আওয়ামী লীগে এক ধরনের নার্ভাসনেস কাজ করছে : ড. আসিফ নজরুল - জনতার আওয়াজ
  • আজ বিকাল ৪:৪৬, রবিবার, ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • jonotarawaz24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

আওয়ামী লীগে এক ধরনের নার্ভাসনেস কাজ করছে : ড. আসিফ নজরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ: শুক্রবার, অক্টোবর ২৭, ২০২৩ ১২:২২ পূর্বাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: শুক্রবার, অক্টোবর ২৭, ২০২৩ ১২:২২ পূর্বাহ্ণ

 

নিউজ ডেস্ক

ড. আসিফ নজরুল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক। কথা বলেন স্পষ্ট। সম্প্রতি মানবজমিনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে নির্বাচন, আন্দোলনসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন। তার কথা- অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যদি করতে হয়, তাহলে বর্তমান যে প্রশাসনিক ও পুলিশের সেটআপ আছে, অবশ্যই তার পরিবর্তন করতে হবে। তিনি বলেছেন, ২৮শে অক্টোবর যদি বিএনপিকে সমাবেশ করতে দেয়া না হয়, তাহলে তাদের দাবির পক্ষে যে বিশাল সংখ্যক মানুষ আছে তা প্রমাণ করবে কীভাবে? যখন আওয়ামী লীগ বিরোধীদলে ছিল, বহু সমাবেশ তারা করেছে। বিএনপি তো এই মাত্রায় বাধা দেয়নি। আর দুর্ভোগের যে কারণ দেখানো হচ্ছে তা হলো খোঁড়া যুক্তি। সাক্ষাৎকারের পুরো অংশ তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মানবজমিন-এর রিপোর্টার ফারজানা ববি।

