গণতন্ত্রের আপসহীন সংগ্রামী বেগম খালেদা জিয়া
নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
সোমবার, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৫ ১:১৯ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
সোমবার, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৫ ১:১৯ অপরাহ্ণ

ড. মো. আবুল কালাম আজাদ
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এদেশে ‘সমন্বয়ের রাজনীতির’ নতুন ধারা চালু করেছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া সেই ধারাকে এগিয়ে নেন এবং বিএনপি অত্যন্ত জনপ্রিয় দলে পরিণত হয়। খালেদা জিয়ার সময়ে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার ‘ইমার্জিং টাইগার’ খেতাবে ভূষিত হয়। তিনি একাধারে স্বৈরশাসকের আতংক, বিএনপির জন্য একটি প্রতিষ্ঠান এবং দানব হাসিনার বিরুদ্ধে আমরণ লড়াকু গণতন্ত্রী যোদ্ধা।
যখন পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী ২৫ মার্চ নিরস্ত্র-অসহায় ঘুমন্ত মানুষের উপর অতর্কিত ঝাঁপিয়ে পড়ল, মেজর জিয়াউর রহমান তখন চট্টগ্রামের ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সহকারী কমান্ডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্বরত। মেজর জিয়ার কমান্ডিং বস লে. কর্নেল জানজুয়া ২৫ মার্চ রাত আনুমানিক ১১ টায় চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙ্গর করা পাকিস্তানী অস্ত্রের জাহাজ ‘সোয়াত’ থেকে অস্ত্রশস্ত্র খালাসে তদারকি করার জন্য তাঁকে নির্দেশ দেন। মেজর জিয়া দু’জন পাকিস্তানী অফিসারকে সাথে নিয়ে নৌবাহিনীর একটি ট্রাকে রওনা দেন। আগ্রাবাদে এসে ট্রাকটি যখনই ব্যারিকেডে থেমে গেল, তখনই অন্যপ্রান্ত হতে মেজর খালিকুজ্জামান জিয়াউর রহমানের কাছে এসে জানালেন পাকিস্তানীরা ক্যান্টনমেন্টে থাকা বাঙালি সৈনিক ও অফিসারদের উপর হামলা করেছে। সাথে সাথে তিনি ডব ৎবাড়ষঃ বলে তাঁর সাথে থাকা অফিসার দু’জনকে নিরস্ত্র করেন। সেই মুহূর্তে বেগম খালেদা জিয়া চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে তাঁর দুই শিশুপুত্র (আরাফাত রহমান ১ বছর ৫ মাস ও তারেক রহমান ৫ বছর) নিয়ে একা ছিলেন। ওই সময় সেনানিবাসে থাকা বাঙালি সৈনিকেরা বেগম জিয়ার কাছে বললেন, ‘পাকিস্তানী অফিসার আমাদের অস্ত্র সারেন্ডার করার নির্দেশ দিয়েছে, আমাদের কমান্ডার (মেজর জিয়া) তো ক্যান্টনমেন্টে নেই, আমরা এখন কী করব?’ বেগম খালেদা জিয়া তখন তাদের বললেন, ‘তোমাদের কমান্ডার না আসা পর্যন্ত একটা অস্ত্রও সমর্পণ করবে না’। তাই হলো মেজর জিয়া ক্যান্টনমেন্টে ব্যাক করলেন এবং সকল বাঙালি অফিসার ও সৈনিকদের সাথে নিয়ে তাঁর কমান্ডিং অফিসার কর্নেল জানজুয়াকে হত্যা করে পুরো সেনানিবাসের দায়িত্ব নিলেন। বেগম খালেদা জিয়ার সেই দুঃসাহসী ও প্রাজ্ঞ সিদ্ধান্ত সেদিন জিয়াউর রহমানকে পুরো চট্টগ্রাম সেনানিবাস নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করেছিল। অতঃপর জিয়াউর রহমান যখন বিদ্রোহ করে কালুরঘাট থেকে বেরিয়ে গেছেন, তখন তিনি একা দুই পুত্র সন্তানকে দুই হাতে ধরে বোরকা পরে বেরিয়ে পড়েন ঢাকার উদ্দেশ্যে। তারপর পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বেগম খালেদা জিয়াকে শিশুপুত্রসহ গ্রেফতার করে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ মাস ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের কারাগারে আটক রাখে। আটক অবস্থায় বেগম জিয়ার প্রতিটি মুহূর্ত কেটেছে স্বামী হারানোর ভয়ে ও দুই শিশুপুত্রের অনিশ্চিত ভবিষতের উৎকণ্ঠায়। তাঁর এই