কোথায় যেন উগ্রবাদী গোষ্ঠী কাজ করছে: রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
শনিবার, মার্চ ৮, ২০২৫ ৭:০৬ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
শনিবার, মার্চ ৮, ২০২৫ ৭:০৬ অপরাহ্ণ

জনতার আওয়াজ ডেস্ক
সারাদেশে হত্যাকাণ্ড, নিপীড়ন-নির্যাতন ঘটনা তুলে ধরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এই মব কালচার তৈরি হলো কেন? শনিবার (৮ মার্চ) সকালে নয়া পল্টনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের র্যালিপূর্ব সমাবেশে তিনি এই প্রশ্ন তুলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘‘জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার… এখন কেন সমাজের মধ্যে অস্থিরতা থাকবে। এখন একটি কথা বেরিয়েছে আপনারা জানেন, মব কালচার। এই মব কালচার তৈরি হলো কেন? আজকের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তো সকল গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলের সমর্থিত সরকার।”
‘‘এই মব কালচারে সমাজে কত যে নিপীড়ন-নির্যাতন হচ্ছে তার কোন ইয়াত্তা নাই। কত নারী ও কন্যাশিশু নিপীড়িত হচ্ছে এর পরিসংখ্যান যা আসে তা অল্প। মহিলা পরিষদ তার মাসিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, জানুয়ারি মাসেই কন্যা নির্যাতিত হয়েছেন প্রায় ৮৫ জন, নারী নির্যাতিত হয়েছেন ১২০ জন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৬৭ জন, হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ১৪ জন… এত ভয়ংকর পরিস্থিতি। মহিলা পরিষদ তার মাসিক প্রতিবেদনে দিয়েছে কিন্তু এটাই শেষ নয়, সংখ্যা হয়তো আরও বাড়বে। কেন এই পরিস্থিতি চলছে?”
তিনি বলেন, ‘‘একটি জনগণের সমর্থিত সরকার সমাজের মধ্যে শান্তি স্থিতিশীল নিশ্চিত করা প্রধান দায়িত্ব, আর সেখানে যদি নারী ও কন্যারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে… আমার-আপনার কন্যা সন্তান স্কুলে গিয়ে সে নিপীড়িত হয়ে ফিরে আসে এই লজ্জা এই জাতির, এই লজ্জা এই দেশের, এই লজ্জা যারা একাত্তরে শহীদ হয়েছেন, যারা জুলাই বিপ্লবে শহীদ হয়েছেন, যারা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শহীদ হয়েছেন সেই শহীদদেরকে অপমান করা।”
‘‘কেন দুস্কৃতিকারীরা আধিপত্য বজায় রাখবে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। তাহলে সরকার কিসের জন্য?”
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন স্টাফ কিভাবে সাহস পায়’
রিজভী বলেন, ‘‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন স্টাফ রিকসা থামিয়ে এক মেয়েকে বলছে যে, তোমার এই পোষাক পরা ঠিক হয়নি। তাহলে বলুন, তার মরুব্বী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ যদি সেটা অশ্লীলও হয় বলতে পারতো।”
‘‘আমরা শুনছি এখন ওড়না কাণ্ড, পোষাক কাণ্ড। একটা তো মব কালচার, আরেকটা কোথায় যেন উগ্রবাদী গোষ্ঠি কাজ করছে।”
তিনি বলেন, ‘‘পুরুষ এবং মেয়ে আমরা হলাম মানব সম্প্রদায়। যিনি প্রথম ইসলামে দীক্ষিত হয়েছেন, তিনি তো একজন মহিলা বিবি খাদিজা (রা.)। তাহলে নিজেকে কেমন করে চলতে হবে, সন্তানকে কিভাবে মানুষ করতে হবে এই ইন্সটিটিউশন তো হচ্ছে মা। আর মা তো একজন নারী… বাবা সত্য কথা বলিস, মিখ্যা কথা বলিস না, শিক্ষকদেরকে সন্মান করিস, মুরুব্বীদেরকে সন্মান করিস এটা কে শেখায় সন্তানকে? সেটা হলো মা।”
‘‘তাহলে নারীদের কিভাবে চলতে হবে সেটা পুরুষরা যদি প্রতিদিন বাতিয়ে দেয় তাহলে তো আমি মা-বোন-স্ত্রী তার স্বাধীনতায়, আমি তো তার চলাফেরায়, আমি তো তার চিন্তায়, তার লেখাপড়ায়, তার মূল্যবোধে হস্তক্ষেপ করছি। সে(মা-বোন-স্ত্রী) কিভাবে চলবে তাকে সেই স্বাধীনতা দিতে হবে। এই স্বাধীনতায় কোনো গোষ্ঠী ও কোনো দলের কারো হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার নাই। কারণ ধর্মীয় মূল্যবোধ বলুন, সমাজ নৈতিকতা বলুন এটা সবচেয়ে বেশি প্রথিত থাকে, ধারণ করে নারীরা।”
‘নারীদের আটকে রাখলে সমাজ এগুবে না’
রিজভী বলেন, ‘‘মায়ের কাছ থেকে আমরা প্রথম নৈতিকতার বানী শুনি। সুতরাং সেই নারীকে যদি আমরা খোঁয়াড়ের মধ্যে আবদ্ধ রাখি, সেই বন্দিশালায় রাখি আজকের উন্নতির যুগে, আজকের অগ্রগতির যুগে যখন মানব আত্মার বিকাশের পথ সেখানে এই বন্দি করে রাখার কোন মানে হয় না।”
‘‘কোন উগ্র গোষ্ঠী যদি তার প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী চালাতে চায়, তাহলে সমাজ অগ্রগতি লাভ করবে না, সমাজ এগিয়ে যাবে না। কি খেলাধুলা, কি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, কি লেখাপড়ায় প্রত্যেকটি জায়গায় মেধায় মননে পুরুষের চাইতে মেয়েরা কম নয়। তাদেরকে যদি আমরা আটকে রাখি, বন্দি রাখি তাহলে সমাজ কোন দিন এগুবে না।”
জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের সঞ্চালনায় এই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। সমাবেশের পর একটি র্যালি কাকরাইলের নাইটেঙ্গল রেস্তোরার মোড় হয়ে আবার নয়া পল্টনের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
জনতার আওয়াজ/আ আ
