অথৈ পানিতে মেটেনা তৃষ্ণা - জনতার আওয়াজ
  • আজ রাত ১০:০৩, শনিবার, ২২শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি
  • jonotarawaz24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

অথৈ পানিতে মেটেনা তৃষ্ণা

নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ: বুধবার, মার্চ ৫, ২০২৫ ৩:৩৫ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: বুধবার, মার্চ ৫, ২০২৫ ৩:৩৫ অপরাহ্ণ

 

মারুফ কামাল খান

আঠারো শতকের ইংরেজ কবি স্যামুয়েল টেলর কোলরিজের বিখ্যাত কবিতা ‘দ্য রাইম অব দি এনশিয়েন্ট ম্যারিনার’-এর দ্বিতীয় অংশের ক’টি চরণ হচ্ছে :
Water, water, every where,
And all the boards did shrink;
Water, water, every where,
Nor any drop to drink.
এর মানে :
পানি আর পানি, চারদিকে পানি,
পাটাতন শুকিয়ে জড়োসড়ো;
পানি আর পানি, সবখানে পানি,
পানের যোগ্য পানি নেই একফোঁটাও।
অনেক সময় এমন হয়। থইথই পানিতে মেলেনা একবিন্দু তৃষ্ণার জল। আজ লিখতে বসে কোলরিজের কবিতার ওই লাইনগুলো খুব মনে পড়ছে। কারণ, চারদিকে এতো ব্যাপার-স্যাপার সঞ্চরণশীল, এতো ঘটনা ঘটে চলেছে, তবু আমি লিখবার মতো কোনো বিষয় খুঁজে পাচ্ছিনা।
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের তোলপাড় করা বক্তৃতার কথাই ধরি। ২৫ ফেব্রুয়ারি ছিল ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস।’ এবারেই প্রথম পালিত হচ্ছে এ দিবস। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার দেড় মাসের মাথায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দফতর পিলখানায় এক পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞে ৫৭ জন চৌকস সেনা অফিসারসহ ৭৪ জন নিহত হন। ‘বিডিআর বিদ্রোহ’ নামে হাসিনা রেজিমের প্রচার করা সেই ম্যাসাকারের দায়, তদন্ত ও বিচারের ব্যাপারে গোড়া থেকেই প্রবল সন্দেহ ও বিতর্ক চলে আসছে। হাসিনা রেজিম উৎখাতের পর ওই ঘটনা নতুন করে তদন্তের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উচ্চ ক্ষমতার কমিশন গঠন করেছে। শহীদ সেনা দিবস উপলক্ষে অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাদের কল্যাণ সমিতি রাওয়া ক্লাব এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। তাতে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার বক্তৃতা করেন। অতি সংবেদনশীল ওই ঘটনার ওপর খোলামেলা আলোচনা করতে গিয়ে আর্মি চিফ দেশজাতির বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য খুব তাৎপর্যপূর্ণ কিছু মতামত ব্যক্ত করেছেন।
কণ্ঠ রুদ্ধ করে রাখা ফ্যাসিস্ট হাসিনা রেজিমের পতনের পর বাংলাদেশে যে বেপরোয়া লাল স্বাধীনতার জোয়ার বইছে তাতে কেউ বা কোনো কিছুই তীব্র, তীক্ষ্ম, সরাসরি আক্রমণ থেকে রেহাই পাচ্ছে না। যে-কেউ যাকে খুশি তাকে যে-কোনো ভাষায় আক্রমণ করে বসছে। কোনো সীমানা মানছে না কেউ। এখনকার পরিস্থিতি আমেরিকার আব্রাহাম লিঙ্কনের একটা ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছে। নাগরিক স্বাধীনতার প্রবক্তা রাষ্ট্রনায়ক লিঙ্কন একদিন প্রাতভ্রমণে বেরিয়েছেন। দেখলেন এক ভদ্রলোক ছড়ি ঘোরাতে ঘোরাতে পথ চলছেন। লিঙ্কন সাহেব পথের পাশে নিরাপদ দূরত্বে সরে যাবার আগেই দ্রুতবেগে ভদ্রলোক তার একেবারে কাছাকাছি চলে এলেন। তার ঘূর্ণায়মান ছড়ির ডগার আঘাতে লিঙ্কন সাহেবের নাক ফেটে দরদর করে রক্ত পড়তে লাগলো। কিন্তু আঘাতকারী নির্বিকার। তাকে লিঙ্কন জিজ্ঞেস করলেন : ‘এটা আপনি কী করলেন মশাই?’ তিনি বিজ্ঞের মতো জবাব দিলেন : ‘মুক্ত আমেরিকার একজন স্বাধীন নাগরিক হিসেবে ছড়ি ঘুরিয়ে পথ চলার অধিকার আমার নিশ্চয়ই আছে।’ লিঙ্কন বললেন : ‘আলবৎ আছে। কিন্তু মুক্ত আমেরিকার একজন স্বাধীন নাগরিক হিসাবে রাস্তায় অক্ষত নাসিকা নিয়ে চলার অধিকার আমার আছে কি?’ ভদ্রলোক বললেন : ‘তা আছে।’ কষ্ট চেপে হেসে লিঙ্কন বললেন : ‘নাক অক্ষত রেখে আমার পথ চলার অধিকার রক্ষার জন্য আপনার ছড়ি ঘোরানোর অধিকার আমার নাকের ডগা পর্যন্ত সীমিত।’ ভদ্রলোক তার স্বাধীনতার সীমানা সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান অর্জনের পর লজ্জিত হয়ে ক্ষমা চেয়ে প্রস্থান করেছিলেন। কিন্তু এখন লাল স্বাধীনতার দেশে অক্ষত নাসিকা নিয়ে চলা ভারী কঠিন হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে তীরন্দাজদের ছোঁড়া এলোপাতাড়ি তীরের ঘা থেকে জেনারেল ওয়াকারও নিজের গা বাঁচিয়ে চলতে পারছেন না। অবশ্য জেনারেলের বক্তব্যের সমর্থনেও অনেকে কথা বলছেন। প্রশংসাও পাচ্ছেন তিনি। এই চরম বিষোদগার ও ব্যক্তিগত আক্রমণ এবং পরম প্রশংসার ডামাডোলে মাথা ঠিক রেখে কোনো কিছুর সঠিক মূল্যায়ন করা সত্যিই কঠিন। তাছাড়া কাউকে চরম বেঈমান কিংবা খাঁটি দেশপ্রেমিক বলে রায় দেয়ার মতো প্রমাণপঞ্জি কিছুই নেই আমার হাতে। তাই চুপ থাকা বা প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
ঘটনা আরো আছে। চব্বিশের ছাত্রগণঅভ্যুত্থান বিজয়ী ছাত্ররা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করছেন। সেই দলে নেতৃত্ব দেওয়ার উদ্দেশ্যে উপদেষ্টা পদে ইস্তফা দিয়ে সরকার থেকে বেরিয়ে গেছেন নির্যাতীত ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলাম। তিনি যে দু’টি মন্ত্রনালয় চালাতেন তার ভার দেয়া হয়েছে নহিদেরই এক সতীর্থ মাহফুজ আলমকে। মাহফুজ দফতরহীন উপদেষ্টা ছিলেন এতোকাল। এখন তার ‘উজিরে খামাখা’ দশা মোচন হলো। মাহফুজ ছাড়াও ছাত্র আন্দোলন করে আসা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও উপদেষ্টা রূপে বহাল আছেন এখনো। কাজেই নতুন দলে তাদের যোগদান ও ভূমিকা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছেনা। এই লেখা ছাপার দিনে, অর্থাৎ শুক্রবারে রাজধানী ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউতে বড় সমাবেশ করে ছাত্রদের নতুন দল ঘোষণার কথা আছে। এ মুহূর্তে তাদেরকে আগাম শুভেচ্ছা জানানো ছাড়া নতুন দল সম্পর্কে বিশদ কিছু বলার সুযোগ নেই। নতুন দলের সমর্থক একটা ছাত্রসংঠন ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে। এ উপলক্ষে পাবলিক ও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের মধ্যে হট্টগোল ও মারামারি হয়েছে। প্রাইভেটের শিক্ষার্থীরা সংগঠনের গঠিত কমিটিতে বৈষম্যের শিকার হবার অভিযোগ তুলেছে। এই দ্বন্দ্বের নিরসন কিভাবে কতোটা হবে তা দেখার বিষয়। বৈষম্যবিরোধী এই ছাত্ররা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবিতে ছাত্রদলের সঙ্গে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়িয়েছে। কোথাও কোথাও ছাত্রশিবির তাদেরকে সমর্থন করেছে। আবার বৈষম্যবিরোধী ও শিবিরের মধ্যে কোথাও গোল বাঁধার খবরও এসেছে। এখন নতুন সংগঠন গড়ার পর এই ত্রৈয়ীর সম্পর্কের সমীকরণ কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তার জবাবও ভবিষ্যতের হাতে।
