গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণ মূল চ্যালেঞ্জ : ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন
নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
রবিবার, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪ ৪:২১ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
রবিবার, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪ ৪:২২ অপরাহ্ণ
জনতার আওয়াজ ডেস্ক
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পরে একটি মসৃণ ও বিশ্বাসযোগ্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণ নিশ্চিত করতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। অর্থবহ গণতান্ত্রিক উত্তরণ নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, সাংবিধানিক, অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের প্রতি জোর দিয়েছেন তিনি। বিএনপির এই বর্ষীয়ান নেতা মনে করেন, কার্যকর গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য দেশে নতুন একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্তের প্রয়োজন; যেখানে বর্তমানে দেশের রাজনীতিতে প্রধান অংশীদারদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা থাকবে। গতকাল শুক্রবার ভোরের কাগজকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে সংস্কার, ভারতের সঙ্গে আগামীর সম্পর্ক কেমন হবে? জাতীয় সরকার কবে এবং কাদের নিয়ে, সংবিধান পরিবর্তন, ইসলামিক দলগুলোর জোটগঠনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে কথা বলেন বিএনপির এই শীর্ষ নীতিনির্ধারক। কথোপকথনের বিস্তারিত প্রশ্নোত্তর আকারে তুলে ধরা হলো। গুলশানের বাসায় বসে ড. মোশাররফের সাক্ষাৎকারটি নেন ভোরের কাগজের রিপোর্টার রুমানা জামান।
অনেকদিন তো অসুস্থ ছিলেন, এখন শরীর কেমন?
মোশাররফ : বেশ ভালো আছি, আলহামদুল্লিলাহ। এখন বাইরে চলাফেরা করি; দলীয় প্রোগ্রামেও নিয়মিত যাই।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিএনপির ভূমিকা কেমন ছিল?
মোশাররফ : এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে একটু পেছনের দিকেই যেতে হবে। আমরা ১৬ বছর দেশে গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করছি। বিগত সরকারের স্বৈরাচারী আচরণের বিরুদ্ধে আমরা রাজপথে সরব ছিলাম। আমাদের সঙ্গে অন্য আরো দলও রাজপথে ছিল। এ আন্দোলনেরই চূড়ান্ত পেক্ষাপট আসে এ বছরের জুলাই এবং আগস্টে। আর জুলাই-আগস্ট এসেছে গত ১৬ বছরের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায়। ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা যেদিন ‘আমরা কারা রাজাকার’ বলে স্লোগান দিয়েছিল, সেদিনই আমি বুঝেছিলাম শেখ হাসিনা বিশাল ভুল করেছেন এবং এর খেসারত তাকে দিতে হবে। তারপর যে আন্দোলন হলো সেখানে ছাত্র-জনতা সবাই সমানভাবে ত্যাগ স্বীকার করে দেশে নতুন স্বাধীনতা এনেছে। বিএনপির ৪শর বেশি নেতাকর্মী নিহত হয়েছে। অসংখ্য আহত হয়েছে। লক্ষণীয় হলো এই জুলাই-আগস্টে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য থেকে শুরু করে শত শত তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে। এ অর্থ হচ্ছে স্বৈরাচারী সরকার প্রমাণ করেছে এই আন্দোলনের পেছনে একটি বড় দল বিএনপিসহ অন্যান্য দল রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার দেশ চালাচ্ছে, কেমন চলছে দেশ?
মোশাররফ : দেশ ভালোই চলছে। খারাপ তো কিছুই দেখছি না। তবে এর মধ্যে দেশে কিছু ব্রিবতকর ঘটনা ঘটেছে। এজন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারসহ সবাইকে অত্যন্ত ধৈর্য ধরে, সতর্কতার সঙ্গে পা বাড়াতে হবে। তাছাড়া এই সরকার অবশ্যই কাজ করার জন্য এসেছে। সেই কাজ করার সুযোগ তাদের দিতে হবে। তবে সরকারের কাছে সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা হচ্ছে তারা যেন দ্রুত দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করার পরিবেশ তৈরি করে। এটা নির্বাচন ছাড়া সম্ভব নয়। নির্বাচন হতেই হবে। নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও অবাধ হয়, সবাই যেন ভোট দিতে পারে- সেটাই সবাই চায়।
রাষ্ট্র সংস্কারের পর নির্বাচনের কথা বলছে অন্তর্বর্তী সরকার। নির্বাচনের আগে আপনারা সুনির্দিষ্ট কোন কোন সেক্টরে সংস্কার চান?