লড়াই-সংগ্রামকে মূল্যায়ন করলে আমরা বলতেই পারি তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বেগম জিয়ার অন্তর জুড়ে ছিল কেবল সংসার আর কালভদ্রে সামরিক অফিসারদের পার্টিতে অংশ নেয়া। এমনকি ১৯৭৫ এর নভেম্বরের সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আহরণের পরেও তিনি ছিলেন একজন সাধামাটা গৃহিনী। প্রেসিডেন্টের রাষ্ট্রীয় সফর ব্যতীত কখনই তিনি জিয়ার কোন প্রোগ্রামে উপস্থিত হওয়ায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন না। বেগম জিয়ার ধ্যান-জ্ঞান ছিল কেবলই পরিবার। তার মাত্র ৩৬ বছর বয়সে তিনি বিধবা হন। ১৯৮১ সালের ২৯ মে সকাল ১১টায় প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম সেনানিবাস হতে ৭ কিলোমিটার দূরে শহরের কেন্দ্রস্থল কাজীর দেউরিতে অবস্থিত সার্কিট হাউসে উঠেন। প্রেসিডেন্ট জিয়ার সঙ্গী হিসেবে দলের মহাসচিব বদরুদ্দোজা চৌধুরী, উপ-প্রধানমন্ত্রী জামালউদ্দীন আহমদ এবং মন্ত্রী ড. আমেনা রহমানসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ছিলেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপির দুটি উপদলে বিভক্ত স্থানীয় নেতাদের বিরোধ মেটানোর জন্য মাত্র ৪৮ ঘন্টার নোটিশে তিনি চট্টগ্রাম যান। দুপুরের খাবারের পর বিএনপির নির্বাহী কমিটির সভা শুরু হয় এবং পুনরায় রাত ৮টার খাবারের পর সভা শুরু হয় এবং বৈঠক শেষে দুতলায় নিজ কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েনি। চট্টগ্রাম সেনানিবাস থেকে ২৯ ও ৩০ মে তারিখের মধ্যবর্তী রাত সাড়ে ৩টায় তিনটি সামরিক বাহনে ১৬ জন সেনা কর্মকর্তা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সার্কিট হাউসের দিকে রওনা দেন। মাত্র ৯ মিনিটের ঐ কিলিং মিশনে হামলাকারী সেনাসদস্যরা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানসহ নিরাপত্তাসদস্যের শাহাদাত বরণ করেন। জীবনদশায় জিয়াউর রহমান পবিারের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ঢাকায় কোন বাড়ি বা জায়গা করেননি। এমনকি মৃত্যুর পর তাঁর ব্যাংকে জমা ছিল মাত্র ১৫০ টাকা, যা ঐ সময়ে তৃতীয় বিশে^র কোন রাষ্ট্রনায়কের ক্ষেত্রে একেবারেই বিরল। এরকম কপর্দক হীন অবস্থায় বেগম খালেদা জিয়া পড়ে গেলেন দু’টানায়− দলের হাল ধরবেন নাকি গুটিয়ে ফেলবেন নিজেকে? তিনি দেখলেন স্পষ্টত দলে ভিন্ন ভিন্ন মেরুকরণ গড়ে উঠছে। সামরিক শাসক এরশাদ দলের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট সাত্তার সাহেবকে নিয়ে অন্য ফরমেটে দল গোছাতে চাচ্ছেন। এমনকি দলের ভিতরে ঘাপটি মেরে থাকা মীরজাফররা সক্রিয়। দলের বিপর্যয় মুহূর্তে আবারও তাঁর নেয়া সাহসী ও প্রাজ্ঞ সিদ্ধান্ত দলকে রক্ষা করে। তিনি ১৯৮২ সালের ১৩ জানুয়ারি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন এবং মাত্র ২.৫ বছরের মধ্যে দলের চেয়ারপার্সন এবং সেই সময়ের আওয়ামী লীগ ব্যতীত সকল রাজনৈতিক দলের কাছে নিজেকে একজন বিশ^স্থ ও দক্ষ সংগঠক হিসেবে পরিচিত হন।
ইতিহাস সাক্ষী, বিএনপি কখনো গণতন্ত্র হত্যা করেনি, গণতন্ত্র হত্যাকারী কোনো শক্তিকে স্বাগত বা বৈধতা দেয়নি। বাকশালের কারাগার থেকে গণতন্ত্রকে মুক্তি দিয়েছেন কে? শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। জিয়ার জন্ম না হলে দেশের মানুষ জানতই না ভোট কী জিনিস? সেই গণতন্ত্র আবার চলে গেল স্বৈরাচার এরশাদের কারাগারে। সেই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লড়াইয়ে জোটভুক্ত হয় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ এবং স্বৈরাচার এরশাদের পাতানো নির্বাচনে কেউই অংশ নেবে না এই মর্মে সমঝোতা হয় জোট দুটির ভিতর। সমঝোতায় এমন কথা ছিল যে ‘কেউ যদি নির্বাচনে অংশ নেয়, সে জাতীয় বেইমান হিসেবে গণ্য হবে।’ অথচ, ১৯৮৬ সালে যৌথ জোটের সিদ্ধান্ত ভায়োলেট করে শেখ হাসিনা এরশাদের সাথে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। ঐ নির্বাচনে অংশ নেয়ায় চতুর এরশাদ প্রাণ পান এবং তাঁর অবৈধ ক্ষমতা প্রলম্বিত করার সুযোগও পান। এরশাদের নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় ১৯৮৭ সালে চট্টগ্রামের লালদীঘীর ময়দান থেকে বিএনপির বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল নোমান বেগম খালেদা জিয়াকে ‘আপসহীন দেশনেত্রী’ ঘোষণা দেন। এরপর থেকে বেগম জিয়া ‘এরশাদ হটাও’ এক দফার আন্দোলন শুরু করেন। একটানা নিরলস ও আপসহীন সংগ্রামের পর ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর দেশ স্বৈরাচার মুক্ত হয় এবং তাঁর হাত ধরেই গণতন্ত্র ফিরে আসে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের ৩ মে এবং ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন কিন্তু ১টি দিনের জন্যও কারাগার বরণ করতে হয়নি। স্বৈরশাসক হটিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার ইতিহাস কেবল বিএনপিরই আছে, তেমনি তাদের অভিজ্ঞতাও রয়েছে।
৩০ মে ২০০২, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ২১তম শাহাদাত বার্ষিকীর বাণীতে জিয়াউর রহমানকে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ হিসেবে উল্লেখ না করায় এবং তাঁর কবর জিয়ারত করতে না যাওয়ায়, বিএনপির সকল সংসদ সদস্য সংক্ষুদ্ধ হয় প্রেসিডেন্ট ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর উপর। ফলে ২১ জুন ২০০২ সালে বি. চৌধুরী প্রেসিডেন্টের পদ থেকে ইস্তফা দেন এবং তিনি দলের একটি অংশকে নিয়ে ৮ মে ২০০৪ এ ‘বিকল্পধারা বাংলাদেশ’ নামে নতুন দল গঠন করেন। ২০০৬ সালের ২৭ অক্টোবর কর্নেল (অব.) অলি আহমদ দল ছেড়ে ‘লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি’ তৈরি করেন। পরবর্তীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা কে হবেন এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে ১/১১ সরকার আসে। সেনা-সমর্থিত এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিএনপির উপর বেশি খড়্গহস্ত ছিল। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে তৎকালীন সরকার ২০০৭ সালের ৭ মার্চ প্রথমেই তারেক রহমান ও তাঁর ছোট ভাই আরাফাত রহমানকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই বাসা থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এরপর জাতি দেখেছে রিমান্ডের নামে তাদের উপর নির্দয় নির্যাতন করা হয়। অতঃপর সে সরকার বিএনপিকে ভাঙার নীল নকশার অংশ হিসেবে দলে সংস্কারপন্থী গ্রুপ তৈরি করে মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়াকে দিয়ে ২৫ জুন ২০০৭ ‘পনের দফা’ সংস্কার কর্মসূচি উপস্থাপন করেন। ৩ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া মান্নান ভূঁইয়াকে দল থেকে বহিষ্কার করেন এবং দলের ঐক্য ধরে রাখার জন্য খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দেন। ওইদিনই খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। তারেক রহমানকে নির্যাতন করে তাঁর মেরুদ-ের হাড় ভেঙে দেয় এবং আরাফাত রহমান কোকোকে প্রায় মেরেই ফেলা হয়। এরকম অবস্থায় দলের নেতাকে দিয়ে জেলে খালেদা জিয়ার কাছে প্রস্তাব পাঠানো ‘মাতৃত্ব না নেতৃত্ব’ কোনটি চান? সেদিন খালেদা জিয়া বলেছিলেন ‘আমি আমার দুই ছেলেকে আল্লাহর জিম্মায় রেখে নেতৃত্বকেই বেছে নিলাম’। সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তই আজ বিএনপিকে আন-পেরালাল সংগঠনে রূপান্তর করেছে।