সাধারণ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনার একটা গরম বাতাস বইছে অনেকদিন ধরেই। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দিনক্ষণের ব্যাপারে একটা আভাস দিয়ে বলেছিলেন, কম সংস্কার চাইলে এবছরের ডিসেম্বরেই আর একটু বেশি সংস্কার চাইলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন সেরে ফেলা যায়। ওতে রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে বিএনপি সন্তুষ্ট হতে পারে নি। তারা দ্রুত এবং আরো স্পষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছে নির্বাচনের ব্যাপারে। ত্বরিত নির্বাচন ও আরো কিছু ইস্যু নিয়ে বিএনপি ইতোমধ্যে দেশজুড়ে সভা-সমাবেশ করেছে। আমার এ লেখা পাঠকের হাতে পৌঁছাবার আগেই বৃহস্পতিবারে ঢাকায় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির বর্ধিত সভা হয়ে যাবে। এ সভার আগেই দলের নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন যে, এ মুহূর্তে বিএনপির সব মনোযোগ জাতীয় নির্বাচনের ওপর। দলের বর্ধিত সভা থেকেই বিএনপির নির্বাচনমুখী যাত্রা কার্যত শুরু হবে। দলটি জাতীয় নির্বাচনকে মুখ্য করেই পরবর্তী সাংগঠনিক কর্মসূচি তৈরির নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রমজান ও ঈদুল ফিতরের পরপরই নির্বাচনকেন্দ্রিক এ কর্মসূচি ও তৎপরতা শুরু হবে।
বিএনপির এই নির্বাচনমুখি তৎপরতা নির্বাচনকে কিছুটা ত্বরান্বিত করছে বলেই মনে হয়। আগামী ডিসেম্বর কিংবা কাছাকাছি দু’-এক মাসের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের আভাস দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা, আরো দু’-একজন উপদেষ্টা, সেনাপ্রধান, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের একটা আওয়াজ শোনা গেলেও বিএনপির তীব্র আপত্তির মুখে ইতোমধ্যেই তা’ কিছুটা মিইয়ে গিয়েছে। সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টা বলেছেন, “স্থানীয় নির্বাচন আগে করার একটা নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিল। তবে তা’ সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই চূড়ান্ত করা হবে।” বিএনপির বিরোধিতা উপেক্ষা করে স্থানীয় নির্বাচন আগে করার চ্যালেঞ্জ সরকার নেবে বলে মনে হচ্ছে না।
সম্প্রতি সারাদেশে হঠাৎ করেই চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি ও মেয়েদের শ্লীলতাহানির মতো গুরুতর অপরাধ মারাত্মকভাবে বেড়ে যাওয়ায় জনসাধারণ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর পদত্যাগের দাবিতে ছাত্র-তরুণেরা বিক্ষোভ শুরু করেন। অনেকে সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেনকে সরিয়ে দেওয়া পদে ফের ফিরিয়ে আনার দাবি তোলেন। এ পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নজিরবিহীনভাবে রজনীর শেষ ভাগে, রাত তিনটায় জরুরি সংবাদ সন্মেলন ডাকেন। তীব্র আইন-শৃঙ্খলার আকষ্মিক গুরুতর অবনতির জন্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে দায়ী করেন তিনি। অভিযোগ করেন, বিদেশ থেকে পাচার করা টাকা এনে তারা পরিকল্পিতভাবে অপরাধ উস্কে দিচ্ছে। এই অপরাধীদের ঘুম হারাম করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে জেনারেল জাহাঙ্গীর পরদিন থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হবার অঙ্গীকার করেন। তিনি বলেন যে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তার আর পদত্যাগ করার প্রয়োজন হবে না। পরদিন নগরীতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসমূহের তৎপরতা ও সেনাটহল বাড়ানো হয়। একই সঙ্গে সম্ভাব্য অপরাধীদের বিরুদ্ধে নাগরিকেরাও প্রতিরোধ শুরু করেন। সরকারি নাকি নাগরিক তৎপরতায় অপরাধ প্রবাহের ধারা কিছুটা থমকে গেছে তা এখনো স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। এই সাফল্য কতোটা স্থায়ী হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