২৮শে অক্টোবর প্রধান দলগুলোর রাজনৈতিক কর্মসূচি।

এ নিয়ে রাজনীতিতে এক ধরনের উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগ বলছে- বিএনপিকে রাস্তায় বসতে দেয়া হবে না। আপনার কী মনে হয় পরিস্থিতি কোনদিকে যাচ্ছে?
আসিফ নজরুল: ২৮শে অক্টোবর বিএনপি যে কর্মসূচি দিয়েছে, এরকম কর্মসূচি বিএনপি আগেও দিয়েছিল। যখন খুব বড় কোনো জমায়েত করার চেষ্টা বা কর্মসূচি দেয় বিএনপি, আওয়ামী লীগের মধ্যে এক ধরনের নার্ভাসনেস আমরা দেখি। তারা পুলিশের মাধ্যমে নানান প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। সমাবেশের স্থান কোথায় হবে সে নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করে। এর আগে আমরা দেখেছি সমাবেশের স্থান ইলেভেন্থ আওয়ারে জানানো হয়। এর আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতো নেতাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তো এই সমাবেশ যদি করতে না দেয়া হয়, বিএনপি’র দাবি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে যে বিশাল সংখ্যক মানুষ আছে, এটা প্রমাণ করবে কীভাবে? এটা প্রমাণ করার উপায় হচ্ছে রাজনৈতিক কর্মসূচি করতে দেয়া। আমরা যদি অতীতে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি দেখি, যখন আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে ছিল, বহু সমাবেশ অতীতে করেছে। হ্যাঁ, বিএনপি বাধা দিয়েছিল কিন্তু এই মাত্রায় বাধা দেয়া হয়নি। আপনি যেটা বললেন যে, আওয়ামী লীগ বলেছে যে রাস্তায় বসতে দেয়া হবে না। আমি এটার যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছি না। আমরা যদি পৃথিবীর বিভিন্ন কনটেম্পোরারি আন্দোলনও দেখি, তখনো কিন্তু রাস্তায় মানুষ বসে পড়েছে। আমাদের অতীতে শাহবাগে যে সমাবেশ ছিল, দুই তিন মাইল পর্যন্ত রাস্তায় মানুষ বসে ছিল, শাপলা চত্বরে মানুষজন বসে ছিল। রাস্তায় বসতে দেয়ার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের আপত্তির কারণ আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। কারণ যদি হয় এটা যে, জনগণের চলাচলের দুর্ভোগ সৃষ্টি হবে, সেটা হবে একটা খোঁড়া যুক্তি। কারণ অতীতে আমরা আওয়ামী লীগকে বহু কর্মসূচি পালন করতে দেখেছি। আওয়ামী লীগের নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন কোনো রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন, মানুষের মধ্যে প্রচণ্ড দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। অপরিকল্পিত রাস্তার উন্নয়নের ফলে দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগের সমাবেশের কারণে দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। অন্যান্য ক্ষেত্রে তো দুর্ভোগ আছেই। দ্রব্যমূল্যের ব্যাপার আছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি আছে, ব্যাংক লুটতরাজের কারণে লোকজনের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। তো আমার কথা হচ্ছে দুর্ভোগ যদি বিবেচ্য বিষয় হতো তবে এই কাজগুলো কেন করা হয়েছে সরকারি দলের পক্ষ থেকে? আরেকটা কথা হচ্ছে আমি একটা জিনিস বুঝতে অপারগ যদি বিএনপি কিছুদিন পরপর পাঁচ লাখ, দশ লাখ লোক রাজপথে নিয়ে আসে, আসার পর তারা আবার চলে যায়, তাহলে কী সরকার তাদের দাবি মেনে নিবে? মেনে নেবে না। সরকার বলছে- আপনারা আন্দোলন করেন, করে আবার চলে যান। কোনোরকম চাপ সৃষ্টি করবেন না, কোনোরকম সহিংসতা সৃষ্টি করবেন না। ‘সহিংসতা করবেন না’ সরকারের এই কথার সঙ্গে আমি একমত। কিন্তু কোনোভাবে চাপ সৃষ্টি করবে না! আমরা অতীতে বহুবার সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি দেখেছি। আমরা শুনছি, বিএনপি সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি করবে এবং আওয়ামী লীগ এটা করতে দেবে না। কিন্তু কোন কর্মসূচি যেটা দ্বারা আপনার উপর চাপ সৃষ্টি করা যায় এবং ব্যাপক জনসমর্থন আছে সেটা যদি আপনি করতে না দেন, সেটা যদি দমন করেন তাহলে মানুষ যাবে কোথায়? আপনি ভোটের মাধ্যমেও জনমতকে রিফ্লেক্টেড হতে দেবেন না, জনসমাবেশের মাধ্যমেও যদি জনমতকে রিফ্লেক্টেড হতে না দেন, অনিশ্চিত এবং সংঘাতের পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়। আমি আশা করবো বিএনপি যদি ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে, তারা যদি রাস্তায় বসে থাকার কর্মসূচি পালন করে যতক্ষণ পর্যন্ত তারা অহিংসভাবে এটা করবে, সরকারের উচিত না সেটা বাধা দেয়া। আবার যদি পুলিশ বিভিন্নভাবে বাধা সৃষ্টি করে, জনগণকে ওখানে উত্ত্যক্ত করে তোলে, তাদের যদি প্রভোক করে, তারপর সেখানে যদি কোনো সংঘাত হয়, সেটার দায় পুলিশ এবং সরকারকে নিতে হবে। এগুলো কমন সেন্সের ব্যাপার। এটা কোনো পক্ষপাতিত্বের ব্যাপার না। আপনি অ্যাটাক করবেন, লোকজনের মোবাইল ফোন তল্লাশি করবেন, ঢুকতে দেবেন না, পেটাবেন, গায়েবি মামলা দেবেন, আপনি যা ইচ্ছা তাই করবেন, আর লোকজন শুধু শান্তিনিকেতনী কায়দায় এসে একটা কথা বলে চলে যাবে, এটা রিজনেবল এক্সপেক্টেশন না। যদি তারা শান্তিপূর্ণভাবে কোনো জায়গায় বসে হোক বা ঘেরাও করে হোক কর্মসূচি পালন করে দেখাতে পারে যে, কতো লোক তাদের পক্ষে আছে, তাহলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি হিসেবে সেটাতে বাধা দেয়ার কোনো যৌক্তিকতা আমি দেখি না।

অনেকেই নির্বাচনের ক্ষেত্রে সংবিধানের ভেতর দিয়ে সমাধান দেখছেন। সাংবাদিক খালেদ মহিউদ্দিন বলেছেন যে, নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রী ছুটিতে যাবেন। এসব সমাধান বাস্তবসম্মত কী না?

