আন্দোলনেই ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
রবিবার, অক্টোবর ২২, ২০২৩ ১২:৫৪ পূর্বাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
রবিবার, অক্টোবর ২২, ২০২৩ ১২:৫৪ পূর্বাহ্ণ

নিউজ ডেস্ক
সরকার পদত্যাগে বাধ্য হবে। নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে জয়ী হবে দেশের মানুষ। সর্বস্তরের জনগণের
ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনেই দেশে ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা হবে। মানবজমিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তার কাছে প্রশ্ন ছিল-
একদফা দাবি আদায়ে বিএনপি মাঠে রয়েছে। সরকারের অনমনীয় অবস্থার বিপরীতে আপনাদের রাজপথে ফয়সালা করার আন্দোলন নিয়ে কতোটা আশাবাদী?
জবাবে আমীর খসরু বলেন, রাজপথে যে আন্দোলন ও লড়াই চলছে, তা কোনো একক দলের নয়। এটা এখন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের যে দাবি, অধিকার আদায়ের যে সংগ্রাম সেই আন্দোলন চলছে। দেশের মানুষের ভোটাধিকার, সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে, তাই মানুষ এখন তার অধিকার আদায়ে সোচ্চার হয়ে রাজপথে নেমেছে। গণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার এই আন্দোলনে বিএনপি এখন নেতৃত্ব দিচ্ছে। আন্দোলনটি বিএনপি’র একার নয়।
তাই এই আন্দোলন তার পরিণতির দিকে যাবেই। সরকার পদত্যাগে বাধ্য হবে। জনগণের আন্দোলন জয়ী হবে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে নিজের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিল, এখন ঠিক একইভাবে আরেকটি সময় সামনে এসেছে। নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার এই লড়াইয়ে মানুষ জয়ী হবে এই আশাবাদ অবশ্যই আছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য ভিসা নীতি চালু করেছে। সম্প্রতি আগামী নির্বাচনকে ঘিরে ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে বলে দেশটির পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ভিসা নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের রাজনীতিতে কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে?
আমির খসরু: গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, সুশাসন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, সুষ্ঠু ভোটের নিশ্চয়তা এসব কোনো অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়। যে কারণে বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহ এবং গণতন্ত্রকামী মানুষও এসব বিষয়ে আমাদের আন্দোলনকে সমর্থন করছে। এই সমর্থন বাংলাদেশের গণমানুষের পক্ষে আসছে। সে জায়গায় আমেরিকানরা এখানে কিছু বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছেন। আমেরিকা ১১০টি দেশকে গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানালেও বাংলাদেশকে জানায়নি। এটা অবশ্যই একটি বার্তা। এরপরে ভিসা নীতির কথা বলা হলো। যাতে উল্লেখ করা হয়েছে- গণতান্ত্রিক নির্বাচন ব্যবস্থায়, ভোটগ্রহণে যে বা যারা বাধা হয়ে দেখা দেবে তাকে এবং তার পরিবারের সদস্যদের ক্ষেত্রেও ভিসা নীতি প্রয়োগ করা হবে। এটা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে; অর্থাৎ ভোটকে বাধাগ্রস্ত করতে যার যেমন ভূমিকা দেখা দেবে সেভাবেই এটি কার্যকর করা হবে।
ভিসা নীতি নিয়ে নানা রকম প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে…
আমীর খসরু: ভিসা নীতি নিয়ে ক্ষমতাসীনদের বিভিন্ন রকম প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে অনেকের আচরণেই এই ভিসা নীতির একটি প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত বলেছেন, গণমাধ্যমের ক্ষেত্রেও ভিসা নীতি প্রয়োগ করা হবে। এটা নিয়ে সরকারি দল নানা কথা বলছেন। কেউ আবার এটাকে ‘প্রেস ফ্রিডম’ পরিপন্থি হিসেবেও উল্লেখ করতে চাইছেন। কিন্তু আসলে বিষয়টি তো তা নয়। গণমাধ্যমের কাজ কী? এর কাজ হচ্ছে- মানুষের আকাক্সক্ষার কথা তুলে ধরা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা এমনকি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা তুলে ধরা। এখন এসব না করে যেসব গণমাধ্যম এই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে, তাদের জন্য ভিসা নীতি প্রয়োগ করা হবে। যে সকল গণমাধ্যমের সহায়তা নিয়ে মানুষের ভোটাধিকার হরণ করা হবে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা হবে, তাদের ক্ষেত্রে এই ভিসা নীতি প্রয়োগ করা হবে। যে সকল গণমাধ্যম গণমানুষের বিপক্ষে গিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিপক্ষে দাঁড়াবে তাদের জন্য ভিসা নীতি হলে তা প্রেস ফ্রিডমের পরিপন্থি নয়। যদি রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিচার বিভাগ কিংবা অন্যান্য বিভাগের প্রতি ভিসা নীতি আসতে পারে তাহলে গণমাধ্যমের ক্ষেত্রেও আসতে পারে।
ইউরোপ এবং আমেরিকায় তৈরি পোশাক রপ্তানি কমে আসছে। অর্থনীতির অন্যান্য সূচকে ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে বিষয়টিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
আমীর খসরু: একটা বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে, বাংলাদেশ বিদেশে ব্যবসার ক্ষেত্রে যে সুবিধাগুলো ভোগ করে আসছে সেগুলো কারা দিচ্ছে? দিচ্ছে বিশ্বের বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশসমূহ। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে এই গণতান্ত্রিক দেশগুলো। যারা গণতন্ত্র, মানবাধিকার, জনগণের মতামতকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। এখন বাংলাদেশে যেভাবে নাগরিকের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে, বিচার ব্যবস্থাকে কলুষিত করা হচ্ছে, মতপ্রকাশকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে- এসব তারা দেখছে। উন্নত গণতন্ত্রের দেশসমূহ তখন বাংলাদেশ থেকে নিজেদের ফিরিয়ে নিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। বাংলাদেশে বাজার তৈরি, বিনিয়োগ এবং সহায়তা- সবদিক থেকেই গণতান্ত্রিক দেশসমূহ এগিয়ে। পুরো বিষয়টি আসলে বাংলাদেশে কতোটা গণতন্ত্র বজায় থাকছে তার উপর নির্ভর করবে। এইভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশসমূহের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ধীরে ধীরে একা হয়ে পড়বে।
অতীতে দেশে আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্র-জনতা-শ্রমিকদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও অংশগ্রহণ দেখা গেছে। বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনে এবারের চিত্রটি কেমন?
আমীর খসরু : এখন যে যুগপৎ আন্দোলন হচ্ছে তাতে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে। বর্তমান সরকার যে ভীতির রাজত্ব কায়েম করেছে তার মধ্যদিয়েও মানুষ ভোটাধিকার রক্ষার আন্দোলনে নিজেকে শামিল রাখছেন। সর্বস্তরের জনসাধারণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনেই দেশে ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা হবে।
জনতার আওয়াজ/আ আ