সামনে রোজা ও ঈদ। দ্রব্যমূল্য, চাঁদাবাজি, নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানি সরবরাহ, যানজট এবং দূরপাল্লার যানবাহনের নির্বিঘ্ন চলাচল ও ভাড়ার বিষয় এ সময়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এসব বিষয়ে সরকার ও প্রশাসন কতোটা সফল হবে এবং জনগণ কতোটা স্বস্তিতে থাকবে তার উপর সামনের দিনের অনেক কিছুই নির্ভর করছে। ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত পতিত ফ্যাসিবাদী রেজিমের ভয়ঙ্কর সব অপরাধের চিত্র ক্রমেই উদঘাটিত হচ্ছে। তাদের অল্প কয়েকজন কারাগারে আটক থাকলেও বেশিরভাগই বিদেশে পালিয়েছে। অনেকে পলাতক ও ফেরারি। ওদের হাতে আছে ষোলো বছর ধরে দেশ-লুটের কাড়ি কাড়ি টাকা। এই অঢেল অর্থে ওরা ঘটাচ্ছে নানা অনর্থ। আগামীতেও ঘটাতে থাকবে অনেক অঘটন। কাজেই বিচারের মাধ্যমে ওদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা, অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত এবং বিদেশে পাচার করা অর্থ-সম্পদ ফিরিয়ে আনতে না পারলে সমাজে স্থিতিশীলতা ফেরানো যাবে না। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কতোটা দ্রুত এবং কতো যোগ্যতার সঙ্গে ও বলিষ্ঠভাবে এসব কর্তব্য সমাধা করতে পারবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
অপরাধীদের বিচার ও সাজা নিশ্চিত করা ছাড়া আওয়ামী লীগের ভবিষ্যত সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও নেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে দেওয়ার ব্যাপারে ভুক্তভোগী জনগণের যে জোরালো দাবি আছে, সে ব্যাপারে দায়িত্বশীল কোনো মহলই এখন পর্যন্ত দায়িত্ব নিতে চাইছে না। অনেকে মনে করেন আওয়ামী অপরাধীদের শাস্তি ও বিচারের আওতায় আনার লেভেল সম্পর্কে একটা জাতীয় ঐক্যমত লাগবে। তার ভিত্তিতে বিচার ও শাস্তিপ্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করে বাকি কম অপরাধী ও নিরপরাধ আওয়ামী লীগারদের ট্রুথ অ্যান্ড রিকন্সিলিয়েশন কমিশনের আওতায় একটা সাধারণ ক্ষমার যোগ্য ঘোষণা করা যেতে পারে। তারপর আওয়ামী কাঠামো থেকে ফ্যাসিবাদী রাজনীতিকে বিযুক্ত করার শর্তে নিরপরাধদের দল গঠন ও নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহনের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। না হলে আওয়ামী লীগের সমর্থক অন্ততঃ ১৫ শতাংশ মানুষকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বাইরে নির্বাসিত রাখার ফলাফল ভালো হবে না বলে তারা মনে করছেন। আওয়ামী লীগের মতো একটি ভয়ঙ্কর রাজনৈতিক ধারাকে সমাজে আত্মস্থ ও অ্যাকোমডেট করার এই জটিল প্রক্রিয়া আমাদের রাজনৈতিক বন্দোবস্তের মধ্যে থেকে কতটা সফল ভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব তা’ নিয়ে সংশয় তো আছেই, থাকবেও।
এই যে এতোগুলো উল্লিখিত ব্যাপার সহ আরো কতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে চলেছে তার প্রায় সবই এখনো বহমান ও তরল। কোনোটা নিয়েই এই মুহূর্তেই আসা যাচ্ছে না কোনো অনুসিদ্ধান্তে। তাই কী নিয়ে লিখবো আজ? কিছু নিয়েই তো লিখা যাচ্ছে না, লিখতে পাচ্ছিনা। এ যেন থই থই পানিতে তৃষ্ণা না মেটার দশা। তা’হলে আজ না হয় বাদই থাকুক সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে লিখা। পাঠকের কাছ থেকে আজকের মতো না হয় বিদায়ই নিয়ে যাই সিদ্ধান্তহীন চিত্তে।

মারুফ কামাল খান : সিনিয়র সাংবাদিক ও লেখক

Print Friendly, PDF & Email
 
 
জনতার আওয়াজ/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