্বাচনের সময় দুর্নীতির দায়ে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল তাকে। স্বেচ্ছা নির্বাসনে যেতে বাধ্য করা হয়েছিলন তাকে। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে ১৯৯৯ সালে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিল। এরপর ২০১৭ সালে তার তৃতীয় মেয়াদের সময় সীমা কমিয়ে আনা হয়েছিল।
কিন্তু সম্প্রতি তিনি নির্বাসন থেকে ফিরেছেন। গত বছর তার বিরুদ্ধে দেওয়া ক্ষমতায় আসতে আজীবন নিষেধাজ্ঞা বাতিল করা হয়েছে। সরিয়ে ফেলা হয়েছে তার সব অপরাধের রেকর্ডও। সবমিলিয়ে সেনাবাহিনীর সমর্থনে তিনি আবারও নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন।
বিলওয়াল ভুট্টো জারদারি এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পি)। অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করা ৩৫ বছর বয়সী এই রাজনীতিক মূলত পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো এবং প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির ছেলে। বেনজির ভুট্টো ২০০৭ সালে বাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে ৫৪ বছর বয়সে এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হন। ২০২২ সালে ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন বিলওয়াল ভুট্টো জারদারি।
যে রাজনীতিবিদ এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছেন, তিনি এমন একজন প্রার্থী যিনি আসলে ব্যালটেই নেই। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গত বছর থেকে কারাগারে থাকলেও ভোটের মাঠে এখনও তার ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে।
গত সপ্তাহে তাকে আবার কারাদণ্ড দেয়া হয় এবং তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সদস্যরা এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নতুন চেয়ারম্যান গহর আলী খান পরের অবস্থানে থাকা প্রতিযোগীর তিনগুণ বেশি ভোট পেয়ে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বুনার আসন থেকে জয়লাভ করেছেন। তিনি গত ডিসেম্বরে মাঝে দলটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জেল থেকেই তাকে মনোনীত করেন।
দলটির আরেক জ্যেষ্ঠ নেতা আসাদ কায়সার, যিনি সংসদের সাবেক স্পিকার ছিলেন, তিনিও খাইবার পাখতুনখোয়ার সোয়াবি আসন থেকে জয়যুক্ত হয়েছেন।
পিটিআই চেয়ারম্যান গহর আলী খান এবং আসাদ কায়সারের মতো আরও অনেক পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে জিতেছেন।
বিবিসি উর্দু থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ আসনে জয় পেয়েছেন পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্ররাই।
পিটিআই প্রার্থীরা ‘ক্রিকেট ব্যাট’ প্রতীকের অধীনে নির্বাচন করতে পারবে না, নির্বাচন কমিশন এরকম একটা আইন জারি করায় এই প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধ্য হন।
বিশ্লেষকদের ধারণা, নির্বাচন যেমনই হোক, সেনাবাহিনীর সুনজর থাকায় শেষ পর্যন্ত সরকার গঠন করবে নওয়াজ শরিফের দল পিএমএল। যদিও এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফল ভিন্ন কথা বলছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ইমরানের খানের দল এখনও পিএমএল থেকে দশ আসন এগিয়ে।
এদিকে পাকিস্তানের সম্প্রচার মাধ্যম জিও নিউজ এই নির্বাচনকে ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীদের আধিপত্য’ বলে বর্ণনা করেছে। -বিবিসি বাংলা