মোশাররফ : অন্তর্বর্তী সরকার যে সংস্কারের কথা বলেছে, আমরা মনে করি তারা সঠিকই বলেছে। কারণ, ১৬ বছরে রাষ্ট্রের গুরত্বপূর্ণ সেক্টরগুলোকে দলীয়করণ করে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। এগুলো সংস্কার না করলে দেশকে এগিয়ে নেয়া যাবে না। এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার হচ্ছে
ভোটের অধিকার। তাই নির্বাচন কমিশনের সংস্কার সবার আগে জরুরি। কারণ, নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে সংস্কার করলেই জনগণ তাদের ইচ্ছামতো ভোট দিতে পারবে। একইসঙ্গে অর্থনীতি, শিক্ষা, প্রশাসন সেক্টরে এখনি সংস্কার করতে বিলম্ব হলে দেশের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। সেটা আমরা কখনোই চাই না।
বর্তমান সরকার যদি স্বচ্ছতার সঙ্গে সংস্কার বাস্তবায়ন করতে চায়; তবে তা হতে হবে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে। কারণ, সব জায়গায় এখনো পতিত স্বৈরাচারের দোসররা বসে আছে। ইউনিয়ন কাউন্সিলে আজকে কারা? তারা কিন্তু ভোটে নির্বাচিত নয়। এরা আওয়ামী লীগের দোসর; একসময় জোর করে পদ-পদবি ছিনিয়ে নিয়েছিল। রাষ্ট্রের সব সেক্টরে একই চিত্র। এ কারণেই সংস্কারকে স্বচ্ছভাবে বাস্তবায়ন করতে যে সংগঠন প্রয়োজন; সেখানে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সংস্কার করতে হবে।
দেশে কতদিনের মধ্যে নির্বাচন হলে সেটা দেশের মানুষের জন্য স্বস্তির হবে?
মোশাররফ : আমরা আসলে প্রথম থেকেই এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে দিন-তারিখ ঠিক করে দেইনি। আমরা বারবারই বলেছি, অতি দ্রুত এই নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রয়োজন। সরকারের পক্ষ থেকেও নির্বাচনের সময় নিয়ে এখনো কোনো বক্তব্য দেয়া হয়নি, এটা হতাশার। তবে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস দিন যত যাবে, আমাদের যে দাবি ‘অতি দ্রুত’ নির্বাচন প্রয়োজন; এটা- এই অন্তর্বর্তী সরকারও অনুভব করবে। ইতোমধ্যে এটা তারা উপলব্ধি করতে শুরু করেছে বলে মনে করি। কেন না, এই সরকার জনগণের নির্বাচিত সরকার নয়। এটি গণঅভ্যুত্থানের সরকার। এই সরকার জানে সব সংস্কার তাদের পক্ষে করা সম্ভব হবে না। তবে অতি প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো করতে আমার মনে হয় না, এজন্য খুব লম্বা সময় লাগতে পারে। যদি তাদের সদিচ্ছা থাকে, তারা অবশ্যই অল্প সময়ে তা পারবে। তবে এখানেই আটকে থাকা যাবে না। সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। যে অংশ বাকি থাকবে, নির্বাচনের পর যারা জনগণের ভোটে সরকার গঠন করবে- অবশিষ্ট সংস্কার তারাই করবে। সেটার সুযোগ নিশ্চয়ই সরকার এই দেবে এবং দিতে বাধ্য থাকবে।
আলোচনায় আছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্ররা নতুন রাজনৈতিক ফর্মে সামনে আসছে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
মোশাররফ : স্বাধীণতার ঘোষক প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি। আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। অতীতে গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াই সংগ্রামের বহু প্রমাণ রয়েছে বিএনপির। এ কারণে যেখানে গণতন্ত্র আছে, সেখানে যে কেউই রাজনীতি করতে পারে; রাজনৈতিক দল গঠন করতেই পারে। ছাত্ররা যদি আসতে চায় তো ‘ স্বাগত’। তবে জনগণ কোন রাজনৈতিক দলকে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব দেবে; সেটা তাদের বিবেচনা।
বিএনপি-আওয়ামী লীগ কাউকেই চাই না। নতুনদের এমন মনোভাব স্পষ্ট হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আপনাদের বার্তা কী?
মোশাররফ : এ বিষয়ে স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই- এটা নিছকই ‘অপপ্রচার’। যদি বিএনপি আওয়ামী লীগের মতো হতো; তাহলে গত ১৬ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকত না। আওয়ামী লীগ গায়ের জোরে ক্ষমতায় থেকে বিএনপিকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা নিয়ে সব কাজ করেছে। হত্যা, মামলা, গুম, আয়নাঘর সবকিছুই। কতবার জেল খেটেছি, কখনো দল ছাড়িনি। দাবি করতে পারি, আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী জেল খেটেছে। দেড় লাখের বেশি মামলা, ১৪ লাখের বেশি আসামি। এমন কেউ দেখাতে পারবে না, তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য নেতাকর্মী বিএনপি ছেড়ে স্বার্থ আদায়ের জন্য আওয়ামী লীগ করতে গেছে। তাই বলতে চাই, জনগণ যদি আমাদের পেছনে না থাকত আমরা টিকে থাকতে পারতাম না। এমনকি ক্ষমতায় থাকার সময়ও যদি আমরা আওয়ামী লীগের মতো স্বৈরাচারী আচরণ করতাম, এত বছর জনগণ আমাদের সঙ্গে থাকত না। আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের সঙ্গে বিএনপির ১৬ বছরের তুলনা করা হাস্যকর।
একসময়ের মিত্র জামায়াতে ইসলামের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক এখন কেমন? আগামীতে জোটবদ্ধ নির্বাচন করার চিন্তা আছে কিনা?
