ক্ষমতার রাজনীতি থেকে আর্থিক খাতকে দূরে রাখতে হবে: ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ - জনতার আওয়াজ
  • আজ বিকাল ৩:৩৪, বুধবার, ৩০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২রা জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি
  • jonotarawaz24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

ক্ষমতার রাজনীতি থেকে আর্থিক খাতকে দূরে রাখতে হবে: ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ: সোমবার, জুন ১০, ২০২৪ ৮:২৬ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: সোমবার, জুন ১০, ২০২৪ ৮:২৬ অপরাহ্ণ

 

জনতার আওয়াজ ডেস্ক

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, দেশের অর্থনীতির প্রতিটি খাতই এখন সংকটে। সবচেয়ে অরক্ষিত অবস্থায় আছে। রেমিট্যান্স ইতিবাচক ধারায় নেই, রপ্তানি প্রবৃদ্ধিও আশাব্যঞ্জক নয়। আগে নেতিবাচক দিকগুলো সামাল দেয়া গেলেও এখন সামাল দেয়া কঠিন। অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে ব্যাংক খাত চরম ঝুঁকিতে পড়েছে। বিভিন্ন অনুগত স্বার্থগোষ্ঠীকে ব্যাংক থেকে অন্যায় সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়েছে, যার সঙ্গে ক্ষমতার রাজনীতি সম্পৃক্ত। এ ধরনের পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ে, বিনিয়োগের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সৎ উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হন। তাই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে হলে আর্থিক খাতসহ কিছু সংবেদনশীল খাতকে ক্ষমতার রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে হবে।

সোমবার সম্পাদক পরিষদ ও সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) যৌথভাবে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘অর্থনীতির চালচিত্র ও প্রস্তাবিত বাজেট ২০২৪-২৫’ শীর্ষক এ আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্টজনেরা।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, সাবেক অর্থসচিব ও সাবেক কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। স্বাগত বক্তব্য দেন নোয়াবের সভাপতি এ. কে. আজাদ এমপি।

সমাপনী বক্তব্য দেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ।
দেশের ব্যাংক খাত নিয়ে ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণকারী খাতই এখন অরক্ষিত। এটা বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছে। কোটি কোটি টাকা তছরুপ হচ্ছে, আবার টাকা জমাও হয়, রাতারাতি সে টাকাও উধাও হয়ে যায়।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, প্রশাসনের সর্বস্তরে অনিয়ম, দুর্নীতির কারণে সরকারি ব্যয়ে প্রচুর অপচয় হয়েছে। অর্থনীতিতে আস্থার পরিবেশ তৈরি হয়নি। অবাধে কালো টাকার সঞ্চালন ও পুঁজিপাচার হচ্ছে। দেশ একটি নৈতিকতাহীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে ঢুকে পড়েছে। এবারের বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। তবে স্মার্ট মানুষ যদি নীতিহীন হয় তা আরও ভয়ংকর হতে পারে।

তিনি বলেন, সময়মতো সঠিক পদক্ষেপের অভাবে মূল্যস্ফীতি আমাদের ওপর গেড়ে বসেছে। ঠিক সময়ে বিশ্বাসযোগ্য নীতি নেয়া হয়নি। দীর্ঘদিন থেকে ভুল নীতির কারণে মৌলিক অনেকগুলো দুর্বলতা সামনে এসেছে। সঠিক নীতির অভাবে অর্থপাচার, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি, রিজার্ভের ধারাবাহিক পতন, রাজস্ব আয় হ্রাস, কালো টাকা তৈরি হচ্ছে। মৌলিক নীতিগত পরিবর্তন না আনলে এসব সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, বাজেট ঘাটতি পূরণ করতে আমরা দেশ এবং বিদেশ থেকে উচ্চ সুদে একের পর এক ঋণ নিয়েই চলেছি। ঋণ নির্ভরতা কমাতে সরকারের কোনো পদক্ষেপ আছে নাকি গা ছাড়া বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে তা বিবেচনা করা দরকার। ঋণের উপর নির্ভর করে এভাবে অর্থনীতি চলতে থাকলে একসময় দেউলিয়া না হলেও বাস্তবায়ন অসম্ভব হয়ে পড়বে। এই মুহূর্তে আমাদের অর্থনীতির সবগুলো সূচক খারাপ। যতদিন সূচকগুলো ভালো ছিল মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ছিল রেমিট্যান্স ভালো ছিল রিজার্ভের অবস্থাও ভালো ছিল। তখন অর্থনৈতিক ত্রুটি হজম করার শক্তিও ছিল।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন,সিংহভাগ দুর্নীতিবাজ উচ্চবিত্ত যখন সরকারের কর ঠিক মতো পরিশোধ করে না, তখন কিছু সৎ করদাতার ওপর অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দিলে তারাও আর সৎ থাকে না।

ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, সামগ্রিক অর্থনীতি একটা ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। ভঙ্গুর পরিস্থিতির মধ্যেই জাতীয় বাজেট উত্থাপন হয়েছে সংসদে। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। ব্যাংক খাতের অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম আর খেলাপির পাল্লা ভারী হচ্ছে। দুর্নীতি, অর্থপাচার আর বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে।

তিনি বলেন, আমাদের বাজেটের অবস্থা দেখলে বোঝা যায় রাজস্ব আয়ের সবচেয়ে নিম্নতম হারের দিকে আমরা অবস্থান করছি। এর সঙ্গে রয়েছে আইএমএফের চাপ আর নানা ভর্তুকির বোঝা।

দেশের শীর্ষ এ অর্থনীতিবিদ বলেন, সরকারি ব্যয়ের অপচয় রোধ করতে পারিনি, বাজেটেও তার প্রতিফলন হয়নি। ব্যাপক অপচয় হচ্ছে, এখানে আস্থা তৈরি হয়নি। এক্ষেত্রে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাকে কাজে লাগাতে পারছি না।

রাজস্ব সংগ্রহে ব্যর্থতার কারণে দেশ দেউলিয়া হওয়ার পথে: আহসান মনসুর

গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনষ্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক, অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ. মনসুর মনে করেন, শুধুমাত্র রাজস্ব সংগ্রহে ব্যর্থতার কারণে দেশ দেউলিয়া হওয়ার পথে। উচ্চ আয়ের তো পরের কথা, মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হলে রাজস্ব আয় ব্যাপকভাবে বাড়াতে হবে। রাজস্ব খাত এবং আর্থিক খাত সংস্কার অর্থনীতির জন্য এই মুহুর্তে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অথচ এ দুটি খাতের সংস্কার নিয়ে বাজেটে তেমন কিছু বলা হয়নি। তার মতে, সংস্কারের জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক অঙ্গীকার দরকার।

মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি কমানো বাজেটের বিষয় নয়। সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য গত মাসে সুদের হার বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। বিনিময় হার বাজারভিত্তিক হওয়ার পথে অগ্রসর হয়েছে। বাজেট মুদ্রানীতির জন্য সহায়ক অবস্থান ঘোষণা করেছে, যা ইতিবাচক। সুদের হার আবার বেধে না দিলে এবং টাকা–ডলার বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকলে আগামী ৬ থেকে ৯ মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে বলে তিনি মনে করেন। তবে মূল্যস্ফীতি কমবে মানে এই নয় যে মূল্যস্তর কমবে, মূল্যবৃদ্ধির হার কমবে।

Print Friendly, PDF & Email
 
 
জনতার আওয়াজ/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