আসিফ নজরুল: এই সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী তো বহুবার বিদেশে গেছেন। ছুটি না নিলেও তো বিদেশে গেছেন। তাতে কি এ দেশে পুলিশের নির্যাতন, দমন- নিপীড়ন, গায়েবি মামলা, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড- এগুলো কি থেমে ছিল? ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর এমন একটি মেশিনারি তৈরি করা হয়েছে, এই মেশিনারিতে প্রধানমন্ত্রীর ছুটিতে থাকলেও, কি করতে হবে সেটাই প্রত্যেকে খুব ভালোভাবে জানে। এবং তাদের অনেকের বিরুদ্ধে এত বেশি অভিযোগ, তারা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বিরোধী দলকে ঠিকমতো দাঁড়াতে দেবে না। ঠিকমতো ইলেকশন করতে দেবে না। আজ যদি দেশে একটা সুস্থ পরিবেশ থাকতো, পাঁচ বছর পর পর ক্ষমতার চেঞ্জ হয়, তাহলে আমরা এত আশঙ্কার কথা বলতাম না। আমরা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন দেখার পর প্রধানমন্ত্রী ছুটিতে থাকবেন আর বাকি সবাই মিলে একটা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করবে, আবার সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের কোনো পদক্ষেপ যদি নেয়া হয় টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী বা অন্য দলের মন্ত্রীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এতে হস্তক্ষেপ করবেন না- এটা বিশ্বাস করা খুব কষ্টকর। সংবিধানের মধ্যদিয়ে ইলেকশন সম্ভব, এটা আমি অনেকবার বলেছি, আবারো বলি। প্রধানমন্ত্রী যদি পদত্যাগ করেন, আওয়ামী লীগের কোনো সংসদ সদস্য বা জাতীয় পার্টির কোনো সংসদ সদস্য বা অন্য দলের কোনো সংসদ সদস্যকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে সরকার গঠন করা যায়। উদাহরণ হিসেবে বলছি- পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সাহেবকে প্রধানমন্ত্রী বানানো হলো নির্বাচনকালীন সরকারের, ওবায়দুল কাদেরকে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী বানানো হলো। এখন ৪৭ জন মন্ত্রী আছেন, তাহলে পাঁচজন মন্ত্রী বা চারজন মন্ত্রীকে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিতে পারেন সংবিধানসম্মত। এই ৪ জন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীকে তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব দিতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, তথ্য এই সমস্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিতে হবে। বাকিদেরকে অগুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় বা অন্যদেরকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে রাখতে হবে। এরও বাইরে আপনি যদি চান নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে যেকোনো মানুষকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিতে পারেন। এবং আমাদের বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, মন্ত্রিপরিষদের যে সভা হয় শপথ নেয়া মন্ত্রী ছাড়া কেউ থাকতে পারে না। কিন্তু এই সরকারের আমলে আমরা বহুবার দেখেছি উপদেষ্টারা শপথ গ্রহণ ছাড়াই মন্ত্রিসভার বৈঠকে থেকেছে। যদি একটা নির্বাচনকালীন সরকার হয় যেটার প্রধান থাকবেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ছাড়া অন্য কেউ সেখানে যদি কয়েকজন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী থাকে এবং যদি আরও উপদেষ্টা রাখা হয় তাহলে সংবিধানসম্মতভাবে, সম্পূর্ণ আইনানুগভাবেই একটা মোটামুটি নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। সংবিধানের মধ্যে সম্ভব না- এটা তো বলা ঠিক না। আরও কতো পথ আছে! সংবিধানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে বিধান আছে, সেটা আপনি আবার নিয়ে আসেন। সংবিধানসম্মতভাবেই তো সংবিধান পরিবর্তন করে সেটা আবার নিয়ে আসা সম্ভব। কাজেই সংবিধানের কথা বলা হয় অজুহাত হিসেবে। নিয়তটা ভালো না। নিয়ত ভালো থাকলে সংবিধান কখনো বাধা হয় না। আমরা ১৯৯১ সালে দেখেছি, সম্পূর্ণ সংবিধান বহির্ভূতভাবে তৎকালীন প্রধান বিচারপতিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান বানিয়ে আবার সম্পূর্ণ সংবিধান বহির্ভূতভাবে ওনাকে আগের পদে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। পরে ১১তম সংশোধনীর মাধ্যমে সেটাকে জাস্টিফাই করা হয়েছে। কাজেই যারা বলেন- সংবিধানের মধ্যদিয়ে সম্ভব না, সম্পূর্ণ অসত্য এবং জাতিকে বিভ্রান্ত করার প্রয়াস।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন দেশে নির্বাচনের প্রত্যাশিত পরিবেশ নেই। অন্যান্য কমিশনাররা কেউ এক্ষেত্রে ইতিবাচক এবং কেউ নেতিবাচক অভিমত দিয়েছেন। তাদের অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে আপনার বক্তব্য কী?