মোশাররফ : সম্পর্ক তো খারাপ নয়। জামায়াত একটি রাজনৈতিক দল। তারা আমাদের সঙ্গে একই দাবিতে রাজপথে ছিল। কোনো একসময় তারা নিজের সুবিধার্থে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগসাজশ হয়ে আন্দোলন করেছে, এমনকি নির্বাচনও করেছে। আবার তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে আমাদের সঙ্গেও সহযোগিতা করেছে। এই আন্দেলনেও আমরা যেমন ছাত্র-জনতাকে সহযোগিতা করেছি, তারাও করেছে। আগামীতে পরিস্থিতি বলে দেবে কীভাবে আমরা তাদের সঙ্গে ‘ডিল’ করব।
তাছাড়া আমরা সুযোগ পেলে বাংলাদেশকে নিয়ে কীভাবে চিন্তা করব সে বিষয়ে ৩১ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছি। ওই সংস্কারকাজে যারা সহযোগিতা করবে, যারা কাজ করতে স্বস্তি অনুভব করবে তারাই আমাদের সঙ্গে থাকতে পারে। কাউকে তো আমরা নিষেধ করতে পারব না যে, সংস্কারে আপনি কাজ করতে পারবেন না। তখন যদি জামায়াত চায় সঙ্গে থাকবে।
ইসলামি দলগুলো নির্বাচনের আগে ঐক্যজোট গঠন করবে এমন আলোচনা রয়েছে। বিএনপির জন্য এটা চ্যালেঞ্জ মনে করছে কিনা?
মোশাররফ : যে কেউ, যে কোনো ফর্মে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। কোনো জোটকে বিএনপির চ্যালেঞ্জ মনে করার প্রশ্নই আসে না। নির্বাচন আসুক, জনগণ ঠিক করবে কাকে তারা সংসদে পাঠাবে।
বিএনপির জাতীয় সরকার কবে এবং কাদের নিয়ে গঠিতে হতে পারে?
মোশাররফ : এটা সংস্কারের ঘোষণাপত্রেও উল্লেখ রয়েছে- জনগণ যদি বিএনপিকে নির্বাচিত করে তখন দেশ সংস্কারকাজে সবার সহযোগিতা প্রযোজন হবে। এ সহযোগিতা যারাই করবে তাদের আমরা ‘ওয়েলকাম’ করব; তখন বোঝা যাবে কারা সঙ্গে থাকেন। এক্ষেত্রে নির্বাচনের পর যদি আমরা সরকার গঠন করার সুযোগ পাই; তবে বিগত সরকারের বিরুদ্ধে যারা দীর্ঘ ১৬ বছর আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে তাদের নিয়ে আমরা জাতীয় সরকার গঠন করব।
ভারতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক উন্নতি হয়েছে?
মোশাররফ : আমি বলব অবশ্যই সম্পর্ক আগের চেয়ে অনেক বেশি ভালো হয়েছে। তারা এখন আমাদের সঙ্গে কথা বলছে। আমাদের দেশ নিয়ে, দেশের অবস্থা নিয়ে, অর্থনীতি নিয়ে, কীভাবে আরো উন্নয়ন করা যায়, সম্পর্ক আরো কী করে ঘনিষ্ট করা যায়- এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কথা বলেছি কয়েকবার। বিএনপি ও ভারতের সম্পর্ক নিয়ে কিছু ভুল বোঝাবুঝি ছিল; আগামীতে সেটা আরো কেটে যাবে।
সংবিধান সংশোধনের আলোচনা প্রবল হচ্ছে, এই মুহূর্তে সেটা সম্ভব কিনা?
