জনগনের নেত্রী তাই জনগণ কাঁদে খালেদা জিয়ার জন্য – জনতার আওয়াজ
  • আজ ভোর ৫:০৮, শুক্রবার, ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • jonotarawaz24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

জনগনের নেত্রী তাই জনগণ কাঁদে খালেদা জিয়ার জন্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, জনতার আওয়াজ ডটকম
প্রকাশের তারিখ: শনিবার, মার্চ ২৫, ২০২৩ ৭:৫৯ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: শনিবার, মার্চ ২৫, ২০২৩ ৭:৫৯ অপরাহ্ণ

 

আব্দুল আজিজ
খালেদা জিয়া পেশাগতভাবে কিংবা পারিবারিকভাবে রাজনীতিতে আসেননি। তিনি ছিলেন নিতান্তই একজন গৃহবধূ। স্বামী হত্যার পর দেশের টানে দলের প্রয়োজনে অবস্থার চাপে তিনি রাজনীতিতে এসেছেন। রাজনীতিতে যোগদান করেই তিনি রাজপথ দখলে নিয়ে নিয়েছেন। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে তিনি সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছে গেছেন। হুমকি-ধামকি, লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে তিনি নিজেকে আপোসহীন নেত্রী হিসেবে প্রমাণ করেছেন। স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে তিন জোটের আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলে আপোসহীন নেত্রীতে পরিণত হন খালেদা জিয়া। দেশবাসী তার নাম দিয়েছেন আপোষহীন দেশ নেত্রী।

’৯১ সালে গণতান্ত্রিকভাবে প্রথম নির্বাচনেই দল যেমন সংখ্যা গরিষ্ঠতা পায়, তেমনি তিনি নিজে ৫টি আসনে জয়লাভ করেন। ৫টি আসনে জয়লাভ করে তিনি প্রমাণ করেছেন তিনি সত্যিকার অর্থেই দেশনেত্রী। ঢাকার বাইরে ৪টি এবং ঢাকায় ১টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সব কয়টি আসনে তিনি জয়লাভ করেছেন। পক্ষান্তরে রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম নিয়ে শেখ মুজিবের কন্যা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় দুই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দুই অখ্যাত লোকের কাছে হেরে যান। তারপর শেখ হাসিনা আর কোনোদিন ঢাকায় নির্বাচন করেননি। আওয়ামী লীগের মতো একটা পুরানো বড় দলের সভানেত্রী হয়ে রাজধানীতে তার একটা নির্বাচনী আসন নেই এটা মানায় না। খালেদা জিয়া বাংলাদেশের যেখানেই দাঁড়ান সেখানেই তিনি পাস করেন। অতএব, তার জনপ্রিয়তা হ্রাস করতে হবে। আর সেজন্যই তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা। যেন দুর্নীতিবাজ খালেদা জিয়াকে মানুষ ভোট না দেয়। ইতোমধ্যে ‘খালেদা জিয়াকে ভোট দিবেন না’ শিরোনামে পোস্টার দিয়ে ঢাকা শহর ছেয়ে ফেলা হয়েছে।খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা আগের চেয়ে অনেক গুন্ বেড়ে গেছে তাই তিনি দেশ নেত্রী থেকে এখন “মা”।

