অতীতের মতো এবারও সংঘাত এড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ইউনিয়নে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করতে চায় বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
বুধবার, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৩ ২:৫১ পূর্বাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
বুধবার, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৩ ২:৫৩ পূর্বাহ্ণ

ডেস্ক নিউজ
গ্যাস-বিদ্যুৎসহ নিত্যপণ্যের দাম কমানো এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ১০ দফা দাবিতে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি সারা দেশের চার হাজার পাঁচশর বেশি ইউনিয়নে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। অতীতের মতো এবারও সংঘাত এড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করতে চায় দলটি। ক্ষমতাসীনদের কোনো ফাঁদে পা দেবে না তারা। কিন্তু একই দিন পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য ও সহিংসতার প্রতিবাদে সারা দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ থাকায় পদযাত্রার কর্মসূচি ঘিরে সংঘাতের আশঙ্কা করছেন বিএনপির অনেক নীতিনির্ধারক। যদিও দলটির পক্ষ থেকে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগকে কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ছাড়া মামলা-হামলার পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীকে বাদ দিয়ে একযোগে সব ইউনিয়নে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করাও চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করছেন অনেকে। গত সোমবার অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, আমরা কোনোকিছুই চ্যালেঞ্জ মনে করছি না। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করছি। আমাদের একটাই লক্ষ্য, এ সরকারের পদত্যাগ। কারণ, এ সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। তারা নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রার কর্মসূচি এমনিতেই নতুন ধরনের। স্বাভাবিক কারণে অবশ্যই কিছুটা চ্যালেঞ্জিং। আমরা আশাবাদী, সারা দেশের মানুষ এ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তাদের প্রতিবাদ, তাদের ঘৃণা, তাদের প্রত্যাশা সরকার বরাবর জানিয়ে দেবে। এই পদযাত্রার অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে, অগণতান্ত্রিক সরকারের পদত্যাগ দাবি এবং ১০ দফা প্রতিষ্ঠা।
২২ আগস্ট থেকে তৃণমূলে ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। উপজেলা-থানা ও ইউনিয়নে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে দলটি। এরপর ১২ অক্টোবর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভাগীয় গণসমাবেশ করে বিএনপি। সর্বশেষ গত ৪ ফেব্রুয়ারি ১০টি সাংগঠনিক বিভাগে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। দলটির দাবি, ওইসব কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু ওইসব কর্মসূচিকে ঘিরে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ফের মামলা-হামলার মুখে পড়েন। গ্রেপ্তার ও পুলিশি হয়রানির ভয়ে নতুন করে অনেক নেতাকর্মী এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন। এ ছাড়া তৃণমূলে বিক্ষোভ মিছিলের ওই কর্মসূচিকে ঘিরে সাবেক এমপিসহ দলের অনেক কেন্দ্রীয় নেতা হামলার শিকার হন। এমন প্রেক্ষাপটে রাজধানীকেন্দ্রিক কর্মসূচি না দিয়ে ফের তৃণমূলে কর্মসূচি দেওয়ায় তা বাস্তবায়ন করা চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করেন অনেক সিনিয়র নেতা। তারা আশঙ্কা করছেন, একইদিন আওয়ামী লীগের পাল্টা কর্মসূচি থাকায় সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা নতুন করে হামলা-মামলার শিকার হতে পারে।
বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা বলেন, বিএনপির তৃণমূল এখন অত্যন্ত সুসংগঠিত ও শক্তিশালী। অতীতের কর্মসূচিগুলোতে সেটার প্রমাণও দিয়েছে তারা। এখন তাদের নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার দরকার নেই। সক্ষমতা যাচাই করতে হবে ঢাকা মহানগরের। কারণ, দশম সংসদ নির্বাচনের আগে সারা দেশে ব্যাপক আন্দোলন হলেও ঢাকায় ব্যর্থতার কারণে সে আন্দোলন সফলতা পায়নি।