মোশাররফ : আমি সংবিধান বিশেষজ্ঞ নই। তবে বিগত স্বৈরাচারী সরকার সংবিধানের অমূল পরিবর্তন করে গেছে। সংবিধানের প্রায় এক তৃতীয়াংশ লিখে রেখে গেছে; এগুলো পরিবর্তন করা যাবে না। এটাই তো সংবিধান পরিপন্থি কাজ। কারণ, সংবিধান পরিবর্তন ও সংশোধনের নিয়ম-কানুন আছে। পার্লামেন্টর অভিভাবক হলো সুপ্রিম কোর্ট। একমাত্র সুপ্রিম কোর্টে সংবিধান পরিবর্তন ও সংশোধন করতে পারে। এখন যে প্রশ্নটা আসছে তার কারণ হলো সংবিধানের ভেতরে এমন কিছু বিষয় রয়েছে যার পুরোটাই আওয়ামী লীগের মেনুফেস্টোর। এটা হতে পারে না। আবার বলা হচ্ছে, সেই মেনুফেস্টোর পরিবর্তন বা সংশোধন করা যাবে না। পৃথিবীর কোনো দেশের সংবিধানে এমন কোনো কথা নেই। এখন বর্তমান সরকারের ওপর এটা নির্ভর করবে; তারা সুপ্রিম কোর্ট দিয়ে এটা নতুন করে লিখতে চায়; নাকি সংশোধন করতে চায়। সংশোধন করতে চাইলেও সুপ্রিম কোর্ট সংসদের যেহেতু অভিভাবক তারা যেভাবে চাইবে সেভাবে করতে পারে। তবে পৃথিবীর সব গণতান্ত্রিক দেশে সংবিধানের পরিবর্তন সংসদে হয়; সেটাই স্বাভাবিক।
বিএনপি বারবার ষড়যন্ত্রের কথা বলছে। এটা কিসের ইঙ্গিত?
মোশাররফ : অবশ্যই ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এখনো অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। দেশ-বিদেশে ষড়যন্ত্রের অভাব নেই। ষড়যন্ত্রকারীরা সুযোগ পেলে স্বাধীনতাকামী মানুষের ওপর আঘাত করবে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যকে আরো সুদৃঢ় করা জরুরি।
এই মুহূর্তে অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে চ্যালেঞ্জ কী?
মোশাররফ : একটি মসৃণ ও বিশ্বাসযোগ্য গণতান্ত্রিক উত্তরণ নিশ্চিত করতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে এমন সব সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়িত করা, যা গণতান্ত্রিক নীতিকে সমুন্নত রাখে এবং আইনের শাসনের প্রতি জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করে, রাজনৈতিক সংলাপকে উৎসাহিত করে এবং স্বচ্ছ নির্বাচনী প্রক্রিয়া স্থাপন করে। সন্দেহ নেই, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শক্তিধর দেশগুলোর পরিবর্তিত ও অনিশ্চিত সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে এসব চ্যালেঞ্জ আরো বাড়তে পারে।
কার্যকরী গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য দেশে নতুন একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্তের প্রয়োজন, যেখানে বর্তমানে দেশের রাজনীতিতে প্রধান অংশীদারদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা থাকবে। এই অংশীদাররা হলো আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা, রাজনৈতিক দলসমূহ, সামরিক বাহিনী, আমলাতন্ত্র ও ব্যক্তি খাত। তবে এই অংশীদারদের মধ্যে বিভিন্ন এজেন্ডা রয়েছে এবং তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের মধ্যে সমঝোতার অভাব রয়েছে। এছাড়া আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শক্তিগুলো এই এজেন্ডাগুলোতে তাদের প্রভাব রাখতে চাইবে।
অর্থবহ গণতান্ত্রিক উত্তরণ নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, সাংবিধানিক, অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের পক্ষে সবাই। এই সংস্কারগুলোর প্রতি নাগরিক সমাজের জোরালো সমর্থন রয়েছে। যদিও এই প্রেক্ষাপটে সামরিক বাহিনী, আমলাতন্ত্র ও বেসরকারি খাতের ভূমিকা এবং অবস্থান অস্পষ্ট রয়ে গেছে। এই সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে স্পষ্ট ঐকমত্য না থাকলে এবং সংস্কার ছাড়াই নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে অগণতান্ত্রিক প্রথাগুলোর পুনঃপ্রবর্তনের যথেষ্ট ঝুঁকি রয়েছে। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ফলাফল মূলত এই অংশীদারদের আপেক্ষিক শক্তি এবং দর-কষাকষির ওপর নির্ভর করবে। সংলাপ সহজতর করতে এবং সংস্কার এজেন্ডায় একটি রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরিতে সহায়তা করার জন্য নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, যা একটি আরো স্থিতিশীল এবং গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক বন্দোবস্তের প্রতি অবদান রাখবে। যদি তা না হয়, তবে বাংলাদেশ দীর্ঘ সময় ধরে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মুখোমুখি হতে পারে।
এই মুহূর্তে বিএনপি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত কিনা?
মোশাররফ : অবশ্যই প্রস্তুত। তাছাড়া বিএনপির মতো বড় রাজনৈতিক দলের আলাদা করে নির্বাচনের প্রস্তুতির প্রয়োজন পড়ে না।
আপনাকে ধন্যবাদ
মোশাররফ : আপনাকেও ধন্যবাদ।
সূত্রঃ ভোরের কাগজ