আসিফ নজরুল: আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য কমিশনারদের মতামত গুরুত্ব দিতে পক্ষপাতী না। ওনারা এই সরকারের আমলে বিভিন্নভাবে সুবিধাপ্রাপ্ত লোক। প্রধান নির্বাচন কমিশনার যিনি, উনি ওনার চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর দু’বার বিশেষভাবে নিয়োগ পেয়েছেন এই সরকারের আমলে। এটা একটা সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন মানুষও বোঝে বিশেষ নিয়োগ কারা পায়? সরকারের বিশেষ পছন্দনীয় ব্যক্তিরা। যখন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন চাপ আসে তখন তারা একটু নিরপেক্ষ কথা বলার চেষ্টা করেন। আবার সুযোগমতো ঠিকই সরকারের পক্ষে ভূমিকা রাখেন। আমার ওনাদের প্রতি কোনো ধরনের আস্থা নেই। যদি নির্বাচনকালে নিরপেক্ষ সরকার করা হয় তখন তারা হয়তো নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করবেন। সেটা আমি কনফার্ম না।

রাজনৈতিক দল হিসেবে ইসিতে জামায়াতের নিবন্ধন নেই। আবার তারা নিষিদ্ধও নয়। তাদের সভা-সমাবেশ বা মিছিল করার সাংবিধানিক অধিকার আছে কী?

আসিফ নজরুল: জামায়াতে ইসলামীর সভা-সমাবেশ করার অবশ্যই সাংবিধানিক অধিকার আছে। যে সমস্ত দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত না যেমন গণঅধিকার পরিষদ, মাহমুদুর রহমান মান্নার দল নাগরিক ঐক্য, তারা সবার সভা-সমাবেশ করছে না? জামায়াতের প্রতি যদি এত বিরাগ থাকে, তাহলে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করছে না কেন? সরকার এখানে পরিষ্কারভাবে একটা গেম খেলছে। জামায়াত যদি তাদের সঙ্গে থাকে, অর্থাৎ জামায়াত যদি নেক্সট ইলেকশনে আসে, তাহলে তারা জামায়াতকে রাজনৈতিক কর্মসূচি করতে দিবে। একটা চাপের মধ্যে রেখে দিয়েছে। আপনি যদি বিশ্বাসই করেন জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মসূচি করার অধিকার নেই, তাহলে নিষিদ্ধ করে দেন। যেহেতু নিষিদ্ধ করছেন না- তার মানে এটাই তো মেনে নিচ্ছেন যে, রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াত এক্সিস্ট করছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে এক্সিস্ট করলে সভা-সমাবেশ করতে পারবে না কেন? বাংলাদেশের কোন আইনে আছে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন না থাকলে সভা-সমাবেশ করা যাবে না? জামায়াত সঙ্গে থাকলে আওয়ামী লীগের কোনো সমস্যা নেই- এটা আমরা এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় দেখেছি, ১৯৯৬ সালে দেখেছি। পক্ষে থাকলে সমস্যা নেই বিপক্ষে থাকলে জামায়াতের মতো খারাপ আর কিছু নাই। আওয়ামী লীগের লোকজন আদর্শিক দৃষ্টিকোণ থেকে জামায়াতকে মূল্যায়ন করে না। রাজনৈতিক সুবিধার দিক থেকে মূল্যায়ন করে। আমি বলবো না বিএনপি খুব আদর্শিক দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করে। রাজনৈতিক এডভান্টেজ পাওয়ার জন্য করে। কিন্তু আওয়ামী লীগ যেভাবে বারবার বলার চেষ্টা করে তারা স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি, তাদেরকে এসব করতে দেবো না। তো স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির প্রধান যে ছিল গোলাম আযম তার কাছে আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী বদরুল হায়দার চৌধুরী সাহেব তার পায়ে ধরে সালাম করে দোয়া নিয়েছিলেন কেন? আওয়ামী লীগের সভানেত্রী একপাশে মতিউর রহমান নিজামীকে বসিয়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচির নামে হোক বা যাই হোক, বিএনপি’র বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন কেন? আমার কাছে অদ্ভুত লেগেছে আমাদের এখানে যে সিভিল সোসাইটি আছে তাদের একটা অংশ কি এটা বোঝে না? আমাদের নাগরিক সমাজের একটি অংশ বাস্তব সত্যগুলো এড়িয়ে যায় দেখেই রাজনৈতিক দলগুলো এভাবে বিভ্রান্তি সৃষ্টির সুযোগ পায়।

সার্বিক দিক বিবেচনা করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো সমাধান আছে কী না?