এই অবস্থায়ও বেগম খালেদা জিয়া লক্ষ কোটি মানুষের হৃদয়ে পরিবেষ্টিত হয়ে কোর্টে উপস্থিত হন। মামলার রায় ঘোষণার পর শুধু আদালত চত্বরে নয় সারাদেশের মানুষ স্তম্ভিত হয়ে যায়। ঢাকা মহানগরে যেন এক নিস্তব্ধ নীরবতা বিরাজ করছিল। অনেককে ডুকরে ডুকরে কাঁদতে দেখা যায় ও হাজারো মানুষকে নফল রোজা রাখতে শোনা যায় । খালেদা জিয়ার সাজার খবর সেদিন শুধু ‘টক অব দি কান্ট্রি’ নয় টক অফ দি ওয়ার্ল্ড’ ছিল। বিবিসি, ভয়েস অফ আমেরিকা আল জাজিরাসহ বিশ্বের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার একটি মাত্র শীর্ষ সংবাদ ছিল, তা ছিল খালেদা জিয়ার সাজা। যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ সকলেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা হাহুতাশ ভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। দলের সকল পর্যায়ে দ্বন্দ্ব কোন্দল ভুলে এক রকম ইস্পাতকঠিন ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে। যেখানেই যে কর্মসূচি দেয়া হয় জনতার ঢল নামে। সর্বত্র যেন এক বাঁধভাঙা জোয়ার সৃষ্টি হলো । ’৭১ সালে ২৫ মার্চ পাক সেনাবাহিনীর ক্রাকডাউনের পর নেতৃত্বহীন স্তম্ভিত মানুষের মধ্যে একটা ঐক্য সৃষ্টি হয়েছিল তেমনি ৮ ফেব্রুয়ারির পর সারা বাংলার মানুষের মধ্যে একটা অঘোষিত ঐক্য সৃষ্টি হলো। মুখে মুখে স্লোগান উঠেছে ‘আমার নেত্রী আমার মা বন্দি থাকতে দেব না।’

পথেঘাটে, রাস্তায়, চায়ের দোকানে, বাসে লঞ্চে, স্টিমারে আড্ডায় সব জায়গায় সকলের মুখে একই কথা ছিল খালেদা জিয়ার মুক্তি। মিডিয়ায়ও সকল সংবাদের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খবর হলো খালেদা জিয়া। সম্পাদকীয়, উপ-সম্পাদকীয় ও লেখা হয়েছে খালেদা জিয়াকে নিয়ে। অর্থাৎ সকলের মুখে ছিল একই বুলি খালেদা জিয়া। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে পত্র-পত্রিকায় টিভিতে বাংলাদেশ সংক্রান্ত সংবাদই ছিল খালেদা জিয়া সংক্রান্ত। খালেদা জিয়া ছিলেন ‘টক অফ দ্য ওয়ার্ল্ড ।’ ভারতের তামিলনাড়ুর জনপ্রিয় নেত্রী জয় ললিতাকে ঐ প্রদেশের লোকেরা আম্মা বলে ডাকত, বাংলাদেশে জনপ্রিয়তার কারণে খালেদা জিয়া হয়েছিলেন দেশনেত্রী, কারারুদ্ধ হওয়ার পর আবেগাপ্লুত জনতা এখন খালেদা জিয়াকে মা ডাকতে শুরু করেছেন। এর দ্বারা প্রমাণিত হয়, ‘মা’খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা এখন সর্বোচ্চ মাত্রায়।

প্রমান হলো বন্দী খালেদা জিয়া মুক্ত খালেদা জিয়ার চেয়ে অনেক অনেক বেশি জনপ্রিয় ছিলেন । শুধুমাত্র বাংলাদেশের জনকণ্ঠ ভারতীয় কতিপয় পত্রিকা ছাড়া সারা পৃথিবীতে সকল মিডিয়ায় খালেদা জিয়া ছিলেন শীর্ষ সংবাদ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রভাবশালী দেশসমূহ খালেদা জিয়ার মামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ন্যায় বিচারের আহ্বান জানানো হয়েছে। বাংলাদেশে বিএনপি ছাড়াও সরকারের বাইরে সব দলই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অরাজনৈতিক সুশীল সমাজও বিচারের ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। অর্থাৎ জিয়া অরফানেজ মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও প্রতিহিংসা থেকে খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে বাইরে রাখার জন্যই করা হয়েছে, এই নিয়ে প্রায় সকল মহলই একমত। তার প্রতি যে ন্যায়বিচার করা হয়নি এ ব্যাপারেও প্রায় ঐকমত্য সৃষ্টি হয়েছে।