১৯৯১ থেকে ২০০৬ যত চড়াই-উৎরাই থাকুক, বাংলাদেশ দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ এ ফখরুদ্দীন ও মইনুদ্দীন জুটির সাজানো ছকে এবং ভারতের নীল নকশায় অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্টতা পেয়ে ৬ জানুয়ারি ২০০৯ এ ক্ষমতায় বসে। ক্ষমতায় এসেই সরকার মোটাদাগে বিডিআর হত্যাকা- (২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯), শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারী (২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১১) এবং শাপলা-চত্বর ম্যাসাকার ঘটায়। এরপর হাসিনা আপসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হাতে গড়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামো ব্যবস্থাপনার মূলমন্ত্র ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা’ বাতিল (১০ মে ২০১১) করে এবং জনগণের ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’ ক্ষমতা চিরতরে বন্ধ করে এক দলের মার্কা-প্রতীকে ভোট দেয়ার ব্যবস্থার পরিবেশ তৈরি করে। এর প্রতিবাদে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশ, জাতি ও গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে সরকার দেশনেত্রীকে গুলশান কার্যালয়ে দীর্ঘ দিন অবরুদ্ধ করে রাখে। গৃহবন্দী অবস্থায় পানির লাইন ও বিদ্যুৎ এবং বাইরে থেকে খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। ২৯ ডিসেম্বর বিএনপির আহবানে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ প্রোগ্রামে ঢাকা চলো সমাবেশের ডাক দিলে দেশনেত্রীকে প্রায় ৭ দিন বাসার সামনে পুলিশ ব্যারিকেট, রাস্তার দু’ধারে ৭/৮টি বালু ও ইট ভর্তি ট্রাক এবং পুলিশের ভ্যান দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে। দেশ দেখল প্রার্থীবিহীন, ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচন যেখানে ১৫৩টি আসনে কোনো নির্বাচনই হয়নি। এরপর আওয়ামী স্বৈরাচার ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে করল এবং ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদ- দিয়ে কারাগারে প্রেরণ করে। তিনি কারাগারে থেকেই বিভিন্ন মামলার হাজিরা দেন এবং করোনার পুরো সময় বাসভবনে গৃহবন্দী জীবন কাটান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগের রোগী। হাসিনা সরকারের মেডিকেল বোর্ড বারবার খালেদা জিয়ার চিকিৎসা এ দেশে সম্ভব নয় জানালেও সরকার তাকে বিদেশে চিকিৎসা করাতে দেয়নি। এর মধ্যে খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দানের জন্য পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে ২৩ বার দরখাস্ত করা হলেও তা বাতিল করে দেয় সরকার, যাতে দেশনেত্রী বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মারা যায়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও চেয়ারপার্সনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, বেগম খালেদা জিয়া গত ৪ বছরের মধ্যে প্রায় ৪৭৯ দিন ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অবশেষে ‘৩৬ জুলাই’ এর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে মুক্ত হন বেগম জিয়া এবং দেশ দানবীয় সরকারের হাত থেকে রক্ষা পায়।
লেখক: গবেষক ও অধ্যাপক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।
জনতার আওয়াজ/আ আ