আসিফ নজরুল: অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যদি চাইতে হয় বর্তমান যে প্রশাসনিক ও পুলিশের সেটআপ আছে, অবশ্যই তার পরিবর্তন করতে হবে। প্রশাসনের আচরণ দেখেন, যে ডিসি আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোট চায়, যে পুলিশ আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোট চায়, বিরোধী দলকে পেটায়, পিটিয়ে তাদের বিরুদ্ধেই গায়েবি মামলা দেয়। বিরোধী দলের সমাবেশে হাতুড়িপেটা করে একটা ছেলের হাড্ডি ভেঙে দিয়েছিল। বড় করে পত্রিকায় এসেছিল। তারপর সে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছিল যে, সে-ই হাতুড়িপেটা করেছে। তাকে ধরেছে এখন পর্যন্ত? শিশু-কিশোরদের যে আন্দোলন হয়েছে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন সেখানে যে আওয়ামী লীগের লোকজন পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে শিশু-কিশোরদের পিটিয়েছে, সাংবাদিকদের পিটিয়েছে, তাদেরকে ধরেছে? তাহলে এই পুলিশ ও প্রশাসন দিয়ে কি নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে? যে ফর্মুলা আওয়ামী লীগ আবিষ্কার করেছিল এবং অন্যান্য দল এক্সেপ্ট করে নিয়েছিল সেটা একটা সামাজিক চুক্তির মতো হয়ে গেছে যে, এই দেশে নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। আমি মনে করি আওয়ামী লীগের এটা বোঝা উচিত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে আপনি যদি পরাজিতও হন, বিএনপি’র ক্ষমতা চালানোর যে রেকর্ড তাতে পাঁচ বছর পর আপনিই ক্ষমতায় আসবেন। সুতরাং এটাকে শর্টটার্ম ভিশন হিসেবে না দেখে লংটার্ম ভিশন হিসেবে দেখা উচিত সব দলের। এত যে বদনাম করছি আওয়ামী লীগের নামে, বিএনপিও ধোয়া তুলসী পাতা নয়। তারাও ক্ষমতা থাকাকালীন কারচুপি করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু যখন রাজনৈতিক মাঠে চাপ এসেছে, জনমত তাদের বিপরীতে গেছে, তারা জনগণের কাছে দু’বার মাথানত করেছে।

১৯৯৬ সালে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে চলে গেছে। আবার বিএনপি যদি পনেরো বছর বিনা চ্যালেঞ্জে এরকম ভুয়া নির্বাচন করে ক্ষমতায় থাকতে পারতো, বিএনপিও আওয়ামী লীগের মতো কূটকৌশলের আশ্রয় নিতো। এই কারণেই ভুয়া নির্বাচন একবারও এলাউ করা উচিত না। দুইবার এলাউ করা হয়ে গেছে। দেশের সর্বনাশ হয়ে যাবে এরপর। আর্টিকেল সেভেনে লেখা আছে এই রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের। পাঁচ বছর পর পর একবার আমরা সরকারকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে পারি। সেটাও কেড়ে নেবেন আপনি? অনেকে বলেন বিএনপি’র সময় আপনি একথা বলেন নি কেন। বিএনপি যখন এই কাণ্ড করে ১৯৯৬ সালে তখন আমি পিএইচডি করতে দেশের বাইরে। ২০০৬ সালে যখন করেছে তখন বলিনি? অবশ্যই বলেছি। আমাদের এখানে জনগণের একমাত্র জায়গা হচ্ছে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। এটা আজকে না ভবিষ্যতে যখন যে সরকার ভুয়া নির্বাচন করবে আমাদের সকলের উচিত তার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। এটা নাগরিকের অধিকারের প্রশ্ন। এটা আমার ফান্ডামেন্টাল রাইটসের প্রশ্ন, এটা আমার দেশের অস্তিত্বের প্রশ্ন।সূত্রঃ মানবজমিন

Print Friendly, PDF & Email
 
 
জনতার আওয়াজ/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