জনতার বাঁধ ভাঙা জোয়ারের মধ্যে আওয়ামী লীগের কণ্ঠ হারিয়ে যাচ্ছে। হতাশার অন্ধকারে আওয়ামী লীগ নিমজ্জিত হয়ে গেছে। সরকার ভেবেছিল রায় ঘোষণার সাথে সাথে বিএনপি কর্মীরা ভাঙচুর শুরু করবে আর সেই সুযোগে সরকার আবার নাশকতার অজুহাতে হাজার হাজার কর্মী খুন ও গ্রেফতার করে দেশে একটা তান্ডবলীলা ঘটাবে। খালেদা জিয়ার অবর্তমানে গড়ে ওঠা যৌথ নেতৃত্ব দক্ষতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে এবং অহিংস নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। প্রবীণ নেতাদের নিয়ে যৌথ নেতৃত্ব সরকারের ফাঁদে পা দেয়নি।

ফলে বিএনপির উপর ক্র্যাকডাউন ঘোষণা করার সরকারি চক্রান্ত ভেস্তে গেছে। কোথায় এখন খালেদা জিয়া এমন উষ্মা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কারাবাস নিয়ে কোন কথা বলতে নেতাদের বারণ করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাধ্য হয়েছেন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের কারণে পুলিশ বাধা দিচ্ছে না।
খালেদা জিয়া ৮ ফেব্রুয়ারি মামলার রায়ের পূর্বে ছিলেন দেশের একচ্ছত্র নেত্রী,তাই জনগণ কেঁদে ছিল খালেদা জিয়ার জন্য । বাচাল নয়, স্বল্পভাষী যোগ্য নেত্রী বলে বিশ্বব্যাপী তার সুনাম বিরাজমান। ৮ ফেব্রুয়ারির পর তিনি হয়ে গেলেন দেশবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত ‘মা’। বিশ্ববাসী জানে, গণতন্ত্রহীন এই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি লড়াই করছেন। তিনি লড়াই করছেন তিনি স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের জন্য,তিনি সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠ। মানবাধিকারের প্রবক্তা।

সরকারের পরিকল্পনা ছিল খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে আরেকটি একদলীয় ভোটারবিহীন নির্বাচন করে আবার ক্ষমতায় যাওয়ার পথ পরিষ্কার করা, বাংলার ঘরে ঘরে একটা কথা আছে, প্রতি ডুবে শালুক পাওয়া যায় না। খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছেন। ইতিহাসে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রাণপুরুষ আব্রাহাম লিংকন মার্টিন লুথার কিং, নেলসন ম্যান্ডেলা প্রমুখ। বাংলা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছেন বাংলাদেশী কোটি কোটি জনতার মা বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে বিশ্ববাসী এখন আরও সোচ্চার। গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াইয়ের জন্য নোবেল পুরস্কারও পেতে পারেন তিনি। চতুর্থবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদও তার ললাটে জুটতে পারে। নদীর স্রোত যেমন প্রবাহমান, নদীর স্রোত কোনো বাধা মানে না, ইতিহাসের গতিও তেমনি প্রবাহমান। ইতিহাসের গতিও কোনো বাধা মানে না, ইতিহাসই তার সাক্ষী। খালেদা জিয়া ইতিহাসের স্নেহ কন্যা। ইতিহাসই নির্ধারণ করবে তার ভবিষ্যৎ। তবে ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না এটা ইতিহাসেরই শিক্ষা। ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। এটাও ইতিহাসের শিক্ষা। ইতিহাসের গতিরোধকারী স্বৈরশাসকরা ইতিহাসের গতিতে খড় কূটার মতো ভেসে যায়। এটাও ইতিহাসের অমোঘ নিয়ম।
আব্দুল আজিজ
প্রধান সম্পাদক
জনতার আওয়াজ ডটকম

Print Friendly, PDF & Email
 
 
জনতার আওয়াজ/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