এদিকে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রার কর্মসূচি সফলে ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে বিএনপি। তৃণমূলের এই কর্মসূচিতেও নিকট অতীতের মতো নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণ ঘটাতে চায় দলটি। এ লক্ষ্যে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী এসব কর্মসূচিতে নিজ নিজ এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা থাকবেন, তবে তা বাধ্যতামূলক নয়। এ ছাড়া দলের সাবেক এমপি এবং সম্ভাব্য এমপিপ্রার্থীরাও অংশগ্রহণ করবেন। দলের সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকরা সার্বিক কর্মসূচির সমন্বয় করবেন, আর জেলা নেতারা কর্মসূচি মনিটরিং করবেন।
জানা গেছে, দলের প্রতিটি সাংগঠনিক বিভাগের কেন্দ্রীয় নেতারা স্থানীয়ভাবে প্রস্তুতি সভা করছেন। সেখানে কর্মসূচি বাস্তবায়নের কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হচ্ছে। দলীয় সূত্র জানায়, মূলত দলের উপজেলা পর্যায়ের নেতারাই ইউনিয়নে পদযাত্রার এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে। প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে উপজেলা নেতা গিয়ে কর্মসূচির তত্ত্বাবধান করবেন। কর্মসূচিতে জনগণকে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করতে তাদের মাঝে ১০ দফা দাবি সংবলিত লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে।
১১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য ইউনিয়ন পদযাত্রা সফল করতে গত রোববার ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে দলীয় কার্যালয়ে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনকে নিয়ে প্রস্তুতি সভা করেন বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। তিনি কালবেলাকে বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রার কর্মসূচি সফলে তারা সাংগঠনিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। আশা করি, কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও ব্যাপক অংশগ্রহণ ঘটবে।
জানতে চাইলে বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, ১১ ফেব্রুয়ারি ইউনিয়ন পর্যায়ে অনুষ্ঠেয় পদযাত্রার কর্মসূচি সফলে তারা কাজ শুরু করেছেন। প্রস্তুতি সভা, কর্মিসভা করছেন। নির্ধারিত দিনে ইউনিয়নের নির্দিষ্ট এক জায়গায় নেতাকর্মীরা এসে মিলিত হবেন। সেখান থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে অপর একটা নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে শেষ হবে। পদযাত্রার দিনে প্ল্যাকার্ড থাকবে, দাবিনামা থাকবে, গণসংগীত থাকবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের ওয়ার্ড কমিটি আছে, ইউনিয়ন কমিটি আছে। দলের বাইরে অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন আছে। সুতরাং কর্মসূচি বাস্তবায়নে সমস্যার কিছু নেই। তবে সরকার পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে উসকানি দিচ্ছে। এখানে সরকারের উদ্দেশ্য কী সেটাই বুঝা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের নেতাকর্মীরা কোনো উসকানিতে পা দেবে না। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করব।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু জানান, ঢাকা মহানগরের অধীনে কোনো ইউনিয়ন না থাকায় উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির পক্ষ থেকে দুই দিনের পদযাত্রার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। ৯ ফেব্রুয়ারি মহানগর দক্ষিণ এবং ১২ ফেব্রুয়ারি মহানগর উত্তর বিএনপি এ কর্মসূচি পালন করবে। আর মহানগরের বাইরে যেখানে ইউনিয়ন আছে, সেখানে ১১ জানুয়ারি পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।
যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, পদযাত্রা কর্মসূচি সফলে আগামীকাল (আজ) আমাদের বিভাগীয় মিটিং আছে। খুলনা বিভাগীয় নেতারা সেখানে থাকবেন। আনুষ্ঠানিকভাবে সেখানেই কর্মসূচি সফলের কৌশল নির্ধারণ করা হবে। তবে অতীতের অভিজ্ঞতায় কর্মসূচি বাস্তবায়নে আমরা এরই মধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছি। তিনি জানান, কর্মসূচি সফল করতে প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে উপজেলা নেতা যাবেন। আর জেলা নেতারা প্রতিটি উপজেলার যে কোনো একটা ইউনিয়নে যাবেন।
জনতার আওয়াজ/আ আ
